নিষ্পাপ প্রেম
শুক্রবার দিন। সুমন সকালে একটু দেরী করে ঘুম থেকে ওঠে। নাস্তা খেয়ে বের হ’ল। মাকে বলল-মা’ আমি একটু আসি। দুপুরে একসাথে খাব। নিম্নধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু সুখি। ভাই-বোন দু’জন। ছোট বোন ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। সুমন এবার এইচ.এস.সি দিল। রেজাল্ট ভালোই হবে। মেডিক্যালে ট্রাই করবে। পড়ালেখার পাশাপাশি এলাকার গরিব কৃষকদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে আসছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। ফলে এলাকাতে খুবই জনপ্রিয় সে।
পাশের গ্রামের ফরিদা’ নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান শাখায়। এলাকার প্রভাবশালী পরিবার। ফরিদা’র বাবা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। চাচা’ খুবই ভয়ঙ্কর মন্দ লোক। সুমনের কলেজ ও ফরিদা’র স্কুলে যাওয়ার রাস্তা একটাই। দু’জনের মধ্যে দেখাদেখি দু’একটা কথাও হয়। একসময় দু’জনের মধ্যে একটা ভাব জমে ওঠে। কোমল মন বলে কথা। প্রতিদিন মোবাইলে কথা না বল্লে যেন ভাত হজম হয়না। তবে দু’জনের মধ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্কই তাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতে সহযোগীতা করেছে। দু’জনেরই টার্গেট জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সুমন’ বাড়িতে ফিরতে দেরী দেখে মা চিন্তিত। মোবাইলটাও বাসায় রেখে গেছে। সব জায়গায় খোঁজ-খবর নেয়া হল। পরিচিতদের মোবাইল কল করে কোনরূপ তথ্য পাওয়া গেল না। বাবা’তো একদম ভেঙ্গে পড়েছে। একমাত্র ছেলে দু’দিন হতে চলেছে। কোন কিছুই জানা যাচ্ছে না। কোথায়? কি অবস্থায় আছে? এমনিতে বিভিন্ন জায়গায় গুম/খুন-এর খবর মাঝে সাঝে শোনা যায়। অনেক অপেক্ষার পরও কোন খোঁজ পাওয়া যায়না অনেকের। আবার কেউ ফিরে আসলেও স্বাভাবিক আচরণ করে না। কেমন যেন হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে ----- মনটা আরো যেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র ছেলের জন্য যা যা করা দরকার সবই করতে রাজি, দুলাল সাহেব। বিনিময়ে যদি ছেলেকে পাওয়া যায়। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বোন টিসা’র খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ। মা’তো কিছুক্ষণ পরপর মুর্ছা যাচ্ছে। চার-পাঁচদিন হয়ে গেল। কই সুমন তো ফিরছেনা। এলাকার সবাই গরু খোঁজার মতো খোঁজতে থাকে। শেষ-মেষ সিদ্ধান্ত হলো থানায় জানানো হবে। অনিচ্ছা সত্বেও দুলাল সাহেব থানায় গেলেন জিডি করতে। পুলিশ’তো জিডি নিবে না। এলাকার এক বিশিষ্ট ব্যক্তির সুপারিশে জিডি করা হ’ল।
সুমনের ভাগ্যে কি ঘটতে পারে। কারা তাকে গুম/খুন করতে পারে? এমন প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করল। পুলিশ কোন প্রকার খোঁজ-খবর দিতে পারলনা। সুমনে’র বন্ধুরা জানে পাশের গ্রামের মেয়ে ফরিদা’র সাথে বন্ধুত্ব আছে সুমনের। ফরিদা’র সাথে বন্ধুত্ব কি তার জন্য কাল হ’ল? কারণ তারা তো ভাল লোক না। এলাকায় যেমনি প্রভাবশালী তেমনি অনেক মন্দ কাজেরও পালের গোদা। সন্দেহ বাড়তেই থাকে। অগত্যা দুলাল সাহেব একটি অপমৃত্যু মামলা করতে বাধ্য হন। ফরিদাকে’সহ পরিবারের সবাইকে সন্দেহ’জনক আসামী করা হল।
কিছু দিন যাবৎ ফরিদার পরিবারের সবাই এলাকা থেকে সরে গেছে। কেউ ঢাকা, কেউ চট্টগ্রাম বা অন্যত্র থাকতে শুরু করল। পুলিশের খাতায় সুমনের কোন প্রকার কোন তথ্য নেই। তাহলে কি সুমন একাই কোথাও অভিমান করে গা ঢাকা দিয়েছে? ফরিদার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হ’ল? ইতিমধ্যে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে সন্দেহ করে বলা হয়। ফরিদার পরিবার-এর লোকজন সুমনকে খুন/ঘুম করতে পারে। পুলিশ পত্রিকার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে। দু-তিন মাস হ’ল। সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছে। সুমনকে আর হয়ত পাওয়া যাবে না। ফরিদার পরিবারের সবাই আজ মামলার হাজিরা দিতে জড়ো হয়েছে। সদর থানায় প্রবেশ করতে না করতেই পুলিশ সবাইকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে পুলিশের।
বিকেলে সুমনের মা’কে ডাক্তার এসে দেখে গেলেন, সন্ধ্যার পর। কিছু জরুরী ঔষধ আনতে হবে সুমনের বাবাকে। রাত ন’টার কম নয়। বাজারে গিয়ে দেখা গেল থানার মোড়ে লোকজনের ভিড়। বলাবলি করছে-কামটা ভালা করেনাই মাতব্বর। একখান মাত্র ছেলেকে. . . . .। দুলাল সাহেব মাথা উঁচু করে কান খাড়া করে শুনতে লাগলেন। বুঝতে পারছেন না কার কথা আলাপ হচ্ছে? তবে পুলিশ কতোগুলো আসামী ধরেছে এইটুকু বুঝা যাচ্ছে। দুলাল সাহেব দেরী না করে বাসায় ফিরলেন। ইদানিং বাহিরে বেশীক্ষণ থাকেন না। তাছাড়া ঘরে তো কোন লোকজনও নাই। বউটা অসুস্থ্য।
রাতে বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন দেখলেন সুমনের মা। পেঁচার ঢাক শোনা যাচ্ছিল। সকালে কাক ডাকা ভোরে অনেক কষ্টে নামাজ পড়ে উঠানে পায়চারী আর দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবছে-এ বুঝি সুমন-এর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। শিশির ভেজা সকাল। মিষ্টি মিষ্টি আলো। বাড়ির সবাই আলোতে শরীর জ¦লছে নিচ্ছে। একটি গাড়ি বাড়ির সামনে হাজির। সুমনের বাপকে ডাকলো একটি পুলিশ-এর সোর্স। চাচাজান একটু আসবেন। আশে-পাশের লোকজন সবাই ভিড় জমিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয়না। সুমনের কোন তথ্য হয়ত পাওয়া গেছে, আল্লাহ্ই জানেন। সবাই পুলিশের গাড়িতে চড়ে ফরিদা-দের বাড়ির পাশের একটি ধান ক্ষেতে হাজির। ফরিদাও ছিল সাথে। একটু মাটি সরাতেই পঁচনশীল লাশ-এর গন্ধ বের হচ্ছে। কিন্তু গায়ের জামাটা ও হাতে ঘড়ি’টা এখনও অক্ষত। সুমনের বাবা-মা সনাক্ত করল। এটাই সুমনের লাশ। একদিকে সুমনের পরিবারের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছে। অন্যদিকে এলাকার মানুষের মনে চরম ঘৃণা ও ক্রোধ কাজ করছে। ফরিদার মাতব্বর চাচা’র হঠকারী কর্মকান্ডে ফরিদা ও সুমনের নিষ্পাপ সম্পর্ককে নিঃশেষ করে দিল। শেষ করল দু’টি পরিবার-এর লালিত স্বপ্নকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসায় ফরিদা সব খুলে বলল। সেইদিন শুক্রবার। বাসায় কেউ ছিলনা। সুমন ভাই মোবাইলে ফোন করেন। আমার মোবাইলে চার্জ না থাকাতে বন্ধ ছিল। আর সুমন ভাই মনে করেছে আমি ইচ্ছা করে তার সাথে কথা বলছি না। খোঁজে আমাদের বাসায় হাজির। অবশ্য পাশের বাড়ির টিটো আমাদের ঘর দেখিয়ে দিয়েছিল। বাসা’য় কেউ ছিল না। আমি আর সুমন ভাই টিভি দেখছিলাম আর বিস্কুট খাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চাচা’জান বাসায় আসলেন। আর সুমন ভাইকে দেখে খুব কড়া ভাষায় কথা বললেন। একপর্যায়ে সুমন ভাইও উত্তর দিলেন। আমি চাচা’জানকে কিছু বলব। এমতাবস্থায়, চাচা’জান উঠানের একটি লম্বা লাঠি দিয়ে সুমন ভাইকে একটা সজোরে আঘাত করলেন। সুমন ভাই চলে যেতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। আরো একটা আঘাত ঠিক মাথায় পড়ল। সুমন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। এমন সময় আমার বাবা আসলেন কোত্থেকে যেন। বাবা চাচা’জানকে বকা দিলেন। এই তুমি এমন করে ছেলেটাকে মারতেছ কেন? কি করেছে ও? আর আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম। আর বলছিলাম-বাবা ওনার কোন দোষ নাই। উনি ভাইয়াদের কলেজের ফাস্ট বয়। ততক্ষণে সুমন ভাইয়ের ------। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিব। কিন্তু তা আর হলো না। রিক্সা খুজে পেতে না পেতেই সবি শেষ। আর বলতে পারল না ফরিদা। আমাকে শাস্তি দিন। আমাকে। আমার জন্যই . . . . .।
(লেখক: কবি, কলামিস্ট ও ঊন্নয়ন কর্মী,
01715363079
[email protected]).
পাশের গ্রামের ফরিদা’ নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান শাখায়। এলাকার প্রভাবশালী পরিবার। ফরিদা’র বাবা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। চাচা’ খুবই ভয়ঙ্কর মন্দ লোক। সুমনের কলেজ ও ফরিদা’র স্কুলে যাওয়ার রাস্তা একটাই। দু’জনের মধ্যে দেখাদেখি দু’একটা কথাও হয়। একসময় দু’জনের মধ্যে একটা ভাব জমে ওঠে। কোমল মন বলে কথা। প্রতিদিন মোবাইলে কথা না বল্লে যেন ভাত হজম হয়না। তবে দু’জনের মধ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্কই তাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতে সহযোগীতা করেছে। দু’জনেরই টার্গেট জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সুমন’ বাড়িতে ফিরতে দেরী দেখে মা চিন্তিত। মোবাইলটাও বাসায় রেখে গেছে। সব জায়গায় খোঁজ-খবর নেয়া হল। পরিচিতদের মোবাইল কল করে কোনরূপ তথ্য পাওয়া গেল না। বাবা’তো একদম ভেঙ্গে পড়েছে। একমাত্র ছেলে দু’দিন হতে চলেছে। কোন কিছুই জানা যাচ্ছে না। কোথায়? কি অবস্থায় আছে? এমনিতে বিভিন্ন জায়গায় গুম/খুন-এর খবর মাঝে সাঝে শোনা যায়। অনেক অপেক্ষার পরও কোন খোঁজ পাওয়া যায়না অনেকের। আবার কেউ ফিরে আসলেও স্বাভাবিক আচরণ করে না। কেমন যেন হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে ----- মনটা আরো যেন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র ছেলের জন্য যা যা করা দরকার সবই করতে রাজি, দুলাল সাহেব। বিনিময়ে যদি ছেলেকে পাওয়া যায়। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বোন টিসা’র খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ। মা’তো কিছুক্ষণ পরপর মুর্ছা যাচ্ছে। চার-পাঁচদিন হয়ে গেল। কই সুমন তো ফিরছেনা। এলাকার সবাই গরু খোঁজার মতো খোঁজতে থাকে। শেষ-মেষ সিদ্ধান্ত হলো থানায় জানানো হবে। অনিচ্ছা সত্বেও দুলাল সাহেব থানায় গেলেন জিডি করতে। পুলিশ’তো জিডি নিবে না। এলাকার এক বিশিষ্ট ব্যক্তির সুপারিশে জিডি করা হ’ল।
সুমনের ভাগ্যে কি ঘটতে পারে। কারা তাকে গুম/খুন করতে পারে? এমন প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করল। পুলিশ কোন প্রকার খোঁজ-খবর দিতে পারলনা। সুমনে’র বন্ধুরা জানে পাশের গ্রামের মেয়ে ফরিদা’র সাথে বন্ধুত্ব আছে সুমনের। ফরিদা’র সাথে বন্ধুত্ব কি তার জন্য কাল হ’ল? কারণ তারা তো ভাল লোক না। এলাকায় যেমনি প্রভাবশালী তেমনি অনেক মন্দ কাজেরও পালের গোদা। সন্দেহ বাড়তেই থাকে। অগত্যা দুলাল সাহেব একটি অপমৃত্যু মামলা করতে বাধ্য হন। ফরিদাকে’সহ পরিবারের সবাইকে সন্দেহ’জনক আসামী করা হল।
কিছু দিন যাবৎ ফরিদার পরিবারের সবাই এলাকা থেকে সরে গেছে। কেউ ঢাকা, কেউ চট্টগ্রাম বা অন্যত্র থাকতে শুরু করল। পুলিশের খাতায় সুমনের কোন প্রকার কোন তথ্য নেই। তাহলে কি সুমন একাই কোথাও অভিমান করে গা ঢাকা দিয়েছে? ফরিদার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হ’ল? ইতিমধ্যে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে সন্দেহ করে বলা হয়। ফরিদার পরিবার-এর লোকজন সুমনকে খুন/ঘুম করতে পারে। পুলিশ পত্রিকার সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে। দু-তিন মাস হ’ল। সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছে। সুমনকে আর হয়ত পাওয়া যাবে না। ফরিদার পরিবারের সবাই আজ মামলার হাজিরা দিতে জড়ো হয়েছে। সদর থানায় প্রবেশ করতে না করতেই পুলিশ সবাইকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে পুলিশের।
বিকেলে সুমনের মা’কে ডাক্তার এসে দেখে গেলেন, সন্ধ্যার পর। কিছু জরুরী ঔষধ আনতে হবে সুমনের বাবাকে। রাত ন’টার কম নয়। বাজারে গিয়ে দেখা গেল থানার মোড়ে লোকজনের ভিড়। বলাবলি করছে-কামটা ভালা করেনাই মাতব্বর। একখান মাত্র ছেলেকে. . . . .। দুলাল সাহেব মাথা উঁচু করে কান খাড়া করে শুনতে লাগলেন। বুঝতে পারছেন না কার কথা আলাপ হচ্ছে? তবে পুলিশ কতোগুলো আসামী ধরেছে এইটুকু বুঝা যাচ্ছে। দুলাল সাহেব দেরী না করে বাসায় ফিরলেন। ইদানিং বাহিরে বেশীক্ষণ থাকেন না। তাছাড়া ঘরে তো কোন লোকজনও নাই। বউটা অসুস্থ্য।
রাতে বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন দেখলেন সুমনের মা। পেঁচার ঢাক শোনা যাচ্ছিল। সকালে কাক ডাকা ভোরে অনেক কষ্টে নামাজ পড়ে উঠানে পায়চারী আর দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবছে-এ বুঝি সুমন-এর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। শিশির ভেজা সকাল। মিষ্টি মিষ্টি আলো। বাড়ির সবাই আলোতে শরীর জ¦লছে নিচ্ছে। একটি গাড়ি বাড়ির সামনে হাজির। সুমনের বাপকে ডাকলো একটি পুলিশ-এর সোর্স। চাচাজান একটু আসবেন। আশে-পাশের লোকজন সবাই ভিড় জমিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয়না। সুমনের কোন তথ্য হয়ত পাওয়া গেছে, আল্লাহ্ই জানেন। সবাই পুলিশের গাড়িতে চড়ে ফরিদা-দের বাড়ির পাশের একটি ধান ক্ষেতে হাজির। ফরিদাও ছিল সাথে। একটু মাটি সরাতেই পঁচনশীল লাশ-এর গন্ধ বের হচ্ছে। কিন্তু গায়ের জামাটা ও হাতে ঘড়ি’টা এখনও অক্ষত। সুমনের বাবা-মা সনাক্ত করল। এটাই সুমনের লাশ। একদিকে সুমনের পরিবারের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছে। অন্যদিকে এলাকার মানুষের মনে চরম ঘৃণা ও ক্রোধ কাজ করছে। ফরিদার মাতব্বর চাচা’র হঠকারী কর্মকান্ডে ফরিদা ও সুমনের নিষ্পাপ সম্পর্ককে নিঃশেষ করে দিল। শেষ করল দু’টি পরিবার-এর লালিত স্বপ্নকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসায় ফরিদা সব খুলে বলল। সেইদিন শুক্রবার। বাসায় কেউ ছিলনা। সুমন ভাই মোবাইলে ফোন করেন। আমার মোবাইলে চার্জ না থাকাতে বন্ধ ছিল। আর সুমন ভাই মনে করেছে আমি ইচ্ছা করে তার সাথে কথা বলছি না। খোঁজে আমাদের বাসায় হাজির। অবশ্য পাশের বাড়ির টিটো আমাদের ঘর দেখিয়ে দিয়েছিল। বাসা’য় কেউ ছিল না। আমি আর সুমন ভাই টিভি দেখছিলাম আর বিস্কুট খাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চাচা’জান বাসায় আসলেন। আর সুমন ভাইকে দেখে খুব কড়া ভাষায় কথা বললেন। একপর্যায়ে সুমন ভাইও উত্তর দিলেন। আমি চাচা’জানকে কিছু বলব। এমতাবস্থায়, চাচা’জান উঠানের একটি লম্বা লাঠি দিয়ে সুমন ভাইকে একটা সজোরে আঘাত করলেন। সুমন ভাই চলে যেতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। আরো একটা আঘাত ঠিক মাথায় পড়ল। সুমন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। এমন সময় আমার বাবা আসলেন কোত্থেকে যেন। বাবা চাচা’জানকে বকা দিলেন। এই তুমি এমন করে ছেলেটাকে মারতেছ কেন? কি করেছে ও? আর আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম। আর বলছিলাম-বাবা ওনার কোন দোষ নাই। উনি ভাইয়াদের কলেজের ফাস্ট বয়। ততক্ষণে সুমন ভাইয়ের ------। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিব। কিন্তু তা আর হলো না। রিক্সা খুজে পেতে না পেতেই সবি শেষ। আর বলতে পারল না ফরিদা। আমাকে শাস্তি দিন। আমাকে। আমার জন্যই . . . . .।
(লেখক: কবি, কলামিস্ট ও ঊন্নয়ন কর্মী,
01715363079
[email protected]).
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আবুল খায়ের ১৮/১০/২০১৭ধন্যবাদ প্রিয় কবি..
-
আজাদ আলী ১৬/১০/২০১৭Valo kobi bandhu
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৬/১০/২০১৭সুন্দর
-
মলয় দত্ত ১৬/১০/২০১৭