রবীন্দ্রনাথের নন্দন বোধ
নন্দনতত্ত্ব বা Esthetic প্রাচ্য তথা পাশ্চাত্য দর্শনের এক বৃহৎ ব্যাপৃত বিষয় । বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত পোষণ করেছেন । ফলে কালের চক্রে নন্দন তত্ত্বেরও হয়েছে শাখা-প্রশাখা । বর্তমানে আপাত নিরস বিষয়টির মূলত রবি ভাবনায় নন্দন তত্ত্ব ও নান্দনিকতার আলোচনা করার নিমিত্তে প্রধান বক্তব্যটিকে যতটা সম্ভব সরল করার প্রয়াস করলাম মাত্র । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়ার টেবিলের বাইরে এক গ্লোব সুতরাং তাঁর দার্শনিক মনন-চিন্তা নিয়ে মতামত পোষণ করার ধৃষ্টতা আমার নেই । যেটা আছে সেটা হল কেবল উপলব্ধি । আমার সেই উপলব্ধিটাকে সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রয়াস করলাম মাত্র । আলোচনা এবং আমার ও আপনাদের বঝাবার এবং বুঝবার সুবিধার্থে সমগ্র সংক্ষিপ্ত বিষয়টিকে ত্রি-পর্যায়ে বিভক্ত করা হল ।
নন্দন তত্ত্ব এবং বাংলায় প্রথম ব্যবহার
নন্দনতত্ত্ব দর্শনের একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য , শিল্প , স্বাদ এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি অ উপভোগ নিয়ে আলোচনা করা হয় । এক কথায় যা থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যার দ্বারা আনন্দ দেওয়া যায় , সেটিই হল নন্দন । যেহেতু আনন্দের উৎস সৌন্দর্য তাই নন্দন শব্দের অন্য অর্থ হল সৌন্দর্য প্রদায়ক । যতদূর জানা যায় নন্দন তত্ত্ব শব্দটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ । পরিচয় পত্রিকায় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে “ আধুনিক কাব্য ”নামক প্রবন্ধে তিনি একটি বাক্যে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ নন্দন তত্ত্ব ও সৌন্দর্য তত্ত্ব দুই শব্দই ব্যবহার করেছিলেন ।
রবীন্দ্র মননে বাঙালীর শাশ্বত বোধ
বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতির মনন ও রুচির স্বপ্ন ও আবেগের প্রধানতম নির্মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনি বাঙালীর শাশ্বত চৈতন্যকে চিন্তা ও বোধের উৎকর্ষে রূপায়িত করেছেন । “ শেষের মধ্যেই থাকে অশেষ ”- এই বিবেচনায় জীবনের পরম শান্তির সন্ধানটুকু সাহিত্যে ব্যাপৃত করতেই জীবন পার করেছেন কবিগুরু । যারা জীবনবাদী সত্য-সুন্দর ও নন্দন তত্ত্বের বিচারে তারা বিশ্বাস করেন – “ নিজেদের যতই উন্নতির শিখরে টেনে নিয়ে যাই না কেন রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা প্রাসঙ্গিক ভাবে সামনে নিয়ে এগোতে হয় ।” রবীন্দ্র সাহিত্যে যে বিপুল জীবনযাপন তা একই সঙ্গে সত্য , সৌন্দর্য ও নন্দন তত্ত্বে বিকশিত ।
প্রাবন্ধিক আহম্মদ রফিকের মতে – “ শিল্প সাহিত্য সৃষ্টির নান্দনিকতা নিয়ে ব্যাক্তি বিশেষের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার বিভিন্নতার একাধিক ভিন্ন মতের প্রকাশ মূলত ভাব বাদের প্রাধান্যই পরিস্ফুট করে তুলেছে ... । শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিল্পের উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা বিচার্য বিষয় নয় , সৃষ্টি বিচার্য । রবীন্দ্র সাহিত্যে রয়েছে এই নন্দন তত্ত্বের সফল উদ্ভাসন । রবীন্দ্র সাহিত্য কর্মে মানবাত্মার প্রক্রিত দর্শন , জীবন ও প্রকৃতির বহুমাত্রিক ধারা প্রতিফলিত ...।”
রবীন্দ্র সাহিত্যে নান্দনিকতার প্রভাব
১৮৯৮ সালে রবীন্দ্রনাথের “ গ্রাম্য সাহিত্য ” প্রবন্ধে এক গবেষক মন্তব্য করেছেন – “ এই উদ্ধৃতির মধ্যে সাহিত্য শব্দটি যেখানে যেখানে যতবার আছে সেখানে সংস্কৃতি শব্দটি স্থাপন করলেই রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি চিন্তার মানচিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে । এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সংস্কৃতির এই ক্ষমতার কাঠামোকে রবীন্দ্রনাথ ভাল করেই বুঝতেন । কিন্তু এই সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে আধিপত্য এবং ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা চান নি । তিনি চেয়েছেন মানুষের মুক্তি । প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে , নিরস তত্ত্বে সরস অনুভুতি ও সাহিত্য সৌন্দর্যের ভুমিকা নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র সর্বপ্রথম আলোচনা শুরু করেন যা বেগবান হয়েছিল রবীন্দ্র সাহিত্যের মধ্য দিয়ে । ইতালীয় চিন্তাবিদ বেনেদিত্ত প্রাচ্যের ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ সিক্ত ছিলেন । তিনি সাহিত্যে-শিল্পে নান্দনিকতাকে ভেবেছেন মানবিকতা । সীমা থেকে অসীমের , মৃত্যু থেকে অমৃতের মধ্য দিয়ে যদিও এই ধারণা সম্ভবত ইন্দ্রিয়ানুভুতি থেকে আলাদা সত্ত্বা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে । তাই রবীন্দ্রনাথের চিন্তাকে একাত্ম পাশ্চাত্য মুখীনতার বিপরীতে দাঁড় করা যায় । কারন , বীরাগত ধারণা , অবীরাগত অনুভূতি , বিধিমূলক ও যোগ ক্ষেত্রিক তালিকা সিদ্ধ রূপায়নের চেয়ে রবীন্দ্র ভাবনা অনেকটা সতন্ত্র । তিনি দেখেছেন- “ রুপনারায়ণ কূলে জন্ম ” এবং মুক্তি খুঁজেছেন আলোয় আলোয় । উল্লেখ্য যে পাশ্চাত্যের ভাবনায় নন্দনের বহিঃসত্ত্বা নেই বললেই চলে কিন্তু রবি ভাবনায় আছে – “ তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা , আমি আমার সাধেরও সাধনা ।” এ ক্ষেত্রে কবি তাঁর মনের ভাব স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন কেবল Pure intuition is essentially lyricism যেখানে Endures হয়ে যাবে ।
রবীন্দ্রনাথ “ মরণ তুঁহু মম শ্যাম সমান ” কথায় অখণ্ডনীয় চেতনায় নিজেকে বেঁধে রাখার প্রয়াসে ইঙ্গিত দিয়েছেন । কবিকে লেখা চিঠিতে কবি ইয়েটস্ তাঁর প্রতিধ্বনি তুলে ছিলেন এই বলে যে – “ জীবনের সঙ্গে আমি আরও ঘনিষ্ঠ গ্রন্থিতে বাঁধা পড়েছি ।” এখানে বন্ধুকেও Passion At man ভাবাটাই মুখ্য । রবীন্দ্রনাথের চেতনায় নারী রূপের মূর্ছনায় এসেছে “ সুন্দর তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে...।” আত্ম নিবেদনে এই হাহাকার সকল কবির কাছেই সমমাত্রিক । যেখানে মিস্টিক ধারা লুকিয়ে থাকে । রবীন্দ্রনাথ সেই মিস্টিক ধারার অনুসারী ।
তাঁর শেষ পর্বের সাহিত্যে-কবিতায় নান্দনিক ও নন্দিত ভাবনার প্রকাশ প্রবল ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় । তিনি জগতের মাঝে প্রকৃতির রূপে নারী স্বরূপের সন্ধান করেছেন । স্পিনোজার Intellectual এর অনুকরণে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন সত্যকে । এ কথা বলতে হবে Human Bondage থেকে উৎসারিত রবীন্দ্র চেতনা নিভৃত নির্জনতার মাঝে সত্য এবং পূর্ণতায় পরিপূর্ণ ।।
নন্দন তত্ত্ব এবং বাংলায় প্রথম ব্যবহার
নন্দনতত্ত্ব দর্শনের একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য , শিল্প , স্বাদ এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি অ উপভোগ নিয়ে আলোচনা করা হয় । এক কথায় যা থেকে আনন্দ পাওয়া যায় বা যার দ্বারা আনন্দ দেওয়া যায় , সেটিই হল নন্দন । যেহেতু আনন্দের উৎস সৌন্দর্য তাই নন্দন শব্দের অন্য অর্থ হল সৌন্দর্য প্রদায়ক । যতদূর জানা যায় নন্দন তত্ত্ব শব্দটি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ । পরিচয় পত্রিকায় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে “ আধুনিক কাব্য ”নামক প্রবন্ধে তিনি একটি বাক্যে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথ নন্দন তত্ত্ব ও সৌন্দর্য তত্ত্ব দুই শব্দই ব্যবহার করেছিলেন ।
রবীন্দ্র মননে বাঙালীর শাশ্বত বোধ
বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতির মনন ও রুচির স্বপ্ন ও আবেগের প্রধানতম নির্মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনি বাঙালীর শাশ্বত চৈতন্যকে চিন্তা ও বোধের উৎকর্ষে রূপায়িত করেছেন । “ শেষের মধ্যেই থাকে অশেষ ”- এই বিবেচনায় জীবনের পরম শান্তির সন্ধানটুকু সাহিত্যে ব্যাপৃত করতেই জীবন পার করেছেন কবিগুরু । যারা জীবনবাদী সত্য-সুন্দর ও নন্দন তত্ত্বের বিচারে তারা বিশ্বাস করেন – “ নিজেদের যতই উন্নতির শিখরে টেনে নিয়ে যাই না কেন রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা প্রাসঙ্গিক ভাবে সামনে নিয়ে এগোতে হয় ।” রবীন্দ্র সাহিত্যে যে বিপুল জীবনযাপন তা একই সঙ্গে সত্য , সৌন্দর্য ও নন্দন তত্ত্বে বিকশিত ।
প্রাবন্ধিক আহম্মদ রফিকের মতে – “ শিল্প সাহিত্য সৃষ্টির নান্দনিকতা নিয়ে ব্যাক্তি বিশেষের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার বিভিন্নতার একাধিক ভিন্ন মতের প্রকাশ মূলত ভাব বাদের প্রাধান্যই পরিস্ফুট করে তুলেছে ... । শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিল্পের উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা বিচার্য বিষয় নয় , সৃষ্টি বিচার্য । রবীন্দ্র সাহিত্যে রয়েছে এই নন্দন তত্ত্বের সফল উদ্ভাসন । রবীন্দ্র সাহিত্য কর্মে মানবাত্মার প্রক্রিত দর্শন , জীবন ও প্রকৃতির বহুমাত্রিক ধারা প্রতিফলিত ...।”
রবীন্দ্র সাহিত্যে নান্দনিকতার প্রভাব
১৮৯৮ সালে রবীন্দ্রনাথের “ গ্রাম্য সাহিত্য ” প্রবন্ধে এক গবেষক মন্তব্য করেছেন – “ এই উদ্ধৃতির মধ্যে সাহিত্য শব্দটি যেখানে যেখানে যতবার আছে সেখানে সংস্কৃতি শব্দটি স্থাপন করলেই রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি চিন্তার মানচিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে । এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সংস্কৃতির এই ক্ষমতার কাঠামোকে রবীন্দ্রনাথ ভাল করেই বুঝতেন । কিন্তু এই সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে আধিপত্য এবং ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা চান নি । তিনি চেয়েছেন মানুষের মুক্তি । প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে , নিরস তত্ত্বে সরস অনুভুতি ও সাহিত্য সৌন্দর্যের ভুমিকা নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র সর্বপ্রথম আলোচনা শুরু করেন যা বেগবান হয়েছিল রবীন্দ্র সাহিত্যের মধ্য দিয়ে । ইতালীয় চিন্তাবিদ বেনেদিত্ত প্রাচ্যের ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ সিক্ত ছিলেন । তিনি সাহিত্যে-শিল্পে নান্দনিকতাকে ভেবেছেন মানবিকতা । সীমা থেকে অসীমের , মৃত্যু থেকে অমৃতের মধ্য দিয়ে যদিও এই ধারণা সম্ভবত ইন্দ্রিয়ানুভুতি থেকে আলাদা সত্ত্বা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে । তাই রবীন্দ্রনাথের চিন্তাকে একাত্ম পাশ্চাত্য মুখীনতার বিপরীতে দাঁড় করা যায় । কারন , বীরাগত ধারণা , অবীরাগত অনুভূতি , বিধিমূলক ও যোগ ক্ষেত্রিক তালিকা সিদ্ধ রূপায়নের চেয়ে রবীন্দ্র ভাবনা অনেকটা সতন্ত্র । তিনি দেখেছেন- “ রুপনারায়ণ কূলে জন্ম ” এবং মুক্তি খুঁজেছেন আলোয় আলোয় । উল্লেখ্য যে পাশ্চাত্যের ভাবনায় নন্দনের বহিঃসত্ত্বা নেই বললেই চলে কিন্তু রবি ভাবনায় আছে – “ তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা , আমি আমার সাধেরও সাধনা ।” এ ক্ষেত্রে কবি তাঁর মনের ভাব স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন কেবল Pure intuition is essentially lyricism যেখানে Endures হয়ে যাবে ।
রবীন্দ্রনাথ “ মরণ তুঁহু মম শ্যাম সমান ” কথায় অখণ্ডনীয় চেতনায় নিজেকে বেঁধে রাখার প্রয়াসে ইঙ্গিত দিয়েছেন । কবিকে লেখা চিঠিতে কবি ইয়েটস্ তাঁর প্রতিধ্বনি তুলে ছিলেন এই বলে যে – “ জীবনের সঙ্গে আমি আরও ঘনিষ্ঠ গ্রন্থিতে বাঁধা পড়েছি ।” এখানে বন্ধুকেও Passion At man ভাবাটাই মুখ্য । রবীন্দ্রনাথের চেতনায় নারী রূপের মূর্ছনায় এসেছে “ সুন্দর তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে...।” আত্ম নিবেদনে এই হাহাকার সকল কবির কাছেই সমমাত্রিক । যেখানে মিস্টিক ধারা লুকিয়ে থাকে । রবীন্দ্রনাথ সেই মিস্টিক ধারার অনুসারী ।
তাঁর শেষ পর্বের সাহিত্যে-কবিতায় নান্দনিক ও নন্দিত ভাবনার প্রকাশ প্রবল ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় । তিনি জগতের মাঝে প্রকৃতির রূপে নারী স্বরূপের সন্ধান করেছেন । স্পিনোজার Intellectual এর অনুকরণে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন সত্যকে । এ কথা বলতে হবে Human Bondage থেকে উৎসারিত রবীন্দ্র চেতনা নিভৃত নির্জনতার মাঝে সত্য এবং পূর্ণতায় পরিপূর্ণ ।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সেলিম রেজা সাগর ২১/০৫/২০১৮দারুণ।