www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নেপাল থেকে ফিরে

প্রতি বছরের মতো এবারও অনেক আগে থেকে জল্পনা কল্পনা চলছিল দেশের বাইরে কোথাও ঘুরে আসার জন্য। আমাদের গ্রুপটা বরাবরই এরকম হইচই করে ভ্রমন করতে অভ্যস্ত। কিন্তু কোথায় এবং কিভাবে যাওয়া যাবে তা নিয়ে হাজারো চিন্তা সবার। অফিসের ছুটিই বা ক’দিন পাওয়া যাবে। ছুটি নেয়া সম্ভব হবে কি না। এসবের মধ্যেই ঠিক হলো ঈদুল আযহা’র বন্ধে আকাশ পথে নেপাল যাবো। প্রথমে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা ট্রেনে চড়ে। পৌঁছলাম অফিসের রেস্টহাউসে। সেখান থেকে বাবুল ভাইয়ের সহযোগিতায় অফিসের গাড়িতে গেলাম এয়ারপোর্টে। টিকেট করাই ছিল মাউন্ট ক্লাব এর মাধ্যমে। আকাশ পথে এটা আমার প্রথম ভ্রমন। ভাবতে কেমন কেমন লাগছিল। নিয়মের গণ্ডি পেরিয়ে বসলাম জানালার পাশে একটা আসনে। ঘোষণা শুনলাম ৩৫ হাজার ফুট উপর দিয়ে এক ঘন্টা পনের মিনিটে আমরা নেপাল গিয়ে পৌঁছব। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে পরম করুণাময়ের নাম স্মরণ করে বিমান আকাশে উড়ল। মনে হল গুগল আর্থ এর গ্লোবাল ক্যামেরায় বাংলাদেশ দেখছি। উপর থেকে মেঘ যেন সাগরে ভাসমান তুলার ভেলা। ক্যামেরায় কিছু স্মৃতি ধরে রাখা হল। নামলাম ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে। মাটিতে পা রাখতেই মনে হল একটা অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। নতুন কোথাও গেলেই আমার এমন হয়। আগেও গ্যাংটক, সিকীম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জয়পুর, আগ্রা, দিল্লী, মথুরা, বৃন্দাবন, কলকাতা, বারাসাত যেখানেই গেছি এই কথাই মনে হয়েছে। বেরুলাম এয়ার পোর্ট থেকে কাঠমণ্ডুতে। অপেক্ষা করছে শাহজাহান ভাই। পরিচয় করিয়ে দিল আমাদের গাইড মনিকার সাথে। গাড়িতে চেপে ভগবতীবহালে হোটেল ক্রাউন প্লাজায় গেলাম। রুম বুক করাই ছিল। আমরা দশজন-পঙ্কজ দা, করুন দা, উন্নয়ন দা, বিভাষ দা, বিপ্লব দা, তুহিন ভাই, রণি ভাই, অঞ্জন দা+শান্তা দি আর আমি প্রবীর। রাতে চলে গেলাম ফাইভ স্টার হোটেল এভারেস্ট এর ক্যাসিনোতে। খাওয়া ও বিনোদনের সুব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। খেলায় আমাদের প্রায় তিন হাজার রুপি আয় হল। পরের দিন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন। নিতে এল আরেক গাইড সুনিতা। দেখলাম শয়ম্ভু মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির। অসংখ্য বানরের মুক্ত চলাচল খুবই উপভোগ্য। এরপর দরবার স্কয়ার। সবখানেই পৌরাণিক ভাস্কর্য সংরক্ষণের সুন্দর ব্যবস্থা। ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে ভিত্তি করে এখানে পর্যটন শিল্প ভালোভাবেই দাঁড়িয়েছে। দেখলাম বন্ধের দিনে নিউ কিং প্যালেসের সামনের পথ উৎসব। সন্ধ্যায় গেলাম ভেটভেটানি সুপার মার্কেটে। লক্ষ্য করলাম দাম আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বুঝলাম নেপালে অর্থের মূল্য কম। এক কাপ চা বিশ নেপালী রুপি। কমলা ওজন করে বিক্রী হয়। সামান্য দূরত্বে টেক্সি ভাড়া দু’শ রুপি। প্রচুর ডান্স ক্লাব, ম্যাসেজ পার্লার, ওয়াইন শপ-কল্পনা করা যায়? যা হোক পরের দিন বিখ্যাত পশুপতি মন্দির দর্শন ও থামেল-এ শপিং করার ব্যবস্থা হল। তারপর দিন ড্রাইভার দীপকের গাড়িতে পোখরা যাওয়ার পথে মনোকামনা মন্দিরে গেলাম ‘ক্যাবল কার'-এ চড়ে। রোপ-ওয়ে, সত্যি দেখার মতো। সিকীমের রোপ ওয়েতে চড়েছি। তবে তা ছিল শহরের দুটি টাওয়ারে সীমাবদ্ধ। এখানে দেখি পাহাড়ের নীচ থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতায় অনেক পাহাড় অতিক্রম করে একেবারে মন্দিরের কাছে। পোখরায় উঠলাম গুরখালি হোটেলে। পরের দিন খুব ভোরে চলে গেলাম সারেংকোট। সূর্যোদয় দেখার জন্য আগে থেকে অনেক পর্যটক অপেক্ষা করছিল। বরফে ঢাকা কৈলাস ও অন্নপূর্ণা পর্বতে সূর্যোদয়ের সময় আলোর বর্ণিল খেলা প্রাণ ভরে উপভোগ করলাম। দার্জিলিং এর টাইগার হিলের সাথে এর পার্থক্য হলো- ওখানে কাঞ্চন জঙ্ঘা দেখা যায় বেশ দুর থেকে এবং সূর্য উঠে দুটো পাহাড়ের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে আর এখানে কৈলাস অনেক কাছে যেন মাথার ঠিক উপরে বিশাল আকারে দেখা যায় এবং সূর্য উঠে পাহাড়ের নিচ থেকে। পাহাড় আর সূর্য দেখতে দেখতে রঙ বদলায়। কেউ কেউ ছোট হেলিকাপ্টারে চড়ে আরো কাছ থেকে ঘুরে আসে। ফেরার পথে দেখলাম বিন্দুবাসিনী মন্দির। শিব স্নান করানো ও প্রভাতের সমবেত প্রার্থনা বেশ ভাল লাগল। এরপর ফেওয়া লেকে বোটিং করতে গেলাম। লেকের মাঝখানে বারাহী মন্দির বেশ আকর্ষনীয়। বড় বড় মাছ মন্দিরের পাশে ভাসতে দেখা যায়। বোট থেকে দেখলাম গিরিরাজ হিমালয়ের উচ্চতা। শুভ্র চুড়াগুলো পরপর দাঁড়িয়ে যেন নিজেদের প্রদর্শন করছে। সবাই মিলে সুজন মাঝির গান গাইলাম মনের মাধুরী মিশিয়ে। দেখলাম প্যারাসুটে চড়ে অনেকে পাহাড় থেকে নামছে। অবশ্য এসবের জন্য প্রশিক্ষণ ও অনুমতি দরকার হয়। তারপর দেবীস ফল ও মাহেন্দ্র কেইভ দেখলাম। অনেকটা পাতাল প্রবেশের মত গুহার মধ্যে ঢুকে দেখি ঝর্ণা মাটির উপর থেকে নেমে মাটির নীচ দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিভাবে এটা তৈরি করেছে তাই ভেবে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। সুরঙ্গ পথে পাহাড়ের ভেতর গিয়ে ঝর্ণা দেখার রূদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা ভোলার মত নয়। ফিরার পথে জমিয়ে বাংলা গান ধরলেন পঙ্কজ দা। আমরা কণ্ঠ মিলালাম। সেকি আনন্দ আমাদের। ফিরলাম কাঠমণ্ডুতে তিব্বত হোলিডে ইন হোটেলে। পরের দিন শপিং করেই কেটে গেল। ভাষার ক্ষেত্রে দেখি ওরা প্রায় সবাই মিশ্র হিন্দী ব্যবহার করে। আর ইণ্ডিয়ান রুপিতেও ক্রয়বিক্রয় চলে। একই দেশে অবাধে ভিনদেশীয় মুদ্রা অর্থাৎ দুটো মুদ্রার প্রচলন ক্রেতার পক্ষে খুবই অসুবিধা সৃষ্টি করে। দাম জিজ্ঞেস করার সময় জেনে নিতে হয় বিক্রেতা নেপালী না ইণ্ডিয়ান রূপিতে দাম বলছে। খুঁজে নিলাম ভাত রুটির জন্য লুম্বিনী তন্দুরি দাবা। মালিক, মালকিন, হোটেল বয় রামু যথেষ্ট সহযোগিতা করল। পরদিন জয় মাতা দি ট্রাভল ও ট্যুর এর হরি দা’র সহায়তায় গেলাম নগরকোটে সূর্যাস্ত দেখতে। এখানে হিমালয় অন্য রকম। সারি সারি বরফে ঢাকা পর্বতের চুড়া দূর থেকে দেখে এর বিস্তৃতি উপলব্ধি করার অনেক চেষ্টা করলাম। তারপর ভক্তপুর। আরো সুন্দর। প্রাসাদের সিড়িগুলো সব যেন স্বর্গে উঠে গেছে। স্তরে স্তরে সাজানো আছে সিংহ, হাতি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। যত দেখি ততই দেখার আগ্রহ বাড়ে। অবশেষে আকাশে উড়ে এলাম ফিরে আপন ঘরে। স্মৃতির পাতা ভর্তি করে অনেক সুন্দরে। স্বল্প খরচে বিনা কষ্টে দেশান্তরে যাওয়ার এ সুযোগ যেন আমাদের সবার জীবনে বারবার আসে। অসীম কৃতজ্ঞতা স্রষ্টার প্রতি যিনি এ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছেন আর তাদের প্রতি যারা আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১১১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সহিদুল হক ২৩/০৯/২০১৩
    দারুণ অভিজ্ঞতার সুন্দর বর্ণনা।
    • ধন্যবাদ সহিদুল হক, আপনার -দোহাই তোমাদের-কবিতাটি পড়ে রক্ত টগবগ করে, কত অসহায় আমরা, দুবৃত্তের অত্যাচারে
  • Înšigniã Āvî ২২/০৯/২০১৩
    অসাধারণ
    ভীষণভাবে মনে পড়ে গেলো আমার নেপাল ভ্রমণের কিছু কথা...
    সব থেকে ভালো লাগা অবশ্যই ফেবা লেক ও মনোকামনা মন্দিরের রোপওয়ে ।
 
Quantcast