সূর্যাস্ত সূর্যোদয় যা দেখি তা সত্য নয়
সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত শব্দগুলি সূর্যের অবস্থান পরিবর্তন, গতিশীলতা এবং পৃথিবীর অবস্থানের অপরিবর্তন ও স্থিতিশীলতাকেই বুঝায়। অথচ আমরা জানি, পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে আমরা সূর্যকে দেখতে পাই এবং আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে গেলেও, যাদের দৃষ্টিসীমা অতিক্রম করেনি তারা তখনও সূর্যকে দেখতে পায়। সূর্যের কখনো উদয় বা অস্ত হয় না। এটা আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতা। তাই অনুরোধ, সূর্যোদয় শব্দের পরিবর্তে ‘সূর্য দৃশ্য হবে’ এবং সূর্যাস্তের পরিবর্তে ‘সূর্য অদৃশ্য হবে’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করুন। এতে ঐতিহ্য হারালেও আমাদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রেও একই বিভ্রম ঘটে। আমরা জানি, সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার পথে চন্দ্র প্রবেশ করলে সূর্যগ্রহণ হয় এবং সূর্যের আলো চন্দ্রে যাওয়ার পথে পৃথিবীতে বাঁধা পেলে চন্দ্রগ্রহণ হয়। আলো বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা সূর্য বা চন্দ্রকে দেখতে পাই না। রাহু বা কেতু এদের গ্রাস করে না। তাই দৃষ্টির অগোচরে থাকে বলে আমরা সূর্যগ্রহণকে ‘সূর্য অগোচর’ এবং চন্দ্রগ্রহণকে ‘চন্দ্র অগোচর’ বলতে পারি। হয়তো ভাবছেন, তাহলে এতদিন সূর্যদেবকে প্রণাম করা, পূজা করা, সপ্তরথে চড়া, চন্দ্রকে দক্ষের কন্যা সম্প্রদান, রাহুর অমৃতপান এসবের কি হবে? একটু ভাবলে বুঝা যাবে, এসব হয়েছে কিভাবে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই রাজা, ঋষি, উদ্ভাবক ও গবেষকদের অবদান স্মরণ রাখার জন্য বিভিন্ন বস্তুর নাম তাঁদের নামে রাখা হত। তেমনি সূর্যবংশের রাজা সূর্যদেবের নামে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রটির নাম সূর্য, ধ্রুবের নামে ধ্রুবতারা, শুক্রাচার্যের নামে শুক্রগ্রহ, ভগীরথের নামে ভাগীরথী নদী, পৃত্থুর নামে পৃথিবীর নাম রাখা হয়েছে। মহাপুরুষদের ছবি, দেবতাদের বিগ্রহ, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ যেমন শ্রদ্ধার সাথে সংরক্ষিত হয়, তেমনি সূর্যও সূর্যদেবের স্মৃতি হিসেবে প্রণম্য ও পূজনীয়। সপ্তরথ তার সপ্তরশ্মির প্রতীক। উদয় অস্তের বিষয়টি দৃষ্টিসীমার কারণে হয়েছে। সন্ধ্যায় সাগর পাড়ে দাঁড়ালে দেখবেন সূর্য সাগরে ডুবে যাচ্ছে। ভোরে দার্জিলিংয়ে টাইগার হিলে দাঁড়ালে দেখবেন পাহাড়ের মাঝখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে নানা রঙ ছড়িয়ে সূর্য ক্রমশ উঠে আসছে। রেল লাইনে দাঁড়ালে দেখবেন দুরে লাইন দুটি একত্রিত হয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে দাঁড়ালে দেখবেন আকাশ মাটিতে মিশে আছে। এসব নিয়ে অনেক গান, অনেক কবিতাও লেখা হয়েছে। সূর্যোদয়ের দেশ, চাঁদমামার টিপ, চাঁদের বুড়ির চরকা আমাদের খুবই পরিচিত। আকাশে মেঘ সূর্যের লুকোচুরি খেলায় ছোট্ট মেঘ যেমন সূর্যটাকে লুকিয়ে রাখে। তেমনি দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা জ্ঞানের বিকাশকে থামিয়ে রাখে। বৈদান্তিক জানেন ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। এটা জ্ঞান প্রসূত, উপলব্ধির কথা। শুধু অন্তর্জগতে নয়, বহির্জগতেও ভূ-উপগ্রহ ব্যবহারের ফলে দৃষ্টির সীমা বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এক দেশে যখন রাত, অন্য দেশে তখন দিন। অতএব, পৃথিবী কেন্দ্রিক মতবাদ নয়; কোপার্নিকাস ও গ্যালিলিওর মত বলতে হয়- ওরে! সূর্য নয়, পৃথিবী ঘোরে। খবরের কাগজে, গণমাধ্যমে, বইয়ের পাতায় শব্দগুলোকে একটু পরিবর্তন করলে বিষয়গুলি বুঝতে সবার সুবিধা হয়, দৃষ্টি আরো বিস্তৃত হয়, মনে এইভাব প্রবল হয়, যা দেখি তা সত্য নয়। এতে ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। বেদান্তের ভাষ্য ‘অহম্ ব্রহ্মাস্মি’, ‘অয়ম্ আত্মা ব্রহ্ম’ বুঝতে সুবিধা হবে। বহির্জগত ছেড়ে আপন অন্তরে পরমাত্মার তরে প্রাণের চলা প্রবল হবে। পরিশেষে তাই, প্রার্থনা করি, আমাদের ‘আধ্যাত্মিকতার শৈশব’ অতিক্রান্ত হোক।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Înšigniã Āvî ২২/০৯/২০১৩
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২২/০৯/২০১৩তথ্যমূলক লেখা। দাদা আর চাই।
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ২২/০৯/২০১৩সুন্দর লিখেছেন।ধন্যবাদ।
আরো জানতে চাই