ভূতের সাথে যাত্রা

গল্পঘটনাটি আমার এক মামার কাছ থেকে শোনা । মামা এবং মামার বন্ধুরা কক্সবাজার থেকে আসছিল গাড়ি চালিয়ে । গাড়ি চালাচ্ছিল মামার বন্ধু আরমান ।তারা যখন চট্টগ্রাম পৌঁছল তখন ঘটনাটি ঘটে ।তখন রাত প্রায় তিনটা ।


তারা মাইক্রোবাসে করে যখন আসছিল সেই মুহূর্তে তারা একটা মেয়েকে দেখতে পায় রাস্তার ধারে দাড়ানো অবস্থায় । মামার বন্ধু পল্টু বলে এত রাতে এখানে একটা মেয়ে,বোধহয় বিপদে পড়েছে,চল মেয়েটিকে সাহায্য করি ।মামা তখন বলে তুই কি ঠিক আছিস,দেখ চারিদিকে বিল,আশেপাশে কোন বাড়িঘর নাই ।তাছাড়া রাত বাজে ৩টা এত রাতে এমন নির্জন জায়গায় একটা মেয়ে!! মামার বন্ধু আরমান ভূত প্রেত কিছুতেই বিশ্বাস করেনা । তাই সে মামাকে বলল তোরা না গেলে না যা আমি যাব ।

মামার বন্ধুটি গাড়ি ঘুরিয়ে সেই মেয়েটি যে জায়গায় ছিল সেই জায়গায় যেয়ে দেখে মেয়েটি হাটু গেড়ে বসে আছে । তারা নেমে দেখে সেটি ছিল এক মহিলা ।বয়স আনুমানিক ৪০-৪৫। তারা মহিলাকে বলে এত রাতে আপনি এখানে কোন বিপদ হয়েছে নাকি ।মহিলাটি কোন কথা না বলে ফুপিয়ে কাদতে থাকে । মহিলার কান্নার কারন জানতে চাইলেও মহিলাটি কিছুই বলেনা ।হঠাত্ মহিলাটি বিলের মধ্য দিয়ে হেটে যেতে থাকে । মামা বন্ধুকে বলে মহিলার সাথে যাবার দরকার নাই,বিপদ হতে পারে । কিন্তু বন্ধুটি মামারকথা না শুনে মহিলার পেছন পেছন যেতে থাকে । নিরুপায় হয়ে মামাও যায় তার সাথে ।


কিছুদূর যাবার পর মহিলাটি কিছু একটা দেখিয়ে হু হু করে কেদে উঠল । মামা এবং বন্ধু যেয়ে দেখে বস্তা। ভেতর একটা কাপড়ে ঢাকা ছোট বাচ্চার মরদেহ । মামা এই লাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিলাটি চুপ করে কাদতে থাকে । মামারা ভাবে মহিলাটি হয়তো বোবা ।হুট করে মামার বন্ধুটি বলে উঠে যে চল মহিলাটি আমরা সাথে করে নিয়ে যাই,এই নির্জন এলাকায় এত রাতে ফেলে রেখে যাওয়া উচিত হবে না । মামা অনিচ্ছা সত্বেও রাজি হলো ।


মহিলাটিকে গাড়ির পেছন সিটে বসিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে । এমন সময় মামা লুকিং গ্লাসেরদিকে তাকিয়ে দেখে মহিলাটার মাথাহীন দেহ ।সাথে সাথে পেছন ফিরে দেখে মহিলাটি ঠিকই আছে । কিন্তু আবার যখন লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাল তখন একই দূশ্য দেখল ।মামা তখন তার বন্ধুকে দেখতে বলল ।বন্ধুটিও একই দূশ্য দেখে ভয়ে কাপতে লাগল এবং তারা দু
প্রচন্ড ঘামতে শুরু করল ।

মামা ভয়ে কাপড় দিয়ে লুকিং গ্লাস ঢেকে দিল এবং মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল আপনি কি কিছু খাবেন ।সাথে সাথে খেয়াল করে মহিলাটির চোখ অনেকখানি লাল এবং মৃত শিশুটি তার কোলেই রয়েছে ।মামারা সৃষ্টিকর্তা কে ডাকত থাকে।

কিছুদূর যেতে না যেতেই তারা সেই মহিলাটিকে রাস্তার পাশে দাড়ানো অবস্থায় দেখে। কিন্তু মহিলাটি তো তাদের গাড়িতে বসা ছিল । তারা গাড়িটা থামিয়ে দিল এবং একসাথে দেখল যে পেছনে মহিলাটি নাই এবং সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটা হচ্ছে মৃত বাচ্চাটি সিটের উপর দাড়িয়ে তাদের দিকে মুচকি হাসছে এবং বাচ্চাটির চোখ খোলা ।এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বন্ধুটি জ্ঞান হারায়।

মামা মনে সাহস আনার চেষ্টা করল এই ভেবে যদি আমার কিছু হয় তাহলে আমাদের আজ রাতে এখানে পড়ে থাকতে হবে,কিছুতেই জ্ঞান হারানো যাবে না । এবার ড্রাইভ করতে লাগল পল্টু। তারা ভয়ে পেছনে তাকাচ্ছে না ।
হঠাত্ মামা পেছন থেকে খঠমট আওয়াজ শুনতে পেল । মামা ভয়ে ভয়ে লুকিং গ্লাসের কাপড় সরিয়ে দিয়ে দেখে বাচ্চাটি একটা রক্তাক্ত পা খাচ্ছে ।

এইটা দেখে মামা গাড়ির গতি আরো বাড়িয়ে দিল এবং মামারা নাকি আরো ২বার মহিলাটি দাড়ানো অবস্থায় দেখেছে ।

ইতিমধ্যে সকাল হয়ছে তো মামা দেখে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলছে ।ঘড়িতে তখন সকাল ৭.২৫ । মামা গাড়ি থামিয়ে পেছনে দেখে কেউ নাই শুধুমাত্র সেই কাপড়টা ছাড়া যে কাপড়ে বাচ্চাটি ঢাকা ছিল ।মামা যেয়ে দেখে কাপড়ের মধ্যে কয়েকটা রক্তাক্ত হাড় পড়ে আছে ।

সব বন্ধুরা নামল।মামা রাস্তার কয়েকজন লোককে ডেকে আনল ব্যাপারটা দেখানোর জন্য ।কিন্তু এসে দেখে গাড়ির পেছনের সিটে তাদের ব্যাগ ছাড়া কিছুই নেই।