www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নীলকুঠি ও নীল আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - পঞ্চম পর্ব

অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কারণ

এছাড়া আরও নানাভাবে কৃষকদের অত্যাচার করা হত। নীলকররা কৃষকের জমি মেপে সে অনুযায়ী দাদনের টাকা দিত। কিন্তু যে মাপদণ্ড দিয়ে মাপা হত, তা প্রকৃত মাপের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল। চাষির ১১ বিঘা মাপদণ্ডে দেখাত ৭ বিঘা । চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্পের দাম দিত কৃষক। নীলগাছ কুঠিতে পৌঁছে দেবার ভাড়া দিত কৃষক। দেরি হলে পেয়াদার দল এসে কৃষকের খাসি-মুর্গি-ছাগল ধরে নিয়ে যেত, আম-কাঁঠাল-লিচুর গাছ কেটে তছনছ করে দিত। নীলক্ষেতে যে ঘাস জন্মাত, তার ওপরেও কৃষকের কোন অধিকার ছিল না। ভুলে গরু ছাগল ছুটে ক্ষেতে গেলে পাহারাদার সেগুলো ধরে জব্দ করে ফেলত। পরে ৮ আনা ঘুষ দিয়ে তাঁদের ছুটিয়ে আনতে হত । সরকারও এই অত্যাচারে মদদ দেয়। ১৮৩০ সালে আইন জারি হয়, যারা নীলচুক্তি ভঙ্গ করবে, তাঁদের ফৌজদারি আইনে সোপর্দ করা যাবে ও সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে।
এভাবে একে একে কৃষক তার সমস্ত জমি হারিয়ে, নীলচাষে লোকসান দিয়ে, অর্থকারী ফসল-গবাদিপশু-গাছপালা হারিয়ে নিরন্ন, বিবস্ত্র ও অসহায় হয়ে যেত মহাজনের কাছে। কিন্তু মহাজনের পুরো ঋণ শোধান তো দূরের কথা, সুদের টাকাও তাঁর দেবার সামর্থ্য হত না। একদিন দেখা যেত আদালতের ডিক্রিবলে মহাজন তার ভিটেমাটি, পৈতৃক জমি দখল করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পথে।
আর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাই একদিন রুখে দাঁড়ালো কৃষকেরা।
নীল বিদ্রোহের শুরু ও কয়েকটি ঘটনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলার কৃষক সম্প্রদায় নীল ব্যবসায়ী বা নীলকরদের বিরুদ্ধে একজোটে যে বিদ্রোহ করে, তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ আসলে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে জমে ওঠা ক্ষুব্ধতার বহিঃপ্রকাশ ছিল মাত্র। প্রথমদিকে নীল চাষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া অধিকারে ছিল। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনের ফলে তাঁদের একচেটিয়া অধিকার লোপ পায় এবং ব্রিটেন থেকে দলে দলে ইংরেজ নীলকররা বাংলায় আগমন করে ইচ্ছামত নীলের চাষ শুরু করে। তখন থেকেই কৃষকদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। ফলে ১৮৫৯ সালে তারা নীল চাষ করতে সঙ্ঘবদ্ধভাবে অস্বীকৃতি জানায়। প্রথমদিকে এই আন্দোলন অহিংস ছিল, কিন্তু নীলচাষ না করার কারণে চাষিদের ওপর ভয়ানক নির্যাতন, গ্রেপ্তার শুরু হলে এ আন্দোলন সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়।

দীর্ঘদিনের ক্ষোভ অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হয় ১৮৫৮ সালে এবং বিদ্রোহ হয়ে বেরিয়ে আসে ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মে মাসে। এর আগেও চাষিরা নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে বারবার। যেমন Calcutta Review পত্রিকায় বলা হয়েছে, সর্বপ্রথম ১৮৪৪ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি নীলকুঠিতে মানুষ খেপে ওঠে এবং আগুনে কুঠিটিকে ভস্মীভূত করে । এভাবে যেখানেই নেতৃত্ব ও সংগঠন গড়ে ওঠে, সেখানেই শুরু হয় প্রতিবাদ, বিদ্রোহ।

ধিকি ধিকি আগুন ও নীল বিদ্রোহের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো হলঃ

ক. নীলকরদের নির্দিষ্ট উচ্চহার বা বর্ধিত খাজনা দিতে এবং জমি বন্দোবস্ত গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ
খ. সাদা কাগজের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি
গ. নীলবীজ ও দাদনের টাকা গ্রহণে অস্বীকৃতি
ঘ. অত্যাচার থামাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ
ঙ. সংবাদপত্র, নাটক, লোকগান, ছড়া ইত্যাদির মাধ্যমে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা ও প্রচার করা
চ. দলবেঁধে নীলচাষ বন্ধ করা
ছ. নীলগাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলে অন্য ফসল বোনা
জ. লাঠিয়াল বাহিনী সংগঠন এবং নীলকরদের পেয়াদা ও পাহারাদারদের পর্যুদস্তকরণ
ঝ. সশস্ত্র অভ্যুত্থান
ঞ. সবশেষে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই এবং নীলকরদের উচ্ছেদ ।
ঠিক কোথায় প্রথম বিদ্রোহের সূচনা ?
নীল বিদ্রোহের সূত্রপাত কোথায় সেই বিষয় নিয়ে নানা মত বিদ্যমান। অধিকাংশই মনে করেন যে, চূর্ণী নদীর তীরবর্তী চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের খাল বোয়ালিয়া ও আসাননগর কুঠিতে সর্বপ্রথম এই বিদ্রোহ শুরু হয়। কারো মতে চৌগাছা কুঠিতে এর সূত্রপাত। বাকল্যান্ড সাহেবের মতে, উত্তরবঙ্গে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। তার মতে, আওরঙ্গবাদ মহকুমার এন্ড্রোজ কোম্পানির আঙকারা নীলকুঠির ওপরে সর্বপ্রথম আক্রমণ করার মাধ্যমে বিদ্রোহ শুরু হয়। তবে বিদ্রোহ যে বাংলাদেশে শুরু হয়, তা সম্পর্কে সবাই একমত।

তবে সাধারনতঃ বলা হয় যে, অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন মালদহ জেলার কৃষকগণ এবং তার পূর্ণতা সাধন করেন উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা । আর সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন টাঙ্গাইলের কাগমারির কৃষকেরা এবং পূর্ণতা সাধন করেন চুয়াডাঙ্গা এলাকার কৃষকগণ ।

আরো বাহিনী গঠন ও তাদের রণকৌশল

১৮৬০ সালের এপ্রিলে 'ইন্ডিয়ান ফিল্ড' নামক মাসিক পত্রিকায় দু'জন জার্মান পাদ্রি চুয়াডাঙ্গার বিপ্লবীদের লাঠিয়াল বাহিনী সম্পর্কে লেখেন,
'অপটু কৃষক যোদ্ধাগণ নিজেদের ৬টি কোম্পানিতে বিভক্ত করেছে। ১ম কোম্পানি তীরন্দাজদের নিয়ে গঠিত। ২য় কোম্পানি গঠন করা হয় প্রাচীনকালের ডেভিডের মত ফিঙা দিয়ে গোলোক নিক্ষেপকারীদের নিয়ে। ইটওয়ালাদের নিয়ে তৃতীয় কোম্পানি। এরা পরিধেয় লুঙ্গিতে মাটির বড় বড় ঢেলা, ইট-পাটকেল বহন করে এবং ছুঁড়ে মারে। ৪র্থ কোম্পানি গঠিত বেলওয়ালাদের নিয়ে, যাদের কাজ হল নীলকরদের লাঠিয়াল বাহিনির মস্তক লক্ষ করে শক্ত কাঁচা বেল ছুঁড়ে মারা। থালা-ওয়ালাদের নিয়ে ৫ম কোম্পানি। তারা ভাত খাবার কাঁসা ও পিতলের থালাগুলো আনুভূমিকভাবে চালাতে থাকে। এতে শত্রু নিধন যে ভালভাবেই হয় তাতে সন্দেহ নেই। ৬ষ্ঠ কোম্পানি মহিলাদের নিয়ে গঠিত হয়। তারা হাতে মাটির পোড়ান খণ্ড, মাটির বাসন ও রুটি বেলার বেলন নিয়ে আক্রমণ করে থাকে। প্রথমে তারা লাঠিয়ালদের দিকে মাটির খণ্ড ও বাসনকোসন ছুঁড়ে মারে। এতে লাঠিয়াল যদি ভূপাতিত হয়, তখন তাঁকে বেলনপেটা করা হয়।
আর যারা যুদ্ধে পটু, তাদের নিয়ে মূল কোম্পানি গঠিত। এরাই কৃষক লাঠিয়াল, এরা সম্মুখ সমরে অংশ নেয়। এই কোম্পানির অর্ধেক বল্লমধারী, অর্ধেক লাঠিধারী। সবার সামনে থাকে বল্লমধারি, তাঁদের পর লাঠিয়ালরা, এবং তারপর বাকি পাঁচ কোম্পানি। এদের বীরত্ব কিংবদন্তিসম। একজন বল্লমধারি নাকি ১০০ জন শত্রুপক্ষীয় যোদ্ধাকে পরাজিত করতে পারে। সংখ্যায় এরা কম হলেও এতটাই দুর্ধর্ষ যে, তাঁদের ভয়ে নীলকরের লাঠিয়ালগণ পুনরায় আক্রমণ করতে সাহস করছে না' ।
আসলে তখন কৃষকদের মূল শক্তি ছিল এই লাঠিয়াল-বল্লম বাহিনী। লাঠি চালনা শিক্ষার জন্য প্রধান ঘাঁটি ছিল বরিশাল, রংপুর ও টাঙ্গাইল। এসব স্থানে প্রচুর শিবির খোলা হয়। এখানকার ওস্তাদেরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েন এবং জায়গায় জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। প্রতিটি কৃষক-যুবক ও কিশোর লাঠিয়াল বাহিনিতে যোগ দেয়। তখন লাঠি চালনা শেখাটা ছিল গৌরবের বিষয় ও পৌরুষের প্রমাণ। কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লাঠিয়ালরা তখন বীরদর্পে সুসজ্জিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণ ঠেকিয়েছে এবং তাঁদের ঠেঙিয়েছে। তবে কৃষকদের অস্ত্র অঞ্চলভেদে ও বাহিনীভেদে কমত-বাড়ত। অনেক অঞ্চলে 'পলো বাহিনী' ছিল। তারা পলো ও ঝাঁকজাল কাঁধে নিয়ে এবং হাতে জুতি ও কোঁচ নিয়ে অগ্রসর হত। প্রমোদ সেনগুপ্ত বলেন, 'নানা অঞ্চলে নানা বাহিনী চালু ছিল। কোন কোন অঞ্চলে তীর, ধনুক, বন্দুক ও আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত বাহিনী ছিল। এদের মাঝে পাবনার নীল বিদ্রোহীরা সর্বপ্রথম বন্দুক ব্যবহার করে।'
এছাড়া ছিল তিতুমিরের 'হামকল বাহিনী' এবং ফরায়েজি আন্দোলনের অনুসারীদের 'দুন্দুভি বাহিনী'-র কথাও গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি বাহিনী ও কৃষক বাহিনির বিদ্রোহের এজেন্ডা ভিন্ন হলেও এই বাহিনীত্রয়ের লক্ষ ছিল একটাই- অত্যাচারি নীলকর ও জমিদারদের ধ্বংস। তিতুমিরের হামকল বাহিনির ব্যারাক ছিল হুলিয়ামারিতে। এই হামকল বাহিনী ভারি কাঠের মুগুর ব্যবহার করত ও বাঁশ দিয়ে তৈরি নানা ধরনের যন্ত্র তৈরি করত- যা নীলকরদের কুঠি ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। যেখানেই গোলাবাড়ি ও নীলকুঠি ছিল, সেখানেই এই বাহিনী তাঁদের কর্মতৎপরতা বজায় রাখত। নীল বিদ্রোহে এমন কোন লড়াই হয় নি, যেখানে হামকল বাহিনী অংশগ্রহণ করেনি ।
আর দুন্দুভি বাহিনী সম্পর্কে অনাথনাথ বসু লিখেছেন, 'নীলকরের লাঠিয়াল হইতে আত্মরক্ষার এক অপূর্ব কৌশল কৃষকগণ আবিস্কার করেন। প্রত্যেক পল্লীর প্রান্তে একটি করিয়া দুন্দুভি রাখিয়াছিল। যখন কুঠিয়ালগণের লাঠিয়ালরা গ্রাম আক্রমনের উপক্রম করিত, কৃষকগণ তখন দুন্দুভি ধ্বনি দ্বারা পরবর্তী গ্রামের রায়তগণকে বিপদের সংবাদ জ্ঞাপন করিলেই সকলে আসিয়া দলবদ্ধ হইত । সতীশচন্দ্র লিখেছেন, 'গ্রামের সীমানায় এক স্থানে একটি ঢাক থাকিত। নীলকরের লোক অত্যাচার করিতে আসিলে কেহ সেই ঢাক বাজাইয়া দিত। অমনি শত শত গ্রাম্য কৃষক লাঠিসোঁটা লইয়া দৌড়াইয়া আসিত। নীলকরের লোকেরা প্রায়ই অক্ষত দেহে পলাইতে পারিত না। সম্মিলিত প্রজা শক্তির বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হওয়া সহজ ব্যাপার নহে’ ।
শ্রেণী সংগ্রামের যোদ্ধাঃ বিশে ডাকাত

ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুতে, এবং সম্ভবত সর্বপ্রথম, ১৮০১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে স্যামুয়েল ফেডির নীলকুঠি লুণ্ঠন করেন বিশ্বনাথ সরদার ওরফে বিশে ডাকাত। এর পরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাংলায়। বিশ্বনাথ জাতিতে ডোম বা বাগদী ছিলেন। তিনি তিতুমিরের হামকল বাহিনীতে কিশোর বয়সে যোগ দেন। পাঁচ বছর প্রশিক্ষনের পরে তিনি নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামের একদল যুবককে তিনি নীলকুঠি দখল ও ধ্বংসের প্রশিক্ষণ দেন এবং নদীয়া জেলার কুনিয়ার জঙ্গলে ঘাঁটি স্থাপন করেন। সেখানে তার সাথে কাহাররা ও অন্যান্য ডাকাতের দল ডাকাতি ছেড়ে তার সাথে যোগ দেয়। তিনি নদীয়ার আশেপাশের বহু নীলকুঠি ও নীলের কারবার ধ্বংস করে দেন। তার এরূপ কর্মকান্ডে জেলা প্রশাসক ইলিয়ট এবং নীলকর ফেডি ভীত হয়ে পড়েন। বিশ্বনাথের মাথার জন্য হাজার টাকা পুরস্কার করা হয়। সরকার ও নীলকরেরা তার নাম তৎকালিন ব্রিটিশ ওয়ান্টেড লিস্টে 'বিশে ডাকাত' হিসেবে উঠায়।
১৮০৭ সালে, দীপাবলির রাতে বিশ্বনাথ কুঠিয়াল ফেডির বাসভবন ও কুঠি আক্রমণ করেন। ফেডির দলের প্রায় সবাই এই অকস্মাৎ আক্রমনে মৃত্যুবরণ করে বা পালায়। ফেডির স্ত্রী মাথায় কালো হাঁড়ি চাপিয়ে পুকুরে ডুব দিয়ে প্রানে বেঁচে যান। বিশ্বনাথের প্রধান সেনাপতি মেঘাই সরকার ফেডিকে বন্দি করে বাগদেবী খালের তীরে নিয়ে আসে। ফেডি বিশ্বনাথের কাছে প্রাণভিক্ষা চায়, এবং যিশুর নামে প্রতিজ্ঞা করে যে সে ব্যবসা উঠিয়ে ব্রিটেনে চলে যাবে। বিশ্বনাথ তাঁকে ছেড়ে দেন। ফেডি ছাড়া পেয়ে সেদিন দুপুরেই বিশ্বনাথকে ধরিয়ে দেয়। বিশ্বনাথ দিনাজপুর জেলে আটক হন।
কিন্তু বিশ্বনাথ জেল থেকে পালান এবং ১৮০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, পালানোর চারদিন পরেই তিনি আবার ফেডির ঘরে হানা দেন। তার কোষাগার লুণ্ঠন করে ও তার পাইক বাহিনীকে শেষ করে দিয়ে বিশ্বনাথ আবার ফেডির সামনে হাজির হন। কিন্তু এবারো ফেডি নীলচাষ তুলে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বিশ্বনাথের ইষ্টদেবতার দোহাই দিয়ে ক্ষমা চান। বিশ্বনাথ এবারো তাঁকে খুন না করেই পালিয়ে আসেন।
ফেডি এবার বিশ্বনাথের ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লাগে। সরকারের কাছে আবেদন করে সে সেনাপতি ব্ল্যাকওয়ার ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি দলকে বিশ্বনাথের খোঁজে লাগায়। শুরু হয় ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম ম্যানহান্ট। তারা বিশ্বনাথের পালক পুত্র পঞ্চাননকে ধরতে সক্ষম হন। পঞ্চানন পুরস্কারের লোভে বিশ্বনাথের ঘাঁটির কথা ফাঁস করে দেয়। পরের দিন ব্ল্যাকওয়ারের সেনাবাহিনি কুনিয়ার জঙ্গল ঘিরে ফেলে, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এহেন পরিস্থিতিতে বিশ্বনাথ তার অনুচরদের বাঁচাতে নিজে ধরা দেন ও সমস্ত কর্মকাণ্ডের দায়ভার নিজের ওপরে নিয়ে নেন। ফেডির মুখোমুখি হয়ে বিশ্বনাথ বলেন, 'গোরা সাহেব, আমি তোমার জুলুম থামিয়ে দিয়ে সংসারজীবনে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। তুমি বাধ সাধলে। কিন্তু মনে রেখ, যে জীবন তুমি ভোগ করছ, তা আমার দান। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।'
গঙ্গার তীরভূমিতে বিশ্বনাথকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার মৃতদেহ সবাইকে দেখানোর উদ্দেশ্যে লোহার খাঁচায় ঢুকিয়ে একটা অশ্বত্থ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। বিশ্বনাথের বিধবা মা তার কঙ্কালটি ভিক্ষা চান। কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি ।
( চলবে )
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast