www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রূপালী আগুন

গল্পটা টুটুন আমাকে বেশ কয়েকবার রসিয়ে রসিয়ে শুনিয়েছিল । সেবার মামা আর টুটুন মাঝ বর্ষাতে ডুয়ার্স বেড়াতে যায় । বলে রাখা ভাল ঠিক এই সময়ে জঙ্গল সাফারি বন্ধ রাখা হয় । সাধারণদের প্রবেশ তখন নিষিদ্ধ । মামা আবার আমার বাবার ভাল বন্ধু । তাই মামার উদ্ভট খেয়ালকে সফল করতে বাবাও পিছ পা হন নি । নির্দিষ্ট দিনে মামা আর টুটুনকে নিয়ে হাজির হয় কালীপুর ইকো ভিলেজে । যারা এখনো যান নি গিয়ে দেখবেন চারিদিকে নানা নাম না জানা বড় বড় গাছ আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে আছে আর একপাশে মখমলে চা বাগিচা । হ্যাঁ অবশ্যই আছে গভীর ঘন জঙ্গল । সরকারী নাম গরুমারা রিজার্ভ ফরেস্ট । হরিণ , নীলগাই আর এশিয়ান গণ্ডারদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র এ অরণ্য। চা বাগানে মাঝে মধ্যে চিতা বাচ্চা পাড়তে আসে । ইকো-ভিলেজে সরকারী কটেজে শুয়েই চব্বিশটি ঘন্টা শোনা যায় ময়ূরের কেকা । শুকনো মূর্তি নদী বর্ষার জলে টইটম্বুর ।
বাকী গল্পটা টুটুনের জবানিতেই সংক্ষেপে বলি । আট জুলাইয়ের পরদিন বৃষ্টি একটু ধরেছে । সামনের কাঠের গুঁড়িতে বসে মামা সবেমাত্র চায়ের কাপে ঠোঁট লাগিয়েছে ঠিক তখনই কটেজের ছোকরা রাঁধুনি অনন্ত মুখখোলা খাম ধরিয়ে দেয় । ভ্রূ কুঁচকে মামা খাম থেকে একটা ছোট্ট কাগজ বার করে পড়ে । লেখা আছে –
“খড়গে রূপালী আগুনের স্নান –
আজ বর্ম ভেদে দাও বলিদান ।
এক ঘড়ে দুই ভাই তস্কর প্রহরে
নোনা পাথরে তারা আহারে-বিহারে ।”
“ এটা কি বলত টুটুন ?” বিস্ময়ের ঘোর তখন টুটুনের চোখেও । কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় বেশ উত্তেজিত গলার শব্দে । কটেজের অন্য ঘরের হাট্টাকাট্টা লোকটি অনন্তের উপর চোটপাট করছে । একটু পরেই বেচারা মামার কাছে এসে জানায় ভুল করে খামটা মামাকে দিয়ে ফেলেছে ।

লোকটির নাম এখানে অপ্রাসঙ্গিক । ইন্সপেক্টার বর্মণ লোকটিকে আপাতত থানায় সাঙ্গপাঙ্গ সমেত রওনা করিয়ে দিয়েছেন । শরীরে ক্লান্তির ছাপ থাকলেওও মুখে হালকা হাসি । মামার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “ দাদা বুঝলেন কি করে বলুন তো ?”
মামা একমুখ কাঁচা বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন –“ ভাগ্যিস ভুল করেছিল অনন্ত...”
“মানে ওই চিরকুটেই কি লেখা ছিল নাকি ?”
“ হুম । আসলে আমাদের আসার কয়েকদিন আগেই ওই চোরাকারবারি এখানে ঘাঁটি পাতে । উদ্দেশ্য গণ্ডারের শিং । গোটা জলপাইগুড়ির অরন্যে দুশোটি গণ্ডারের আবাস । আজ থেকে বহু বছর আগে আফ্রিকার গণ্ডার বাঁচাতে একটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয় ...”
“যেমন ?” বর্মন প্রশ্ন করে ।
“ধরো , গণ্ডারের শিঙে সীসা আর পটাশিয়াম সায়ানাইডের প্রলেপ , যার নাম সিলভার বুলেট আর এখানেও সেটা করেছিল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট।”
“তারপর...।”মামা আমাকে থামিয়ে বলে “ বাকীটা নেটে দেখে নিস । এবারে বলি কিভাবে ধরলাম । চিরকুটে লেখাটা আপাদমস্তক নিরীহ কিন্তু ওর মধ্যেই স্থান-কাল সবই লেখা ছিল । খড়গ–বর্ম আর বলিদান এই তিন শব্দ আমাকে ভাবিয়ে তুলে ছিল । তুই ভেবে বল দেখি টুটুন ।”
“খড়গে রূপালী আগুন মানে শিঙে সিলভার বুলেটের প্রলেপ । বর্ম মানে গণ্ডারের চামড়া । বলিদান – মেরে ফেলা ...।”
“ সাবাস । এক ঘড়ে দুই ভাই তস্কর প্রহর মানেটা একটু খটমটে তাই তো ! চার প্রহরের তৃতীয় প্রহরে মূলত চোর-ছ্যাঁচড়াদের কারবার, তাই তস্কর প্রহর । কিন্তু সময় লুকানো আছে দুই ভাইয়ে ”।
বর্মন এতক্ষণ পর বলে উঠলেন “ রাত বারোটায় দুই কাঁটা এক হয় ।”
“একদম ঠিক । নোনা পাথর মানে সল্ট-বিট ।”
আমাদের দুজনের চোখে তখনও বিস্ময় । মামা হো হো করে হেসে বললেন “ বাকীটা তোরা মনে মনে গল্পের মত সাজিয়ে-গুছিয়ে নে ।।”
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫১০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৪/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast