সংস্কৃতিঃ জাতির পরিচায়ক
"সংস্কৃতি" শব্দটি খুব ছোট হলেও তার অর্থ অনেক ব্যাপক। শব্দটি অনেক ক্ষুদ্র হলেও তার মর্ম অনেক গভীর। কারন এই সংস্কৃতির মাঝেই লুকিয়ে থাকে জাতির পরিচয়। এই সংস্কৃতির মাঝেই নিহিত থাকে জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই সংস্কৃতি দিয়েই সংজ্ঞায়িত হয় প্রত্যকটি জাতি। জাতি টি কি উত্তম না মহোত্তম, অধম না অধমের চেয়েও অধম, মানব না অতিমানব, পশু না পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট এসব যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি হল তার সংস্কৃতি। তার চলন-বলন, কথার ধরন আর আচার-আচরনই অন্যকে জানিয়ে দেবে তার পরিচয়। তার নাড়ীনক্ষত্র। মোটকথা সংস্কৃতিই হল জাতির পরিচায়ক।
.
আমি কে? আমি কেমন? আমার ধর্ম বিশ্বাস কী? এসব জানতে হলে গুগলে সার্চ দিতে হবেনা,আমার উইকিপিডিয়া পড়তে হবেনা, অথবা আমাকে নিয়ে কোন রিসার্চও করতে হবেনা। শুধু একটি জিনিস জেনে নিলেই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, একটি জিনিস দেখে নিলেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর ঐ মহামূল্যবান জিনিসটিই হচ্ছে আমার সংস্কৃতি। আমার সংস্কৃতিই বলে দেবে আমি কে? আমার কৃষ্টি-কালচারই জানিয়ে দেবে আমি কেমন? আমার তাহযীব-তামাদ্দুনই ঘোষনা দেবে আমার ধর্ম বিশ্বাস কী? সংস্কৃতিই আমার সংজ্ঞা। সংস্কৃতিই আমার পরিচয়। সংস্কৃতিই আমার আইডেন্টিফিকেশন।
.
প্রত্যেক জাতিরই স্ব-স্ব সংস্কৃতি আছে। প্রত্যক ধর্মেরই নিজস্ব তাহযীব-তামাদ্দুন আছে। সকলেরই ডিফারেন্ট কিছু কৃষ্টি-কালচার আছে। এর মধ্যে কোন কোন সংস্কৃতি সুশীল সমাজের কাছে "অপসংস্কৃতি" নামেই আখ্যায়িত হয়। কারন মানব মস্তিষ্ক প্রসূত হওয়ার কারনে, শয়তানের কুমন্ত্রণায় সৃষ্ট হওয়ার কারনে, সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ক্ষতিকারক হওয়ার কারনে, অপরাধ অনৈতিকতার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়ার কারনে অথবা স্রষ্টার দেয়া বিধি-নিষেধের পরিপন্থী হওয়ার কারনে কোন কোন সংস্কৃতি অপসংস্কৃতি রুপেই আত্মপ্রকাশ করে। অপরদিকে কোন কোন সংস্কৃতি খোদা প্রদত্ত হলেও, আগেকার যুগে পালনীয় হলেও কালের আবর্তনে, যুগের বিবর্তনে অার ধর্মের রহিতঃকরনের দরুন নিজের রুপ পাল্টে অপসংস্কৃতির রুপ ধারন করে। আর তখনই ঐ সমস্ত অপসংস্কৃতি সকলের জন্যে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্ত সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির ভীড়ে সার্বজনীন ও সবার জন্যে কল্যানকর সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি তথা ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন। ইসলামী সংস্কৃতিই যে সর্বকালের সর্বসেরা সংস্কৃতি তা অতীতেও অসংখ্যবার প্রমানিত হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ। কারন এই সংস্কৃতির স্পর্শেই জাহিলী যুগের বর্বর মানুষেরাও হয়ে উঠেছিল সোনার মানুষ। এই সংস্কৃতির ছোঁয়াতেই আউস ও খাযরাজ চৌদ্দপুরুষের শত্রুতা ভুলে স্থাপন করেছিল ভ্রাতৃত্বের চরম পরাকাষ্ঠা। এই সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরেইতো আশারায়ে মুবাশ্শারাহ দুনিয়াতেই পেয়ে গেছেন জান্নাতের সার্টিফিকেট। এই সংস্কৃতিকে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে বাস্তবায়িত করেইতো সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন "রাযিয়াল্লাহু আনহুম" এর লক্বব। আজো যারা ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত হচ্ছেন, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের হার নিজের গলে পরছেন তাঁরাও পরিণত হচ্ছেন এ যুগের সোনার মানুষে। একেকজন হচ্ছেন একেকটি পরশ পাথর। তাঁদের পরশে যেন মৃতও জীবিত হয়ে যায়। তাঁদের স্পর্শে প্রানহীন শরীরও প্রানের পরশ পায়। তাঁদের ছোঁয়ায় নির্জীব আত্মাও সজীবতায় ভেসে বেড়ায়। ইসলামী সংস্কৃতির এই অলৌকিক ক্ষমতা ক্বেয়ামত পর্যন্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। কারন একমাত্র এই সংস্কৃতিই মহামহিম আল্লাহ কেয়ামত অবধি স্বীকৃত ও অনুমোদিত করেছেন। আর খুলুক্বে আযীমের অধিকারী হযরত মুহাম্মদ সঃ নিজে এই সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার আর বাস্তবায়ন করে গেছেন। এটাই হচ্ছে এই সংস্কৃতির ক্ষমতার উৎস। তবেই তো এই সংস্কৃতির এত শান! এত মান! তাই তো এই সংস্কৃতির এত মর্যাদা! এত সম্মান! এজন্যেই তো এই সংস্কৃতি এত মহান! এত সুমহান!
.
ইসলামের এই ক্রান্তিকালে আজ আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে বেষ্টিত। নিজস্ব সংস্কৃতির জলাঞ্জলি দিয়ে অপসংস্কৃতির মায়াজালে আবদ্ধ। চারিদিকে আজ অপসংস্কৃতির জয়জয়কার আর ইসলামী সংস্কৃতির হাহাকার। যুগের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কখন যে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি বিসর্জন দিচ্ছি তা অনুভব করতে পারিনা। ধীরেধীরে নিজেদের সংস্কৃতি থেকে কত দূরে চলে যাচ্ছি তা উপলব্ধিই করতে পারিনা। আমরা হারাচ্ছি আমাদের পরিচয়, বিলীন করছি আমাদের সংজ্ঞা। ফলশ্রুতিতে "আকারে ইনসান প্রকারে শয়তান" এই হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের "পঁহচান"।
.
আমাদের সমস্ত কর্মকান্ডের ফাইল আর চলাফেরা ও আচার আচরনের স্টাইল চেক করলে আমাদের সত্যিকার পরিচয় পাওয়া দায়। পুরো ফাইলটিই থাকবে ওয়েষ্টার্ন কালচারে ভরা আর আচার আচরনে থাকবে অপসংস্কৃতির মহড়া। নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিতে এখন আমাদের গায়ে লাগেনা। আমরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি আর পরিচয় সমাজের সামনে তুলে ধরতে সদা-সর্বদা শঙ্কিত। পক্ষান্তরে অপসংস্কৃতির ধূম্রজালে নিজেদের পরিচয় হারিয়েও আমরা গর্বিত। আমাদের অমূলক শঙ্কা আর অযাচিত ও অবাঞ্ছিত গর্বকে জানাই "ধিক শত ধিক"।
.
হাদীসে আছে কাফেররা মুসলমানদেরকে উপহাস করে বলতো; মুহাম্মদ এ কেমন ধর্ম নিয়ে আসল যে, তাতে পায়খানার পদ্ধতিও শিক্ষা দেয়া হয়। যদিও কাফেররা ঠাট্টাচ্ছলে এ কথা বলতো কিন্তু বস্তুত এটাই আমাদের গর্বের বিষয়। এটাই প্রমান করে যে, আমাদের জীবনে এমন কিছু নেই যার সুষ্ঠু ও সুন্দর পদ্ধতি ইসলামী সংস্কৃতিতে নেই। মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে পারিবারিক,সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অান্তর্যাতিক জীবন পর্যন্ত প্রতিটি পদেপদে ইসলামের অতুলনীয় ও অনুপম সংস্কৃতি বিদ্যমান। যে সংস্কৃতি পায়খানায় বসা থেকে নিয়ে বিশ্বপরিচালনা করা পর্যন্ত সর্বপ্রকার শিক্ষা আমাদেরকে দেয় তাকে কেন এত অবহেলা? কেন এত অবজ্ঞা? ইসলামের নবী যেমন বিশ্বনবী, ইসলাম ধর্ম যেমন বৈশ্বিক ধর্ম ঠিক তেমনি ইসলামী কালচারও গ্লোবাল কালচার। তাহলে কেন গ্লোবালাইজেশনের নামে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়ার পাঁয়তারা? কেন বিশ্বায়নের নামে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে পদদলিত করার জন্যে আমরা দিশেহারা?
.
আজ পর্যন্ত এমন কোন অমুসলিম দেখিনি যার পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা আর কথাবার্তায় বুঝা যায় সে একজন খাঁটি মুসলিম। এমন কোন ওয়েষ্টার্ন দেখিনি যার কালচারে বুঝা যায় সে ইষ্টার্ন। কিন্তু এমন মুসলিম অহরহ পাওয়া যায় যার বেশভূষা প্রমান করে সে একজন নিরেট অমুসলিম। প্রাচ্যের এমন অনেক মানুষকেই পাই যার চলন-বলন প্রমান করে সে পশ্চিমা। আমাদের এত অধঃপতন কেন? নিজেদের পরিচয় হারাতে আমরা উঠেপরে লেগেছি কেন? তারা আমাদের সংস্কৃতি গ্রহন না করলেও আমরা কেন তাদের অপসংস্কৃতি আঁকড়ে ধরতে বদ্ধপরিকর?
.
ইতিহাস সাক্ষী আজ পর্যন্ত যারা ইসলামী সংস্কৃতি ভুলে অপসংস্কৃতির কবলে পড়েছে, অমুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার গ্রহন করেছে তারা একদিন নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে পরিচয়হীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তারাই ইতিহাসে এক ঘৃণিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। যখনই ইতিহাসের পাতা উল্টানো হয় এবং তাদের কথা স্মরন করা হয়, জাতির প্রতিটি সদস্য কল্পনাতেই তাদের মুখে ঘৃণাভরা থুথুর দলা নিক্ষেপ করে। তারা স্মরনীয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু বরণীয় হতে পারেনি। এর একটাই কারন তারা ইসলামী সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়েছিল। নিজেদের কালচার ভুলে গিয়ে অন্যের কালচার গ্রহন করেছিল। অমুসলিমদের অপসংস্কৃতির প্রতি আকর্ষিত হয়েছিল।
.
আজ আমরাও তাদের পথেই হাঁটছি। তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করছি। তাদের উচ্ছিষ্টই গ্রহন করছি। ফলে যত দিন যাচ্ছে আমরা সামনে না এগিয়ে চৌদ্দশত বৎসর আগের সেই বর্বর যুগে ফিরে যাচ্ছি। সভ্যতার খোলসে আবৃত হলেও ভেতরে ভেতরে এক অসভ্য বর্বর জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এখন রাজন-রাকিবকে অমানুষিক ভাবে হত্যা করতে আমাদের হাতে কাঁপন ধরেনা। খাদিজাকে এমসি কলেজের এরিয়ায় অসংখ্য মানুষের ভীড়ে রামদা দিয়ে কুপাতে আমাদের অন্তরে কম্পন অনুভূত হয়না। এখন আমাদের মাঝে খালিদ বিন ওয়ালীদ নয় বরং মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই বেশি সৃষ্টি হচ্ছে। তারিক বিন যিয়াদ আর মুসা বিন নুসায়ের নয় বরং কাপুরুষ আবু আব্দুল্লাহই বেশি জন্ম নিচ্ছে। নেযামুল মুলক আর ওমর খৈয়াম নয় বরং "ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান" হাসান ইবনে সবাহই বেশি তৈরি হচ্ছে। এসব কিছুই ইসলামী সংস্কৃতিকে দলিত মথিত করার ফল। অপসংস্কৃতিকে ওয়েলকাম করার কুফল।
.
পরিশেষে এটাই বলব যে, সমাজের অপরাধ অনৈতিকতা রোধে ইসলামী সংস্কৃতির বিকল্প নেই। আমরা যদি নিজেদেরকে ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত করতে পারি তাহলে সমাজের অপরাধ অনৈতিকতার অবসান ঘটবে। যদি ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে আঁকড়ে ধরতে পারি তাহলে সমাজের হিংসা বিদ্বেষ, মারামারি আর হানাহানির বিলুপ্তি ঘটবে। যদি নিজেদেরকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে পারি তাহলে আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে আন্তর্যাতিক জীবন পর্যন্ত সর্বত্রই নেমে আসবে অনাবিল শান্তিসুখের বারিধারা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অপসংস্কৃতির রাহুমুক্ত করে ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
.
আমি কে? আমি কেমন? আমার ধর্ম বিশ্বাস কী? এসব জানতে হলে গুগলে সার্চ দিতে হবেনা,আমার উইকিপিডিয়া পড়তে হবেনা, অথবা আমাকে নিয়ে কোন রিসার্চও করতে হবেনা। শুধু একটি জিনিস জেনে নিলেই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, একটি জিনিস দেখে নিলেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর ঐ মহামূল্যবান জিনিসটিই হচ্ছে আমার সংস্কৃতি। আমার সংস্কৃতিই বলে দেবে আমি কে? আমার কৃষ্টি-কালচারই জানিয়ে দেবে আমি কেমন? আমার তাহযীব-তামাদ্দুনই ঘোষনা দেবে আমার ধর্ম বিশ্বাস কী? সংস্কৃতিই আমার সংজ্ঞা। সংস্কৃতিই আমার পরিচয়। সংস্কৃতিই আমার আইডেন্টিফিকেশন।
.
প্রত্যেক জাতিরই স্ব-স্ব সংস্কৃতি আছে। প্রত্যক ধর্মেরই নিজস্ব তাহযীব-তামাদ্দুন আছে। সকলেরই ডিফারেন্ট কিছু কৃষ্টি-কালচার আছে। এর মধ্যে কোন কোন সংস্কৃতি সুশীল সমাজের কাছে "অপসংস্কৃতি" নামেই আখ্যায়িত হয়। কারন মানব মস্তিষ্ক প্রসূত হওয়ার কারনে, শয়তানের কুমন্ত্রণায় সৃষ্ট হওয়ার কারনে, সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় ক্ষতিকারক হওয়ার কারনে, অপরাধ অনৈতিকতার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়ার কারনে অথবা স্রষ্টার দেয়া বিধি-নিষেধের পরিপন্থী হওয়ার কারনে কোন কোন সংস্কৃতি অপসংস্কৃতি রুপেই আত্মপ্রকাশ করে। অপরদিকে কোন কোন সংস্কৃতি খোদা প্রদত্ত হলেও, আগেকার যুগে পালনীয় হলেও কালের আবর্তনে, যুগের বিবর্তনে অার ধর্মের রহিতঃকরনের দরুন নিজের রুপ পাল্টে অপসংস্কৃতির রুপ ধারন করে। আর তখনই ঐ সমস্ত অপসংস্কৃতি সকলের জন্যে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্ত সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির ভীড়ে সার্বজনীন ও সবার জন্যে কল্যানকর সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি তথা ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন। ইসলামী সংস্কৃতিই যে সর্বকালের সর্বসেরা সংস্কৃতি তা অতীতেও অসংখ্যবার প্রমানিত হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ। কারন এই সংস্কৃতির স্পর্শেই জাহিলী যুগের বর্বর মানুষেরাও হয়ে উঠেছিল সোনার মানুষ। এই সংস্কৃতির ছোঁয়াতেই আউস ও খাযরাজ চৌদ্দপুরুষের শত্রুতা ভুলে স্থাপন করেছিল ভ্রাতৃত্বের চরম পরাকাষ্ঠা। এই সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরেইতো আশারায়ে মুবাশ্শারাহ দুনিয়াতেই পেয়ে গেছেন জান্নাতের সার্টিফিকেট। এই সংস্কৃতিকে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে বাস্তবায়িত করেইতো সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন "রাযিয়াল্লাহু আনহুম" এর লক্বব। আজো যারা ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত হচ্ছেন, ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের হার নিজের গলে পরছেন তাঁরাও পরিণত হচ্ছেন এ যুগের সোনার মানুষে। একেকজন হচ্ছেন একেকটি পরশ পাথর। তাঁদের পরশে যেন মৃতও জীবিত হয়ে যায়। তাঁদের স্পর্শে প্রানহীন শরীরও প্রানের পরশ পায়। তাঁদের ছোঁয়ায় নির্জীব আত্মাও সজীবতায় ভেসে বেড়ায়। ইসলামী সংস্কৃতির এই অলৌকিক ক্ষমতা ক্বেয়ামত পর্যন্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। কারন একমাত্র এই সংস্কৃতিই মহামহিম আল্লাহ কেয়ামত অবধি স্বীকৃত ও অনুমোদিত করেছেন। আর খুলুক্বে আযীমের অধিকারী হযরত মুহাম্মদ সঃ নিজে এই সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার আর বাস্তবায়ন করে গেছেন। এটাই হচ্ছে এই সংস্কৃতির ক্ষমতার উৎস। তবেই তো এই সংস্কৃতির এত শান! এত মান! তাই তো এই সংস্কৃতির এত মর্যাদা! এত সম্মান! এজন্যেই তো এই সংস্কৃতি এত মহান! এত সুমহান!
.
ইসলামের এই ক্রান্তিকালে আজ আমরা নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে বেষ্টিত। নিজস্ব সংস্কৃতির জলাঞ্জলি দিয়ে অপসংস্কৃতির মায়াজালে আবদ্ধ। চারিদিকে আজ অপসংস্কৃতির জয়জয়কার আর ইসলামী সংস্কৃতির হাহাকার। যুগের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কখন যে আমরা নিজেদের সংস্কৃতি বিসর্জন দিচ্ছি তা অনুভব করতে পারিনা। ধীরেধীরে নিজেদের সংস্কৃতি থেকে কত দূরে চলে যাচ্ছি তা উপলব্ধিই করতে পারিনা। আমরা হারাচ্ছি আমাদের পরিচয়, বিলীন করছি আমাদের সংজ্ঞা। ফলশ্রুতিতে "আকারে ইনসান প্রকারে শয়তান" এই হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের "পঁহচান"।
.
আমাদের সমস্ত কর্মকান্ডের ফাইল আর চলাফেরা ও আচার আচরনের স্টাইল চেক করলে আমাদের সত্যিকার পরিচয় পাওয়া দায়। পুরো ফাইলটিই থাকবে ওয়েষ্টার্ন কালচারে ভরা আর আচার আচরনে থাকবে অপসংস্কৃতির মহড়া। নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিতে এখন আমাদের গায়ে লাগেনা। আমরা যেন নিজেদের সংস্কৃতি আর পরিচয় সমাজের সামনে তুলে ধরতে সদা-সর্বদা শঙ্কিত। পক্ষান্তরে অপসংস্কৃতির ধূম্রজালে নিজেদের পরিচয় হারিয়েও আমরা গর্বিত। আমাদের অমূলক শঙ্কা আর অযাচিত ও অবাঞ্ছিত গর্বকে জানাই "ধিক শত ধিক"।
.
হাদীসে আছে কাফেররা মুসলমানদেরকে উপহাস করে বলতো; মুহাম্মদ এ কেমন ধর্ম নিয়ে আসল যে, তাতে পায়খানার পদ্ধতিও শিক্ষা দেয়া হয়। যদিও কাফেররা ঠাট্টাচ্ছলে এ কথা বলতো কিন্তু বস্তুত এটাই আমাদের গর্বের বিষয়। এটাই প্রমান করে যে, আমাদের জীবনে এমন কিছু নেই যার সুষ্ঠু ও সুন্দর পদ্ধতি ইসলামী সংস্কৃতিতে নেই। মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে পারিবারিক,সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অান্তর্যাতিক জীবন পর্যন্ত প্রতিটি পদেপদে ইসলামের অতুলনীয় ও অনুপম সংস্কৃতি বিদ্যমান। যে সংস্কৃতি পায়খানায় বসা থেকে নিয়ে বিশ্বপরিচালনা করা পর্যন্ত সর্বপ্রকার শিক্ষা আমাদেরকে দেয় তাকে কেন এত অবহেলা? কেন এত অবজ্ঞা? ইসলামের নবী যেমন বিশ্বনবী, ইসলাম ধর্ম যেমন বৈশ্বিক ধর্ম ঠিক তেমনি ইসলামী কালচারও গ্লোবাল কালচার। তাহলে কেন গ্লোবালাইজেশনের নামে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়ার পাঁয়তারা? কেন বিশ্বায়নের নামে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে পদদলিত করার জন্যে আমরা দিশেহারা?
.
আজ পর্যন্ত এমন কোন অমুসলিম দেখিনি যার পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা আর কথাবার্তায় বুঝা যায় সে একজন খাঁটি মুসলিম। এমন কোন ওয়েষ্টার্ন দেখিনি যার কালচারে বুঝা যায় সে ইষ্টার্ন। কিন্তু এমন মুসলিম অহরহ পাওয়া যায় যার বেশভূষা প্রমান করে সে একজন নিরেট অমুসলিম। প্রাচ্যের এমন অনেক মানুষকেই পাই যার চলন-বলন প্রমান করে সে পশ্চিমা। আমাদের এত অধঃপতন কেন? নিজেদের পরিচয় হারাতে আমরা উঠেপরে লেগেছি কেন? তারা আমাদের সংস্কৃতি গ্রহন না করলেও আমরা কেন তাদের অপসংস্কৃতি আঁকড়ে ধরতে বদ্ধপরিকর?
.
ইতিহাস সাক্ষী আজ পর্যন্ত যারা ইসলামী সংস্কৃতি ভুলে অপসংস্কৃতির কবলে পড়েছে, অমুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার গ্রহন করেছে তারা একদিন নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে পরিচয়হীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তারাই ইতিহাসে এক ঘৃণিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। যখনই ইতিহাসের পাতা উল্টানো হয় এবং তাদের কথা স্মরন করা হয়, জাতির প্রতিটি সদস্য কল্পনাতেই তাদের মুখে ঘৃণাভরা থুথুর দলা নিক্ষেপ করে। তারা স্মরনীয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু বরণীয় হতে পারেনি। এর একটাই কারন তারা ইসলামী সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়েছিল। নিজেদের কালচার ভুলে গিয়ে অন্যের কালচার গ্রহন করেছিল। অমুসলিমদের অপসংস্কৃতির প্রতি আকর্ষিত হয়েছিল।
.
আজ আমরাও তাদের পথেই হাঁটছি। তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করছি। তাদের উচ্ছিষ্টই গ্রহন করছি। ফলে যত দিন যাচ্ছে আমরা সামনে না এগিয়ে চৌদ্দশত বৎসর আগের সেই বর্বর যুগে ফিরে যাচ্ছি। সভ্যতার খোলসে আবৃত হলেও ভেতরে ভেতরে এক অসভ্য বর্বর জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এখন রাজন-রাকিবকে অমানুষিক ভাবে হত্যা করতে আমাদের হাতে কাঁপন ধরেনা। খাদিজাকে এমসি কলেজের এরিয়ায় অসংখ্য মানুষের ভীড়ে রামদা দিয়ে কুপাতে আমাদের অন্তরে কম্পন অনুভূত হয়না। এখন আমাদের মাঝে খালিদ বিন ওয়ালীদ নয় বরং মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই বেশি সৃষ্টি হচ্ছে। তারিক বিন যিয়াদ আর মুসা বিন নুসায়ের নয় বরং কাপুরুষ আবু আব্দুল্লাহই বেশি জন্ম নিচ্ছে। নেযামুল মুলক আর ওমর খৈয়াম নয় বরং "ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান" হাসান ইবনে সবাহই বেশি তৈরি হচ্ছে। এসব কিছুই ইসলামী সংস্কৃতিকে দলিত মথিত করার ফল। অপসংস্কৃতিকে ওয়েলকাম করার কুফল।
.
পরিশেষে এটাই বলব যে, সমাজের অপরাধ অনৈতিকতা রোধে ইসলামী সংস্কৃতির বিকল্প নেই। আমরা যদি নিজেদেরকে ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত করতে পারি তাহলে সমাজের অপরাধ অনৈতিকতার অবসান ঘটবে। যদি ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে আঁকড়ে ধরতে পারি তাহলে সমাজের হিংসা বিদ্বেষ, মারামারি আর হানাহানির বিলুপ্তি ঘটবে। যদি নিজেদেরকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে পারি তাহলে আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে আন্তর্যাতিক জীবন পর্যন্ত সর্বত্রই নেমে আসবে অনাবিল শান্তিসুখের বারিধারা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অপসংস্কৃতির রাহুমুক্ত করে ইসলামী সংস্কৃতির সাজে সজ্জিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।