www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রকৃতিবাদের স্বরূপ

এই মহা প্রকৃতিতে প্রতিটি বস্তুকণা পরস্পর যে শক্তির আকর্ষণে আবদ্ধ সেই একই শক্তির ঘনীভূত রূপ প্রতিটি বস্তু। এই শক্তির সৃষ্টিও নেই ধ্বংসও নেই। আছে গতি, আছে তাল, আছে ছন্দ, আছে দোলন, আছে অনুকম্পন, আর আছে রূপান্তর। এটাই শক্তির নিত্যতা। এই আকর্ষী শক্তিরই অপর নাম প্রেম। এই প্রেমই অনন্ত কোটি  ব্রহ্মাণ্ডের উপাদান-কারণ নির্মাতা ধারক পোষক বাহক এবং চালিকাশক্তি। এই প্রেমই জীবন বা প্রাণ। অতএব সমগ্র জগৎই প্রাণময়। এই প্রেমই পরম জ্যোতি। এই  প্রেমই পরম আনন্দ। এই প্রেমই জগৎ-প্রসবিনী চিন্ময়ী পরমাপ্রকৃতি। এই প্রেম বস্তু ও ব্যক্তি নিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক সর্বব্যাপী সর্বজয়ী সর্বশক্তিমান সর্বরূপময় অনাদি অনন্ত সত্তা। এই প্রেমই আমি। অতএব আমি তথা প্রেম ছাড়া দ্বিতীয়  কোন সত্তা নেই। শুধু আমি--শুধু আমি--শুধুই আমি; শুধু প্রেম--শুধু প্রেম--শুধুই প্রেম--আর কিছুই নেই। প্রেমের এই বিশ্বরূপের অনুধাবন লালন পালন আচরণ স্মরণ শ্রবণ এবং মননই প্রেমসিদ্ধির একমাত্র পথ ও পাথেয়। বস্তুর স্বভাবের বৈচিত্র্য আর আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সত্তা দেখতে পাই। লৌকিক দৃষ্টিতে পৃথিবীকে সমতল দেখায়। আবার জ্ঞানদৃষ্টিতে একই পৃথিবী অনেকটা গোলাকার। কিন্তু প্রেমদৃষ্টিতে পৃথিবী আর আমি অভিন্ন সত্তা তথা প্রেম। প্রেমই শাশ্বত সত্তা। প্রেমই সর্বসিদ্ধিদাত্রী। প্রেমই সুন্দর। প্রেমই সত্য। মানব জীবনের সর্বাঙ্গীণ সার্থকতা অর্জন একমাত্র এই সত্য উপলব্ধির মধ্য দিয়েই সম্ভব। আর এই সত্য উপলব্ধি করতে হলে জীব ও জগতের সাথে আত্মবোধে তথা প্রেমবোধে আচরণ করতে হবে। এর বিকল্প কোন পথ নেই; থাকতে পারে না। কোন রকম দাসত্ব মানুষকে মুক্তি দিতে পারে না। হোক সেটা দেবতার প্রতি মানুষের কিংবা মানুষের প্রতি মানুষের অথবা বিষয়ের প্রতি বিষয়ীর । দাসত্বের মধ্য দিয়ে  যারা মুক্তির স্বাদ পেতে  চায় তারা চিরকাল দাসই থেকে যাবে। বস্তু যুগপৎ সসীম এবং অসীম। আকার ও আয়তনের বিচারে বস্তু অবশ্য সসীম  কিন্তু প্রেমের বিচারে প্রতিটি বস্তুই পরস্পর অবিচ্ছিন্ন, পরস্পর সম্পর্কিত, পরস্পর নির্ভরশীল, পরস্পর প্রভাব বিস্তারকারী, গতিময়, ধ্বনিময়, ছন্দোবদ্ধ, নৃত্যরত, অবিরাম পরিবর্তনশীল, তরল এবং সামগ্রিকভাবে অখণ্ড অসীম। এই অসীমতাই বস্তুর স্বরূপ তথা প্রেম। এই অসীমের  বোধকে বোধ করার মধ্যেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি নিহিত। অনাদিকাল ধরে মানুষের মধ্যে জাতিগত ধর্মগত সঙ্ঘগত সম্প্রদায়গত বর্ণগত গোত্রগত শ্রেণিগত নিত্যানিত্যগত যে অন্তহীন সমস্যা চলে আসছে তার মূল কারণ বস্তুর প্রতি আমাদের খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা সমন্বয়ের চেয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে, অখণ্ডের চেয়ে আংশিক বিশেষত্বকে, উপলব্ধির চেয়ে যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে বস্তুর চিরায়ত অকৃত্রিম অন্তর্নিহিত ধর্ম অপেক্ষা গোচরীভূত তথ্যভিত্তিক জ্ঞানের গুরুত্ব বেশি। আমরা অখণ্ডের দুটি সম্পূরক অংশকে ভিন্নধর্মী প্রতিপক্ষ ভাবি। আমাদের মানসিকতায় পল্লবিত শাখাপ্রশাখা শোভিত বৃক্ষ তার বীজের চেয়ে অধিকতর অর্থবহ। যতদিন  আমরা  বস্তুর মধ্যে অবস্তু, খণ্ডের মধ্যে অখণ্ড, ভাণ্ডের মধ্যে ব্রহ্মাণ্ড, বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু, প্রতিটি বস্তুর ব্যক্ত রূপের মধ্যে  প্রকৃতির সমস্ত বস্তুর অব্যক্ত রূপ, প্রকৃতির যে কোন অংশের  মধ্যে  সমগ্র প্রকৃতি, প্রকৃতির মধ্যে মৌলিক পদার্থের অস্তিত্বহীনতা, নামের মধ্যে অনামিক,রূপের মধ্যে অরূপ,মূর্তের মধ্যে বিমূর্ত, সাকারের মধ্যে নিরাকার, সসীমের মধ্যে অসীম, অবয়বের মধ্যে নিরবয়ব, আপেক্ষিক সত্যের মধ্যে চিরন্তন সত্য, অনিত্যতার মধ্যে নিত্যতা, প্রেমাকাশ ও চিদাকাশের মধ্যে দেহস্থ আকাশ মহাকাশ পরাকাশ তত্ত্বাকাশ আর সূর্যাকাশের অভেদীকরণ, কৈবল্যদেহ বা ভাবদেহ বা প্রেমদেহের মধ্যে জ্ঞানদেহ বা মহাকারণদেহ কারণদেহ সূক্ষ্মদেহ আর স্থূলদেহের সমরূপীকরণ, মহাজাগতিক মনের মধ্যে অবচেতন মন আর চেতন মনের একীকরণ, মহাজাগতিক প্রাণ সত্তার মধ্যে দেহস্থ সূক্ষ্মপ্রাণ আর স্থূলপ্রাণের সাদৃশীকরণ, একই প্রাণের মধ্যে ভোক্তা ভোগ্য ভোগ, আহার বিহার জাগতিক সমস্ত কর্মের মধ্যে আত্মপ্রেমের প্রলেপন, ক্রমাগত সঙ্কোচন ও প্রসারণের মধ্যেই বস্তুর অস্তিত্ব, বিষ্ঠার মধ্যে চন্দন আর নর্দমার জলের মধ্যে গঙ্গাজল, মনের বিষয়-বাসনার মধ্যে বন্ধন আর মনের বিষয়-বাসনা-রাহিত্যের মধ্যে মুক্তি, বিষয়ানুরাগের মধ্যে মনের স্থূলত্ব আর বিষয়বৈরাগ্যের মধ্যে মনের সূক্ষ্মত্ব, দেহ প্রাণ মনের সূক্ষ্মতা আর তরলতার মধ্যে জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা, প্রাকৃতিক আহার-জাত স্বমূত্রের মধ্যে দৈহিক ও মানসিক সমস্ত সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের পথ, সূর্য-সাধনা ও চন্দ্র-সাধনার মধ্যে প্রকৃতির যাবতীয় রহস্যের উন্মোচন, প্রতিমানব-সাধনার মধ্যে নিজকে জানার আত্মপ্রত্যয়, বৈপরীত্যের মধ্যে ঐক্য তথা গতিময় ভারসাম্য, গতির মধ্যে স্থিতি, প্রকৃতির মধ্যেই পুরুষ, নৃত্যের মধ্যে নৃত্যশিল্পীর হারিয়ে যাওয়াতেই নৃত্যের সত্যিকারের ফুটে ওঠা এবং শিল্পীর পূর্ণকাম সফলতা, গানের বাণী সুর ও ছন্দের সাথে কণ্ঠশিল্পীর অন্তরের অভিন্ন যোগসূত্র স্থাপনের মধ্যে পরমাপ্রকৃতির ধ্বনি সুর ও ছন্দের একাত্মতা সাধন, অন্তরে ও বাইরে সত্যের নিরন্তর চর্চার মধ্যেই পরম সত্যের উদ্বোধন, কামের মধ্যে প্রেম, ছায়ার মধ্যে কায়া, শব্দের মধ্যে নৈশব্দ, স্তুতি ও নিন্দার মধ্যে সমদৃষ্টি, পুরস্কার ও তিরস্কারের মধ্যে সমজ্ঞান,  জয় ও  পরাজয়ের মধ্যে  সমভাব,  সুখ ও  দুঃখের  মধ্যে  সমচিত্ত,  বাহ্যিক  সৌন্দর্যের মধ্যে আন্তরসৌন্দর্যের উদ্ভাসিত রূপ, অপরা প্রকৃতির মধ্যে পরা প্রকৃতি, অপরাবিদ্যার মধ্যে পরাবিদ্যা, ভক্ত ভক্তি ও ভক্তিভাজন একাকার হওয়ার মধ্যেই পরাভক্তি, জ্ঞাতা জ্ঞান ও জ্ঞেয় একীভূত হওয়ার মধ্যেই পরাজ্ঞান, ধ্যানী ধ্যান ও ধ্যেয় একত্ব হওয়ার মধ্যেই পরাধ্যান, দ্রষ্টা দৃষ্টি ও দৃশ্য একীভাব হওয়ার মধ্যেই পরাদৃষ্টি, প্রেমী প্রেম ও প্রেমাস্পদের একীভবনের মধ্যেই পরাপ্রেম, প্রবৃত্তির মধ্যে নিবৃত্তি, জন্মজন্মান্তরের কর্মফল ভোগ করার মধ্যেই কর্মফলের খণ্ডন, প্রারব্ধভোগ তথা তৃষ্ণার বেগের মধ্যে পুনঃপুন জন্ম গ্রহণের ভিন্নতর তাৎপর্য, প্রারব্ধের ভোগের মধ্যে ধৈর্যচ্যুতির কারণে আরব্ধের সূচনা, মৃত্যুর যবনিকার মধ্যে কর্মফলানুসারে ভিন্নমাত্রিক জীবনের সূত্রপাত, স্থিরত্বের অগ্নির মধ্যে অস্থিরত্বের আত্মাহুতি, মনের স্থিরত্বের মধ্যেই সমস্ত সাধনার পরিসমাপ্তি আবার প্রাণায়ামের মধ্যে মন ও প্রাণকে স্থির করার অন্যতম সুকৌশলের অবস্থিতি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে অনুক্ষণ মন রাখায় সৎসঙ্গ, মূলাধার থেকে আজ্ঞাচক্র পর্যন্ত ষটচক্রের মধ্যে ষড়যন্ত্র, দেহের মধ্যে দেহাতীত অবস্থা, কালের মধ্যে কালাতীত অবস্থা, মায়ার মধ্যে মায়াতীত অবস্থা, আমার মধ্যে আমি-হারা অবস্থা, নিজের মধ্যেই নিজের মুক্তি, অন্যের দুঃখে দুঃখী এবং অন্যের সুখে সুখী হতে পারার মধ্যে মহান-আমিত্বের বিকাশ, শান্ত হওয়ার মধ্যেই শান্তি,চরম অমঙ্গলের মধ্যে পরম মঙ্গল, দুর্যোগের ঘনঘটার মধ্যে সুবর্ণ সুযোগের হাতছানি, মরণশীলতার মধ্যে অমরতা, শূন্যতার মধ্যে পূর্ণতা, অলৌকিকের মধ্যে লৌকিক, মানবের মধ্যে প্রতিমানব, বহুত্বের মধ্যে একত্ব, বিভিন্নতার মধ্যে অভিন্নতা, দ্বৈতের মধ্যে অদ্বৈত, প্রত্যেক পুরুষদেহের মধ্যে নারীসত্তা আর প্রত্যেক নারীদেহের মধ্যে পুরুষসত্তার বিরাজমানতা, স্বামী তার স্ত্রীর মধ্যে আর স্ত্রী তার স্বামীর মধ্যে লীন হওয়ার একনিষ্ঠ সাধনাতে দাম্পত্য জীবনের পরাশান্তি ও পরামুক্তি, সমগ্র জগতের মুক্তির মধ্যেই নিজের যথার্থ মুক্তি, সর্বোপরি সমস্ত সত্তার মধ্যে নিজকে এবং নিজের মধ্যে সমস্ত সত্তাকে তথা নিজের মধ্যে নিজকে দেখতে না পাবো ততদিন আমাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না; আমরা নিত্যতার শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ আস্বাদন করতে সক্ষম হবো না; আমরা অদ্বৈতে স্থিতধী হতে পারবো না; আমরা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবো না।  -অরুণ প্রকৃতিবাদী, রেইকি প্র্যাকটিশনার, ০১৭১৫-৪৪৩৯২৬
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ২৩২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast