www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ময়ূর রাজার দরবার

" আচ্ছা অসময়ে কোকিল কেন ডাকে জ্যাঠু ? " এতক্ষন মন দিয়ে শুনি নি বটে তবে তিতিরের এমন প্রশ্নে চাঁপা গাছটার দিকে তাকালাম । হুম কোকিল ডাকছে । অসময়ের ব্যাপারটা বোঝাই কি করে ওই একরত্তি মেয়েকে ! ! ওর ডাগর ডাগর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম " শোন এর না একটা মজার গপ্প আছে ..."


সকালের রেওয়াজের রেশ কাটতে কাটতেই বেলা পরে আসে । এদিকে পেটে ডিম নিয়ে ঘরকন্নার কাজ করাটা যে কতটা মুশকিল তা বোঝে ক'জন ! নতুন ঘর তোলার কথা যতবার বলেছে , অমনি মুচকি হেঁসে আদিকন্ঠ কোকিল বলেছে -

" আহা মিছে কর চিন্তা গিন্নি -
আনন্দ-ফূর্তিতে কাটাও দিনটা ।"

কথাটা পেরেই হারমোনিয়াম নিয়ে গলা সাধতে বসে পরে কোকিল । মুখ ভার করে থাকা যায় না সুরগুলো কানে যেতেই ।

দিন যায় রাত যায় । কুঁড়ির মধ্যে উঁকি পারে হরেক ফুল , অরণ্য উঠছে সেজে । বৌ কোকিল আর কটা দিন পরেই ডিম দেবে । সমস্ত শো আপাতত ক্যানসেল করে কোকিল বেরিয়েছে বাড়ী খুঁজতে । নামজাদা হলেই আজকাল সব বাড়ী গাড়ী হাঁকায় কিন্তু কোকিল যে সাধক । লক্ষ্মী দেখা নেই , ব্যাংক ব্যালেন্সও শুন্যের ঘরে প্রায় ।



কাকিনীর আনন্দ দ্যাখে কে ! বাসা ভরা ফুটফুটে চারটি ডিম । কাক মাঝে মধ্যে পরম যত্নে ভাঙা বাসার কার্নিসে শুকনো ডাল গুঁজে বাসাটা গুছিয়ে রাখে । অতিথিরা ডিমগুলোকে আশীর্বাদ দিতে এলে স্পেসাল মাংস না খাইয়ে ছাড়ে না । আর রাত হলেই কাক আর কাকিনী উঁচু ডালে বসে চাঁদের আলোর দিকে তাকিয়ে দ্যাখে কত স্বপ্ন ! তারা একে অপরকে বলে -

" ফুটবে যখন ডিম -
নাচবো তা ধিন-ধিন ।
জগৎ জোরা করবে নাম -
রাখবে তারা মোদের মান । "

রাত আরো গভীর হলে ডাল থেকে সুরুত করে নেমে কাকিনী বসে ডিমে তা দিতে ।



ঠিক যেদিন গ্রীষ্মের আগুনের নিঃশ্বাস টুপটাপ বৃষ্টির গন্ধে মিশে সুবাস এনেছে তেমনই এক সকালে চিঁ চিঁ আওয়াজ উঠলো । অরন্যের ঘুম ভাঙলো আর গান থামলো সেই কোকিল দম্পতির । যে ডিমগুলো পূর্ব পুরুষের নিয়ম মতো কাকের বাসের রেখে এসেছিল তারা , ঠিক সেখানেই আলো করে জন্ম নিয়েছে ছোট্ট ছোট্ট ছানারা ।
কাকেরাও খুশী । দিন বয়ে যেতে থাকে । শান্ত নদী বৃষ্টিতে খানিক অশান্ত হয়ে ওঠে । বুলি ফুটছে চার ছানার মুখে । কিন্তু তার কই কা কা করে ! ! অবাক পড়শীরাও । মাতব্বর হুতুম পেঁচা ব্যঙ্গ করে বলে -

" ওরে মুখ্খু কাক দম্পতি ,
এ নয় তোদের সম্পত্তি ।
কোকিল পাড়ে হেথায় ডিম ,
তাদের বড় করতেই খেলি হিমসিম । "

ঠিক দূরেই হরিতকি গাছের ডালে আজ কোকিলরা অপেক্ষা করছে বাছাদের নিয়ে যাবে বলে । এ হেন অপরাধে তাদের প্রতি বেজায় চোটে আছে বাকী পাখিরা । হঠাৎ ঘাড় লম্বা শকুনের চোখ পরে লুকিয়ে থাকা কোকিলদের উপর । " মারো মারো " বলে বার কয়েক তীক্ষ্ণ স্বরে হুঙ্কার দিতেই সব পাখীরা তাড়া করে কোকিলদের ।
কাক-কাকিনী মারপিটে বাধা দিলেও শোনে কে ?
সেই দিনই গোধূলিতে বুড়ো জাম গাছের তলায় বসেছে বিচার সভা । ময়ূর রাজার দরবার কানায় কানায় পূর্ন । দোষী সাব্যস্ত কোকিল দম্পতি । আরেকটু পরেই শাস্তি ঘোষনা হবে । সভা চুপচাপ-গম্ভীর । ময়ূর রাজা কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই মা কাক হাতজোড় করে বলে -

" মহারাজ করুন এদের ক্ষমা ।"
"কেন কেন ?" বিস্ময় মাখানো গলায় সকলে একসাথে জিজ্ঞাসা করে ।
বাবা কাক ঘাড় কাত করে জানায় -

" সকলের তরে আছে নানা কাজ ,
প্রকৃতির তাই তো অপরূপ সাজ ।
কোকিল বাসাহীন তবুও শোনায় গান ,
আমরা নাহয় তা দিয়ে ডিমে দেই প্রান । "

কাকের এই উদার কথায় ময়ূর রাজার মুখে ফোটে হাসি । সকলে বলে " ঠিক ঠিক। "
" তবুও অন্যায়ের শাস্তি তো চাই জ্যাঠু " তিতির উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে । " হুম তা তো পেলই " হালকা হেসে বললাম ।
" ...তাই তো সেই বিকেলে ময়ূর রাজা বলে - ওহে কোকিল এবার থেকে সারাবছর তোমাকে গান শোনাতে হবে একটু হলেও । সেদিন থেকে সব প্রোগ্রামের ফাঁকে দেখবি কোকিল আমাদের প্রায় সারাবছরই গান শুনিয়ে যায় ॥ "
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast