www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সানজ্বিন

চল না রতন?
কোথায়?
কোথায় মানে? এখনি ভুলে গেলি?
মনে পড়ছে না তো।
কেন মনে পড়ছে না? কেন মনে পড়ছে না সে কি আমি জানি?
ঠিক আছে। এবার আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। তবে এরপরে কিন্তু আর মনে করিয়ে দিবো না।
দিবি না বললেই হলো? তুই আমাকে সব কাজে সাহায্য করতে চেয়েছিস বলেই আমি তোকে ভায়রা বানাতে রাজি হয়েছি। না হলে কী আর তোর মতো হ্যাংলা ভূতকে ভায়রা বানাতে চাইতাম।
রতন, তুই আমাকে হ্যাংলা ভূত বললি?

ও সরি, টিংকু। চল্ এখন। কোথায় যেন যাবি না বললি।
টিংকু কোনো কথা বললো না। সোজা রতনের পিছে পিছে চললো।
একটা বট গাছের নিচে গিয়ে রতন টিংকুকে বললো,“কিরে টিংকু, তোর মন খারাপ এখনো? বললাম তো সরি।

টিংকু এবার ফিস ফিস গলায় বললো,“ঐ দেখ্, জিজান আসছে।”
অবাক হলো রতন। কি সুন্দর একটা আঠারো বছরের ছেলে। হাতে কি যেন একটা ভাঁজ করা।
কেমন আছো জিজান? জিজানকে দেখে রতন জিজ্ঞেস করলো।
ভালো।
একি তুমি এমন করে কথা বলছো কেন?
রতন ভূতেরা এভাবেই কথা বলে। পেছন থেকে বললো টিংকু।
তাহলে তুই যে এভাবে কথা বলিস না?
আরে আমার কথা বাদ দে। আমি অনেক দিন তোদের সঙ্গে থেকে তোদের মতো কথা বলতে শিখেছি।
ও।
জিজান এবার তুমি তোমার কাজ করো।
জিজান এবার হাতের জিনিসটা মাটিতে ছুড়ে দিতেই সেটা একটা পাখা ওয়ালা ঘোড়া হয়ে গেলো। টিংকু বললো,“রতন এসো।”
ওরা সেই ঘোড়াটাতে চড়তেই ঘোড়াটা দিলো উড়াল। ঘোড়াটা উড়তে উড়তে চলে গেলো এক বিশাল সাগরের উপর। জিজান আর টিংকু হাসছে কিন্ত রতনের হাসি পাচ্ছে না। ভয়ে তার বুকটা ধক্ ধক্ করছে। কি বিশাল সাগর। সাগরের পানি কখনো লাল টকটকে তাজা রক্তের মতো আবার কখনো বা সাদা দুধের মতো। ঘোড়াটা উড়তে উড়তেই হঠাৎ কথা বললো। রতন ঘোড়ার কথা কিছুই বুঝলো না। কিন্তু টিংকু তার কথার উত্তরে বললো,“হ্যাঁ, আমরা তৈরি। তবে অতিথিকে একটু বলে নেই।”
ঘোড়াটা আবার কি যেন বললো। রতনকে উদ্দেশ্যে করে এবার টিংকু বললো,“ভায়রা, আমরা আমাদের গন্তবের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি। তুই একটু মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নে।”
ভয়ে রতনের নিশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার জো। একি দেখছে সে! সাগরের পানি কেমন উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। আর তার থেকে কেমন একটা বিকট শব্দ ভেসে আসছে। শব্দটা শুনতেই তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। টিংকুর দিকে তাকাতেই আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো সে। একি টিংকু এ সাজ কোথায় পেলো? পরনে তার রাজার পোশাক, মাথায় রাজ পাগড়ী, গলায় জ্বহরতের মালা। না, আর সে কিছু ভাবতে পারছে না।
ঘোড়াটা কেন পানিতে নামছে? ওরে বাপরে, পড়ে গেলাম রে। মরে গেলাম রে। ও মাগো। জোরে জোরে চিল্লাতে লাগলো রতন। কেবল পানিতে পড়তে যাবে অমনি তার জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে দেখলো, বিশাল একটা সাদা ধবধবে মহল। কি সুন্দর সে মহলের কারুকাজ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। আর সেখানকার ভূতগুলো কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত।
রতন তার মায়ের কাছে গল্প শুনেছিলো, ভূতেরা নাকি বিশ্রী হয়। কিন্তু এরা তো মোটেই বিশ্রী নয়। কি সুন্দর চোখ-মুখ, নাক। যেমনি সাদা তাদের রং তেমনি গাঢ় সোনালী রং-এর চুল। সবুজ চোখ আর নিল পোশাক দারুন মানিয়েছে তাদের। মনটা ভরে যায়।
রতন অবাক হয়ে সবকিছু দেখছিলো। এমন সময় টিংকু এলো রাজার বেশে। তাকে দেখে সবাই নতমস্তকে কৃর্নিশ করলো এবং অনেকটা দূরে সরে গেলো।
টিংকু রতনের খুব পাশে একটা হীরের আসনে বসলো। এই প্রথম তাকে দেখে রতনের ভয় লাগলো। টিংকু বসেই মিষ্টি হাসি দিয়ে রতনকে বললো,“বৎস কেমন আছো?”
একি টিংকুর কণ্ঠ এতো গুরু গম্ভীর হলো কী করে? ও তো সব সময় পিনপিন গলায় কথা বলতো। তবে কি সবটায় টিংকুর চালাকি ছিলো? আর বৎস-ই বা বলছে কেন?
কী হলো? কথা বলছো না কেন বৎস?
রতন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,“জ্বি, ভালো আছি। কিন্তু তুই এমন করে কথা বলিস কেন্?”
এবার টিংকু জোর গলায় হাসি দিলো। বললো,“আমি কে তুমি কী জানো? না, তুমি জানো না। আসলে আমি টিংকু না। আর তুমি যাকে টিংকু জানো, সে আসলে টিংকু না। ও আমার ছেলে। ছোট রাজপুত্র। ওর নাম যায়েজ। ওকে আমিই পাঠিয়ে ছিলাম একটা ভালো মানুষকে খুঁজতে। আর প্রায় এক বছর পর সে তোমাকেই সেই ভালোমানুষ হিসেবে বেছে নিয়ে এসেছে। তাই তোমাকে আমরা এবারের জন্য এই রাজ্য থেকে বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করবো। আর একটা বিষয় তোমাকে জানানো দরকার, আমরা আসলে ভূত, প্রেত, জ্বিন কিংবা ইনসান কোনোটা নয়। তবে জ্বিন আর ইনসানের সমন্বয়ে সৃষ্টি একটা নতুন জাতি। আমাদের এই নতুন জাতির নাম- সানজ্বিন।”
একটু থেমে আবার বললো,“তোমাকে একটু খুলেই বলি। একবার একটা জ্বিন একটা ইনসান মেয়েকে জোর করে তুলে এনে বিয়ে করে। এ খবর জানার পর জ্বিনের রাজা তাকে ইনসানকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে বলে। কিন্তু সে জ্বিন সে কথা শুনলো না বলে জ্বিনের রাজা তাকে সে জাতি থেকে বহিষ্কার করলো। তখন সে দিশেহারা হয়ে ইনসান মেয়েটাকে নিয়ে এ রাজ্যে চলে আসে। তখন থেকেই এই সানজ্বিন জাতির সৃষ্টি হয়। আমরা প্রতি একযুগ পর পর একটা ইনসান এবং একটা জ্বিনকে ধরে এনে পুরস্কৃত করি। তবে শর্ত থাকে যে, সে জ্বিন কিংবা ইনসানকে অবশ্যই ভালো হতে হবে।”
রতন এতোক্ষণে চুপ করে সব শুনছিলো। হঠাৎ টিংকু এসে বললো,“আব্বাজান, আমার বন্ধুকে তোমার কেমন লাগলো?”
সে খুব ভালো বৎস। তবে ভীত ছেলে। তুমি এক কাজ করো।
কী?
যতো তাড়াতাড়ি পারো এক হাজার ঘোড়ায় করে তার উপহার সামগ্রীসহ তাকে তার বাবা-মা’র কাছে পৌঁছে দিয়ে এসো। তার বাবা-মা হয়তো এতোক্ষণে তাকে খুঁজছে।
টিংকু ওরফে যায়েজ নতমস্তকে বললো,“জ্বি, আব্বাজান। তবে আমার একটা আরজি ছিলো।”
কী, বলো?
আমি আরো কিছুদিন ইনসানের দেশে থাকতে চাই?
রাজা কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন,“হ্যাঁ, তোমার মন যখন চাইছে তখন থাকতে পারো। তবে মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে বেড়াতে এসো।
জ্বি, আব্বাজান।
রতন দেখলো যে, তার সামনে অনেকগুলো কালো, সাদা, লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদ বিচিত্র রংয়ের সব ঘোড়ার পিঠে বোঝায় করা মালামাল। টিংকু ওরফে যায়েজ একটা রাজকীয় পোশাক এনে রতনকে পরিয়ে দিলো।
রতন বললো,“এসব কী হচ্ছে টিংকু? এসব কার জন্য?”
টিংকু মিষ্টি গলায় একটা হাসি দিয়ে বললো,“আমার ভায়রা রতনের জন্য।”
শেষে যখন রতন আর টিংকু সেই পাখনা ওয়ালা ঘোড়াটাতে বসলো তখন সবাই ওদের নত মস্তকে কৃর্নিশ জানিয়ে বিদায় দিলো। ওরা আবার সেই লাল-সাদা সাগরের উপর দিয়ে উঠে চললো মানুষের পৃথিবীতে।

বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭২৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১০/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast