www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পক্ষ বিপক্ষ শক্তির বিতর্ক নয় ঐক্য চাই

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনা বিজয়ের ৪১ টি বছর উদ্‌যাপন করলাম আমরা,আর মাত্র নয়টি বছর পরেই উদযাপন করব আমাদের বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী।বিজয়ের সূদীর্ঘ চার দশক পরে আজও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক ।অথচ দীর্ঘ এই পথচলায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মিলিয়ে যখন ফলাফলের দিকে তাকাই তখন শুধু হতাশ-ই হই না বরং ক্ষুব্ধও হই। এতগুলো বছর পরেও যখন আমরা ব্যর্থ হয়েছি জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে,ব্যর্থ হয়েছি একটি একটি সুণ্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে তখন স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির এই বিতর্ক সৃষ্টি করবে ভয়াবহ ক্ষতের যা কিনা ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে।জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই জার্মান জাতি ভেঙ্গে ফেলেছিল বার্লিনের প্রাচীর।কিন্তু এ কোন আত্মঘাতি খেলায় মেতে উঠেছি আমরা।স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশেই কিন্তু পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নিয়ে বিতর্ক হয়নি কোথাও তাই স্বাধীনতার পর এগিয়ে যেতে পেরেছে ঐসব জাতিগুলো।১৭৭৫-১৭৮৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে আমেরিকানরা, প্রাণ হারিয়েছিল ২৫ হাজার মানুষ।এই যুদ্ধে সক্রিয় সমর্থন ছিল ৪০ শতাংশ আমেরিকানের, ২০শতাংশ সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ব্রিটিশদের পক্ষে আর ৪০ শতাংশ পালন করে নিরপেক্ষ ভূমিকা।তাই বলে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নিয়ে কোন বিতর্ক হয়নি বরং সবাই মিলে একটি সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছে।
১৮৬১-১৮৬৫ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা দেখতে হয়ছে আমেরিকার জনগণকে,প্রাণ হারিয়েছে ৭ লাখ মানুষ।তাই বলে বিভিক্ত হয়ে যায়নি জাতি, যুদ্ধের পর আব্রাহাম লিঙ্কনের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়ার জন্য কাজ করেছে সবাই। এমনকি যে ভিয়েতনামের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ হয়েছে দীর্ঘ এক দশক, প্রাণ হারাতে হয়ছে ১০ হাজারেরও বেশি আমেরিকানকে, ২০০০ সালের ১৭-ই নভেম্বর সেই ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হোচিমিনের প্রতিকৃতির পাশে দাড়িয়ে অতীতের দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে একটি সুখী সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার আহবান জানান।
একটি সুখী-সমৃদ্ধ জাতি গঠনের লক্ষ্যে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দূরদর্শিতা স্বাধীনতার মহান নায়ক শেখ মুজিবের মধ্যেও ছিলো।তাই ১৯৭৩ সালের ১৫-ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তিঁনি বলেছিলেন-"আমরা প্রতিশোধ গ্রহনের নীতিতে বিশ্বাসী নই।তাই যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে দালাল আইনে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত হয়েছে তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হয়েছে।"
১৯৭৫ সালের ২৬-ই মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বললেন-"ভায়েরা আমার ও বোনেরা আমার আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু একটা ওয়াদা রাখতে পারি নাই।জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি তা জীবন দিয়েও পালন করেছি।আমি ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করব।এই ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে আমি খেলাপ করেছি।আমি তাদের বিচার করিনি।আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি এজন্য যে এশিয়ায় ও দুনিয়ায় আমরা বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম।"
স্বাধীনতার মহান নায়কের অনুসারীরা-ই আজ তাঁর দর্শন থেকে সরে এসে বিভক্তির এক উন্মত্ত খেলায় মত্ত হয়েছে।বিভক্তির এই খেলা কোন জাতির জন্যই কল্যানকর হয়নি।যার জীবন্ত উদাহরণ আজকের আফ্রিকান জাতিগুলো।বিভক্তির উন্মত্ত খেলাই বিপন্ন করেছে জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব,অর্থনৈতিকভাবে রেখেছে পশ্চাদপদ।
মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের দিকে তাকালে আজ আশ্চর্য হতে হয়।কিসের এমন অভাব ছিল আমাদের এই ভূ-খন্ডে।ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দেশের রয়েছে বিশাল এক সমুদ্রসীমা,আছে বিশাল জনশক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের পাহার।এগুলো কাজে লাগিয়ে আমরাও কি পারতাম না দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর হতে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোড়ামাটির একটা দেশ জাপান,যাদের নিজস্ব কোন কাঁচামাল নেই সবটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তারা যদি অর্থনীতিতে এতদূর এগিয়ে যেতে পারে তাহলে ত্রিশ লাখ প্রানের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতার পতাকাবাহী হয়ে আমরা কেন পারব না? ১৯৭১ সালের মতো সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে যদি আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের জাতীয় আকাঙ্খা পূরনের লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পরতে পারি তাহলে আমরাও পারব।এবং ইতিহাস তাই বলে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১৪০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আপনি অত্যন্ত্য দারুন লিখেছেন। কিন্তু কবে আমরা মানুষ হবো.........
  • পল্লব ১৩/১১/২০১৩
    আমরা সাধারণ জনগণ ঐক্য অবশ্যই চাই। তবে আপনার সব বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারলাম না। ৭১ সালে কারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলো, এবং কারা একক পাকিস্তান চেয়েছিলো, সেই মতভেদ ভুলতে আপত্তি নেই আমার। কিন্তু তাই বলে ভিন্ন মতভেদের উপর ভিত্তি করে যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, নির্বিচারে লুন্ঠন, খুন ও ধর্ষণ করেছে, তাদের মাফ করতে পারবো না আজীবন। আর আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়েছেন, তেমন উদাহরণ আপনার বক্তব্যের বিরুদ্ধেও দিতে পারবো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা নৃশংস অপরাধ করেছিলো, তাদের কিছুদিন আগে পর্যন্ত খুঁজে বের করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। যুদ্ধের ৫০-৬০ বছর পরেও।

    আর অনেকদিন যাবতই বিভিন্নভাবে জামায়েতী মতাবলম্বী অনেকের মুখেই শুনে আসছি যে শেখ মুজিব নিজে নাকি সব রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন। এক্ষেত্রে প্রথমতঃ, সাধারণ অর্থে যারা রাজাকারে যোগ দিয়েছিলো তাদের মাফ করা হলেও যারা খুন-ধর্ষণ ইত্যাদি করেছে তাদের অপরাধ মাফ করা হয়নি। আর দ্বিতীয়তঃ, শেখ মুজিব তাদের মাফ করে দিলেই যে আমাদের আজীবন তাদের মাফ করে দিতে হবে, তাদের অপরাধের বিচার চাওয়া যাবে না এমন কোন শর্ত নেই। অপরাধগুলো শুধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে করা হয়নি যে তিনি মাফ করে দিলেই সব মাফ।
    • এখানে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে ঐক্যের কথা কেউ বলেনি।
      • পল্লব ১৪/১১/২০১৩
        ধন্যবাদ। :) ইদানিং কথায় কথায় বিভিন্ন দল যেভাবে স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের দলে লোকজনকে ভাগ করে ফেলছে এটাও বন্ধ করা উচিত। সত্যি বলতে কি দেশ স্বাধীন হবার পরপরই নিজেদের মধ্যে এরকম ভাগাভাগি শুরু হয়ে গেছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই কে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে এবং কে অস্ত্র ছাড়া সাংগঠনিকভাবে তা পরিচালনা কিংবা অন্যান্যভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে তা নিয়ে ভেদাভেদ শুরু হয়ে যায়। যেই লোকটা অস্ত্র হাতে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, তার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট আছে। কিন্তু যে লোক তার সবকিছু দিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে, তাকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চিনি না।
        • মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি অনেক মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবন যাপন করছে,তখন অনেক খারাপ লাগে।আবার দেখি অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা নানান সুবিধা ভোগ করছে তখন আরো বেশি খারাপ লাগে।
    • প্রবাসী পাঠক ১৩/১১/২০১৩
      আপনার মন্ত্যব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি ।
  • সুলতান মাহমুদ ১৩/১১/২০১৩
    a one!
  • রাখাল ১৩/১১/২০১৩
    পক্ষ আর বিপক্ষ সব আসলে ধোঁয়া
    লক্ষ্য ছেলে ভুলিয়ে ক্ষমতাকে ছোঁয়া ।
    রাজাকার ছিলো, আছে, থাকবে
    যেই ক্ষমতা হারাক তাদেরকেই ডাকবে ।
    স্বৈরাচার হটাতে রাজাকার সহ সবাই করে জোট
    আবার স্বৈরাচার নিয়ে, ক্ষমতা ছোঁয়ে রাজাকারদের দেখায় একচোট ।
    পক্ষ আর বিপক্ষ মানে মাছের মায়ের পুত্র শোক
    ভিতরে কপাটতা, বাইরে মায়া দেখুক দেশের লোক ।
  • সায়েম খান ১৩/১১/২০১৩
    আমরা শান্তি চাই। সময় এসেছে সকল বিভেদ ভূলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার। ধন্যবাদ, আমার ব্লগে দাওয়াত রইল।
  • জাফার ১৩/১১/২০১৩
    আমাদের জাতিসত্বা যেখানে বিপন্ন। যেখানে একটি জাতির স্বকীয়তা নেই, যেখানে মানুষরূপী হায়েনাদের অবাধ বিচরণঃ সেখানে ঐক্যের স্বপ্ন সুদূর পরাহত।
  • দীপঙ্কর বেরা ১৩/১১/২০১৩
    Bhalo lekha .
 
Quantcast