www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাজা

মনটা ভালো নাই টোটনের। অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। কান্নায় ভেঙ্গে যাচ্ছে তার বুক। এমন কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। এর আগেও তো অনেক লোক মারাগেছে, কই কেউ মরে তো এমনটি হয়নি তার? আহ্! বড় আব্বাটা কতই না ভালো ছিল। এই তো কিছুদিন আগে যখন বড় আপুর পরীক্ষার জন্য ওরা তিনজন, টোটন, বড়পু এবং ছোট আপু ভ্যানে করে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। ভ্যানচালক ছিল এই রাজা বড়ব্বা।, হঠাৎ কি যে হলো ভ্যানটা আর চলছে না। টোটন বলল, বড় আব্বা ?
রাজা বড় আব্বা ভ্যান থেকে নামলেন। জোরে টানছেন ভ্যানটা কিন্তু না কিছুতেই চলতে চাইছে না। বড় আব্বা তো ঘেমে একাকার। বেচারা নিরূপায় হয়ে বললেন, বাবা টোটন, একটু নামতো বাপ। একটু ঠেলা দে।
টোটন লাফ দিয়ে নেমে ভ্যানটা ঠেলতে লাগল কিন্তু না কিছুতেই যেতে চায় না। বড় আব্বা তখন নিরাশ হয়ে বললেন, ভ্যানটা ভূতে টেনে ধরেছে বাপ।
টোটনের বুকটা ধক করে উঠল। ভয় করল তার। সত্যি কী ভ্যানটাকে ভূতে টেনে ধরেছে? আপুরা ভ্যানে হাসছে আবার বিরক্তি প্রকাশ করছে যাতা বলে। অনেক কষ্টে রাস্তার পাশেই এক আত্মীয়র বাসায় গিয়ে আপুরা নামল।
বলল, বড় আব্বা, আপনি ভ্যান থেকে ভূত সরান। আমরা ততক্ষণ এখানে আছি ।
আপুদের সাথে টোটনও গেল বাসার ভিতরে। বেশ কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখে, বড় আব্বা হাসছেন। টোটন দৌড়ে গিয়ে বলল, বড় আব্বা, ভূত চলে গেছে?
হ্যাঁ বাপধন।
বড় আপু বলল, আবার সমস্যা হবে না তো?
বড় আব্বা ফোকলা দাঁতের বাঁধ ভাঙ্গা হাসি দিয়ে বললেন, নারে মা, ওটার বিয়ারিং ভেঙ্গেছিল। সেরেছি।
টোটন তো অবাক। বিয়ারিং ভেঙ্গেছিল? ভূতে টেনে ধরেনি তাহলে? যাক বাঁচা গেল এ বেলা।

আর একদিনের ঘটনা। টোটনদের একটা বড় বাঁশ ঝাড় ছিল। সেই বাঁশ ঝাড়ে সন্ধ্যে হলে অনেক পানকৌড়ি আসত। কোত্থকে আসত কে জানে। একদিন গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে যুক্তি করল, তারা যে করেই হোক পানকৌড়ি ধরবে। শুরু হলো বুদ্ধির শলাপরামর্শ। কীভাবে ধরা যায় পানকৌড়ি?
রাজা বড় আব্বা হঠাৎ বললেন, বুদ্ধি একটা আছে।
সবাই বলল, কী?
সবাইকে মিলে কাজটা করতে হবে।
কাজটা কী?
বাঁশ ঝাড়টা ছিল বড় একটা পুকুরের উপর।
বড় আব্বা বললেন, এই পুকুরে মাছ ধরা জালগুলো এক এক করে জোড়া দিতে হবে। তারপর কলাগাছের ভেলা দিয়ে পুকুরে এপার থেকে জালটা বাঁশে বেঁধে ওপারে নিতে হবে। বড় বাঁশে বেঁধে জালের একপাশ উপরে উঠে দিতে হবে এবং অন্যপাশ নিচে থাকবে। এভাবে বাঁশঝাড় ঘেরাও করার পর বাঁশঝাড়ে আক্রমণ করলে ওরা যেভাবে পুকুরে উপর দিয়ে এসেছিল সেভাবেই পুকুরের উপর দিয়ে চলে যাবে। আর তখনি জালে আটকা পড়বে। বলেই বড় আব্বা হাসলেন।

বুদ্ধিটা সকলের ভালো লাগলো। প্লান অনুযায়ী দু’দিন পর তাই করা হলো। আমরা তো অধিক আগ্রহ নিয়ে দেখছি। সন্ধা নেমে এলো। সকলে পুকুর পাড়ে জমা হয়েছে। গ্রামের বউ বেটিরাও দেখছে। কাজ চলছে। হঠাৎ বড় আব্বা জোর গলায় হাসতে হাসতে বললেন, আজ পানকাউড় মারব লাকে লাকে ঝাকে ঝাকে।
সবাই ধরে উঠল কথাটা। রাজা ভাই জব্বর বলেছে। সাধে কি আর বলি আমাদের রাজা ভাই। যথাসাধ্য সাধনা করে ব্যর্থ হলো সবাই পানকৌড়ি ধরা পড়ল না একটাও। সে রাতে যে যার মত চলে গেল।

পরদিন সকালে রাজা বড় আব্বার সঙ্গে দেখা হতেই হেসে দিলেন তিনি। টোটন কিছু বলতে চেয়েও বলা হলো না যেন। সহজ সরল এই দরিদ্র লোকটি যেন সকলের আনন্দের লোক।
রাজা বড়ব্বার আর একটা বিশেষ প্রতিভা ছিল। তিনি ছিলেন কিঁচ্ছের রাজা। কিঁচ্ছে বলায় এলাকায় তার কোন জুড়ি ছিল না। গরম কালের জোৎস্ন্যা রাতে তিনি বসতেন কিচ্ছের ঝুলি নিয়ে আর তাকে ঘিরে বসত গ্রামের অসংখ্য লোক। সে যে কি গল্প দু’তিন রাতেও শেষ হয় না এক একটি কিচ্ছে।
আহ্! কে জানতো লোকটি এভাবে মারা যাবে। কান্নায় চোখ ঝাপসা হয়ে এলো টোটনের। টোটনকে অনেকক্ষণ এভাবে বসে থাকতে দেখে তার মা তার কাছে এসে বললেন, কীরে টোটন, এভাবে বসে আছিস। কী ভাবছিস?
মায়ের কথায় কেঁদে ফেলল টোটন।
মা আমার খুব খারাপ লাগছে।
কেন বাবা? বলেই মা আদর করে বুকে জড়িয়ে নিলেন টোটনকে।
বড় আব্বা অনেক ভালো ছিল না, মা।
হ্যাঁ। অনেক সাদা সরল ছিল লোকটা। উদার মনের তাই শেষ বয়সে এতটা অভাব গ্রাস করেছিল হয়তো।
মা,
টোটন যা বাবা গোসল করে মাটি দিতে যাবে। লাশ তো এখনি নিয়ে যাবে।
টোটন কিছু না বলে আস্তে আস্তে চলে গেল।
মা সে দিকে চেয়ে উদাস হলেন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬১৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১০/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast