নকশী কাঁথা ও বুড়ি রাজকন্যা- অন্তিম পর্ব
যা হয়েছিল :-
বলা শেষ হতে না হতেই রাজার মেয়ে কমলকে চাপিয়ে কাঁথা হুস্ হুস্ করে ভাসতে ভাসতে নিয়ে চলল হাজার হাজার পাহার দূরে । পিছনে পরে রইল রাজকন্যার প্রাসাদ আর সিংহাসন ।
৩
এদিকে সকাল হয়ে গেছে , সময় বয়ে যাচ্ছে দেখে রাজা চিন্তিত হয়ে পড়লেন । কোথায় গেল মেয়ে ? সেপাই , পাত্র-মিত্র-আমাত্য সকলেই হই হই রৈ-রৈ করে খুঁজতে লাগলেন রাজকন্যা কমলকে । সকাল থেকে যখন সন্ধ্যে নেমে এলো তখন রাজা কান্নায় ভেঙে পরলেন । নিজের ঘরে খিল দিয়ে কাঁদতে লাগলেন মেয়ের নাম করতে করতে । এমন সময় ঘরের উত্তর দিকে জানলায় এক রাত পাখী উড়ে এসে বসল । আর চিনচিনে গলায় রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলল –
“ রাজা মশাই করো না মিছে দুখ-
মেয়ে গেছে হাজার পাহার দূর ,
মিটবে সকল অহংকারের সুর ,
মনের আলো ফুটলেই ফিরবে সকল সুখ ।”
রাজা চোখের জল মুছে মন দিয়ে শুনলেন পাখীর কথা । তিনি নিজেও জানেন তার মেয়ের অহংকারী মনের কথা । জানেন না কবে তার একমাত্র মেয়ে আবার ফিরে আসবে । কারণ , সেই রাত পাখীকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই শুধু বলে যায় – “ আসবে আসবে , সকলের সুখ আসবে ।”
উড়ন্ত নকশী কাঁথা রাজকন্যা কমলকে নিয়ে উড়েই চলেছে । তার নিজের হাতে তৈরী কাঁথা আর তার কথা শোনে না । একসময় কত যত্ন করেই না কাঁথাটি বুনেছিলেন । রাজকুমারী লক্ষ্য করেন , সূর্যের রশ্মি যত বাড়তে থাকে তত কাঁথার রঙ-বেরঙের সূতো একটার পর একটা খুলে যেতে থাকে । অন্যদিকে , সুতো যত খুলতে থাকে রাজকন্যার রূপও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে ।
হাজার পাহার অতিক্রম করে কাঁথা এক নির্জন প্রান্তরে এসে নামলো । কাঁথা এখন শুধুমাত্র সাদা পাতলা কাপড়ে পরিনত হয়েছে । আর রাজকন্যা কমলের রূপ ঠিক সেই বুড়ির মত কদাকার । মাথা ভর্তি পাকা চুলের জট । রাজকন্যা সেই নির্জন প্রান্তরে এ অবস্থা দেখে কত কাঁদলেন । কিন্তু একাকী জায়গায় কেঁদে কোন লাভ হল না , কে তার কথা শুনবে ? আর কেই বা তাকে বিশ্বাস করবে ? এখন না আছে আগের মত রূপ , না আছে যৌবন । এখন তো রাজকন্যা কমল খুনখুনে বুড়ি , পরনে ময়লা ছেঁড়া বস্ত্র ।
রাজকন্যা তার সাদা কাঁথাকে গুটিয়ে নিতে যখন যাবে তখন কাঁথা বলে –
“ রাজকন্যার অহংকারে হল এমন হাল ,
ঈর্ষা-লোভী মানুষের আসে খারাপ কাল ।”
বুড়ি রাজকন্যা কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করলেন , এর থেকে মুক্তির কী উপায় আছে ? খানিক ভেবে কাঁথা যা জানালো তাতে কমলের মনে কিছুটা শান্তি আসলো । কাঁথা বলেছিল , যেদিন রাজকন্যা এই সাদা হয়ে যাওয়া কাঁথার দেহ পুনরায় নতুন রঙিন সুতোর নকশা দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারবে সেইদিন সব ফিরে পাবে রাজকুমারী ।
৪
কাজটা যতটা সহজ হবে ভেবেছিলেন , হল তার বিপরীত । ময়লা খুনখুনে বুড়িকে কেউই স্থান দিতে চায় না । সবাই বলে , যাও বুড়ি এখান থেকে । আগে স্নান করে এসো , গায়ে তোমার গন্ধ , পোশাক বদলাও ।
পুকুরে নেমে এক-দু’বার ডুব দিতেই রাজকন্যা হু হু করে ঠাণ্ডায় কাঁপেন , পথে বেশী চলতে গেলেই বুকে হাঁপ ধরে যায় । রাজকন্যা বোঝেন বার্ধক্য–জরা আসলে এসব হবেই । তার উপর যদি এই বয়েসে কেও না থাকে দেখার তাহলে তো আরও খারাপ হয়ে যায় । রাজকুমারীর মনে পরে যায় সেই দিনকার বুড়ির কথা ।
কোনমতে পরিষ্কার হয়ে বুড়ি রাজকন্যা তার কাঁথাকে বগলদাবা করে এক পা দু পা করে হাঁটতে থাকেন । খিদে পেলে ভিক্ষা করে খান আর মনে মনে কাঁদতে থাকেন ।
এ ভাবেই দিন কেটে যায় তার । ভাতের পয়সাই জোটে না তো রঙিন সুতো কেনার কথা অনেক দুরের কথা । যতদিন না কাঁথার বুকে ফুটবে নকশা ততদিন এ ভাবেই থাকতে হবে ।
একদিন দুপুরবেলা , গাছের তলায় বসেছিলেন বুড়ি রাজকন্যা । কিছু লোক গাধার পিঠে নানান বস্ত্র চাপিয়ে দূরে বানিজ্য করতে যাচ্ছিল । বুড়ি তাদের কাছে পয়সা চাইলেন কিন্তু বীনা পরিশ্রমে কে পয়সা দেবে । শেষে , তাদের মধ্যে এক যুবক ব্যবসায়ীর মনে দয়া হল । সে বলল , “ দ্যাখো বুড়ি মা , ভিক্ষা খারাপ জিনিষ । তুমি এক কাজ করো , আমার জিনিসগুলো একটু পাহারা দাও , আমি সামনের দোকান থেকে খাবার খেয়ে আসি ।”
কথাটা শুনে বুড়ি কমলের মনে একটু আশার আলো জাগল । খানিক পরে সেই যুবক ফিরে আসে আর ফিরে যাওয়ার সময় কিছু পয়সা আর একটা শীতের রঙিন চাদর দিয়ে যায় পারিশ্রমিক হিসাবে । রঙিন চাদর পেয়ে বুড়ির মনে আনন্দ যেমন আসে ঠিক তেমনি মনে পরে যায় তার অতীত জীবনের কথা । দু’চোখ জলে ভরে ওঠে ।
৫
বহু কাকুতি মিনতি করার পর এক অজানা গাঁয়ের এক অচেনা ছেলে বুড়ির দশা দেখে ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর দিলো । সেখানে কোনমতে মাথা গুঁজে পড়ে রইলেন দিনের পর দিন । এখন তার অবস্থা আরও খারাপ । সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারেন না । সোজা হতে গেলেই পিঠ করে টনটন । রাস্তায় বেরোলেই দুষ্টু ছেলে-মেয়ের দল পাকাচুলের শনশনে বুড়ি বলে ক্ষ্যাপায় , কেউবা দূর থেকে ঢিল মারে । রাজকুমারী আর কাওকেই কিছু বলেন না । বোঝেন এটা তার কর্ম ফল , অপরকে ঘৃণা করার শাস্তি ।
একদিন রাতের বেলা পাকাচুলের বুড়ি সেই পুরনো কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন । রাতের প্রথম প্রহরে শেয়ালের ডাকে বুড়ির ঘুম ভেঙে যায় । ঘরের মধ্যে ফিসফিস আওয়াজ করে কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে । ভাল ভাবে চোখ মেলে চাইতেই দেখলেন , তার গায়ের কাঁথা বলছে –
“ রাজকন্যা শুয়ে থেকো না অধিক কাল –
রঙিন সুতোয় ফুটিয়ে তো্ল নকশার জাল ।”
এই কথা শুনে বুড়ির মনে পড়ে গেল সেই যুবক ব্যবসায়ীর দেওয়া রঙিন চাদরের কথা । পরদিন সূর্যের আলো ফুটতেই বুড়ি কোনমতে পা ছড়িয়ে রঙিন চাদর থেকে একটা দুটো করে সুতো বার করতে লাগলেন ।
দিনের আলো ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে আর দিন পরিণত হয় মাসে । মাসের পর মাস জমতে জমতে বছরগুলো যায় কেটে । বহুকষ্টে বুড়ি রাজকন্যা পুনরায় পুরনো কাঁথার বুকে একের পর এক নানা নকশা তুলতে থাকলেন । সেই রঙিন নকশায় ফুটে উঠলো তার জীবনের কথা । আগের থেকেও সুন্দর হয়ে উঠলো কাঁথার শরীর ।
বুড়ি রাজকন্যা বুঝলেন , প্রাসাদে কত সহজে সব জিনিষ পেয়ে যেতেন , কাজ করেও ফেলতেন । কিন্তু সেটা প্রকৃত কাজ ছিল না , যা নিয়ে গর্ব করা যায় । এখন জীবনের নানা সমস্যার মধ্যে যা তিনি করলেন , সেটাই হল আসল ।
নকশী কাঁথায় চেপে রাজকন্যা কমল ফিরে এসেছেন রাজ্যে । অভিশাপ মুক্ত হয়ে ফিরে পেয়েছেন আবার আগের মত রূপ-যৌবন । ঘুচেছে তার সমস্ত অহংকার । আজ শুভ লগ্নে রাজকুমারীর বিয়ে । বহু বছর বাদে রাজার মহলে বাজলো সানাই । বাসর ঘরে নববধূ রূপে রাজপুত্র শতদলকে দিলেন সুন্দর মখমলের নকশী কাঁথা । যার বুকে অনেক কথার মধ্যে একটা নকশায় লেখা আছে –
“ জীবন তখনই জীবন হয় –
সুখের মাঝে দুখ যখন রয় ।
অহংকারে হয় মহা পতন –
দান-সেবায় পুণ্য হোক মন ।।”
( শেষ )
বলা শেষ হতে না হতেই রাজার মেয়ে কমলকে চাপিয়ে কাঁথা হুস্ হুস্ করে ভাসতে ভাসতে নিয়ে চলল হাজার হাজার পাহার দূরে । পিছনে পরে রইল রাজকন্যার প্রাসাদ আর সিংহাসন ।
৩
এদিকে সকাল হয়ে গেছে , সময় বয়ে যাচ্ছে দেখে রাজা চিন্তিত হয়ে পড়লেন । কোথায় গেল মেয়ে ? সেপাই , পাত্র-মিত্র-আমাত্য সকলেই হই হই রৈ-রৈ করে খুঁজতে লাগলেন রাজকন্যা কমলকে । সকাল থেকে যখন সন্ধ্যে নেমে এলো তখন রাজা কান্নায় ভেঙে পরলেন । নিজের ঘরে খিল দিয়ে কাঁদতে লাগলেন মেয়ের নাম করতে করতে । এমন সময় ঘরের উত্তর দিকে জানলায় এক রাত পাখী উড়ে এসে বসল । আর চিনচিনে গলায় রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলল –
“ রাজা মশাই করো না মিছে দুখ-
মেয়ে গেছে হাজার পাহার দূর ,
মিটবে সকল অহংকারের সুর ,
মনের আলো ফুটলেই ফিরবে সকল সুখ ।”
রাজা চোখের জল মুছে মন দিয়ে শুনলেন পাখীর কথা । তিনি নিজেও জানেন তার মেয়ের অহংকারী মনের কথা । জানেন না কবে তার একমাত্র মেয়ে আবার ফিরে আসবে । কারণ , সেই রাত পাখীকে কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই শুধু বলে যায় – “ আসবে আসবে , সকলের সুখ আসবে ।”
উড়ন্ত নকশী কাঁথা রাজকন্যা কমলকে নিয়ে উড়েই চলেছে । তার নিজের হাতে তৈরী কাঁথা আর তার কথা শোনে না । একসময় কত যত্ন করেই না কাঁথাটি বুনেছিলেন । রাজকুমারী লক্ষ্য করেন , সূর্যের রশ্মি যত বাড়তে থাকে তত কাঁথার রঙ-বেরঙের সূতো একটার পর একটা খুলে যেতে থাকে । অন্যদিকে , সুতো যত খুলতে থাকে রাজকন্যার রূপও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে ।
হাজার পাহার অতিক্রম করে কাঁথা এক নির্জন প্রান্তরে এসে নামলো । কাঁথা এখন শুধুমাত্র সাদা পাতলা কাপড়ে পরিনত হয়েছে । আর রাজকন্যা কমলের রূপ ঠিক সেই বুড়ির মত কদাকার । মাথা ভর্তি পাকা চুলের জট । রাজকন্যা সেই নির্জন প্রান্তরে এ অবস্থা দেখে কত কাঁদলেন । কিন্তু একাকী জায়গায় কেঁদে কোন লাভ হল না , কে তার কথা শুনবে ? আর কেই বা তাকে বিশ্বাস করবে ? এখন না আছে আগের মত রূপ , না আছে যৌবন । এখন তো রাজকন্যা কমল খুনখুনে বুড়ি , পরনে ময়লা ছেঁড়া বস্ত্র ।
রাজকন্যা তার সাদা কাঁথাকে গুটিয়ে নিতে যখন যাবে তখন কাঁথা বলে –
“ রাজকন্যার অহংকারে হল এমন হাল ,
ঈর্ষা-লোভী মানুষের আসে খারাপ কাল ।”
বুড়ি রাজকন্যা কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করলেন , এর থেকে মুক্তির কী উপায় আছে ? খানিক ভেবে কাঁথা যা জানালো তাতে কমলের মনে কিছুটা শান্তি আসলো । কাঁথা বলেছিল , যেদিন রাজকন্যা এই সাদা হয়ে যাওয়া কাঁথার দেহ পুনরায় নতুন রঙিন সুতোর নকশা দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারবে সেইদিন সব ফিরে পাবে রাজকুমারী ।
৪
কাজটা যতটা সহজ হবে ভেবেছিলেন , হল তার বিপরীত । ময়লা খুনখুনে বুড়িকে কেউই স্থান দিতে চায় না । সবাই বলে , যাও বুড়ি এখান থেকে । আগে স্নান করে এসো , গায়ে তোমার গন্ধ , পোশাক বদলাও ।
পুকুরে নেমে এক-দু’বার ডুব দিতেই রাজকন্যা হু হু করে ঠাণ্ডায় কাঁপেন , পথে বেশী চলতে গেলেই বুকে হাঁপ ধরে যায় । রাজকন্যা বোঝেন বার্ধক্য–জরা আসলে এসব হবেই । তার উপর যদি এই বয়েসে কেও না থাকে দেখার তাহলে তো আরও খারাপ হয়ে যায় । রাজকুমারীর মনে পরে যায় সেই দিনকার বুড়ির কথা ।
কোনমতে পরিষ্কার হয়ে বুড়ি রাজকন্যা তার কাঁথাকে বগলদাবা করে এক পা দু পা করে হাঁটতে থাকেন । খিদে পেলে ভিক্ষা করে খান আর মনে মনে কাঁদতে থাকেন ।
এ ভাবেই দিন কেটে যায় তার । ভাতের পয়সাই জোটে না তো রঙিন সুতো কেনার কথা অনেক দুরের কথা । যতদিন না কাঁথার বুকে ফুটবে নকশা ততদিন এ ভাবেই থাকতে হবে ।
একদিন দুপুরবেলা , গাছের তলায় বসেছিলেন বুড়ি রাজকন্যা । কিছু লোক গাধার পিঠে নানান বস্ত্র চাপিয়ে দূরে বানিজ্য করতে যাচ্ছিল । বুড়ি তাদের কাছে পয়সা চাইলেন কিন্তু বীনা পরিশ্রমে কে পয়সা দেবে । শেষে , তাদের মধ্যে এক যুবক ব্যবসায়ীর মনে দয়া হল । সে বলল , “ দ্যাখো বুড়ি মা , ভিক্ষা খারাপ জিনিষ । তুমি এক কাজ করো , আমার জিনিসগুলো একটু পাহারা দাও , আমি সামনের দোকান থেকে খাবার খেয়ে আসি ।”
কথাটা শুনে বুড়ি কমলের মনে একটু আশার আলো জাগল । খানিক পরে সেই যুবক ফিরে আসে আর ফিরে যাওয়ার সময় কিছু পয়সা আর একটা শীতের রঙিন চাদর দিয়ে যায় পারিশ্রমিক হিসাবে । রঙিন চাদর পেয়ে বুড়ির মনে আনন্দ যেমন আসে ঠিক তেমনি মনে পরে যায় তার অতীত জীবনের কথা । দু’চোখ জলে ভরে ওঠে ।
৫
বহু কাকুতি মিনতি করার পর এক অজানা গাঁয়ের এক অচেনা ছেলে বুড়ির দশা দেখে ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর দিলো । সেখানে কোনমতে মাথা গুঁজে পড়ে রইলেন দিনের পর দিন । এখন তার অবস্থা আরও খারাপ । সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারেন না । সোজা হতে গেলেই পিঠ করে টনটন । রাস্তায় বেরোলেই দুষ্টু ছেলে-মেয়ের দল পাকাচুলের শনশনে বুড়ি বলে ক্ষ্যাপায় , কেউবা দূর থেকে ঢিল মারে । রাজকুমারী আর কাওকেই কিছু বলেন না । বোঝেন এটা তার কর্ম ফল , অপরকে ঘৃণা করার শাস্তি ।
একদিন রাতের বেলা পাকাচুলের বুড়ি সেই পুরনো কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন । রাতের প্রথম প্রহরে শেয়ালের ডাকে বুড়ির ঘুম ভেঙে যায় । ঘরের মধ্যে ফিসফিস আওয়াজ করে কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে । ভাল ভাবে চোখ মেলে চাইতেই দেখলেন , তার গায়ের কাঁথা বলছে –
“ রাজকন্যা শুয়ে থেকো না অধিক কাল –
রঙিন সুতোয় ফুটিয়ে তো্ল নকশার জাল ।”
এই কথা শুনে বুড়ির মনে পড়ে গেল সেই যুবক ব্যবসায়ীর দেওয়া রঙিন চাদরের কথা । পরদিন সূর্যের আলো ফুটতেই বুড়ি কোনমতে পা ছড়িয়ে রঙিন চাদর থেকে একটা দুটো করে সুতো বার করতে লাগলেন ।
দিনের আলো ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে আর দিন পরিণত হয় মাসে । মাসের পর মাস জমতে জমতে বছরগুলো যায় কেটে । বহুকষ্টে বুড়ি রাজকন্যা পুনরায় পুরনো কাঁথার বুকে একের পর এক নানা নকশা তুলতে থাকলেন । সেই রঙিন নকশায় ফুটে উঠলো তার জীবনের কথা । আগের থেকেও সুন্দর হয়ে উঠলো কাঁথার শরীর ।
বুড়ি রাজকন্যা বুঝলেন , প্রাসাদে কত সহজে সব জিনিষ পেয়ে যেতেন , কাজ করেও ফেলতেন । কিন্তু সেটা প্রকৃত কাজ ছিল না , যা নিয়ে গর্ব করা যায় । এখন জীবনের নানা সমস্যার মধ্যে যা তিনি করলেন , সেটাই হল আসল ।
নকশী কাঁথায় চেপে রাজকন্যা কমল ফিরে এসেছেন রাজ্যে । অভিশাপ মুক্ত হয়ে ফিরে পেয়েছেন আবার আগের মত রূপ-যৌবন । ঘুচেছে তার সমস্ত অহংকার । আজ শুভ লগ্নে রাজকুমারীর বিয়ে । বহু বছর বাদে রাজার মহলে বাজলো সানাই । বাসর ঘরে নববধূ রূপে রাজপুত্র শতদলকে দিলেন সুন্দর মখমলের নকশী কাঁথা । যার বুকে অনেক কথার মধ্যে একটা নকশায় লেখা আছে –
“ জীবন তখনই জীবন হয় –
সুখের মাঝে দুখ যখন রয় ।
অহংকারে হয় মহা পতন –
দান-সেবায় পুণ্য হোক মন ।।”
( শেষ )
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৬/০৫/২০১৮Darun.
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৬/০৫/২০১৮অনেক সুন্দর হয়েছে।