ফিবোনাক্কি রাশিমালা
গণিত নিয়ে যাদের অল্প-বিস্তর লেখাপড়া আছে তারা অবশ্যই ‘ফিবোনাক্কি রাশিমালা’ সম্পর্কে অবগত আছেন। এই রাশিমালা আমাদের সামনে প্রকৃতি মাতার অপার রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচন করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। ‘ফিবোনাক্কি রাশিমালা’র জন্মদাতা ইতালির নাগরিক Leonardo Pisano (১১৭৫-১২৫০)। মৃত্যুর আগে একবার তাঁকে তাঁর তৈরি রাশিমালা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রহস্য করে বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির মূল রহস্য এই রাশিমালাতে আছে।’ কিন্তু কি সেই রহস্য? সেটা জানার আগে এক ঝলক রাশিমালাটা দেখে নিই : আমাদের প্রচলিত ডেসিমেল পদ্ধতির রাশিমালা হচ্ছে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯। এভাবে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌলিক রাশিমালা হচ্ছে ১, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯ ইত্যাদি। আর ফিবোনাক্কি রাশিমালা হচ্ছে ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭ ... ইত্যাদি। অর্থাৎ ফিবোনাক্কির রাশিমালাটা তৈরি হয়েছে প্রথম দুইটি রাশির যোগফল সমান পরবর্তী রাশি; ০ + ১ = ১, ১ + ১ = ২, ২ + ১ = ৩, ৩ + ২ = ৫, ৫ + ৩ = ৮, ৮ + ৫ = ১৩, ৮ + ১৩ = ২১ ইত্যাদি। এভাবে অদ্ভূত নিয়মে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এই রাশিমালার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করা যায়, যথা : এ রাশিমালার যে কোন চারটি সংখ্যা নেওয়া হলে প্রথম ও চতুর্থ সংখ্যার যোগফলের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল বিয়োগ করা হলে ফলাফল অবশ্যই সবসময় ঐ চারটি সংখ্যার প্রথমটি হবে। ধরা যাক চারটি ফিবোনাক্কি রাশি ২, ৩ , ৫, ৮। প্রথম ও চতুর্থ সংখ্যার যোগফল (২ + ৮) ১০, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল (৩ + ৫) ৮ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হচ্ছে ২, যা কিনা আমাদের ধরে নেওয়া চারটি সংখ্যার প্রথম সংখ্যা। আমরা সাধারণত ডেসিমেল পদ্ধতিতে হিসেব করে এতো অভ্যস্ত যে, কোন কিছুর গণনায় ডেসিমেল সংখ্যা (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) দ্বারাই কোন কিছুর হিসেব করে থাকি; যেমন ঘড়ি দ্বারা সময় নির্ণয়, টাকা-পয়সার লেনদেন, বাজার-সদাই ইত্যাদি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে প্রকৃতির নানা স্তরে ফিবোনাক্কি রাশিমালার ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে, যেমন : সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ি বিন্যাসে, ক্যকটাস গাছের পুরুত্বে, পাইন গাছের মোচায় ফিবোনাক্কি রাশিমালার সংখ্যা পাওয়া যায়। শামুকের যে স্পাইরাল দেখা যায় সেখানেও ফিবোনাক্কির রাশিমালার উপস্থিতি রয়েছে। শীতের সময় আমাদের দেশে সুদূর সাইবেরিয়া হতে ‘অতিথি পাখি’ ঝাকে ঝাকে আসে। পাখিদের নিজেদের অঞ্চলে উষ্ণ আবহাওয়া দেখা দিলে স্থান পরিবর্তন করে তারা অন্য শৈত্য এলাকায় গমন করে। এই অতিথি পাখির ঝাক গণনা করে দেখা গেছে তাদের একেকটি ঝাকে ২১টি পাখি থাকে, ২২ বা ২৩টি পাখি থাকে না। মজার ব্যাপার ফিবোনাক্কি সিরিজে ২১ সংখ্যাটি রয়েছে, ২২ বা ২৩ সংখ্যা নেই। মৌমাছিদের জীবনযাত্রায়ও রয়েছে ফিবোনাক্কি রাশিমালার উপস্থিতি। মৌমাছিরা সাধারণত কলোনি করে থাকে। প্রতিটি কলোনিতে একটি পুরুষ মৌমাছির পিতা-মাতা ১ জন, দাদা-দাদী ২ জন, প্রপিতা-মাতা ৩ জন, প্রপিতা-মাতার পিতা-মাতা ৫ জন এবং এদের পিতা-মাতা ৮ জন। এভাবে ক্রমেই মৌমাছির বংশতালিকায় ফিবোনাক্কি রাশিমালার সংখ্যার খোঁজ পাওয়া যায়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
দীপঙ্কর বেরা ০৩/১১/২০১৩এ তত্ত্বে বেশ সময় দিতে হবে । খুব ভাল ।
-
দাদা মুহাইমিন চৌধূরী ০২/১১/২০১৩অসাধারন তত্ব দাদা। খুব ভাল লাগল
-
suman ০২/১১/২০১৩অসাধারণ !!!
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ০২/১১/২০১৩চমৎকার বিষয় উপস্থাপন।এই বিষয়ে আমি বেশ কিছু বইয়ে পড়েছি।একটি নাটক ও হয়েছিল।আসলেই পুরো জগৎটাই রহস্যময়।