www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জয়ন্তর মেডেল

চলন্ত বাসটিকে হাত উচিয়ে দার করালো জয়ন্ত। বাসটি আস্তে-আস্তে ঠিক তার সামনে থামলো। বাসের দরজার কাছ হতে আওয়াজ এলো, "কোথায় যাবেন?"
কৃষনগর মুখটা বারিয়ে বলল জয়ন্ত।
কন্ট্রাক্টর বলেন উঠে আসুন।
জয়ন্ত উঠে গেল প্রচণ্ড ভিড়ে ঠাসা বাসটিতে।
বাসের ভিতর উঠতেই সে যেন পাকা কলা পায়ের তলায় পরার অবস্থায় পড়লেন। আজ জয়ন্তকে কলেজে যেতেই হবে, না হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার গোল্ড মেডেল টা নেওয়া হবে না।
জয়ন্তর চেহারা দেখলে তার স্বভাব সম্বন্ধে বেশিরভাগটাই আন্দাজ করা যায় আর সে আন্দাজটাও সঠিক।
তেলে চুপ-চুপে চুল,একপাশে সিতে কাটা, হেংলা চেহারার একেবারে খাটি গ্রাম্য বাঙালী ছেলে কিন্তু পড়াশোনাতে সে মোটেই কম যায় না কারো থেকে।
প্রচণ্ড ভিড় জমা বাসটিতে একে অন্যের গায়ে ঠেলাঠেলির দোষারোপের এপার-ওপার করলেও জয়ন্ত কিন্তু চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মাটির মানুষ জয়ন্ত আজ সে কলেজ থেকে গোল্ড মেডেল পাবে।সে সন্মানিক পরীক্ষায় অঙ্ক বিভাগে প্রথম স্থানাধিকার করেছে। নিজে টিউশন পড়িয়ে সংসার ও তার পড়াশোনা চালাতে হয়।
পাশের থেকে বলরাম বলে উঠলো, জয়ন্ত তোর তো বিশাল ব্যাপার রে তুই তো আমাদের গোল্ড কয়েন।
জয়ন্ত মুখে আঙুল দিয়ে ইসারা করলো চুপ !
জয়ন্ত জানালার পাশে এলো কোনোমতে, তারপর আতিথেয়তার সুরে বললো ভালো আছো তো বলোরাম দা??
হাঁ ভাই! তোর বাবা কেমন আছেন এখন?একটু কাতর স্বরে বলল বলরাম।
জয়ন্ত নম্ভ্র স্বরে বলে উঠলো ভালো নেই দাদা রোগটা যে মারাত্মক ভালো আর কি করে থাকে!
আমি যে কোনো দিশে পাচ্ছি না।চারিদিকে যেন অন্ধকার দেখছি।বাড়িতে যা টাকা পয়সা ছিলো তা সবই শেষ হয়ে গেছে বাবার ডাক্তার খরচে আর একটি কানা-কড়িও নেই।
বলরাম বলল, এখন কী করবি বলে ভাবছিস?
জয়ন্ত একটু ভাবাণ্বিত হয়ে বলল, কী আর করবো আগামি কাল বাবাকে নিয়ে চিত্তরনজন যেতে হবে, সম্বল বলতে আজ গোল্ড মেডেল টা পাবো আর কিছু নগদ অর্থ। মেডেলটা বেচেই..................
বলতে বলতে জয়ন্তর গলাটা যেন আটকে এলো।
কিছুক্ষণ বাদে জয়ন্ত বলল বাবা যে ছোট্ট বেলা থেকে আমাকে মানুষ করেছে আমি বড় কিছু হই এটাই বাবা দেখে যেতে চাই, আর আমি চাই বাবা খুব শিগগির ভালো হয়ে উঠুক।
তুই তোর পুরষ্কার টা বেঁচে দিবি? বলল বলরাম।
কি আর করবো বলো আত্মীয় স্বজনরা টাকা চাবো ভেবে আসায় বন্ধ করে দিয়েছে আর বাবা আমার জন্য এতোকিছু করেছে আর তার জন্য এটুকু পারবো না।
বাবা বিছানায় পরে কাতরাচ্ছে আর আমি ছেলে হয়ে কিভাবে থাকি???
পড়াশোনাটা আর হবে না বোধোয় দাদা।
আজ মনে হছে গাড়িটা দেরিতে এসেছে তাই না দাদা??
হুঁ দেখচ্ছিস না কি জোড়ে চালাচ্ছে........
হঠাৎ জয়ন্তর ফোন বেজে উঠলো ক্রিং ক্রিং......শব্দে।
খুবই সামান্য দামের সেট টা বার করে কানে রেখে বলে উঠলো -বলো মা কি বলছো?
ফোনের ভিতর হতে কথা ভেঁসে এলো খোকা তাড়াতাড়ি যদি পারিস টাকা নিয়ে বাড়ি আয় তোর বাবা ছটফট করছে এক্ষুনি হসপিটলে নিয়ে যেতে হবে।
আমি কলেজ পোঁছেই চলে আসবো।
কথা বলতে বলতেই বাসের ভিতর ভিষণ একটা চিৎকার, সব যেন ভেস্তে গেল।
সামনে থেকে আগত লড়ির ধাক্কায় সব নিস্তব্ধ।
জয়ন্তর ফোনটা বাঁজতে বাঁজতে থেমে গেল।মায়ের কথাটা তখনও শোনা যাচ্ছে।
বাসের ভিতরকার ঠেলাঠেলির ভিড় আর নেই অনেকটা জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রক্তাক্ত যাত্রীগুলো।
এখন ১০টা৪৫মিনিট জয়ন্ত পরে রয়েছে রাস্তার উপর। কপাল থেকে অনর্গল রক্তপাত আর নিঃশ্বাস নিচ্ছে না সে, দিশেহারাও আর সে নেই। বইয়ের অঙ্ক মেলাতে পারলেও জীবনের অঙ্কের সূত্র মাঝপথে সে হারিয়ে ফেলল।
চারিদিকে আকাশের কোন বেয়ে যেন কালিমা ছেয়ে গেলো।
বলোরাম জয়ন্তর মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে চিৎকার করতে লাগলো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৭/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast