www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নকশী কাঁথা ও বুড়ি রাজকন্যা- প্রথম পর্ব

শনশনে বুড়ির কথা হয়তো অনেকেই জানে না । জানার কথাও না । তবে বুড়ির কাঁথার গল্প আজও গ্রাম বাঙলার অনেক ঘরেই সাঁঝের ঝুপ করা অন্ধকারে ঠাকুমার মুখে ঘুরে ফেরে ।
এক যে ছিল সৎ ও নির্লভ রাজা । আর তার ছিল মা মরা একটিমাত্র মেয়ে । মেয়ে তার মোমের মত নরম কিন্তু মন তার বিষের থেকেও গরল । রাজার অন্ধ আদরে মনের কোন ফাঁকে নিজের থেকেই জমতে থাকে অহংকার ।
রাজা ভাবতেন , তার অবর্তমানে কে এই বিশাল রাজ্য দেখবে আর কেই-বা তার আদরের মেয়েকে সুখে রাখবে ? তাই রাজা , রাজকন্যাকে শিক্ষা আর অস্ত্র-বিদ্যায় ছোট থেকেই পারদর্শী করতে লাগলেন । ক্রমে বছর ঘুরে যায় । রাজা যেমন বুড়ো হতে লাগলেন , ঠিক তেমনি মেয়েও বড় হয়ে উঠতে থাকে্ন । অহংকার তো আকাশ ছোঁয়া , কাওকেই কিছু হাসি মুখে দিতেই পারেন না ।
বার্ধক্যের থাবা পুরোপুরি পরার আগেই রাজা ঠিক করলেন , এই দেশের সিংহাসনে তার মেয়েকে বসিয়ে দিয়ে নিজে দান ধ্যানের মধ্যে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবে্ন । সেই মত সকল আয়োজন করেও ফেললেন রাজা ।
নির্দিষ্ট দিনের সকাল হতেই তুরী , ভেরী নানা বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠলো রাজমহলে । আজ রাজকন্যা কমলের রাজমুকুট পরার দিন । রাজ-জ্যোতিষী ছক পেতে আঁকিবুঁকি কেটে কয়দিন পূর্বে জানিয়ে দিয়েছিলেন , ভোরের আকাশে যখন সূর্যের প্রথম আলো স্পর্শ করবে তখন পশ্চিম কোণে চাঁদের নীচেই অশ্বিনী নক্ষত্র লেগে থাকবে । সেই ক্ষণে রাজকন্যা যেন সরোবরে স্নান করে আসে্ন । আর এটাও বলেছিলেন , স্নান করে ফেরার পথে যাকেই রাজকন্যা প্রথম দেখতে পাবেন তাকেই যেন তিনি তার হাতে তৈরী কোন জিনিষ মন থেকে দান করে্ন ।
রাজা এ কথা মেয়েকে জানান । যদি সিংহাসন হাত ছাড়া হয়ে যায় , এই ভেবে ফুলের মত হেসে রাজকুমারী বলেন , “ এ আর এমন কী ব্যাপার ।” তার হাতের তৈরী নকশা করা কাঁথার কথা সারা রাজ্যের মানুষই জানে । মেয়ের কথায় রাজা সন্তুষ্ট হয়ে নিজের কক্ষে ফিরে গেলেন ।
রাজা চলে যেতেই রাজকুমারীও ভাবলেন , কাল তার শুভ দিন । বাধ্য হয়েই সবচেয়ে প্রিয় ও নানান রঙের মখমল সুতো দিয়ে তার হাতে বোনা গায়ের চাদরটি দিয়ে দেবেন । যদিও , প্রিয় জিনিষ অজানা কাওকে দিতে একটু হলেও খারাপ লাগে । কী আর করা , রাজ নির্দেশ তো অমান্য করা যায় না ।

সরোবর থেকে ফেরার পথেই রাজকন্যা ঠিক করে রেখেছিলেন মাথা নীচু করে হাঁটবেন , তাহলেই আর কারোর মুখ দেখার খুব একটা ব্যাপার থাকবে না । কিন্তু , ভাগ্যের লেখা খণ্ডানো মুশকিল । তিনি যখন মাথা নীচু করে ফিরছিলেন ঠিক পেছন থেকে কাঁপা গলায় কে যেন বলে ওঠে –
“ রাজকন্যা কমল , ফুলের মত দেহ –
শীতের সময় কাঁপছে শরীর ,
তোমার নকশী কাঁথাটি দিয়ে যেও ।”
আচমকা এমন কথা শুনে রাজকন্যা পিছন ফিরে দেখলেন , এক অতি কদাকার চেহারার বুড়ি তার দিকে চেয়ে আছে । বয়েস ঠিক ঠাওর করা যায় না । পরনের বস্ত্রও যেন তার থেকেও প্রাচীন । গা থেকে নোংরা গন্ধ ভেসে আসছে ।
রাজকন্যার সারা শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো । মনটা ভার হয়ে উঠলো । তিনি ভাবলেন , অপিরিচিত হলেও ক্ষতি ছিল না কিন্তু তার হাতের তৈরী এত সুন্দর নকশা করা কাঁথা এমন বুড়ির গায়ে উঠবে ! রাজকন্যা নাকে কাপড় চাপা দিয়ে বুড়ির দিকে নকশা করা কাঁথা ছুঁড়ে দিলেন । বুড়ির মন আনন্দে নেচে উঠলো । কিন্তু এখানেই শেষ হল না । বুড়ি খুশী মনে রাজকুমারীর মাথায় যেই না আশীর্বাদ করতে এসেছে , অমনি , রাগের মাথা খেয়ে অহংকারী রাজকুমারী কমল বুড়িকে বলে ওঠে –
“ দূর হ নোংরা পোড়ার মুখী –
কাঁথা নিয়ে থাক সুখী ।
মখমলে কাঁথা তোর দেহে উঠবে –
চক্ষে জল আসে এ কথা ভেবে ।”
বুড়ি তখন রাজকুমারীর থেকে কয়েক হাত পিছিয়ে গিয়ে জবাব দেয় –
“ নরম গরম নকশী কাঁথা –
যাও হাজার পাহার দূরে ,
রাজার মেয়ে পাবে শিক্ষা –
লক্ষ-হাজার বছর জুড়ে ।”
বলা শেষ হতে না হতেই রাজার মেয়ে কমলকে চাপিয়ে কাঁথা হুস্‌ হুস্‌ করে ভাসতে ভাসতে নিয়ে চলল হাজার হাজার পাহার দূরে । পিছনে পরে রইল রাজকন্যার প্রাসাদ আর সিংহাসন ।
( চলবে )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৭৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast