www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অনুপ্রেরণা

অনুপ্রেরণা
পুষ্পিতা পাল
মেয়েটি ক্লাসের এক কোনে বসে আছে। রসায়ন ক্লাস ‌।
হঠাৎ শিক্ষক প্রশ্ন করলেন এই যছ বাবু বলোতো এই সমীকরণের সমাধান কী হবে। মেয়েটি বলতে পারলো না। শিক্ষক তাকে না বকে পড়াটা বুঝিয়ে দিলেন। তাকে শিক্ষক অন্য প্রশ্ন করলেন এবং বললেন তুমি পারবে আমি জানি। মেয়েটি এবার বলতে পাড়ল।

বাড়িতে তার জন্য গৃহ শিক্ষক ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু কে তা মেয়েটি জানতো না। শিক্ষককে দেখে মেয়েটি তো অবাক। তার গৃহ শিক্ষক আসলে স্কুলের রসায়ন শিক্ষক।
মেয়েটি সর্বদা অন্যমনস্ক থাকতো। নবম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো করতে পাড়লো না। বাড়িতে সবাই রাগ করলেও তার শিক্ষক তাকে বলল বুঝে বুঝে পড়ো তুমি পারবে।

মেয়েটি শিক্ষককে বলল সে এখন থেকে খুব খাটবে। কিন্তু মেয়েটি কথা রাখতে পারে নি। পরদিন শিক্ষক তার প্রতি কিছুটা অসন্তুষ্ট হন। পড়িয়ে যাওয়ার আগে শিক্ষক বললেন আমি তোমাকে কত ও ভালোবাসি, স্নেহ করি। কিন্তু আজ আমি মর্মাহত হয়েছি। মেয়েটি শিক্ষককে খুব ভালোবাসে। শ্রদ্ধা করে। একথা শুনে সে খুব কাঁদে। মনে মনে পণ করে শিক্ষককে আর মর্মাহত হতে দেওয়া যাবে না।

সে এবার সত্যি সত্যি খুব খাটে। টেস্ট পরীক্ষায় পাশ হয়। শিক্ষক খুশি হয়ে তাকে লজেন্স উপহার দেয় এবং বলে বলেছিলাম না তুমি পারবে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ,তার পরিবারের সবাই বেড়াতে গেলেও মেয়েটি যায় না। মেয়েটি অনেক পরিশ্রম করে। তখন শিক্ষক ঘন্টার পর ঘন্টা তাকে সময় দিত। নানা উপদেশ দিত। শিক্ষক বলে আমি তোমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। তুমি পারবে। চালিয়ে যাও। হাল ছেড়ো না।

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়। ফলাফল আশানুরূপ হয় না কিন্তু খুব খারাপ ও না। মেয়েটি কান্না করে। মা বাবা রাগ করলেও তখন শিক্ষক বলেন তিনি খুব খুশি।

তবু ও শিক্ষকের কথা রাখতে পারে নি বলে মেয়েটির মন খারাপ থাকে। রাতে ঘুমাতে পারে না। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না। নিজেকে অপরাধী মনে করতে থাকে।

কলেজের পড়া বেশ কিছুদিন ধরে শুরু করেছে
সেই শিক্ষককের কাছে। শিক্ষক তাকে কিছু কলেজের বই দেয়। কিন্তু কিছুদিন ধরে শিক্ষক লক্ষ্য করে হাসি খুশি মেয়েটি কেন যেন নিজেকে গুটিয়ে ফেলছে। হাসি খুশি মেয়েটাকে যেন দেখতে পাচ্ছে না।

পড়া শেষ করার পর বলে বল বাবু তোমার কি হয়েছে? মা বকেছে? বাবা বকেছে? আমি বকেছি? তোমার মন খারাপ কেন?
বেশ কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি বলল তার কষ্টের কারণ।
শিক্ষক বললেন বোকা মেয়ে। আমি তো অনেক খুশি। তুমি নবম শ্রেণীতে নয় পেয়েছিলে এখন ঊনআশি পেয়েছ। তুমি পরিশ্রম করেছো। আমি তো জানি। হয়তো এটাই তোমার জন্য অনেক শুভ কিছু নিয়ে আসবে। পরিক্ষায় কপি করলে, মুখস্থ করে পরিক্ষায় লিখলেই ভালো কিছু করা যায় না। রেজাল্ট দিয়ে কিছু আসে যায় না। তুমি কতটুকু শিখছ, কাজে লাগাতে পারলে সেটাই আসল।
সৎ পথে চল। ভালো মানুষ হও। আমি জানি একদিন তুমি অনেক বড় কিছু একটা হবে। আমি বুড়ো হয়ে খবরের কাগজে দেখব আর বলব আমার ছাত্রী ছিল।

মেয়েটির আরেক শিক্ষিকা ও তাকে নিয়ে গর্বিত। কারণ মেয়েটি এখন ছোট ছোট গল্প লিখছে। তারা আনন্দিত। অনেকেই তাকে খুব আপন করে নিয়েছে গল্পগুলো পড়ে।

এভাবে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও আশির্বাদ নিয়ে মেয়েটি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে। শিক্ষক আবার সেই হাসি মাখা কন্ঠ খুঁজে পেলেন।
জীবনে চলার পথে পায়ে কাঁটা ফুটলে এসব ছোট ছোট অনুপ্রেরণা জাদুর মতো কাজ করে। তাই সকল শিক্ষকদের জন্য আমার শতকোটি প্রণাম।😊😊
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৭/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast