টুনির কেরামতি
১
সকাল হতেই মায়ের তারস্বরে চীৎকার টুনির একপ্রকার সয়ে গেছে । শীতের গরম লেপ আর নরম গরমের মধ্যে মজার মজার স্বপ্ন দেখার স্বাদ যে কী অসাধারণ তা মা যদি বুঝতেন...!
এক গাল ভাত কোনমতে মুখে নিয়েই টুনি তাড়াহুড়া শুরু করে দেয় । সারাদিন কাজের পর মায়ের চোখে ভাত-ঘুম আসতেই ছোট্ট শরীরটাকে গরাদহীন জানলার ফোঁকল দিয়ে বার করে একছুটে হাজির হয় টুনি তার সাম্রাজ্যে ।
এখানে তার ভাষা সকলেই বোঝে । আর বুঝবেই না কেন ? টুনি যে পশু-পাখীদের ডাক অবিকল ভাবে করতে পারে । এই তো সেদিন সকালে হুপ হুপ করে কয়েকবার ডাক দিতেই কাচ্চাবাচ্চা সমেত গোদা হনুমানের দল টুনিদের বাড়ীর ছাদে আসর জমিয়েছিল । শুকাতে দেওয়া বড়ি , পাঁপড় চেটেপুটে খেয়ে ফিরে যায় ।
টুনির আশকারাতেই যে এই কাণ্ড সেটা পাশের বাড়ীর রাকেশ কাকা মা’কে বলতেই , পিঠে পড়লো কয়েক ঘা চ্যালাকাঠ । বড়রা যে কেন ছোটদের বুঝতে চায় না , সেই কথাটাই আলোচনা হচ্ছিল জঙ্গলে দুপুরের সভায় । অবশ্য জঙ্গল বলতে এখানে , ঘন কিছু গাছ আর পুকুর দিয়ে ঘেরা ভাণ্ডারীদের পুরনো বাগান ।
সুখ-দুঃখের কথা সেরে প্রতিদিনের মত আজও টুনি বাড়ী ফেরে মা ওঠার আগেই ।
২
রাকেশ কাকা প্রতিদিনের মত আজও ব্যায়াম করতে এসেছে স্কুল মাঠে । আজকের সাথী টুনি । মাঝেমধ্যেই টুনি বেমক্কা ভাবে শরীর খারাপ নিয়ে ভোগে । তাই , ডাক্তারের পরামর্শ মেনে টুনির মা ব্যায়ামবীর রাকেশ কাকাকে অনুরোধ করেছিল টুনিকে ব্যায়ামের টনিক খাওয়াতে ।
কাকার ইয়া ইয়া মাসেল দেখে আর টুনি হাঁ করে ভাবে , কাকা নিশ্চয়ই এক কিলে দু-তিনটে হাতিকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারবে । বেশ কয়েকটা ডনবৈঠক দিয়ে আজকের মত শরীরচর্চা সমাপন করে কাকা । ঠাণ্ডা যাতে না লাগে তারজন্য আচ্ছা করে হনুমান টুপি আর বেশ মোটা বস্তার মত জ্যাকেট পরে নিয়ে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে কাকা প্যাডেলে পা রাখে । হ্যান্ডেলে টুন টুন করে ঝুলছে দুধের লোটা । বাড়ী ফিরেই কাকার ওটা চাই-ই চাই , নইলে শরীর তৈরী হবে কী করে ?
যে রাস্তা দিয়ে টুনিদের ফেরার কথা সে রাস্তা মেরামতির জন্য বন্ধ । সুতরাং , অন্য পাড়ার গলি ধরতেই হল । আর এখানেই বিপত্তি । একে শীতকালের সকাল , তার উপর কুয়াশা কাটে নি । অন্য লোকের গন্ধ পেয়েই কর্তব্য বোধ জেগে ওঠে সেই পাড়ার যুবক থেকে শুরু করে বুড়ো কুকুরদের মধ্যে । জুড়ে দেয় ঘেউ ঘেউ । টুনি ভাবতেই পারেনি কাকার কুকুর সম্পর্কে মনের ভিতরে আছে সুপ্ত এলার্জী । ওরা যত ডাকে কাকা তত সাইকেলে ছোটায় । ব্যাস আর যায় কোথায় ! কুকুরের দলও জুড়ে দেয় দৌড় । একটা কুকুর ইতিমধ্যে ঘ্যাঁক করে কাকার ট্রাউজারে দাঁত বসাতেই “ মা গো ” বলেই সোজা সাইকেল ঢুকিয়ে দেয় পাশের ছোট্ট পচা ডোবায় ।
টুনি তার আগেই ছিটকে পরে পাশের রাস্তায় । কুকুরের দল তখনও ছাড়ে নি । যেন তারা সমবেত ভাবে ব্যায়ামবীর কাকাকে জব্দ করবেই বলে পণ করেছে । কাঁহাতক আর এই শীতের সকালে পচা ডোবায় থাকা যায় । কিন্তু , যেই উঠতে যাবে অমনি সারমেয় বাহিনী তেড়ে আসে । টুনি দ্যাখে , কাকা হাতজোড় করে কাঁপছে আর বাচ্চাদের মত ভ্যাঁ করে কাঁদছে ।
এমনটা পালোয়ান কাকার থেকে আশাই করে নি টুনি । চট করে টুনির মাথা খেলে যায় বুদ্ধি । মুখ অদ্ভুত ভাবে হাত দিয়ে কুকুরের ডাক ছাড়ে । খানিক হাঁকাহাঁকির পর লক্ষ্য করে বদরাগী কুকুর সৈন্যরা কাকাকে ছেড়ে ল্যাজ দোলাতে দোলাতে টুনির কাছে এসে সপাৎ সপাৎ করে গাল চেটে দেয় । কে জানে টুনি ওদের সেদিন কী বলেছিল ?
ওই দিনের পর থেকে রাকেশ কাকা টুনিকে সমঝে চলত । অবিশ্যি , পাড়ায় নিজের গুণগান বেশী না গাইলেও সেদিনের ঘটনার উপস্থিত বুদ্ধি আর প্রতিভার কৃতিত্ব টুনিকে দিয়েছিল কাকা ।।
সকাল হতেই মায়ের তারস্বরে চীৎকার টুনির একপ্রকার সয়ে গেছে । শীতের গরম লেপ আর নরম গরমের মধ্যে মজার মজার স্বপ্ন দেখার স্বাদ যে কী অসাধারণ তা মা যদি বুঝতেন...!
এক গাল ভাত কোনমতে মুখে নিয়েই টুনি তাড়াহুড়া শুরু করে দেয় । সারাদিন কাজের পর মায়ের চোখে ভাত-ঘুম আসতেই ছোট্ট শরীরটাকে গরাদহীন জানলার ফোঁকল দিয়ে বার করে একছুটে হাজির হয় টুনি তার সাম্রাজ্যে ।
এখানে তার ভাষা সকলেই বোঝে । আর বুঝবেই না কেন ? টুনি যে পশু-পাখীদের ডাক অবিকল ভাবে করতে পারে । এই তো সেদিন সকালে হুপ হুপ করে কয়েকবার ডাক দিতেই কাচ্চাবাচ্চা সমেত গোদা হনুমানের দল টুনিদের বাড়ীর ছাদে আসর জমিয়েছিল । শুকাতে দেওয়া বড়ি , পাঁপড় চেটেপুটে খেয়ে ফিরে যায় ।
টুনির আশকারাতেই যে এই কাণ্ড সেটা পাশের বাড়ীর রাকেশ কাকা মা’কে বলতেই , পিঠে পড়লো কয়েক ঘা চ্যালাকাঠ । বড়রা যে কেন ছোটদের বুঝতে চায় না , সেই কথাটাই আলোচনা হচ্ছিল জঙ্গলে দুপুরের সভায় । অবশ্য জঙ্গল বলতে এখানে , ঘন কিছু গাছ আর পুকুর দিয়ে ঘেরা ভাণ্ডারীদের পুরনো বাগান ।
সুখ-দুঃখের কথা সেরে প্রতিদিনের মত আজও টুনি বাড়ী ফেরে মা ওঠার আগেই ।
২
রাকেশ কাকা প্রতিদিনের মত আজও ব্যায়াম করতে এসেছে স্কুল মাঠে । আজকের সাথী টুনি । মাঝেমধ্যেই টুনি বেমক্কা ভাবে শরীর খারাপ নিয়ে ভোগে । তাই , ডাক্তারের পরামর্শ মেনে টুনির মা ব্যায়ামবীর রাকেশ কাকাকে অনুরোধ করেছিল টুনিকে ব্যায়ামের টনিক খাওয়াতে ।
কাকার ইয়া ইয়া মাসেল দেখে আর টুনি হাঁ করে ভাবে , কাকা নিশ্চয়ই এক কিলে দু-তিনটে হাতিকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারবে । বেশ কয়েকটা ডনবৈঠক দিয়ে আজকের মত শরীরচর্চা সমাপন করে কাকা । ঠাণ্ডা যাতে না লাগে তারজন্য আচ্ছা করে হনুমান টুপি আর বেশ মোটা বস্তার মত জ্যাকেট পরে নিয়ে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে কাকা প্যাডেলে পা রাখে । হ্যান্ডেলে টুন টুন করে ঝুলছে দুধের লোটা । বাড়ী ফিরেই কাকার ওটা চাই-ই চাই , নইলে শরীর তৈরী হবে কী করে ?
যে রাস্তা দিয়ে টুনিদের ফেরার কথা সে রাস্তা মেরামতির জন্য বন্ধ । সুতরাং , অন্য পাড়ার গলি ধরতেই হল । আর এখানেই বিপত্তি । একে শীতকালের সকাল , তার উপর কুয়াশা কাটে নি । অন্য লোকের গন্ধ পেয়েই কর্তব্য বোধ জেগে ওঠে সেই পাড়ার যুবক থেকে শুরু করে বুড়ো কুকুরদের মধ্যে । জুড়ে দেয় ঘেউ ঘেউ । টুনি ভাবতেই পারেনি কাকার কুকুর সম্পর্কে মনের ভিতরে আছে সুপ্ত এলার্জী । ওরা যত ডাকে কাকা তত সাইকেলে ছোটায় । ব্যাস আর যায় কোথায় ! কুকুরের দলও জুড়ে দেয় দৌড় । একটা কুকুর ইতিমধ্যে ঘ্যাঁক করে কাকার ট্রাউজারে দাঁত বসাতেই “ মা গো ” বলেই সোজা সাইকেল ঢুকিয়ে দেয় পাশের ছোট্ট পচা ডোবায় ।
টুনি তার আগেই ছিটকে পরে পাশের রাস্তায় । কুকুরের দল তখনও ছাড়ে নি । যেন তারা সমবেত ভাবে ব্যায়ামবীর কাকাকে জব্দ করবেই বলে পণ করেছে । কাঁহাতক আর এই শীতের সকালে পচা ডোবায় থাকা যায় । কিন্তু , যেই উঠতে যাবে অমনি সারমেয় বাহিনী তেড়ে আসে । টুনি দ্যাখে , কাকা হাতজোড় করে কাঁপছে আর বাচ্চাদের মত ভ্যাঁ করে কাঁদছে ।
এমনটা পালোয়ান কাকার থেকে আশাই করে নি টুনি । চট করে টুনির মাথা খেলে যায় বুদ্ধি । মুখ অদ্ভুত ভাবে হাত দিয়ে কুকুরের ডাক ছাড়ে । খানিক হাঁকাহাঁকির পর লক্ষ্য করে বদরাগী কুকুর সৈন্যরা কাকাকে ছেড়ে ল্যাজ দোলাতে দোলাতে টুনির কাছে এসে সপাৎ সপাৎ করে গাল চেটে দেয় । কে জানে টুনি ওদের সেদিন কী বলেছিল ?
ওই দিনের পর থেকে রাকেশ কাকা টুনিকে সমঝে চলত । অবিশ্যি , পাড়ায় নিজের গুণগান বেশী না গাইলেও সেদিনের ঘটনার উপস্থিত বুদ্ধি আর প্রতিভার কৃতিত্ব টুনিকে দিয়েছিল কাকা ।।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৯/০৫/২০১৮Nice
-
গাজী তারেক আজিজ ০৯/০৫/২০১৮valo laglo. aro valo hobe ei prtyashay
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৯/০৫/২০১৮এমন কাকা সবার ভাগ্যে জোটে না। যেটা টুনির ভাগ্যে জুটেছে।
খুভ ভাল লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ।
আমার লেখায় সবসময় আপনার মূল্যবান সংশোধন আশা করি।
ভাল থাকবেন।