www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নাম করনের সার্থকতা ও একটি কীট। প্রদীপ কুমার রায়

আমি হরিশ । সবাই যোজনগন্ধা বলে । কেন,জানি না ।আমার একটা পরম আশ্চর্যের জায়গা আছে। এই সমস্যার আজ পর্যন্ত কোন বৈজ্ঞানিক সদুত্তর পাই নি।
ব্যপারটা প্রথম সচেতন ভাবে টের পাই মাদ্রাজে এক স্হানীয় বন্ধুর বাড়িতে। তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী বাড়ির সামনেঁ একটা ছায়াছন্ন ছোট্ট দালান। যেখানে আরাম কেদারায় দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে ধূতি পরে একজন বয়ষ্ক ব্যাক্তি বসে কাগজ পড়ছিলেন। বাড়ির গেট খোলা । আমি ভিতরে ঢুকে জিগেস করলাম
'ভেনু আছে '? ভেনুগোপাল আয়েঙ্গার - আমাদের সাথে পড়ে।
ভদ্রলোক কাগজটা ভাঁজ করে পাশে রেখে বললেন ' ভেতরে আছে।ডেকে দিচ্ছি। ততক্ষন তুমি এখানে বোস' । এই বলে আমার পরিচয় জেনে উনি ভেতরে চলে গেলেন আর আমি ওনার ছেড়ে যাওয়া চেয়ার টায় বসলাম।
চারপাশ নিস্তব্ধ। ৫ টা বাজে। একটু ইতস্তত করে কাগজ টা তুলে নিলাম। পরক্ষণেই একটা অর্ধস্ফুট আওয়াজ করে লাফিয়ে উঠলাম। ইতোমধ্যে ভেনু বেরিয়ে এসেছে। আমাকে এভাবে লাফালাফি করতে দেখে ও অবাক হয়ে বলল ' কি হয়েছে'? আমি তো নিজেও পরিষ্কার নই। খালি সারাগায়ে হুল ফোটার অনুভব।
ভেনুকে এ কথাটা বলাতে সে অদ্ভূত ভাবে আমায় দেখল। তারপর সামনে এগিয়ে চেয়ার টা দেখে নিয়ে নিজেই তাতে সেদিন রাত্রেবসে পড়ল। কোন অসুবিধা নেই। উঠে আবার আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল।
ধন্দে পড়ে গেলাম। খানিক দ্বিধা করে আস্তে আস্তে আমি আবার সামনে এগিয়ে সাহস করে চেয়ার টাতে বসলাম। এবং পরক্ষনেই তুড়ক লাফ। সারা গায়ে এবার চাকা চাকা হয়ে গেছে।
ব্যাপারখানা কী ? আওয়াজে বাবাও বেরিয়ে এসেছেন।ভেনু এগিয়ে এসে ইজি চেয়ার টাকে তুলে এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে দেখল। আমিও ওর সাথে। কিছুই চোখে পরে না। এবার ভেনু ওটাকে তুলে মাটিতে ঠুকল ।
ব্যাস, চিচিং ফাঁক। শয়ে শয়ে ছারপোকা সারা মেঝেয়।
সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে ভেনু আর ভেনুর বাবা আমায় দেখতে লাগলেন। যেন আমিই সঙ্গে করে ঐ মৎকুন দের আমদানী করেছি। ভেনুর বাবা তো বলেই ফেললেন ' আমি তো সকাল বিকেল দুবেলাই এটাতে বসি। কখনো তো কিছু টের পাই নি'! বোঝ !
তখনই আমার পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। একবার শেয়ালদা স্টেশনে ট্রেন আসতে দেরী আছে দেখে একটা বেঞ্চে বসেছিলাম। পাশে আরো দুজন আছে। হঠাৎ সারা শরীর জ্বালা করতে আরম্ভ করায় উঠে পড়ি। নিচের দিকে চেয়ে দেখি বেঞ্চের ফাটা জায়গাটা দিয়ে লাইন দিয়ে ছারপোকারা আমার দিকে আসছে। অন্য লোকেদের প্রতি তাদের কোন ভ্রূক্ষেপই নেই। পাশের লোকেদের দেখানোয় তারাও বিস্মিত হয়। উঠে পাশের আর একটা বেঞ্চে বসার পরেও অবস্হা একই।
আর ঐ অমিতের বাড়ি! কী এক কারনে সেদিন রাত্রে অমিতের বাড়িতে থেকে গিয়েছি। স্কুল কলেজে এক সাথে পড়া, বাড়ির সকলেই বিশেষ চেনা। এক খাটেই দুজনে শুয়েছি। সিংগল হলেও বড় খাট। হস্টেলে এর চাইতে ছোট খাটেও দুজনে শোয়া অভ্যাস আছে। সুতরাং কোন অসুবিধাও নেই। সারাদিনে খাটাখাটনি গেছিল বলে ক্লান্তও । তাই পড়েই ঘুমিয়ে পড়ি দুজনেই।অঘটন ঘটল ঘন্টা খানেক পর।হঠাৎই সারা শরীরে সূচফোটার জ্বালা। তড়াক করে লাফিয়ে উঠি। দেয়াল ঘেঁষে শুয়েছিলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি রাশি রাশি ছারপোকার আনাগোনা।
অমিতেরও ঘুম ভেঙ্গে গেছিল। আলো জ্বালা ও আমাদের কথা বার্তায় বাড়ির অন্যরাও জেগে আমাদের ঘরে চলে আসে। তার পর সেই মাঝ রাতে আরম্ভ হয় ছারপোকা নিধন যজ্ঞ। তোষক নামিয়ে, গরম জল ঢেলে সে একটা হুলুস্হুলু কান্ড। উঃ। সে একটা ব্যপার বটে!
আসল ঘটনাটা কী ? কাম টু থিঙ্ক অফ ইট বিভিন্ন সময়ে কীট পতঙ্গ দের আমার প্রতি বেশী প্রেম লক্ষ্য করেছি।ছোটবেলায় মাঠে আড্ডা দেওয়ার সময় দেখেছি সন্ধ্যে বেলায় আমার মাথার ওপর টা বেশী কাল ও সংগীত মুখর। অথচ কুকুর আমায় কামড়ায় নি, সাপ কাটে নি, বেড়াল আঁচড়ায় নি। পায়ের ওপর দিয়ে ভ্রূক্ষেপ না করে ইঁদুর দৌড়ে গেছে, কাঠবিড়ালি হাত থেকে বাদাম খেয়েছে।আমার শরীরে কি এমন কোন উপাদান আছে যার প্রতি ছারপোকাদের যারপরনাই এবং দুর্নিবার আকর্ষণ আছে ? কীটপতঙ্গ ছারপোকা মশা এদের মানুষের কোন কোন স্পেশিমেনের প্রতি কোন কারনে দুর্বলতা আছে ?
কলেজ লাইফে অনেকে্র বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন না্ম করন হয়। আমার ও হয়েছিল । তারমধ্যে যোজনগন্ধা নামটার সংগীত মুখরতার জন্য আমার দিব্য লেগে যায়।ব্যাসমাতা সত্যবতীর অনুষঙ্গ থাকলেও। কিন্তু এর যে আরএকটা অন্য দিক আছে সেটা খেয়ালে আসেনি। সেই এক ক্রোশ দূর থেকে মানুষের গন্ধ পাওয়া। মানে কীটপতঙ্গের চার ফুট?
নামকরণের সার্থ্কতা একেই বলে।
বিষয়শ্রেণী: কৌতুক
ব্লগটি ১৩৩৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast