www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেঘের হাসি

আবিদ হাসান প্রতিদিন লক্ষ্য করে,ছোট্ট এই নিস্পাপ আদলের মিষ্টি খুকিটিকে ।রোজ সকালে কোথায় যায়  খুকিটি ? ওরনার নিচে হাতে ওটা কি থাকে ?তেল মাখা চুল আর সস্তা পোশাকে  ও মেয়েটিকে সুন্দর দেখায় ।প্রতি দিন ঠিক এই সময়টিতে খুকিটিকে একবার দেখবে বলে,হাজারো প্রতি বন্ধকতা পেরিয়ে এ পথেই চলে আসে আবিদ ।
কেন আসে জানেনা সে। ঘরে স্ত্রী সন্তান তার এই সরলতার সৌর্ন্দয্যকে রুচি হীনতার পরি চয়ে কটুক্তি করে ,তবু ও আবিদ পারেনা তার নিযস্য সত্তাকে বিতারিত করে পরাধীনস্ত হতে। ভালোলাগে না  তার এই উশৃঙ্খল জীবনের  রংমাখা বিভ্রান্তী ।শান্ত একটা পরিবেশে সুশিল কিছু মানুষের সঙে থাকতে চায় সে ।বাচতে চায় আপনার অস্থিতে,হাসতে চায় প্রাণ খুলে । চলতে চায় স্বাধীন সত্তায় স্বাচ্ছন্দে । কিন্তু পারে না সে, চাকুরি জীবি স্ত্রীর অসহনীয় আচারন আর সন্তানের বিপন্ন চলা তাকে কষ্টো দেয়, পিড়া দেয়, যন্ত্রনা দেয়।শক্ত হতে বলে শাসনের ছড়ি হাতে কিন্তু পারেনা আবিদ । ওপারের র্দুবলতা সামনে এসে দাড়ায় ।স্ত্রীর পয়সায় পালিত আবিদ যেন অসহায় ।পরের হাতের পুতুল সামগ্রী,নাঁচালে নাঁচতে পারে ,বাজালে বাজতে পারে।আবিদ যতবার এই পরাস্ত জীবন থেকে মুক্ত হতে চেয়েছে,ততবার এ জীবন তাকে সবলে জড়িয়ে ধরেছে ।
মাঝে মাঝে তার মনে হয় নিয়তি হয়তো তাকে প্রহসন করছে।
কিন্ত কেন ?
সেতো এমন জীবন চায়নি । চমকে উঠে আবিদ,কি চেয়েছিল সে .? তার চাওয়া কি সাধারণ ছিল,নাকি অসাধারণ চাওয়ার পিছে ছুটতে গিয়েই এই হোচঠ খাওয়া ? ভাবনার পথে চলতে পারেনা আবিদ ।অপরাধ বোধ পথ রোধ করে দাড়ায় তার।ফিরে আসে সে অন্য পথে ।যেখানে মায়া চোখের সেই শান্ত কিশোরি শান্ত পায়ে হেটে চলে..।
আজ আবিদের হাতে অনেকটা সময় রয়ে গেছে।কিশোরির পিছে পিছে তার গন্তব্যে যাবে সে ।আবিদ দুর থেকেই দেখতে পায় খুকিটি শান্ত পায়ে এগিযে চলছে।পিছন থেকে ডাক দেয় সে-
খুকি ?
খুকিটি ফিরে তাকায় ?চোখ দুটি অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে তার ।মুখে শুশ্ক হাসি।আবিদ খুকির খুব কাছে গিয়ে দাড়ায়।খুকি একবার দেখে নেয় তাকে।
তোর নাম কি রে?
জানিনা ।
কেন ?
কোথায় তাকিস তুই ?কথা বলে না খুকি ।
কি হল বলিলনাতো ?
মাথা নিচু করলো খুকি ?
কি বুঝে আবিদ বলল-তোর হাতে ওটা কি ?
ওরনার নিচ থেকে হাত বের করলো খুকি,।
শুকনো দুটি রুটি আর পলিথিনে সামান্য ডাল।
তুই খাবি ?
না, মার জন্য ।
মা,তোর মা কোথায় ?
চুপ করে আছে খুকি, কি হল? অসহায় দৃষ্টিতে চাইলো খুকি আবিদের দিকে।
আবিদ শান্ত ভাবেই বলল,চল আমিও তোর মায়ের কাছে যাবো। খুকি কিছু বলল না শান্ত চরণে এগিয়ে চলল শুধু।আবিদ তার পিছে পিছে চলল।ওরা অনেকটা পথ হেটে রেললাইনের ধারে ছোট্ট একটি কাপড়ে ঢাকা র্জিণ্য কুঠিরের কাছে এসে দাড়ালো। খুকি আবিদের দিকে চেয়ে হাত ইশারায় বলল ঐ তো আমার মা।আবিদ চোখ তুলে তাকালো।সামনে একজন পাগলিনী।মাথায় চুল নেই, পরনে ,ময়লা,আধছেড়া জামা। খুকিকে দেখেই সে প্রায় ছুটে এলো,কই, কই ,ভাত কই,খামু দে খামু ,ভুক পেটেত ভুক। লজ্জা করুমনা।দে ছেরি জলদি দে।
মা ওমা।  
কি কছ,ভাত আনোছ নাই?
না রুটি আনছি, এই নাও।
পাগলিনী  এবার খাবার পেয়ে খুকিকে জরায়ে ধরলো ।শান্ত হয়ে স্বাভাবিক আচারনে মেয়েকে বুকে নিয়ে আদর করলো-যেন এতক্ষন যা করলো তা তার আচারন নয়।
মা দেখ কে এসেছে ?
পাগলিনী এবার চাইলো আবিদের দিকে,দৃষ্টি দিয়ে আগুন ঝরছে তার,
দুর হয়ে যা, দুর হয়ে যা।মর গিয়ে,বদমায়েশ, শয়তান, মজা দেখতে আইছোস,দেখ দেখ তোর জন্য আজ আমার এই দশা। খুশি হইছোস,যা যা এখন যা কইতাছি,মাইরা ফেলামু,তামাশা দেখবার আইছে,লজ্জা করেনা ,মাইয়া জন্ম দিয়া পালাইয়া গেলি..।
অপ্রস্তুত আবিদ কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।পাগলি কিছু যেন খুজছে..
খুকি এবার আবিদের কাছে ছুটে এসে বলল,চলেন বাবু এখুনি পালাতে হবে নয়তো..
কথা শেষ না করেই এক প্রকার জোর করেই আবিদকে টেনে নিয়ে চলল খুকি।অনেকটা দুরে এসে থামলো দুজনে,কথা বলছেনা কেউ।হাপাচ্ছে খুকি ,দুর্বল শরিরে এতটা ধকলে,দুজনেই বসলো ঘাসের উপর ।নিরবতা ভাঙলো  আবিদ-
খুকি তোর মার কি হয়েছে,আমাকে দেখে এত রাগলো কেন রে ?
মা এমনই,ভদ্রমানুষকে দেখতে পারেনা ,তার ধারনা-সবাই আমার বাবার মত।
তোর বাবা ?তিনি কোথায় ?
হা ,শুনেছি আমার বাবা শিক্ষিত ভদ্র সমাজের মানুষ ছিল,আমার মাকে গোপনে বিয়ে করে আমার জন্মের আগেই পালিয়ে যায়। আমার জন্মকে ভদ্র সমাজের মানুষেরা মেনে নেয়নি বলে মা গ্রাম ছাড়া হয়,তার পর অনেক কষ্ট করেছেন মা,।
দিনের পর দিন ক্ষুর্ধাথ থেকে আমাকে পালন করেছে।আমি জানিনা মা কখন এমন হয়েছে শুধু জানি আমার মার, অনেক ক্ষুধা,মার অনেক কষ্ট,মার অনেক যন্ত্রনা।কাঁদছে মেয়েটা অশ্রূতে ছল ছল করছে তার মায়া চোখ।আবিদ খুকির মাথায় হাত বুলিয়ে শিতল কন্ঠে বলল-
তোর নাম কিরে ?
নামতো হারিয়ে গেছে ,মায়ের সুস্থতার সাথে আমার নাম ও হারিয়ে ফেলেছি। এখন সবাই ছুটকি ডাকে।
তাই,তুই এখন করিস কি ?
সকালে এক মাসিমার বাসায় থালা বাসন মেজেদিই,মাসিমা বলেছে তুই যদি পরিস্কার হয়ে আসিস আর ভালো ভাষায় কথা বলতে পারিস তবে তোকে তো খায়াবোই তোর মার জন্য ও খাবার দিব।তাই ..।
বাবু আমি ভালো কথা বলতে পারি ।
হা সেতো দেখতেই পাচ্ছি ।আর কি করিস ?
দিনে কাগজ কুড়াই,যা পাই তাই দিয়ে কোন রকমে চলে যায়।যানো বাবু মা খেতে পেলেই ভালো থাকে।আমার মা খুব ভালো মা..
ছুটকি ?তুই আমার সঙ্গে যাবি ?আমার স্ত্রীর একটা ছেলে আছে,ওদের অনেক টাকা  ,কিন্তু খাবার লোক নেই। তু্ই আর আমি খাব আর থাকবো,তোর মার কথা ভাবিসনা ওনার ব্যবস্তা ও হবে।জানিস আমি ও তোর মত ছিলাম,এখন অনকে বড়লোকের জামাই,টাকার অভাব নেই আমার কিন্তু...উদাস হয় আবিদ।পরক্ষনেই বলে, থাক সে সব কথা। ওরা আমায় অনেক দিয়েছে ,আমি তো কিছুই দিবার ক্ষমতা রাখিনা তাই,তোকে আর আমাকে খাওয়ানোর পুণ্যিটুকু দিতে চাই ওদের।
কি রে যাবি তো ? তোকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা দুজনেই কাজ করবো গল্প করবো,আচ্ছা তুই আমাকে বাবা বলবি ?
কেন বাবু তোমার কোন সন্তান নেই বুঝি।
নারে,আমি কোন দিন বাবা হলামনা। সারা জীবন শুধু সস্থা একজন কেয়ারটেকার হয়ে দায় সারছি,ও তুই বুঝবিনা ,বড় হয়ে নে তখন বুঝবি ।ছুটকি আবিদের মাথায় হাত রাখলো,মর্হূতের জন্য আবিদের মনে হল এ যেন তার মায়ের ছোয়া।আবিদ ফিরে তাকালো ছুটকির দিকে,থাকবি তো আমার সঙ্গে..
কিন্তু আমার মা ?
আবার !,শোন তোর মাকে পাগলা গারদে পাঠাবো,চিকিৎসা করালে ই ভালো হবেন তিনি।
মা ভালো হবে সত্যি বলছো বাবু
হা বড় হয়ে তুই মাকে ফিরে পাবি ,আর আমি পাবো আমার এই শুণ্য জীবনের ছোট্ট একটু শান্তনা। এতক্ষনে ছুটকির মুখে ফুঠে উঠলো এক মধুর হাসি।আবিদ ও হাসলো মনের আঁধার কেটে।এই হাসি যেনে মেঘের হাসি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৭৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১০/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast