পটলার অপারেশন বুম বুম - পর্ব ২
৩
সন্ধ্যে হয়েছে। যথারীতি মায়ের রুটিন ওয়ার্ক শুরু। কিন্তু আজ পটলার মন অন্যমনস্ক। এমনিতেই স্কুলের পড়া মাথায় ঢোকে না। আজ তো মাথায় পুরো ট্রাফিক জ্যাম। চটপট খেয়ে মা-বাবাকে অবাক করে নিজের পড়ার ঘরে ঢুকল। বাবার কিনে দেওয়া পড়ার টেবিলে বসতে ভালো লাগে না, টেবিলে বসে পড়া হয় নাকি! পাশেই নরম বিছানা। উপুর হয়ে শুয়ে,বুকের তোলায় বালিশ গুঁজে বই খুলল।
আজ আরই মন বসছে না পড়ায়। বারবার দেওয়াল ঘড়িতে চোখ ছলে যাচ্ছে। Algebra অঙ্কগুলো চোখের সামনে সার্কাসের জোকারদের মত গোল গোল করে ডিগবাজি খাচ্ছে।
“পটলা তোমার মা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে খেতে ডাকছেন”- বাবার ভারী গলায় পটলা দেওয়ালের ঘড়ীতে তাকিয়ে দেখল রাত দশটা।
এ বাড়ীর নিয়ম রাতে সবাই একসাথে খেতে বসবে।পটলার পড়া-চচ্চড়ি, মায়ের কালিগদের বিজ্ঞাপন, বাবার ঘাড় দোলানো – এসব dinner-এর আনুসাঙ্গিক তালিকা। অবশ্য, dessert হিসাবে কদাচিৎ পটলার মাথায়-পিঠে আদরের হাত বুলিয়ে দেওয়াও থাকে।
চটপট খেয়ে নিয়ে হাত কোনক্রমে ধুয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই ছিটকিনি বন্ধ করে দিলো। টিক-টিক করে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। ঢং ঢং করে করে grandfather clock জানান দিলো এখন রাত এগারোটা। আজ বিশেষ একটা খবর যে করেই হোক বার করে পুলিশ কাকুকে জানাতেই হবে- মনে মনে পণ নিলো।
চোখের ঘুম বড় বিপজ্জনক। আর পেটে খাবার পড়লে তো কথাই নেই। সঙ্গে যদি রিম ঝিম বৃষ্টি থাকে- সোনায় সোহাগা।
খস খস- চ্যাঁও চ্যাঁও তীক্ষ্ণ শব্দে পটলা ভারী চোখে জানলার দিকে তাকায়।ঘড়ির দিকে তাকাতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে। দৌড়ে জানলার কপাট খুলে দেখে বৃষ্টি থেমে গেছে, ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে বেশ।
কার্নিশ থেকে ফড় ফড় করতে করতে হুথুম প্যাঁচা হাজির। গোল মাথায়, চোখ আরও বড় করে পটলার কাছে ঘাড় ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ঘুড়িয়ে ফিড়িয়ে কি যে বলল তা ভগবান জানেন;তবে এটুকু ঠিক, সব শোনার পর পটলার মিষ্টি হাসিমাখা মুখ থম মেরে গেল। হুথুমের গম্ভীর মুখ আরও গম্ভীর। খবরটা দিয়েই ডানা ঝটপটিয়ে রাতের অন্ধকারের বুক চীরে সে রওনা দিলো। দূরে শেয়ালদের সমবেত ঐকতান,তবে আজ তাদের সুরটা আলাদা- যেন কতগুলো বাচ্চা এক সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে।
পটলা বিছানায় ফিরে ধপ করে বসে পড়ল।ঘুমটা পালিয়ে গেছে কোথায় যেন ঘড়িতে দুটো ঢং শব্দ সময় জানিয়ে দিয়ে গেল। বাড়িতে মা-বাবা অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
৪
“পটলা আজ কি তোমার সচুলে যেতে হবে না নাকি?”- তীব্র স্বরে মা শাড়িতে হাত মুছতে মুছতে দরজায় ধাক্কা মারতেই দেখেন পাল্লা দুটো খুলে গেল।
“পটলা! কি রে ওঠ”- একটু অবাক হয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।
“তোর বাবাকে কিন্তু এবার আমি ডাকব...”,চাদরটা সরাতে সরাতে বলতে গিয়েই ধাক্কা খেলেন।তারপর আর্তনাদ করে উঠে প্রায় দৌড়ে এলেন প্রবোধের কাছে। আর্তনাদের শব্দে দাড়ি কাটতে কাটতে প্রবোধও চমকে উঠেছেন।
“পটলা ঘরে নেই!”মায়ের গলায় উৎকণ্ঠা ঝরে পরছে।
ছেলে তো আগে এমন করে নি; হ্যাঁ, একটু আধটু দুষ্টুমি করে।এই বয়েসে সবাই যা করে আর কি? তাছাড়া ওর বন্ধু – বান্ধবও নেই, দুজনেই এতক্ষনে খেয়াল করলেন মেন দরজার হুকে তালা খোলা,চাবি ঝুলছে। মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
“আঃ থামো ত;”- প্রবোধের মৃদু ধমকে সুচন্দ্রা শাড়িতে মুখ গুঁজলেন। আজ অফিস-স্কুল যাওয়ার কথাই ওঠে না।
বেলা এগারোটা। পাড়ার কিছু পরিচিত এসেছেন, নানা জনের নানা মতামত।
“বুঝলেন দিদি, দিনকাল ভালো না, নিশি তে ডাকে নি তো!” চোখ বড় বড় করে পাশের বাড়ির কাকিমা ঘাড় নাড়িয়ে বললেন। একবিংশ শতাব্দীতেও কি আশ্চর্য কথা!
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পাড়ার এক দাদু মতামত পেশ করলেন, “ বুঝলে প্রবোধ,চেনাশোনা জায়গাতেও যখন ফোন করে করে পাচ্ছ না,then you should inform to the police”।
সবাই যে যা বলে ঘর পাতলা করে বাজার,অফিসের কথা বলে সটান দিলেন। এবার সুচন্দ্রা ভ্যা করে কেঁদে ফেললেন।
“এত বকাঝকা ঠিক হয় নি গো,আমাদের আরও টাইম দিতে হত”- কাঁদতে কাঁদতে বললেন সুচন্দ্রা।
( আগামীকাল শেষ পর্ব )
সন্ধ্যে হয়েছে। যথারীতি মায়ের রুটিন ওয়ার্ক শুরু। কিন্তু আজ পটলার মন অন্যমনস্ক। এমনিতেই স্কুলের পড়া মাথায় ঢোকে না। আজ তো মাথায় পুরো ট্রাফিক জ্যাম। চটপট খেয়ে মা-বাবাকে অবাক করে নিজের পড়ার ঘরে ঢুকল। বাবার কিনে দেওয়া পড়ার টেবিলে বসতে ভালো লাগে না, টেবিলে বসে পড়া হয় নাকি! পাশেই নরম বিছানা। উপুর হয়ে শুয়ে,বুকের তোলায় বালিশ গুঁজে বই খুলল।
আজ আরই মন বসছে না পড়ায়। বারবার দেওয়াল ঘড়িতে চোখ ছলে যাচ্ছে। Algebra অঙ্কগুলো চোখের সামনে সার্কাসের জোকারদের মত গোল গোল করে ডিগবাজি খাচ্ছে।
“পটলা তোমার মা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে খেতে ডাকছেন”- বাবার ভারী গলায় পটলা দেওয়ালের ঘড়ীতে তাকিয়ে দেখল রাত দশটা।
এ বাড়ীর নিয়ম রাতে সবাই একসাথে খেতে বসবে।পটলার পড়া-চচ্চড়ি, মায়ের কালিগদের বিজ্ঞাপন, বাবার ঘাড় দোলানো – এসব dinner-এর আনুসাঙ্গিক তালিকা। অবশ্য, dessert হিসাবে কদাচিৎ পটলার মাথায়-পিঠে আদরের হাত বুলিয়ে দেওয়াও থাকে।
চটপট খেয়ে নিয়ে হাত কোনক্রমে ধুয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই ছিটকিনি বন্ধ করে দিলো। টিক-টিক করে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। ঢং ঢং করে করে grandfather clock জানান দিলো এখন রাত এগারোটা। আজ বিশেষ একটা খবর যে করেই হোক বার করে পুলিশ কাকুকে জানাতেই হবে- মনে মনে পণ নিলো।
চোখের ঘুম বড় বিপজ্জনক। আর পেটে খাবার পড়লে তো কথাই নেই। সঙ্গে যদি রিম ঝিম বৃষ্টি থাকে- সোনায় সোহাগা।
খস খস- চ্যাঁও চ্যাঁও তীক্ষ্ণ শব্দে পটলা ভারী চোখে জানলার দিকে তাকায়।ঘড়ির দিকে তাকাতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে। দৌড়ে জানলার কপাট খুলে দেখে বৃষ্টি থেমে গেছে, ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে বেশ।
কার্নিশ থেকে ফড় ফড় করতে করতে হুথুম প্যাঁচা হাজির। গোল মাথায়, চোখ আরও বড় করে পটলার কাছে ঘাড় ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ঘুড়িয়ে ফিড়িয়ে কি যে বলল তা ভগবান জানেন;তবে এটুকু ঠিক, সব শোনার পর পটলার মিষ্টি হাসিমাখা মুখ থম মেরে গেল। হুথুমের গম্ভীর মুখ আরও গম্ভীর। খবরটা দিয়েই ডানা ঝটপটিয়ে রাতের অন্ধকারের বুক চীরে সে রওনা দিলো। দূরে শেয়ালদের সমবেত ঐকতান,তবে আজ তাদের সুরটা আলাদা- যেন কতগুলো বাচ্চা এক সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে।
পটলা বিছানায় ফিরে ধপ করে বসে পড়ল।ঘুমটা পালিয়ে গেছে কোথায় যেন ঘড়িতে দুটো ঢং শব্দ সময় জানিয়ে দিয়ে গেল। বাড়িতে মা-বাবা অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
৪
“পটলা আজ কি তোমার সচুলে যেতে হবে না নাকি?”- তীব্র স্বরে মা শাড়িতে হাত মুছতে মুছতে দরজায় ধাক্কা মারতেই দেখেন পাল্লা দুটো খুলে গেল।
“পটলা! কি রে ওঠ”- একটু অবাক হয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।
“তোর বাবাকে কিন্তু এবার আমি ডাকব...”,চাদরটা সরাতে সরাতে বলতে গিয়েই ধাক্কা খেলেন।তারপর আর্তনাদ করে উঠে প্রায় দৌড়ে এলেন প্রবোধের কাছে। আর্তনাদের শব্দে দাড়ি কাটতে কাটতে প্রবোধও চমকে উঠেছেন।
“পটলা ঘরে নেই!”মায়ের গলায় উৎকণ্ঠা ঝরে পরছে।
ছেলে তো আগে এমন করে নি; হ্যাঁ, একটু আধটু দুষ্টুমি করে।এই বয়েসে সবাই যা করে আর কি? তাছাড়া ওর বন্ধু – বান্ধবও নেই, দুজনেই এতক্ষনে খেয়াল করলেন মেন দরজার হুকে তালা খোলা,চাবি ঝুলছে। মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
“আঃ থামো ত;”- প্রবোধের মৃদু ধমকে সুচন্দ্রা শাড়িতে মুখ গুঁজলেন। আজ অফিস-স্কুল যাওয়ার কথাই ওঠে না।
বেলা এগারোটা। পাড়ার কিছু পরিচিত এসেছেন, নানা জনের নানা মতামত।
“বুঝলেন দিদি, দিনকাল ভালো না, নিশি তে ডাকে নি তো!” চোখ বড় বড় করে পাশের বাড়ির কাকিমা ঘাড় নাড়িয়ে বললেন। একবিংশ শতাব্দীতেও কি আশ্চর্য কথা!
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পাড়ার এক দাদু মতামত পেশ করলেন, “ বুঝলে প্রবোধ,চেনাশোনা জায়গাতেও যখন ফোন করে করে পাচ্ছ না,then you should inform to the police”।
সবাই যে যা বলে ঘর পাতলা করে বাজার,অফিসের কথা বলে সটান দিলেন। এবার সুচন্দ্রা ভ্যা করে কেঁদে ফেললেন।
“এত বকাঝকা ঠিক হয় নি গো,আমাদের আরও টাইম দিতে হত”- কাঁদতে কাঁদতে বললেন সুচন্দ্রা।
( আগামীকাল শেষ পর্ব )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ ফাহাদ আলী ১১/০৬/২০১৮লেখা খুব ভালো লাগলো।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৫/০৬/২০১৮ধন্য হলাম।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/০৬/২০১৮তিন পর্ব আগে পড়েনিই।
-
রবিউল হাসান ০৫/০৬/২০১৮বেশ ভালো।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ০৫/০৬/২০১৮খুব খুব ভালো লেগেছে।
-
মোঃ ইমরান হোসেন (ইমু) ০৫/০৬/২০১৮আমি অবাক হই, মুগ্ধ হই
যত দেখি ততই............