মেলা
টোটন মামা ছিল বলেই তো আমরা এত সাহস পেয়েছিলাম। আমরা কি জানতাম যে, আমাদের জন্য সবাই এত ভাববে। আমরা তো আর হারিয়ে যাইনি, টোটন মামার সঙ্গে গিয়েছিলাম। ব্যাপারটা একটু খুলেই বলি। আমরা এবার যখন সবাই নানা বাড়িতে এক হলাম তখন নানা বাড়ির পাশেই মেলা বসেছে। আমরা সবাই বায়না ধরলাম আমরা মেলায় যাব। নানু প্রথমে না করলেও কিন্তু পরে আমাদের সঙ্গে পেরে না উঠে বললেন, ঠিক আছে। কে কে যাবি তৈরি হয়ে নে। আমরা তো আনন্দে লাফাতে লাগলাম, সে যে কি আনন্দ রে বাবা! একে অন্যকে ধরে নাচছি। আমরা যখন মেলায় গেলাম তখন বেলা বারটা। আমরা মেলায় গেলাম সাতজন নানুকে ধরে আটজন। দিনটা ছিল শুক্রবার। নানু আমাদের ইচ্ছেমত গোল্লা খাওয়ালেন, মিষ্টি বর কিনে দিলেন, দু একটা করে খেলনাও কিনে দিলেন। জুম্মার আযান পড়তেই নানু আমাদেরকে একটা পরিচিত দোকানে রেখে বললেন, এই, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুন্, এখান থেকে কেউ কোথাও যাবি না। দেখেছিস তো মেলা কত বড়। একবার হারিয়ে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইনি তোমাদের মামা হয়, টোটন মাহেরুল মাহমুদ ওদের ভাইয়া হয়। নানু দোকানদারটিকে বললেন, সামসু, ওদের দেখিস কোথাও যেন না যায়।
সামসু বলল, ঠিক আছে।
নানু চলে গেলেন নামাজ পড়তে। আমরা বেশ কিছুক্ষণ শান্ত ভাবেই বসে আছি। হঠাৎ চারপাশে মাইক বেজে উঠল টোটন মামা বলল, চল্ আব্বু, আসতে আসতে আমরা ওদিকটা একটু দেখে আসি।
আমরা ভুলে গেলাম নানুর কথা। মামার সঙ্গে গিয়ে দেখি টিকিট দিচ্ছে সার্কাসের। আমরা সবাই মামার কাছে বায়না ধরলাম, আমরা সার্কাস দেখব। টোটন মামা বলল, তোদের কাছে কী টাকা আছে?
আমাদের কারও কারও কাছে ছিল তাতে মামা কিছু লাগিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম সার্কাসে। সার্কাস শুরু হলো। আমরা সার্কাস দেখছি। সে কি ভয়ঙ্কর বাপ্যার। একটা মেয়ে সেই উপরে উঠে একটা ঝুলন্ত লাঠিতে পা লাগিয়ে শূন্যে ঘুরছে তো ঘুরছেই। অনিজা তো ভয়েই শেষ বলল, মামা, ও পড়ে গেলে তো মরে যাবে।
মামা ভয়ে ভয়ে বলল, আরে পড়বে না। চুপ করে দেখে যা।
আবার দুটো বাচ্চা অনেক উপরে লোহার একটা মই ঝুলিয়ে তাদের দু’পাশে বসে ঝুল খাচ্ছে। আমরা সবাই ভয়ে ভয়ে দেখছি, না জানি কখন পড়ে যায়। বাচ্চা দুটোর চোখে মুখে কি যে মায়া।
আমি তো মনে মনে কতবার আল্লাহকে ডাকছি বাচ্চা দুটো যেন পড়ে না যায়। কিন্তু না পড়ল না। এবার খেলালো একটা মেয়ে সামনে একটা তাকে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর ছেলে মানুষ চোখ বেঁধে তাকে ছুরি মারছে। সে কি যে কায়দা, ছুরিগুলো একটাও লাগছে না। সবগুলো মেয়েটার খুব কাছে তাকে গেড়ে যাচ্ছে। আমরা তো মজা করে একের পর এক সার্কাস দেখেই চলেছি। এদিকে নানু নামাজ শেষ করে এসে দোকানি সামসুকে বললেন, সামসু, ওরা কোথায়?
সামসু অবাক। অবাক মুখে বলল, সে কি ওরা তো এখানেই ছিল। গেল কোথায়? মুহূর্তে ঘেমে উঠল লোকটা। নানু ছুটলো এদিক-ওদিক কিন্তু খুঁজে কোথাও পেলেন না। দোকানিও খুঁজলো কিন্তু না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানি বলল, চাচাজান, আমি তো বেচা বিক্রীতে ব্যস্ত ছিলাম। ওরা তো এখানেই বসেছিল।
আবারও ছুটলেন নানু তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন। মেলা কি আর কম বড়! তবু খুঁজেই চলেছেন।
আমরা সার্কাস থেকে বের হতেই সামসু দৌড়ে এসে বলল, এইতো। বলেই আমাদের প্রায় জোর করে বকতে বকতে নিয়ে চলল লোকটা। নানু আমাদের দেখেই জোসসে এক ধমক দিলেন। আমরা তো ভয়ে চুপ। নানু মামাকে বললেন, এই টোটন, ওদের নিয়ে গেলি কেন? তোকে না বলেছিলাম এখানেই থাকবি?
মামা কোনো কথা বলল না। মামা জানতো যে কথা বললেই নানু কষে চড় মারবেন। এদিকে সামসু লোকটা যেন এতক্ষণে ভারমুক্ত হলো। বলল, চাচা, থাক ওকে আর বকে কি হবে? ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি। নানু আমাদের নিয়ে গেলেন নাগর দোলার কাছে। আমাদের নাগর দোলায় উঠিয়ে দিলেন। আমরা সবাই একটা দোলনায়। প্রথমবারে উঠতে তেমন কিছু মনে হলো না। আমাদের দোলনা উপরে উঠতেই আকাশটা খুব কাছে মনে হলো। কিন্তু আমরা যখন নিচে নামলাম তখন উপর থেকে অন্যেরা থু থু দিলে আমরা রেগে আগুন। পরবারে উপরে উঠে আমরাও থু থু দিলাম। কিন্তু একি! নামার সময় যেন মনে হচ্ছে কোনো দুর্গম কুপে পড়ছি। বুকটা শির শির করে উঠছে ভয়ে। কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে, এটাতো দোলনা ছেড়ার ভয় নেই, শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা আছে। তৃতীয় বারে গিয়ে আমার কান্না পেল। ভয়ে ভয়ে অন্যদের দিকে তাকাতেই আর সবাই কেঁদে দিয়ে বলল, আমরা নামব। আমরা দোল খাব না। ততক্ষণে অন্যান্য দোলনার লোকগুলো জোরে জোরে হেসে দিল। তবু আমরা সবাই কাঁদছি। টোটন মামা অবশ্য প্রথমে কাঁদেনি পরে সবার কান্না দেখে কাঁদো কাঁদো গলায় জোরে বলল, থামান বলছি। নয়তো পেসাব করে দিব। প্রস্রাব করার কথা বলতেই লোকগুলো থামাতে বলল। আমরা সবাই নামলাম। নানু হেসে বললেন, কেমন মজা মেলায় আসার। আমাকে তো কাঁদালি নিজেরাও কাঁদলি। আর কিছু দেখবি?
আমরা বললাম, না, নানু।
নানু বললেন, এবার ইচ্ছে মত খেয়ে বাড়ি ফিরি কেমন? আমরা সবাই মাথা ঝাঁকালাম।
সামসু বলল, ঠিক আছে।
নানু চলে গেলেন নামাজ পড়তে। আমরা বেশ কিছুক্ষণ শান্ত ভাবেই বসে আছি। হঠাৎ চারপাশে মাইক বেজে উঠল টোটন মামা বলল, চল্ আব্বু, আসতে আসতে আমরা ওদিকটা একটু দেখে আসি।
আমরা ভুলে গেলাম নানুর কথা। মামার সঙ্গে গিয়ে দেখি টিকিট দিচ্ছে সার্কাসের। আমরা সবাই মামার কাছে বায়না ধরলাম, আমরা সার্কাস দেখব। টোটন মামা বলল, তোদের কাছে কী টাকা আছে?
আমাদের কারও কারও কাছে ছিল তাতে মামা কিছু লাগিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম সার্কাসে। সার্কাস শুরু হলো। আমরা সার্কাস দেখছি। সে কি ভয়ঙ্কর বাপ্যার। একটা মেয়ে সেই উপরে উঠে একটা ঝুলন্ত লাঠিতে পা লাগিয়ে শূন্যে ঘুরছে তো ঘুরছেই। অনিজা তো ভয়েই শেষ বলল, মামা, ও পড়ে গেলে তো মরে যাবে।
মামা ভয়ে ভয়ে বলল, আরে পড়বে না। চুপ করে দেখে যা।
আবার দুটো বাচ্চা অনেক উপরে লোহার একটা মই ঝুলিয়ে তাদের দু’পাশে বসে ঝুল খাচ্ছে। আমরা সবাই ভয়ে ভয়ে দেখছি, না জানি কখন পড়ে যায়। বাচ্চা দুটোর চোখে মুখে কি যে মায়া।
আমি তো মনে মনে কতবার আল্লাহকে ডাকছি বাচ্চা দুটো যেন পড়ে না যায়। কিন্তু না পড়ল না। এবার খেলালো একটা মেয়ে সামনে একটা তাকে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর ছেলে মানুষ চোখ বেঁধে তাকে ছুরি মারছে। সে কি যে কায়দা, ছুরিগুলো একটাও লাগছে না। সবগুলো মেয়েটার খুব কাছে তাকে গেড়ে যাচ্ছে। আমরা তো মজা করে একের পর এক সার্কাস দেখেই চলেছি। এদিকে নানু নামাজ শেষ করে এসে দোকানি সামসুকে বললেন, সামসু, ওরা কোথায়?
সামসু অবাক। অবাক মুখে বলল, সে কি ওরা তো এখানেই ছিল। গেল কোথায়? মুহূর্তে ঘেমে উঠল লোকটা। নানু ছুটলো এদিক-ওদিক কিন্তু খুঁজে কোথাও পেলেন না। দোকানিও খুঁজলো কিন্তু না কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানি বলল, চাচাজান, আমি তো বেচা বিক্রীতে ব্যস্ত ছিলাম। ওরা তো এখানেই বসেছিল।
আবারও ছুটলেন নানু তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন। মেলা কি আর কম বড়! তবু খুঁজেই চলেছেন।
আমরা সার্কাস থেকে বের হতেই সামসু দৌড়ে এসে বলল, এইতো। বলেই আমাদের প্রায় জোর করে বকতে বকতে নিয়ে চলল লোকটা। নানু আমাদের দেখেই জোসসে এক ধমক দিলেন। আমরা তো ভয়ে চুপ। নানু মামাকে বললেন, এই টোটন, ওদের নিয়ে গেলি কেন? তোকে না বলেছিলাম এখানেই থাকবি?
মামা কোনো কথা বলল না। মামা জানতো যে কথা বললেই নানু কষে চড় মারবেন। এদিকে সামসু লোকটা যেন এতক্ষণে ভারমুক্ত হলো। বলল, চাচা, থাক ওকে আর বকে কি হবে? ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি। নানু আমাদের নিয়ে গেলেন নাগর দোলার কাছে। আমাদের নাগর দোলায় উঠিয়ে দিলেন। আমরা সবাই একটা দোলনায়। প্রথমবারে উঠতে তেমন কিছু মনে হলো না। আমাদের দোলনা উপরে উঠতেই আকাশটা খুব কাছে মনে হলো। কিন্তু আমরা যখন নিচে নামলাম তখন উপর থেকে অন্যেরা থু থু দিলে আমরা রেগে আগুন। পরবারে উপরে উঠে আমরাও থু থু দিলাম। কিন্তু একি! নামার সময় যেন মনে হচ্ছে কোনো দুর্গম কুপে পড়ছি। বুকটা শির শির করে উঠছে ভয়ে। কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে, এটাতো দোলনা ছেড়ার ভয় নেই, শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা আছে। তৃতীয় বারে গিয়ে আমার কান্না পেল। ভয়ে ভয়ে অন্যদের দিকে তাকাতেই আর সবাই কেঁদে দিয়ে বলল, আমরা নামব। আমরা দোল খাব না। ততক্ষণে অন্যান্য দোলনার লোকগুলো জোরে জোরে হেসে দিল। তবু আমরা সবাই কাঁদছি। টোটন মামা অবশ্য প্রথমে কাঁদেনি পরে সবার কান্না দেখে কাঁদো কাঁদো গলায় জোরে বলল, থামান বলছি। নয়তো পেসাব করে দিব। প্রস্রাব করার কথা বলতেই লোকগুলো থামাতে বলল। আমরা সবাই নামলাম। নানু হেসে বললেন, কেমন মজা মেলায় আসার। আমাকে তো কাঁদালি নিজেরাও কাঁদলি। আর কিছু দেখবি?
আমরা বললাম, না, নানু।
নানু বললেন, এবার ইচ্ছে মত খেয়ে বাড়ি ফিরি কেমন? আমরা সবাই মাথা ঝাঁকালাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুল মান্নান মল্লিক ১৭/১১/২০১৬লিখনিতে ধন্যবা...।
-
মোনালিসা ০২/১১/২০১৬ভাল লেগেছে
-
আজিজ আহমেদ ২৯/১০/২০১৬সুন্দর।
আমার লেখা পড়ার অনুরোধ রাখলাম -
সোলাইমান ২৩/১০/২০১৬খুব সুন্দর ভাবনা।
-
পরশ ২৩/১০/২০১৬সুন্দর
-
আসাদুজ্জামান নূর ২২/১০/২০১৬lol
-
বিশ্বামিত্র ২০/১০/২০১৬মেলা দেখার যে কী আনন্দ!যারা যায় ওদের থেকে ভাল কেউ জানে না।খুব সুন্দর লাগল।শুভেচ্ছা রইল।
-
প্রবাল ২০/১০/২০১৬অনেক ভাল
-
সুকান্ত ২০/১০/২০১৬বেশ গোছানো লেখা, বেশ ভালো লাগলো।
-
শাহ আজিজ ২০/১০/২০১৬যারা নাগরদোলা চড়েছে তারাই এর মল, মুত্র পতনের কাহিনী ভাল বলতে পারবে।