প্রতীক্ষা
"এই যে একটু শুনুন।" পিছনে ফিরে তাকালো শুভ্র। "আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। আগে কোথায় যেন দেখেছি বলুন তো?" শুভ্র মেয়েটিকে নিমিষেই চিনে ফেললো। মুচকি হেসে বললো, " আমি শুভ্র। আর তোমার নাম জোনাকি তা আমি জানি। শুভ্র শব্দটি শোনার পরপরই জোনাকির কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো শুভ্র শব্দটি। তার পরক্ষনেই মনে মনে গেল প্রায় চারবছর আগে শুভ্রের সাথে তার প্রথম দেখা ও আংশিক পরিচয় হয়েছিল। আংশিক পরিচয় বলার কারন হলো তাদের দেখা হয়েছিল চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে। ছাত্রছাত্রীদের দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত সংখ্যক আসনে ভর্তি হবার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় বলে একে কেউ কেউ ভর্তিযুদ্ধ নামেও অভিহিত করে থাকেন।
শুভ্রের স্মৃতিপটে এখনো অম্লান সেদিনের সে স্মৃতি। তাদের দুজনের সীট পড়েছিলো পাশাপাশি, একেবারে শেষ বেঞ্চটিতে। জোনাকি ছিলো দীর্ঘ কেশী ভৈরবের মেয়ে। টোল পড়া গালে তার হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। শুভ্র এই অপরুপ সৌন্দর্য বারবার অবলোকন করতে চায়, তাই পরীক্ষার হলে বসেও তাকে নামা ছলে হাসানোর চেষ্টা করে। তারা দুজনেই বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী হলেও সাহিত্যের প্রতি রয়েছে বিশেষ অনুরাগ ; জমে উঠে তাদের কথোপকথন। কিন্তু তা বেশিদূর এগুতে পারেনি, পরীক্ষা শুরুর সময় হয়ে যায়। তারা কেউ ফোন নাম্বার বিনিময় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। এজন্য এদের কারো কখনো আফসোস হয়েছে কি না তা যথার্থভাবে নির্ণয় করা দুরুহ। পরীক্ষা শেষ হয় কিন্তু তাদের আর দেখা কিংবা কথা হয়নি।
"এই শুভ্র আনমনে কি ভাবছো?" একটু থতমত হয়ে শুভ্র বললো, " ভাবছি সেই দিনের কথা যেদিন আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।" "তাই বুঝি! তুমি আগের চেয়ে বেশখানিকটা বদলে গেছো। অবশ্য চার বছর তো কম সময় নয়।" বলে একটু মুচকি হাসলো জোনাকি।
- তোমার হাসিটা আগের মতোই আছে, এতটুকুও বদলায়নি।
- আচ্ছা শুভ্র চল কোথাও গিয়ে বসি আমরা।
- কোথায় যাবে?
- সামনের এই খোলা উদ্যানে গিয়ে বসি আমরা।
- আচ্ছা চলো।
বাদাম চিবোতে চিবোতে রুদ্র বললো, " আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি। দিবস-রজনী, শয়নে-স্বপনে সবখানে।" জোনাকি হেসে বললো, "আচ্ছা তুমি আমায় কেনো খুঁজেছো?" " আমি তোমায় কেন খুঁজেছি সে প্রশ্ন তো আমারো!" জোনাকির ফোনে একটা জরুরি কল আসার পর সে কাল বিকালে এই জায়গায় আবারো আসবে বলে চলে গেল। শুভ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোমল পায়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো।
নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা জোনাকিকে স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরার মতো লাগছে। কালো টিপটা কপালের মাঝখানে পড়তে পারেনি সে। শুভ্রের ইচ্ছা হল টিপটা তুলে কপালের ঠিক মাঝখানে পড়িয়ে দিতে। কিন্তু তা করার সাহস পায়নি। কানাডায় একটা স্কলারশিপ পেয়েছে জোনাকি। শুক্রবার রাতে তার ফ্লাইট। শুভ্রকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছে। বহুদিন পর কুড়িয়ে পাওয়া মুক্তোটা যেন হাত ফসকে অতল গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই; সুন্দর একটি মুহূর্তই যথেষ্ট। এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে সে। পুরোটা বিকেল তারা একসঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে, যাবার আগে একটি চিরকুট শুভ্রের হাতে ধরিয়ে দিল জোনাকি।
চিঠিটা পাওয়ার পর থেকে তার শরীরের ভিতর দিয়ে যেন অনবরত হাজার বোল্টের বিদ্যুৎ বয়ে যাচ্ছে। কাঁপাকাঁপা হাতে সে খাম থেকে চিঠিটা বের করলো। চিঠিতে লেখা ছিলো, " শুভ্র, আজ থেকে ঠিক দুবছর পর এই জায়গায় এমনই এক বসন্তের বিকালে আমি তোমার প্রতীক্ষায় থাকবো। তুমি আসবে তো? "
#প্রতীক্ষা
১২.০১.২০১৯
শুভ্রের স্মৃতিপটে এখনো অম্লান সেদিনের সে স্মৃতি। তাদের দুজনের সীট পড়েছিলো পাশাপাশি, একেবারে শেষ বেঞ্চটিতে। জোনাকি ছিলো দীর্ঘ কেশী ভৈরবের মেয়ে। টোল পড়া গালে তার হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। শুভ্র এই অপরুপ সৌন্দর্য বারবার অবলোকন করতে চায়, তাই পরীক্ষার হলে বসেও তাকে নামা ছলে হাসানোর চেষ্টা করে। তারা দুজনেই বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী হলেও সাহিত্যের প্রতি রয়েছে বিশেষ অনুরাগ ; জমে উঠে তাদের কথোপকথন। কিন্তু তা বেশিদূর এগুতে পারেনি, পরীক্ষা শুরুর সময় হয়ে যায়। তারা কেউ ফোন নাম্বার বিনিময় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। এজন্য এদের কারো কখনো আফসোস হয়েছে কি না তা যথার্থভাবে নির্ণয় করা দুরুহ। পরীক্ষা শেষ হয় কিন্তু তাদের আর দেখা কিংবা কথা হয়নি।
"এই শুভ্র আনমনে কি ভাবছো?" একটু থতমত হয়ে শুভ্র বললো, " ভাবছি সেই দিনের কথা যেদিন আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।" "তাই বুঝি! তুমি আগের চেয়ে বেশখানিকটা বদলে গেছো। অবশ্য চার বছর তো কম সময় নয়।" বলে একটু মুচকি হাসলো জোনাকি।
- তোমার হাসিটা আগের মতোই আছে, এতটুকুও বদলায়নি।
- আচ্ছা শুভ্র চল কোথাও গিয়ে বসি আমরা।
- কোথায় যাবে?
- সামনের এই খোলা উদ্যানে গিয়ে বসি আমরা।
- আচ্ছা চলো।
বাদাম চিবোতে চিবোতে রুদ্র বললো, " আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি। দিবস-রজনী, শয়নে-স্বপনে সবখানে।" জোনাকি হেসে বললো, "আচ্ছা তুমি আমায় কেনো খুঁজেছো?" " আমি তোমায় কেন খুঁজেছি সে প্রশ্ন তো আমারো!" জোনাকির ফোনে একটা জরুরি কল আসার পর সে কাল বিকালে এই জায়গায় আবারো আসবে বলে চলে গেল। শুভ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কোমল পায়ে ওর চলে যাওয়া দেখলো।
নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা জোনাকিকে স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরার মতো লাগছে। কালো টিপটা কপালের মাঝখানে পড়তে পারেনি সে। শুভ্রের ইচ্ছা হল টিপটা তুলে কপালের ঠিক মাঝখানে পড়িয়ে দিতে। কিন্তু তা করার সাহস পায়নি। কানাডায় একটা স্কলারশিপ পেয়েছে জোনাকি। শুক্রবার রাতে তার ফ্লাইট। শুভ্রকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছে। বহুদিন পর কুড়িয়ে পাওয়া মুক্তোটা যেন হাত ফসকে অতল গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই; সুন্দর একটি মুহূর্তই যথেষ্ট। এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে সে। পুরোটা বিকেল তারা একসঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে, যাবার আগে একটি চিরকুট শুভ্রের হাতে ধরিয়ে দিল জোনাকি।
চিঠিটা পাওয়ার পর থেকে তার শরীরের ভিতর দিয়ে যেন অনবরত হাজার বোল্টের বিদ্যুৎ বয়ে যাচ্ছে। কাঁপাকাঁপা হাতে সে খাম থেকে চিঠিটা বের করলো। চিঠিতে লেখা ছিলো, " শুভ্র, আজ থেকে ঠিক দুবছর পর এই জায়গায় এমনই এক বসন্তের বিকালে আমি তোমার প্রতীক্ষায় থাকবো। তুমি আসবে তো? "
#প্রতীক্ষা
১২.০১.২০১৯
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৫/০৪/২০২৩সুন্দর
-
নাসরীন আক্তার রুবি ১৮/০৬/২০১৯সুন্দর
-
সেখ আক্তার হোসেন ০৪/০২/২০১৯বাহঃ খুব ভালো লাগলো আমার
-
ন্যান্সি দেওয়ান ২৯/০১/২০১৯Good.
-
শেখ ফারুক হোসেন ২৮/০১/২০১৯চালিয়ে যান
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৭/০১/২০১৯পড়েছি।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৫/০১/২০১৯দারুণ
-
আব্দুল হক ২৪/০১/২০১৯সুন্দর হয়েছে।