শিশু অবতার
মিলনের জন্মটাই যেন হয়েছিল শুধু মিলন ঘটানোর জন্য। তার বাবা ও দাদা-দাদী তার মা-কে প্রায় বিদায় দিতে প্রস্তুত। অপরাধ? তিন তিনটা কন্যা সন্তানের জন্ম দান। বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। মেণ্ডেল তার সূত্রে দেখিয়েছে- সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা পিতার উপর বেশি নির্ভর করে। তবুও মিলনের মায়ের উপর অকথ্য অত্যাচার হয়। দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় মত অনৈক্য। লাগে ভাঙনের ঢেউ। অতঃপর নির্বাসন বাপের বাড়িতে। দয়াময়ের দয়ায় কিছুদিন পর মায়ের কোল আলো করে এলো মিলন। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল দুই বনেদি পরিবার। নাম রাখার অনুষ্ঠান হলো স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ। মাতা-পিতা, দাদা-নানা, দাদী-নানী, মাতৃ-পিতৃকূলের সাময়িক বিরোধের অবসান ও দীর্ঘস্থায়ী মিলন ঘটে শিশু মিলনের অবতরণে। তাই সে শিশু অবতার।
গান আছে- চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। আবার- হাসির পরে কান্না আসে, দুঃখের পরে সুখ। সবাই জানে। কোন প্রমাণের দরকার নেই। সৃষ্টির শুরু থেকেই হয়ে আসছে। কার্য কারণ সম্পর্ক এখানে অকার্যকর। অতএব শত্রুপক্ষ সদা তৎপর। এত সুখ সইবে কেমন করে। তাই তুলে দিল অপবাদের বোঝা, সোজা তার মায়ের মাথায়। দুঃসম্পর্কের ফুফু। একেবারে রামায়ণের সেই মন্থরা দাসীর মতো বলল- ছেলে এত কালো কেন? আমাদের বংশেতো কালো ছেলে হয় না। কথাটা পাঁচ কান হওয়ার আগেই মিলনের পতিতপাবনী খালা করলেন উদ্ধার। বললেন- আপনি শুধু গায়ের রং দেখলেন আপা! হাসিটা দেখবেন না? একেবারে আপনার হাসির মতো সুন্দর। হীরের টুকরো ছেলে। আমি ওকে কালো মানিক বলেই ডাকবো। ফুফুকে ঘায়েল করতে পেরে খালা খুব উচ্ছ্বসিত। মনে মনে মিলনকে বলল তোর কারণেই সুযোগটা মিলল।
মিলনকে পেয়ে সবাই উৎফুল্ল হলেও মিলন বড় কষ্টে আছে। পৃথিবীর আলো বাতাস শব্দ গন্ধের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। তবুও আশার বিষয় খাদ্যের ব্যাপারে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। তার বোনেরাই তার জন্য সুব্যবস্থা করে রেখেছে। যদিও ছোট বোনের জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। অল্প সময়েই সে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া এবং অন্যের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পদ্ধতি রপ্ত করেছে। শুধু বিদঘুটে ভাষাটা কোনভাবে আয়ত্ত্ব করতে পারছেনা। একেক জনের কণ্ঠ একেক রকম। সম্বোধনও একই নয়। কেউ বলে সোনামণি, কেউ যাদুমণি, কেউ পরাণের পরাণ, কেউ কলিজার টুকরা; কয়টা মনে রাখা যায়? আম্মু বলে মা ডাক, আব্বু বলে বাবা ডাক; কোনটা আগে ডাকলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে- তা বুঝতে বেশ সময় লেগে গেল। তারপর অনেক প্রস্তুতি নিয়ে 'ওঁয়া' শব্দের কাছাকাছি 'মা' শব্দটাই উচ্চারণ করলো মিলন। এই একটা শব্দে তার মা যে কী পরিমাণ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল, তা সে বুঝেছে অনেকক্ষণ মায়ের বুকের সাথে সংযুক্ত থেকে মায়ের বুকের ধুক ধুক শব্দ বিশ্লেষণ করার পর।
যখন একটু বড় হল, তাকে খেতে দেয়া হলো গরুর দুধ। সে কিছুতেই খাবে না। সে তো গরুর বাচ্চা নয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের সন্তান। তাহলে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার বাচ্চাদের খাবার সে খাবে কেন! দাঁতে দাঁত চেপে সে করল প্রতিবাদ। অনেক আদর করে আবার খাওয়াতে গেলে শুরু করল জগৎ বিদারী চিৎকার। তার বাবা বলল- খেতে না চাইলে থাক, পশুর দুধ পশুর বাচ্চার জন্য, মানুষের সন্তানের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। ওকে বরং চালের গুড়া, শাক, সবজি এসব খাওয়ানোর চেষ্টা করো। এমন কথা শুনে বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় মিলন একবার মাথা নোয়ালো। সেই সাথে প্রতিবাদের সুফল পেয়ে তার মুখে ফুটে উঠল বিজয়ের উচ্ছ্বাস।
গান আছে- চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। আবার- হাসির পরে কান্না আসে, দুঃখের পরে সুখ। সবাই জানে। কোন প্রমাণের দরকার নেই। সৃষ্টির শুরু থেকেই হয়ে আসছে। কার্য কারণ সম্পর্ক এখানে অকার্যকর। অতএব শত্রুপক্ষ সদা তৎপর। এত সুখ সইবে কেমন করে। তাই তুলে দিল অপবাদের বোঝা, সোজা তার মায়ের মাথায়। দুঃসম্পর্কের ফুফু। একেবারে রামায়ণের সেই মন্থরা দাসীর মতো বলল- ছেলে এত কালো কেন? আমাদের বংশেতো কালো ছেলে হয় না। কথাটা পাঁচ কান হওয়ার আগেই মিলনের পতিতপাবনী খালা করলেন উদ্ধার। বললেন- আপনি শুধু গায়ের রং দেখলেন আপা! হাসিটা দেখবেন না? একেবারে আপনার হাসির মতো সুন্দর। হীরের টুকরো ছেলে। আমি ওকে কালো মানিক বলেই ডাকবো। ফুফুকে ঘায়েল করতে পেরে খালা খুব উচ্ছ্বসিত। মনে মনে মিলনকে বলল তোর কারণেই সুযোগটা মিলল।
মিলনকে পেয়ে সবাই উৎফুল্ল হলেও মিলন বড় কষ্টে আছে। পৃথিবীর আলো বাতাস শব্দ গন্ধের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। তবুও আশার বিষয় খাদ্যের ব্যাপারে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। তার বোনেরাই তার জন্য সুব্যবস্থা করে রেখেছে। যদিও ছোট বোনের জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। অল্প সময়েই সে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া এবং অন্যের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পদ্ধতি রপ্ত করেছে। শুধু বিদঘুটে ভাষাটা কোনভাবে আয়ত্ত্ব করতে পারছেনা। একেক জনের কণ্ঠ একেক রকম। সম্বোধনও একই নয়। কেউ বলে সোনামণি, কেউ যাদুমণি, কেউ পরাণের পরাণ, কেউ কলিজার টুকরা; কয়টা মনে রাখা যায়? আম্মু বলে মা ডাক, আব্বু বলে বাবা ডাক; কোনটা আগে ডাকলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে- তা বুঝতে বেশ সময় লেগে গেল। তারপর অনেক প্রস্তুতি নিয়ে 'ওঁয়া' শব্দের কাছাকাছি 'মা' শব্দটাই উচ্চারণ করলো মিলন। এই একটা শব্দে তার মা যে কী পরিমাণ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল, তা সে বুঝেছে অনেকক্ষণ মায়ের বুকের সাথে সংযুক্ত থেকে মায়ের বুকের ধুক ধুক শব্দ বিশ্লেষণ করার পর।
যখন একটু বড় হল, তাকে খেতে দেয়া হলো গরুর দুধ। সে কিছুতেই খাবে না। সে তো গরুর বাচ্চা নয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের সন্তান। তাহলে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার বাচ্চাদের খাবার সে খাবে কেন! দাঁতে দাঁত চেপে সে করল প্রতিবাদ। অনেক আদর করে আবার খাওয়াতে গেলে শুরু করল জগৎ বিদারী চিৎকার। তার বাবা বলল- খেতে না চাইলে থাক, পশুর দুধ পশুর বাচ্চার জন্য, মানুষের সন্তানের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। ওকে বরং চালের গুড়া, শাক, সবজি এসব খাওয়ানোর চেষ্টা করো। এমন কথা শুনে বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় মিলন একবার মাথা নোয়ালো। সেই সাথে প্রতিবাদের সুফল পেয়ে তার মুখে ফুটে উঠল বিজয়ের উচ্ছ্বাস।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২২/১০/২০১৪এক কথায় ভালো লাগলো।
-
ইমন শরীফ ১০/০৮/২০১৪গল্পের নায়ক মিলনের প্রতীবাদী মনোভাব চেতনায় নাড়া দেবার মত। বেশ হয়েছে।
-
সুরজিৎ সী ০৬/০৮/২০১৪সুন্দর
-
রামবল্লভ দাস ০৬/০৮/২০১৪খুব ভালো লাগলো ।।
-
আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ ০৫/০৮/২০১৪বেশ ভাল গল্প।