মধু পূর্ণিমা
বৌদ্ধদের অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব মধু পূর্ণিমা। এ দিনটি বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যময় দিন। এ পূর্ণিমার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। তথাগত বুদ্ধ কোশাম্বীতে ভিক্ষু-সংঘসহ অবস্থান করার সময় বিনয়ধর পন্থী ভিক্ষু ও সূত্রধর পন্থী ভিক্ষুর মধ্যে বিনয় সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয় নিয়ে উভয় পন্থী ভিক্ষুদের মধ্যে মতদ্বৈততা চরম আকার ধারণ করলে তথাগত বুদ্ধ তাঁদের বিবাদ মীমাংসা করার প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় পক্ষ তাঁদের স্ব স্ব মতের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন; ফলে বিবাদ মীমাংসা করা সম্ভব না হওয়ায় বুদ্ধ কোশাম্বী ত্যাগ করে পারিলেয়্য নামক বনে গমন করেন এবং দশম বর্ষাবাস সেখানে পালন করেন। পারিলেয়্য বনে বর্ষা যাপন কালে একটি একাচারী হাতি প্রতিদিন বুদ্ধের সেবা করত; বনের ফল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করত। হস্তীরাজ কর্তৃক বুদ্ধকে সেবা করতে দেখে বনের একটি বানরেরও বুদ্ধকে সেবা করার ইচ্ছা জাগে। ভাদ্র পূর্ণিমাতে সে একটি মৌচাক সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করে। মৌচাকে মৌমাছির ছানা ও ডিম থাকায় বুদ্ধ প্রথমে মধু পান করলেন না। বানর তা বুঝতে পেরে মৌচাকটি নিয়ে ছানা ও ডিম পরিস্কার করে পুনরায় বুদ্ধকে দান করলে বুদ্ধ মধু পান করেন। পারিলেয়্য বনে হস্তিরাজ কর্তৃক ভগবান বুদ্ধের সেবাপ্রাপ্তি ও বানরের মধুদানের কারণে এ দিনটি বৌদ্ধদের কাছে স্মরণীয় ও আনন্দ-উৎসবমুখর পুণ্যময় একটি দিন। সেদিনের সেই মধু দান বৌদ্ধ ইতিহাস ও সাহিত্যে একটি নিছক ঘটনা মনে হলেও এর থেকে আমরা ত্যাগ ও দানচিত্তের এক মহৎ শিক্ষা পেয়ে থাকি। একটি বানর বুদ্ধকে দান দিয়ে যেখানে তার উদারতা ও ত্যাগের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে সেখানে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়েও উদারতা, ত্যাগ, দান, সেবা তো দেখাতে পারছিই না; পারছি না মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মৈত্রী, দয়া, করুণা প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলীও দেখাতে। অথচ বুদ্ধ বলেন, সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু, অবেরো হোন্তু, অব্বপজ্জ হোন্তু, অনীঘ হোন্তু, সুখী অত্তানং পরিহরন্তু দুক্খ মুচ্চন্তু। অর্থাৎ বিশ্বের সব জীব সুখী হোক, ভয়হীন হোক, শত্রুহীন হোক এবং নিরাপদে ও নির্ভয়ে বসবাস করুক। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে সর্বজনীন কল্যাণ ও মানবতার বড় আবেদন আর কী হতে পারে?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ২৯/০৯/২০১৩ভাল লাগছে জেনে