দৌড়
‘শুরু হতে চলেছে বাৎসরিক দৌড় প্রতিযোগিতা। নিয়মাবলী পড়ে শোনানো হচ্ছেঃ-
১. প্রতিযোগিদের সামনে একশো ক্যারেটের একটা হীরকখণ্ড থাকবে। সেটাকে লক্ষ করে প্রত্যেককে ছুটতে হবে।
২. অন্যের দৌড়ে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। করলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আছে (দশ ঘা চাবুকের বাড়ি),
৩. যে ঐ হীরেটাকে আগে ছুঁতে পারবে, সেই হবে হীরের মালিক।
...’
হীরে– এই একটা শব্দের জন্যেই এই প্রতিযোগিতা। বলা হয় এই দৌড়টাই জীবন। ঐ যে গ্যালারিতে রাজামশাই তার সুন্দরী রাণীর সাথে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছেন। তার সাথে মন্ত্রী, আরও যত আমলা, অভিজাতবর্গ – এরাই এসব কথা বলে। সাধারণ লোকে তাই বোঝে। জানে প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে সে হীরে পাবে। জীবনযুদ্ধে জিতে তার দুঃখ ঘুচবে, দারিদ্র্য ঘুচবে। তাই এই মাঠভর্তি লোক শুধু হীরের দিকে লক্ষ রেখে ছুটবে।
রেফারি বাঁশি দিতেই শুরু হল দৌড়। পিছনে চলল অশ্বারোহী বাহিনী। কিছু লোক আছে যারা অন্যকে ল্যাং মেরে ফেলার চেষ্টা করল। তাদের গায়ে চাবুকের বাড়ি পড়ল সপাং সপাং। মাঠ থেকে তাদের বের করে দেওয়া হল।
সবাই দৌড়চ্ছে।
জোরে...
আরও জোরে...
শুধু একটা লক্ষের দিকেই তারা তাকিয়ে। পাশ ফিরলে দেখতে পেত রাজা আর রাণী কেমন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে। কেমন মজা উপভোগ করছে ওরা।
একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল অনেকে। কেউ কেউ বমি করল। কেউ বা মাঠেতেই শুয়ে পড়ল, মুখে গ্যাঁজলা উঠতে উঠতে মরেও গেল কিছু। কিন্তু তাদের দিকে তাকাবে কে?
* * *
বিকেলের রোদ পড়ে আসে একসময়। শেষ ব্যক্তিও দৌড়তে দৌড়তে তখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর চলতে পারছে না সে। মাটিতে শুয়ে পড়ার আগে লক্ষ করল গ্যালারি ফাঁকা। এমনকি রাজসৈন্যও আর নেই। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় সে দেখতে পেল, হীরের খণ্ডটা এখনও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে। অধরা। দৌড়নোর আগে ঠিক যতটা দূরে ছিল, এখনও ততটাই। অবাক হয়ে গেল সে। এটা কি তবে ভ্রান্তি???
সন্ধে নাগাদ কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে মাঠে আসে। প্রতিবারই ওরা আসে এসময়ে। মাঠে উচ্ছিষ্ট খাবারদাবার পড়ে থাকে। ওরা সেগুলো কুড়িয়ে খায়। অভিজাতরা যত না খায় তার চেয়ে বেশি ছড়ায় – এতে বাচ্চাগুলোর পেট ভরে এই যা।
ওরা অবাক হয়ে লক্ষ করল – মাঠে প্রায় কয়েক হাজার লোকের ভিড়। তারা কিসব যেন আলোচনা করছে। তাদের কেউ কেউ মাঝেমাঝে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছে। বাচ্চাগুলো ভয় পেয়ে যায়।
* * *
রাজবাড়ি।
এখানে দুশ্চিন্তা। গুপ্তচরের কথায় সকলের তো মাথায় হাত।
সে জানাচ্ছে, সবাই নাকি বুঝে গেছে, ওটা আসল হীরে নয়। একটা টোপ। ওরা নাকি এও জেনে গেছে, ওরা সারা মাঠ শুধু ঘুরেছে। কিন্তু হীরেটা কেউই পায়নি।
রাজা বলল, ‘জানল কি করে ওরা?’
সবাই নিরুত্তর।
-ওদের যে করে হোক বোঝাও, হীরেটা প্রথম ব্যক্তিই পেয়েছে। ওরা তো এতদিন তাই জানত। আর তাই তো ওরা প্রথমজনকে ঈর্ষা করত। একে অন্যকে দোষারোপ করে বেশ তো শান্তিতে ছিল। তবে এবার কি করে সত্যিটা টের পেল তারা?
মন্ত্রী মনে মনে বলে, কত দিন আর বোকা বানানো যায় মহারাজ? কিন্তু তারপরেই তার খেয়াল হল, তাকে রাজআজ্ঞা পালন করতে হবে। সে অন্যান্য পারিষদদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে যায়।
তারপর যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সৈন্যরা যখন বেরোল, বাইরে তখন প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে। রাজবাড়ির ফ্ল্যাডলাইটে দেখা গেল দূরে একটা কালো বর্ডার।
কালো বর্ডারটা ধীরে ধীরে পুরু হচ্ছে। মনে হল একটা বন্যা যেন এদিকেই আসছে। মাঠের ঐ হাজার লোক এখন লক্ষ হয়ে গেছে।
ওদের মুখে গান, ‘তৈরি হও রাজা। এবার তোমরা দৌড়বে। যে প্রথম হবে সে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবে।’
১. প্রতিযোগিদের সামনে একশো ক্যারেটের একটা হীরকখণ্ড থাকবে। সেটাকে লক্ষ করে প্রত্যেককে ছুটতে হবে।
২. অন্যের দৌড়ে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। করলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আছে (দশ ঘা চাবুকের বাড়ি),
৩. যে ঐ হীরেটাকে আগে ছুঁতে পারবে, সেই হবে হীরের মালিক।
...’
হীরে– এই একটা শব্দের জন্যেই এই প্রতিযোগিতা। বলা হয় এই দৌড়টাই জীবন। ঐ যে গ্যালারিতে রাজামশাই তার সুন্দরী রাণীর সাথে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছেন। তার সাথে মন্ত্রী, আরও যত আমলা, অভিজাতবর্গ – এরাই এসব কথা বলে। সাধারণ লোকে তাই বোঝে। জানে প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে সে হীরে পাবে। জীবনযুদ্ধে জিতে তার দুঃখ ঘুচবে, দারিদ্র্য ঘুচবে। তাই এই মাঠভর্তি লোক শুধু হীরের দিকে লক্ষ রেখে ছুটবে।
রেফারি বাঁশি দিতেই শুরু হল দৌড়। পিছনে চলল অশ্বারোহী বাহিনী। কিছু লোক আছে যারা অন্যকে ল্যাং মেরে ফেলার চেষ্টা করল। তাদের গায়ে চাবুকের বাড়ি পড়ল সপাং সপাং। মাঠ থেকে তাদের বের করে দেওয়া হল।
সবাই দৌড়চ্ছে।
জোরে...
আরও জোরে...
শুধু একটা লক্ষের দিকেই তারা তাকিয়ে। পাশ ফিরলে দেখতে পেত রাজা আর রাণী কেমন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে। কেমন মজা উপভোগ করছে ওরা।
একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল অনেকে। কেউ কেউ বমি করল। কেউ বা মাঠেতেই শুয়ে পড়ল, মুখে গ্যাঁজলা উঠতে উঠতে মরেও গেল কিছু। কিন্তু তাদের দিকে তাকাবে কে?
* * *
বিকেলের রোদ পড়ে আসে একসময়। শেষ ব্যক্তিও দৌড়তে দৌড়তে তখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর চলতে পারছে না সে। মাটিতে শুয়ে পড়ার আগে লক্ষ করল গ্যালারি ফাঁকা। এমনকি রাজসৈন্যও আর নেই। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় সে দেখতে পেল, হীরের খণ্ডটা এখনও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলছে। অধরা। দৌড়নোর আগে ঠিক যতটা দূরে ছিল, এখনও ততটাই। অবাক হয়ে গেল সে। এটা কি তবে ভ্রান্তি???
সন্ধে নাগাদ কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে মাঠে আসে। প্রতিবারই ওরা আসে এসময়ে। মাঠে উচ্ছিষ্ট খাবারদাবার পড়ে থাকে। ওরা সেগুলো কুড়িয়ে খায়। অভিজাতরা যত না খায় তার চেয়ে বেশি ছড়ায় – এতে বাচ্চাগুলোর পেট ভরে এই যা।
ওরা অবাক হয়ে লক্ষ করল – মাঠে প্রায় কয়েক হাজার লোকের ভিড়। তারা কিসব যেন আলোচনা করছে। তাদের কেউ কেউ মাঝেমাঝে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছে। বাচ্চাগুলো ভয় পেয়ে যায়।
* * *
রাজবাড়ি।
এখানে দুশ্চিন্তা। গুপ্তচরের কথায় সকলের তো মাথায় হাত।
সে জানাচ্ছে, সবাই নাকি বুঝে গেছে, ওটা আসল হীরে নয়। একটা টোপ। ওরা নাকি এও জেনে গেছে, ওরা সারা মাঠ শুধু ঘুরেছে। কিন্তু হীরেটা কেউই পায়নি।
রাজা বলল, ‘জানল কি করে ওরা?’
সবাই নিরুত্তর।
-ওদের যে করে হোক বোঝাও, হীরেটা প্রথম ব্যক্তিই পেয়েছে। ওরা তো এতদিন তাই জানত। আর তাই তো ওরা প্রথমজনকে ঈর্ষা করত। একে অন্যকে দোষারোপ করে বেশ তো শান্তিতে ছিল। তবে এবার কি করে সত্যিটা টের পেল তারা?
মন্ত্রী মনে মনে বলে, কত দিন আর বোকা বানানো যায় মহারাজ? কিন্তু তারপরেই তার খেয়াল হল, তাকে রাজআজ্ঞা পালন করতে হবে। সে অন্যান্য পারিষদদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে যায়।
তারপর যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সৈন্যরা যখন বেরোল, বাইরে তখন প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে। রাজবাড়ির ফ্ল্যাডলাইটে দেখা গেল দূরে একটা কালো বর্ডার।
কালো বর্ডারটা ধীরে ধীরে পুরু হচ্ছে। মনে হল একটা বন্যা যেন এদিকেই আসছে। মাঠের ঐ হাজার লোক এখন লক্ষ হয়ে গেছে।
ওদের মুখে গান, ‘তৈরি হও রাজা। এবার তোমরা দৌড়বে। যে প্রথম হবে সে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচবে।’
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
হাসান ইমতি ০৯/০৫/২০১৪বেশ লাগলো ...
-
এস,বি, (পিটুল) ৩০/০৪/২০১৪Valo laglo apnar golpo ti.
-
পল্লব ৩০/০৪/২০১৪রূপক গল্পে সঠিক বাস্তবচিত্রটিই ফুটিয়ে তুলেছেন। বেশ ভাল লেগেছে আপনার গল্পটি। আরও লিখুন।