ঝরা পাতার গল্প
পুকুরপাড়ে ছোট্ট একটি কাঠাল গাছ। ছোট্ট হলেও বেশ নাদুসনুদুস। সুস্থ সবল। অন্য গাছগুলোর মত শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়নি। গাছটিতে অজস্র পাতা। সবগুলোই সবুজ শুধু একটি ছাড়া। এই পাতাটির রংটা একটু ভিন্ন। কেমন জানি ধূসর। তার ধূসর রংটাই আমার দৃষ্টি আকর্ষন করে। তার ভিন্নতাটাই আমাকে কাছে টানে। তার ধূসর বর্ণে যেন তার জীবনের ধূসর মুহুর্তগুলো আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।
.
তার রঙের মত তার চরিত্রটাও ভিন্ন। সকালের সোনালী রোদে শিশিরভেজা পাতাগুলো যখন আনন্দে চিকচিক করে তখন এই পাতাটি তার বিষণ্ণ মুখটি লুকিয়ে রাখে। গোধূলি বেলায় রক্তিম আকাশের আভায় যখন অন্য পাতাগুলোর চেহারা আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠে তখন এই পাতাটি তার মলিন চেহারা আড়াল করে রাখে।
মৃদু বাতাসের ঝাপটায় যখন অন্য পাতাগুলো খিলখিলিয়ে হেসে উঠে তখন এই পাতাটি গোমড়ামুখো হয়ে বসে থাকে। রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে অন্য পাতাগুলো যখন সজীবতায় ভেসে বেড়ায় তখন এই পাতাটির চোখের জলে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানিও লোনা হয়ে যায়। অজস্র পাতার ভীড়েও যেন সে একা। অসংখ্য পশু-পাখির কোলাহলেও যেন সে নীরব নিস্তব্ধ।
.
পাতাটির চরিত্র আমার খুব ভাল লাগে। তাকে আমার খুব আপন মনে হয়। তার মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে পাই। প্রতিদিনই তাকে দেখি, সেও আমায় দেখে। কখনো চোখে চোখে কথা বলি, কখনো হৃদয়ে হৃদয়ে বাক্য বিনিময় করি। কখনো হাত দিয়ে ছোঁয়ে দেখি, কখনো অন্তর দিয়ে স্পর্শ করি। রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমরা দু'জনে জেগে থাকি। রাতের নৈশব্দে একে অপরের "দিলের ধরকন" শুনি।একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসি। কান্নার চেয়েও করুন সেই হাসি।কখনো আমি তাকে সান্ত্বনা দেই, কখনো সে আমাকে। এভাবেই চলছিল আমাদের বন্ধুত্বের খেলা।
.
আমার আন্তরিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে সে কিছুটা সজীব হয়ে উঠে।
আমার বন্ধুত্বের স্পর্শে ধীরেধীরে সে কিছুটা সবুজ হয়ে উঠে। তার অবস্থার উন্নতি দেখে আমি খুশিতে বাগবাগ হয়ে যাই। তার সজীবতা দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। হায়! আমি যদি জানতাম এই সুখ-সজীবতাই একদিন তার জন্যে কাল হয়ে দাঁড়াবে!
.
একদিন হঠাৎ সোনালী রোদ, রক্তিম আকাশ, রিমঝিম বৃষ্টি আর মৃদুমন্দ বাতাস সব একযোগে তার জীবনে চলে আসলো। সুখের সব উপকরণ একসাথে পেয়ে তার সবুজ-সজীব দেহে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। আনন্দের অতিশয্যে সেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। কিন্তু সে যে এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠেনি, তার শরীরে সজীবতা এলেও মনটা এখনো পুরোপুরি সজীব হয়ে উঠেনি সেদিকে তার খেয়াল ছিলনা। তার অসুস্থ শরীর আর দুর্বল মন এত আনন্দ সইতে পারেনি। খিলখিল করে হেসে উঠতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখের সামনে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল। ভবলীলা সাঙ্গ করে সে নিঃশব্দে বোটা থেকে খসে পড়ল।
.
তার চলে যাওয়ার শোকে আমি কাতর হলামনা, বরং পাথর হয়ে গেলাম। শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় তার শুন্যতা টের পেলাম। প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার অনুপস্থিতি অনুভব করলাম।তার হৃদস্পন্দনহীন দেহটি গাছের নিচে পড়ে রইলো কিন্তু তার জীবন্ত স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে গেঁথে রইলো। আমার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরল আর হৃদয়ে রক্তক্ষরন হলো। আমি আর তার দিকে তাকালাম না, তাকাতে পারলাম না।
.
এখন আমার জীবনে কত সুখের মুহুর্ত আসে।সোনালী রোদ,রিমঝিম বৃষ্টি,মৃদু বাতাস আর রক্তিম আকাশ। কখনো পালাক্রমে আসে কখনো বা একযোগে। কিন্তু আমি হাসি না। খিলখিল করে হেসে উঠিনা। ভয় হয়, যদি আমিও ঐ ঝরা পাতার মত এত সুখ সইতে না পারি! যদি আমিও বোটা থেকে খসে পড়ি!
.
তার রঙের মত তার চরিত্রটাও ভিন্ন। সকালের সোনালী রোদে শিশিরভেজা পাতাগুলো যখন আনন্দে চিকচিক করে তখন এই পাতাটি তার বিষণ্ণ মুখটি লুকিয়ে রাখে। গোধূলি বেলায় রক্তিম আকাশের আভায় যখন অন্য পাতাগুলোর চেহারা আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠে তখন এই পাতাটি তার মলিন চেহারা আড়াল করে রাখে।
মৃদু বাতাসের ঝাপটায় যখন অন্য পাতাগুলো খিলখিলিয়ে হেসে উঠে তখন এই পাতাটি গোমড়ামুখো হয়ে বসে থাকে। রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে অন্য পাতাগুলো যখন সজীবতায় ভেসে বেড়ায় তখন এই পাতাটির চোখের জলে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানিও লোনা হয়ে যায়। অজস্র পাতার ভীড়েও যেন সে একা। অসংখ্য পশু-পাখির কোলাহলেও যেন সে নীরব নিস্তব্ধ।
.
পাতাটির চরিত্র আমার খুব ভাল লাগে। তাকে আমার খুব আপন মনে হয়। তার মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে পাই। প্রতিদিনই তাকে দেখি, সেও আমায় দেখে। কখনো চোখে চোখে কথা বলি, কখনো হৃদয়ে হৃদয়ে বাক্য বিনিময় করি। কখনো হাত দিয়ে ছোঁয়ে দেখি, কখনো অন্তর দিয়ে স্পর্শ করি। রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমরা দু'জনে জেগে থাকি। রাতের নৈশব্দে একে অপরের "দিলের ধরকন" শুনি।একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসি। কান্নার চেয়েও করুন সেই হাসি।কখনো আমি তাকে সান্ত্বনা দেই, কখনো সে আমাকে। এভাবেই চলছিল আমাদের বন্ধুত্বের খেলা।
.
আমার আন্তরিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে সে কিছুটা সজীব হয়ে উঠে।
আমার বন্ধুত্বের স্পর্শে ধীরেধীরে সে কিছুটা সবুজ হয়ে উঠে। তার অবস্থার উন্নতি দেখে আমি খুশিতে বাগবাগ হয়ে যাই। তার সজীবতা দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। হায়! আমি যদি জানতাম এই সুখ-সজীবতাই একদিন তার জন্যে কাল হয়ে দাঁড়াবে!
.
একদিন হঠাৎ সোনালী রোদ, রক্তিম আকাশ, রিমঝিম বৃষ্টি আর মৃদুমন্দ বাতাস সব একযোগে তার জীবনে চলে আসলো। সুখের সব উপকরণ একসাথে পেয়ে তার সবুজ-সজীব দেহে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। আনন্দের অতিশয্যে সেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। কিন্তু সে যে এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠেনি, তার শরীরে সজীবতা এলেও মনটা এখনো পুরোপুরি সজীব হয়ে উঠেনি সেদিকে তার খেয়াল ছিলনা। তার অসুস্থ শরীর আর দুর্বল মন এত আনন্দ সইতে পারেনি। খিলখিল করে হেসে উঠতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখের সামনে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল। ভবলীলা সাঙ্গ করে সে নিঃশব্দে বোটা থেকে খসে পড়ল।
.
তার চলে যাওয়ার শোকে আমি কাতর হলামনা, বরং পাথর হয়ে গেলাম। শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় তার শুন্যতা টের পেলাম। প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার অনুপস্থিতি অনুভব করলাম।তার হৃদস্পন্দনহীন দেহটি গাছের নিচে পড়ে রইলো কিন্তু তার জীবন্ত স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে গেঁথে রইলো। আমার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরল আর হৃদয়ে রক্তক্ষরন হলো। আমি আর তার দিকে তাকালাম না, তাকাতে পারলাম না।
.
এখন আমার জীবনে কত সুখের মুহুর্ত আসে।সোনালী রোদ,রিমঝিম বৃষ্টি,মৃদু বাতাস আর রক্তিম আকাশ। কখনো পালাক্রমে আসে কখনো বা একযোগে। কিন্তু আমি হাসি না। খিলখিল করে হেসে উঠিনা। ভয় হয়, যদি আমিও ঐ ঝরা পাতার মত এত সুখ সইতে না পারি! যদি আমিও বোটা থেকে খসে পড়ি!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবু সাইদ লিপু ০৮/০৮/২০১৭হাসুন প্রাণ খুলে।
-
আমি সেই প্রতিবাদী নারী ২৯/০৭/২০১৭ভালো লাগলো। শুভকামনা নিরন্তর।
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৮/০৭/২০১৭গল্পটা সম্পূর্ণ দিন।নতুবা পেন্ডিং থেকে যাবে।