www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঋতু নীল এবং পত্রাবলী পর্ব -২


১৯৯২ সাল , নীল’দার হাত ধরে শুরু হল এক ধরনের ক্লাসি ফিল্ম । দেখতে বসে মাঝে মধ্যে হোঁচট খেতাম । যদিও তখন ক্লাস টেনের গন্ডী পেরোই নি । তবুও দেখতাম , বেশ দিব্যি লাগত । “১৯ শে এপ্রিল” দেখলাম , একদম প্রাথমিক ভাবে একটা দৃশ্য – লোডশেডিং এর পরের দিন সুইচ না অফ করা আলোটা যে জ্বলে থাকে , ব্যাস এটাই নীল’দার সাথে সম্পর্কের মালা গাঁথার সূত্রপাত করিয়েছিল । সত্যজিৎ ঘরানার কোন এক পরিচালকের রেশ অনুভব করলাম, যার ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ের উপরও নজর ! আরেকটা জিনিস ভালো লেগেছিল প্রতিযোগিতার ঘোড়ার দৌর নেই । ধীরেসুস্থে পড়াশুনা করে বক্তব্য পেশ । পরবর্তী সিনেমা বা তার ব্যাখ্যা সবাই জানেন , তাই ওইসব আলোচনা করার প্রয়োজন আমার লেখায় নেই ।
জীবনের এক কঠিন আলেখ্য তার চালচিত্রে ধরে পরে । যখন নীল’দার কাছাকাছি গেলাম বা তার কয়েকটি চিঠি পড়বার সৌভাগ্য হল , তখন ব্যাক্তি নীল’দাকে অনেকটা বেশী চিনতে শিখলাম- সে আর আমার সামনে শুধুমাত্র ঋতুপর্ন ঘোষের থেকেও বেশী কাছের হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তার কাছে আমার কোনদিনই চাওয়ার কিছু ছিল না ।
একটা সময় বুঝেছিলাম ব্যাক্তি নীল আর অন্যের কাছে ঋতুপর্ন কতটা ভিন্ন মেরুর ।
ব্যাক্তি জীবনে না পেতে পেতে , ‘না পাওয়াটা’ই অভ্যাসে যায় পরিনত হয়ে । একটা মানুষ এক বিশেষ মুহূর্ত থেকে গভীর অব্যাক্ত জীবন তত্ত্বের মধ্যে বেড়ে ওঠে । নীল’দার এক চিঠির কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতেই হয় , তারই বয়ানে-“ ঠিক সেই আগের মত করে যে সেটা আর সম্ভব নয় , এটা বুঝতে পারি । বুঝতে পারি , আগের মত করে সব চাইতে গেলে নিজেও ব্যথা পাব , তোদেরও দেব । তার থেকে মেনেই নিইনা কেন , যে তোরা আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় । তাকে মুছে ফেলাও ততটা বেদনার , নতুন করে জাগ্রত করাও বোধহয় তার চেয়েও কম বেদনার নয় ।”

মাঝে মাঝে ভাবি , কী পায় নি নীল’দা ? অর্থ-প্রতিপত্তি- খ্যাতি ! সবই তো ছিল ! কিন্তু জীবনের গতিপথে এটাই কী সব !! এ বড় জটিল বিষয় । যান্ত্রিক যুগে দাঁড়িয়ে হয়তো এগুলো সঠিক । কিন্তু তারপর বড্ড বড় একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন থেকেই যায় ।
নীল’দার জন্ম লগ্নে অদৃশ্য দেবতা যে আগাম ইতিহাসের বার্তা লিখে দিয়েছিলেন , সেই বাণী অনেক “ঋতু”র কপালেই লেখা আছে , সেটা নীল’দা জানত । তাই যে ক’বার দেখা হয়েছিল , অনুভব করেছিলাম, এক গভীর নিঃসঙ্গ চেতনা তার পরতে পরতে লেগে আছে ।
আপাত পেশাদারী ঋতু আর দিনের শেষের নীল’দা – দুটো অনেক বেশী আলাদা । পেশাদারী ঋতু তার কাজে সম্পূর্ণ গোছাল , অনেক বেশী পরিপাটী । বলিষ্ঠ শৈলীতে পরিচালনা করেছে তার কল্পনা শক্তিকে । তার ভাষাতে –
“ সবাই জানেন , ছবি বানায় বড়দের জন্য । সে ছবিতে সবাই গম্ভীর চিন্তা করে , চোখা-চোখা কথায় ঝগড়া করে , কথায় কথায় কান্না কাটি করে , চীৎকার করে বা নীরবে কষ্ট পায় , বা কষ্ট দেয়...”।
আবার এই ঋতুপর্ণ ঘোষ , মাথার পাগড়ী খুলে মেক আপ উঠিয়ে হয়ে যায় একাকী ঘড়ের কল্পিত দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া নাবিক ; যে তার জাহাজটি ফেলেছে হারিয়ে বহুদিন । তার চিঠির একটি অংশ পড়লে বোঝা যায় , সেই নির্জন দ্বীপের সন্নাসী রাজা কেমন করে বাধ্য হয়ে নিজেই নিজেকে বন্দী করে দিয়েছিল জীবন যুদ্ধে –
“ একদিক থেকে আমার মনে হয় , যে , এই যে আমরা ছোট্ট ছোট্ট কতগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বাস করি , মাঝে মাঝে মনে হয় প্রয়োজনে , নয় আচমকা খেয়ালে পরস্পরের দিকে যেন ছুঁড়ে দিই একটা অতর্কিত ফোন বা ...এটা হয়তো আমাদের নিজেদের কাছেও একটা সাজানো স্তোকবাক্য ।”
( ক্রমশ )
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৯০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast