পটলার অপারেশন বুম-বুম - পর্ব ১
১
পটলাকে মনে আছে তো? মনে নেই! অবশ্য পটলা মনে রাখার মতো নয়।তবে হ্যা,মনে রেখেছে অনেকেই।কারা,সে না হয় ক্রমশ প্রকাশ্য।
ছোট থেকেই পটলা একটু চুপচাপ ধরনের;সবার সাথে মিশতে পারত না।কি যে অসুবিধা হত জানি না!খেলা থেকে শুরু করে পড়া – ছোট বেলা থেকেই সে একলাই থাকত। বাড়ির একমাত্র ছেলের এ-হেন পরিস্থিতিতে মা-বাবা সবাই উদবিগ্ন।ডাক্তার-বদ্দি-counseling প্রায় কোনটাই বাদ নেই। পটলা change হল না। তাই, মা-বাবা একপ্রকার অসহায়। অবশ্য, পটলার এসব ব্যাপারে কোন তাপ-উত্তাপ নেই। মাঝে-মধ্যে বাবার গাঁট্টায় একটু-আধটু উত্তাপ যে আসতো না, তা নয়।
“এই তোমার অঙ্ক! যখন বোঝালাম তখন সুন্দর মুণ্ডু দোলালে”- বাবার এই আর্তনাদ পাড়ার লোকেরা শুনে শুনে অভ্যস্ত। আর তার পরেই দুম-দাম।
মজার ব্যাপার পটলা কাঁদতে পারতো না। অভিমান হলে গুম হয়ে থাকাই তার অভ্যাস। আর হয়তো মনে মনে চাইতো বাবার হাত যেন পিঠে মাঝে-মধ্যে পড়ে।
“এই নে, দ্যাখ তো দূরবীনটা কেমন হয়েছে”- বাবার গলায় কিছুটা অনুতাপের সুর,আর, পটলার মুখে মুচকি হাসি।
সকাল থেকেই বাড়ি ফাঁকা।তার স্কুল,বাবা-মার ডিউটি। সকাল আটটার মধ্যেই বাড়িতে তালা।আর তা খোলে দুপুরে। পটলার ভালো নাম অগ্নিভ। তার এই সুন্দর নামের বিকৃতি যে কি করে হল তা এক অন্য ইতিহাস,তা অন্য কোন সময় না হয় বলা যাবে । পটলার বাবা প্রবোধ রায় ভালো চাকরি করেন,মা শিক্ষিকা। যদিও তাদের এই পুত্র-রত্নকে নিয়ে গর্ব করার মতো সৌভাগ্য তাদের কপালে জোটে নি। আফসোসের সাথে একপ্রকার আপোষ তারা প্রায় করেই নিয়েছেন।
এই সেদিন যূথিকাদি স্টাফরুমে টিফিন টাইমে বলে, “বুঝলে সুচন্দ্রা, ছেলেকে কি বলবো বল! অ্যাঁ, কত বললাম, এবার ঘুমাতে যা; ছেলে তো মুখ আর তলেই না...”।
বিকেলে পটলাকে আর প্রবধবাবুকে গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলছিলেন। পটলার একটু রাগ হল। মনে মনে বলে, “ভারী তো পড়া। দেখো গিয়ে কি বই পড়ছিল”! যদিও এ কথা প্রকাশ করার দুঃসাহস নেই,বাবা সামনেই বসে আছেন।মা একলা থাকলে কিছু ওপেন মন্তব্য করতে পারতো।
২
মা খাবার খেয়ে দুপুরে হাল্কা ঘুম দেয় যখন,সেই ফাঁকে পটলা টুক করে বেরিয়ে পরে তার রাজ্যে। সামনেই একটা সবুজে ঘেরা জঙ্গল আছে। শাল-মহুয়া-সেগুন প্রাচীন গাছেদের বন।মাঝে মাঝে আম-পেয়ারা-ননা নানা ফলের গাছও এদের ফাঁকে ফাঁকে স্থান করে নিয়েছে। আজকাল প্রায় জঙ্গল তো কেটে সাফ হয়ে গিয়ে ফ্ল্যাট হচ্ছে। কিন্তু পটলার এই সবুজ টুকরো এখনো বিদ্যমান। জঙ্গলে ফুটে থাকা নানা বিচিত্র ফুল, পাকা ফলের গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে লাল ঠোঁটওয়ালা টিয়ারা, শালিক,ঘুঘু, কাঠঠোকরা – নানা পাখির দল।
পটলার ভাষা এরা বোঝে। গাছ-পাখি পটলার বন্ধু। বাবার বকা, স্কুল ফ্রেন্ডদের নানা মন্তব্য, মায়ের কথা নির্দ্বিধায় পটলা এদের বীরদর্পে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে বেড়ায়।
“দ্যাখ, আজ আমি তোর উপর বসব, দোল খাওয়াতে হবে আজ ভালো করে”- পটলা বলে তার সাব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর কাছে গিয়ে।
হ্যাঁ, এই জঙ্গলে সবথেকে কাছের মানুষ হল বেশ কয়েকটি শাখায় বিভক্ত এক পেয়ারা গাছ। পটলার এই গোপন কাহিনী সকলের কাছে অজানা। জঙ্গলে যেতেই গাছগুলি, পাখিরা আনন্দে মাথা দোলায়। হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে সোঁ সোঁ আওয়াজ করে গাছেরা কথার জাল বোনে। নানা স্বরে কিচমিচ আওয়াজ করে পাখিরা চালায় তাদের কথা। আজ অদের আনন্দ তো বটেই,ভয়ও করছে,কারণ, পটলা ওদের পড়া দিয়ে গিয়েছিল। আর বলেছিল,” এই শোন, তোরা home-works করে রাখবি, না পারলেই ধোলাই আর গাঁট্টা খাবি”।
পটলা এদের বন্ধুতো বটেই, তার উপর মাস্টারমশাই। আদরও করে, আবার না পারলে প্রচণ্ড বকাও দেয়। আর ওরাও পটলাকে পুরো নিজের লোক মনে করে নিয়েছে।
পেয়ারা গাছের রাজ-সিংহাসনে বসতেই কয়েকটি শালিক এসে তার কাধের উপর বসে কিচ মিচ করে কি যে বলতে লাগলো তা আমরা তোমরা বুঝব না। পটলা মাথা নেড়ে ঘাড় দুলিয়ে সব শুনে বেশ রাগতো গলায় ঘুঘু আর টিয়াদের বকা লাগালো,-“ হ্যাঁ রে, তোরা কি মনে করেছিস বল তো। কেন ওদের পড়তে না দিয়ে ঝগড়া করেছিস? শুধু খেললেই হবে! মানুষ কি হতে হবে না!মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে তো!
শাল গাছ ফিস্ ফিস করে পটলার কানে যেন কি বেশ বলে গেল। শুনে পটলা মাষ্টার তো রেগে কাই; চীৎকার করে বেজি আর সাপকে বললো, “ কি! এত সাহস! দুদিন আমি আসি তার মধ্যে এত ঘটনা! বল তোরা দুজন কেন ফের মারপিট করেছিস? আরে both of you are friends after all !”
“পটলা,কোথায় গেলি? আজ তোর বাবা আসুক। রাত দিন টো টো”- দূরে মায়ের চীৎকারে সচকিত হল। মায়ের ঘুম ভেঙে গেছে। পড়ন্ত বিকেল।
গাছ থেকে লাফ দিয়ে নেমে জোড়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো সবাইকে, “খবরটা পেলেই তোরা আমাকে জানাস”।
( চলবে )
পটলাকে মনে আছে তো? মনে নেই! অবশ্য পটলা মনে রাখার মতো নয়।তবে হ্যা,মনে রেখেছে অনেকেই।কারা,সে না হয় ক্রমশ প্রকাশ্য।
ছোট থেকেই পটলা একটু চুপচাপ ধরনের;সবার সাথে মিশতে পারত না।কি যে অসুবিধা হত জানি না!খেলা থেকে শুরু করে পড়া – ছোট বেলা থেকেই সে একলাই থাকত। বাড়ির একমাত্র ছেলের এ-হেন পরিস্থিতিতে মা-বাবা সবাই উদবিগ্ন।ডাক্তার-বদ্দি-counseling প্রায় কোনটাই বাদ নেই। পটলা change হল না। তাই, মা-বাবা একপ্রকার অসহায়। অবশ্য, পটলার এসব ব্যাপারে কোন তাপ-উত্তাপ নেই। মাঝে-মধ্যে বাবার গাঁট্টায় একটু-আধটু উত্তাপ যে আসতো না, তা নয়।
“এই তোমার অঙ্ক! যখন বোঝালাম তখন সুন্দর মুণ্ডু দোলালে”- বাবার এই আর্তনাদ পাড়ার লোকেরা শুনে শুনে অভ্যস্ত। আর তার পরেই দুম-দাম।
মজার ব্যাপার পটলা কাঁদতে পারতো না। অভিমান হলে গুম হয়ে থাকাই তার অভ্যাস। আর হয়তো মনে মনে চাইতো বাবার হাত যেন পিঠে মাঝে-মধ্যে পড়ে।
“এই নে, দ্যাখ তো দূরবীনটা কেমন হয়েছে”- বাবার গলায় কিছুটা অনুতাপের সুর,আর, পটলার মুখে মুচকি হাসি।
সকাল থেকেই বাড়ি ফাঁকা।তার স্কুল,বাবা-মার ডিউটি। সকাল আটটার মধ্যেই বাড়িতে তালা।আর তা খোলে দুপুরে। পটলার ভালো নাম অগ্নিভ। তার এই সুন্দর নামের বিকৃতি যে কি করে হল তা এক অন্য ইতিহাস,তা অন্য কোন সময় না হয় বলা যাবে । পটলার বাবা প্রবোধ রায় ভালো চাকরি করেন,মা শিক্ষিকা। যদিও তাদের এই পুত্র-রত্নকে নিয়ে গর্ব করার মতো সৌভাগ্য তাদের কপালে জোটে নি। আফসোসের সাথে একপ্রকার আপোষ তারা প্রায় করেই নিয়েছেন।
এই সেদিন যূথিকাদি স্টাফরুমে টিফিন টাইমে বলে, “বুঝলে সুচন্দ্রা, ছেলেকে কি বলবো বল! অ্যাঁ, কত বললাম, এবার ঘুমাতে যা; ছেলে তো মুখ আর তলেই না...”।
বিকেলে পটলাকে আর প্রবধবাবুকে গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলছিলেন। পটলার একটু রাগ হল। মনে মনে বলে, “ভারী তো পড়া। দেখো গিয়ে কি বই পড়ছিল”! যদিও এ কথা প্রকাশ করার দুঃসাহস নেই,বাবা সামনেই বসে আছেন।মা একলা থাকলে কিছু ওপেন মন্তব্য করতে পারতো।
২
মা খাবার খেয়ে দুপুরে হাল্কা ঘুম দেয় যখন,সেই ফাঁকে পটলা টুক করে বেরিয়ে পরে তার রাজ্যে। সামনেই একটা সবুজে ঘেরা জঙ্গল আছে। শাল-মহুয়া-সেগুন প্রাচীন গাছেদের বন।মাঝে মাঝে আম-পেয়ারা-ননা নানা ফলের গাছও এদের ফাঁকে ফাঁকে স্থান করে নিয়েছে। আজকাল প্রায় জঙ্গল তো কেটে সাফ হয়ে গিয়ে ফ্ল্যাট হচ্ছে। কিন্তু পটলার এই সবুজ টুকরো এখনো বিদ্যমান। জঙ্গলে ফুটে থাকা নানা বিচিত্র ফুল, পাকা ফলের গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে লাল ঠোঁটওয়ালা টিয়ারা, শালিক,ঘুঘু, কাঠঠোকরা – নানা পাখির দল।
পটলার ভাষা এরা বোঝে। গাছ-পাখি পটলার বন্ধু। বাবার বকা, স্কুল ফ্রেন্ডদের নানা মন্তব্য, মায়ের কথা নির্দ্বিধায় পটলা এদের বীরদর্পে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে বেড়ায়।
“দ্যাখ, আজ আমি তোর উপর বসব, দোল খাওয়াতে হবে আজ ভালো করে”- পটলা বলে তার সাব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর কাছে গিয়ে।
হ্যাঁ, এই জঙ্গলে সবথেকে কাছের মানুষ হল বেশ কয়েকটি শাখায় বিভক্ত এক পেয়ারা গাছ। পটলার এই গোপন কাহিনী সকলের কাছে অজানা। জঙ্গলে যেতেই গাছগুলি, পাখিরা আনন্দে মাথা দোলায়। হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে সোঁ সোঁ আওয়াজ করে গাছেরা কথার জাল বোনে। নানা স্বরে কিচমিচ আওয়াজ করে পাখিরা চালায় তাদের কথা। আজ অদের আনন্দ তো বটেই,ভয়ও করছে,কারণ, পটলা ওদের পড়া দিয়ে গিয়েছিল। আর বলেছিল,” এই শোন, তোরা home-works করে রাখবি, না পারলেই ধোলাই আর গাঁট্টা খাবি”।
পটলা এদের বন্ধুতো বটেই, তার উপর মাস্টারমশাই। আদরও করে, আবার না পারলে প্রচণ্ড বকাও দেয়। আর ওরাও পটলাকে পুরো নিজের লোক মনে করে নিয়েছে।
পেয়ারা গাছের রাজ-সিংহাসনে বসতেই কয়েকটি শালিক এসে তার কাধের উপর বসে কিচ মিচ করে কি যে বলতে লাগলো তা আমরা তোমরা বুঝব না। পটলা মাথা নেড়ে ঘাড় দুলিয়ে সব শুনে বেশ রাগতো গলায় ঘুঘু আর টিয়াদের বকা লাগালো,-“ হ্যাঁ রে, তোরা কি মনে করেছিস বল তো। কেন ওদের পড়তে না দিয়ে ঝগড়া করেছিস? শুধু খেললেই হবে! মানুষ কি হতে হবে না!মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে তো!
শাল গাছ ফিস্ ফিস করে পটলার কানে যেন কি বেশ বলে গেল। শুনে পটলা মাষ্টার তো রেগে কাই; চীৎকার করে বেজি আর সাপকে বললো, “ কি! এত সাহস! দুদিন আমি আসি তার মধ্যে এত ঘটনা! বল তোরা দুজন কেন ফের মারপিট করেছিস? আরে both of you are friends after all !”
“পটলা,কোথায় গেলি? আজ তোর বাবা আসুক। রাত দিন টো টো”- দূরে মায়ের চীৎকারে সচকিত হল। মায়ের ঘুম ভেঙে গেছে। পড়ন্ত বিকেল।
গাছ থেকে লাফ দিয়ে নেমে জোড়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো সবাইকে, “খবরটা পেলেই তোরা আমাকে জানাস”।
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।