নীলকুঠি ও নীল আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - প্রথম পর্ব
''সুচাঁদ বলে- বাবারা বলত, অ্যাই বড় বড় ঘোড়া, এই ঝালর দেওয়া সওয়ারি অর্থাৎ পালকি। এই সব বাংলা-ঘর, ফুল বাগিচা, বাঁধানো খেলার জায়গা, কাঠ-কাঠরার আসবাব; সে ঐশ্বর্যের কথা এক মুখে বলা যায় না। এক দিকে কাছারি গমগম করত, বন্দুক নিয়ে পাহারা দিত পাইক আটপৌরেরা- মাথায় পাগড়ি বেঁধে লাঠি নিয়ে বসে পাহারা দিত। জোড়হাত করে বসে থাকত চাষি সজ্জনেরা- ভয়ে মুখ চুন। দু-দশজনাকে বেঁধে রাখত। কারুর শুধু হাতে দড়ি, কারুর বা হাত-পা দুই-ই বাঁধা। সায়েব লোক, রাঙা রাঙা মুখ, কটা কটা চোখ, গিরিমাটির মত চুল, পায়ে অ্যাই বুট জুতো- খটমট করে বেড়াত, পিঠে 'প্যাটে' জুতোসুদ্ধ লাথি বসিয়ে দিত, মুখে কটমটে হিন্দি বাত- মারডালো, লাগাও চাবুক, দেখলাও শালোলোগকো সায়েব লোকের প্যাঁচ। কখনো হুকুম হত- কয়েদ কর। কখনো হুকুম হত- ভাঙ দেও শালোলোকের ধানকো জমি। লয়তো, কাটকে লেও শালোকে জমির ধান। সে তোমার বামুন নাই, কায়েত নাই, সদগোপ নাই- সব এক হাল। 'আতে' সারি সারি বাতি জ্বলত- টুং- টাং- ক্যাঁ- কোঁ- ভ্যাঁ- পো ভ্যাঁ- পো বাজনা বাজত, সায়েব মেম বিলিতি মদ খেত, হাত ধরাধরি করে নাচত, কয়েদখানায় মানুষ চেঁচালে হাঁকিড়ে উঠত বাঘের মত- মৎ চিল্লাও। বেশি 'আত' হলে সেপাইরা বন্দুকের রজ করত- দুম- দুম- দুম- দুম। হাঁক দিত- ও- হো- ই। তফাত যাও- তফাত যাও- চোর বদমাশ হুঁশিয়ার! চোরই হোক আর সাধুই হোক এতে ওদিকে হাঁটলে অক্ষে থাকত না, দুম করে গুলি করে দিত। ''
নীল আন্দোলন তথা তার ইতিহাস জানার আগে আমাদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে কী এই নীল ? তার উৎসই বা কী ? আর কেনই ব্রিটিশ ও অন্যান্য বৈদেশিকগণ এর প্রতি প্রলুব্ধ হয়েছিল ? যেহেতু এটি এক দীর্ঘ ইতিহাস , বহু মানুষের চোখের জলের ছায়াপথ , তাই পাথকদের সুবিদার্থে সমগ্র রচনাটিকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনার পথ ক্রমে প্রশস্ত করছি ।
কে তুমি নীল ?
নীল গুল্ম জাতীয় এক প্রকারের উদ্ভিদ। এটি শীম পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ। এর অন্যান্য স্থানীয় নামঃ নিলিনী, রঞ্জনী, গ্রামিনিয়া, কালোকেশী, নীলপুষ্প, মধুপত্রিকা। বৈজ্ঞানিক নামঃ indigofera tinctoria । এটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। এই উদ্ভিদ থেকে প্রাকৃতিক নীল রং উৎপাদন করা হয়।
পুরাকালে মিশর, গ্রিস ও রোমের লোকেরাও নীলের কথা জানতো। মিশরের ১৮তম রাজবংশের মমি গুলি নীলরং এর কাগজে মোড়া থাকতো।
বাংলা ভূখন্ডে ইন্ডিগোফেরা এর ১৫ প্রজাতির গাছ জন্মে। তার মধ্যে indigofera tinctoria নীল রং এর চাষ করা হতো ভারতে। নীল জলে দ্রব্য গুকোসাইড নামক রাসায়নিক হিসাবে থাকে।
এই উপমহাদেশের মাটি নীল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় বৃটিশ নীল করেরা বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করে নীলচাষে। নদীয়া, যশোর, বগুড়া, রংপুর প্রভৃতি জেলায় নীলচাষ ব্যাপক ভাবে করা হতো। উনিশ শতকের শেষের দিকে নীলচাষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক না হওয়ায় কৃষকরা ধান ও পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বৃটিশ নীলকরেরা অত্যাচার আর নিপীড়নের মাধম্যে নীলচাষে বাধ্য করলে ১৮৫৯-৬০ সালে নীলচাষীরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এর পরে বাংলায় নীল চাষ ক্রমে বিলুপ্ত হয়।
নীল রং তৈরির পদ্ধতি
গাছ কেটে বড় কড়াইতে জলের মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখলে তা থেকে সবুজ রং এর নির্যাস রের হয়। এরপর এই নির্যাস নতুন পাত্রে ঢেলে এই দ্রবনকে কাঠি দিয়ে অনেক্ষন নাড়তে হয় যাতে নীল বাতাসের অক্সিজেন এর সংস্পর্শে আসে। এর ফলে অদ্রাব্য নীল এর তলানী নীচে জমা হয় এবং পরে তা পৃথক করে শুকিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। ইন্ডিগোটিন ছাড়া তাতে অন্যান্য পদার্থ থাকে তার মধ্যে ইন্ডিরুবাইনম ইন্ডিগো গ্রীন ও ইন্ডিগো ব্রাউন।
( চলবে )
নীল আন্দোলন তথা তার ইতিহাস জানার আগে আমাদের প্রথমেই জেনে নিতে হবে কী এই নীল ? তার উৎসই বা কী ? আর কেনই ব্রিটিশ ও অন্যান্য বৈদেশিকগণ এর প্রতি প্রলুব্ধ হয়েছিল ? যেহেতু এটি এক দীর্ঘ ইতিহাস , বহু মানুষের চোখের জলের ছায়াপথ , তাই পাথকদের সুবিদার্থে সমগ্র রচনাটিকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনার পথ ক্রমে প্রশস্ত করছি ।
কে তুমি নীল ?
নীল গুল্ম জাতীয় এক প্রকারের উদ্ভিদ। এটি শীম পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ। এর অন্যান্য স্থানীয় নামঃ নিলিনী, রঞ্জনী, গ্রামিনিয়া, কালোকেশী, নীলপুষ্প, মধুপত্রিকা। বৈজ্ঞানিক নামঃ indigofera tinctoria । এটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। এই উদ্ভিদ থেকে প্রাকৃতিক নীল রং উৎপাদন করা হয়।
পুরাকালে মিশর, গ্রিস ও রোমের লোকেরাও নীলের কথা জানতো। মিশরের ১৮তম রাজবংশের মমি গুলি নীলরং এর কাগজে মোড়া থাকতো।
বাংলা ভূখন্ডে ইন্ডিগোফেরা এর ১৫ প্রজাতির গাছ জন্মে। তার মধ্যে indigofera tinctoria নীল রং এর চাষ করা হতো ভারতে। নীল জলে দ্রব্য গুকোসাইড নামক রাসায়নিক হিসাবে থাকে।
এই উপমহাদেশের মাটি নীল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় বৃটিশ নীল করেরা বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করে নীলচাষে। নদীয়া, যশোর, বগুড়া, রংপুর প্রভৃতি জেলায় নীলচাষ ব্যাপক ভাবে করা হতো। উনিশ শতকের শেষের দিকে নীলচাষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক না হওয়ায় কৃষকরা ধান ও পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বৃটিশ নীলকরেরা অত্যাচার আর নিপীড়নের মাধম্যে নীলচাষে বাধ্য করলে ১৮৫৯-৬০ সালে নীলচাষীরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এর পরে বাংলায় নীল চাষ ক্রমে বিলুপ্ত হয়।
নীল রং তৈরির পদ্ধতি
গাছ কেটে বড় কড়াইতে জলের মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখলে তা থেকে সবুজ রং এর নির্যাস রের হয়। এরপর এই নির্যাস নতুন পাত্রে ঢেলে এই দ্রবনকে কাঠি দিয়ে অনেক্ষন নাড়তে হয় যাতে নীল বাতাসের অক্সিজেন এর সংস্পর্শে আসে। এর ফলে অদ্রাব্য নীল এর তলানী নীচে জমা হয় এবং পরে তা পৃথক করে শুকিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। ইন্ডিগোটিন ছাড়া তাতে অন্যান্য পদার্থ থাকে তার মধ্যে ইন্ডিরুবাইনম ইন্ডিগো গ্রীন ও ইন্ডিগো ব্রাউন।
( চলবে )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৮/০৫/২০১৮
শুভেচ্ছা জানবেন।