www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বেটি অন্তিম পর্ব


বৈশাখী হাওয়ার সূচনাতেই কালবৈশাখীর দাপট বেশ ক’বার আছড়ে পরে গেছে । সমস্ত চাষি পরিবারেই একটা চাপা সুখের উল্লাস । উল্লাসের হাওয়া আমোদের মত ক্ষুদ্র চাষি পরিবারেও । প্রথমদিকে বোঝা যায় নি ! তারপর শাড়ীর বহরে টান পরতেই আমোদের চোখ খুলল হাল্কা ভাবে । বিশ্বাস হয় নি কালবৈশাখীর ঝোড়ো হাওয়ার সাথে উড়ে আসবে বীজ । বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় যে সোঁদা সোঁদা গন্ধ বেরোয় ঠিক সেরকম স্নিগ্ধতা আসবে লতার গর্ভেও !
অবশ্য কয়েকদিন ধরে গ্রামের লোকেরা আকস্মিক ভাবে পিরীত করতে শুরু করে দেয় । ডাক্তার যেদিন একগাল হাঁসি হেঁসে বলল , “ আমোদ ! এবার খুশী তো ! বাবা হতে চলেছ !” সেদিন চোখের জল ধরে রাখতে পারে নি সে ।
বহুদিন পর তার অনুর্বর সংসারে নবাঙ্কুরের আগমন । ডাক্তার চলে যাওয়ার পর লতাকে জড়িয়ে ধরে খুব করে আদর করল । কিন্তু অদ্ভুত ভাবে লতার মুখ বিষণ্ণ ! উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে । আমোদ বিষয়টা লক্ষ্য করেও যতটা দরকার তার থেকেও উঠে পরে লাগে লতার খেয়াল রাখতে । সে চায় না জ্যোৎস্নার মত কোন বিপদ ঘটুক !
শনি মন্দিরের গোপেশ্বর পন্ডিত তো বেজায় খুশী । একদিন আমোদকে রাস্তায় পাকড়াও করে বলে , “ কি বাবা আমোদ , ভুলে গেলে ! সেই যে তাবিজ দিয়ে বলেছিলাম নির্ঘাত ফল হবে !”
- “ সে আর বলতে ঠাকুর মশাই , চিন্তা নেই সব ঠিক হলে পুজো দেব ” বলেই হাল্কা হেঁসে আমোদ রাস্তা ধরে ।
মাঝরাতে প্রবল পসব বেদনা উঠতেই ব্যস্ত হয়ে পরে আমোদ । আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে তৈরিই ছিল । পাড়ার কিছু বন্ধু স্থানীয়রা মিলে সারা রাত হাসপাতালে ছিল । চাপা উত্তেজনার পর এখন শরীর ক্লান্ত । আমোদ দেওয়ালের একপাশে বেঞ্চিতে চোখের পাতাটা একটু বন্ধ করেছে ।
বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম সোমবার সূর্যের প্রথম কিরণের সূচনায় নার্সের মৃদু ঝাঁকুনিতে চোখ মেলেই ধড় ফড়িয়ে ওঠে সে ।
- “ যাও, দেখ গিয়ে মেয়ে হয়েছে ।”
‘ মেয়ে হয়েছে ’ একটু থম মেরে গিয়েই সচকিত হয়ে যায় আমোদ । হনহনিয়ে হাঁটা দিতেই নার্স আবার বলে ওঠে , “ আরে ! ভাই বিকেলে এস, এখন নয় ।”
- “ সব ঠিক আছে তো ” এক অজানা ভয়ার্ত গলায় কথাটা বললে নার্স হাল্কা হেঁসে হ্যাঁ সূচক হাঁসি দিয়ে হাঁটা লাগায় ।
সময়টা মাঝে মধ্যে বড়ই ঢিলে তালে চলে । বিকাল আসতে আজ বড্ড দেরী করছে । তবুও দেরীতে হলেও বিকেল যথা সময়েই হল । কাঁপা পায়ে লতার কাছে গেল আমোদ । পাশেই শোয়া দেবকন্যার মত এক শিশু । পাশের টুলে বসে পরে আমোদ ধপ করে । দু’হাত ধরে লতার হাত । উষ্ণতার স্পর্শে লতার দু’গাল বেয়ে জল পরে । কোন মতে তাকায় স্বামীর চোখে , এত আনন্দ আগে কখনও সে দেখে নি ।
- “ লতা ঠিক তোমার মত মুখটা , আমাদের মা লক্ষ্মীর ।”
লতা চুপ করে থাকে । বাইরে দীর্ঘ ক্লান্ত আলোর রেশ । আমোদ একটু কাছে এগিয়ে লতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে ওঠে , “ কিছু ভুল হয় নি ! আমিই অক্ষম ছিলাম ।”
লতা কিছু বলতে গেলেই আমোদ স্ত্রীর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে , “ চুপ । আজ আর আমাদের ঘরে মেয়ে এসেছে । ও শুধুই আমাদের মেয়ে ।”
- “ তুমি জানতে সব ! জগার সাথে আমার...” ভিজে চোখে আস্তে করে বলে লতা । হাল্কা হেঁসে চোখের জল মোছাতে মোছাতে মাথা নাড়ায় আমোদ ।
দুই গ্রাম্য অশিক্ষিত মানুষের জীবনে যা ঘটে গেল তা হয়ত অতি আধুনিক শহরের জীবন যাপনের মাধ্যম হয় বিশেষক্ষেত্রে । লতা যা করেছিল তা হয়ত ক্ষমার যোগ্য নাও হতে পারে । কিন্তু , এই ভুলটা অনেক কিছুর উত্তর নীরবে দিয়ে গেল ।।
( সমাপ্ত )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast