www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নীলমন ও লালমন


চন্দ্রগড়ের দুই রানীর এমন ভাব সত্যিই বিরল ! তারা প্রায় সব কাজ নিজেদের মধ্যে যুক্তি পরামর্শ করে সমাধা করতেন । তাদের মধ্যে যে গুটিকয় ঝগড়া বেধে যেত তা নিতান্তই বাচ্চাদের মত । এই তুমুল ঝগড়া তো পরক্ষণেই রাজপ্রাসাদ মাত করে হাসাহাসি , এ ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার । রাজা এদের নিয়ে পরম সুখে রাজ্যের প্রজা পালন করতেন ।
কিন্তু এত সুখ মানুষের কী সয় ! বড়রানীর সন্তান হওয়ার পর থেকেই ছোটরানীর মনে লাগে আঘাত আর তা ক্রমেই ঈর্ষায় পরিণত হয় । বড়রানী কিন্তু ছোটকে যতই কাছে টানতে চান ততই সে ছিটকে বেড়িয়ে যান । রাজা কথা বলতে চাইলে অসুখের ভান করে শুয়ে থাকে । ক্রমশ সুখের চন্দ্রগড়ে নেমে আসে দুঃখের ছায়া !

দিন যায় । যায় কাল । বড়রানীর পুত্র সময়ের তালে বড় হতে থাকে । ভাগ্য বিড়ম্বনায় ছোটরানীর আর সন্তানই হয় নি । রাজকুমারও কিন্তু এই ছোটমাকে বেশী ভালোবাসে । বড়রানী বা রাজার সাথে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও কুমারকে ছোটও দূরে ঠেলে দিতে পারতেন না । তবুও ভাল ! এই মনে করে রাজা মনে শান্তি পান ।
চন্দ্রগড় রাজ্যের শেষপ্রান্তে বাস করতেন এক সাধু । একদিন সাধু রাজমহলে এসে সবার সাথে সাক্ষাৎ করেন , আহার সমাপন করে অতি তৃপ্ত হন । বিদায়কালে বলে যান , “ বিপদ আসন্ন !” কিন্তু কীসের বিপদ তা জানার পূর্বেই সাধু অট্টহাসি হেসে বিদায় নিলেন ।

কিছুদিন পর থেকেই চন্দ্রগড়ে শুরু হয় অশান্তির মহামারী । কাতারে কাতারে প্রজারা অযথা মারামারি কাটাকাটি সামান্য কারনেই শুরু করে দেয় । এর রেশ মহলেও পরতে শুরু করে । রানীদের মধ্যে সেই পুরনো বিবাদ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয় । এমনকি প্রিয় রাজকুমারও ছোটরানীর দু’চোখের বিষ হয়ে যায় ।
বিষণ্ণ রাজাকে তখন রাজকুমার জানায় , সে এ রোগের ওষুধ আনবেই । রাজা বৃদ্ধ হয়েছেন । সম্মতি প্রকাশ করাতে সেই পূর্ণিমার রাতেই অশ্ব নিয়ে রাজকুমার বেড়িয়ে পরে ।
বলল তো বটে কিন্তু এ হিংসা-অশান্তির ওষুধ কী ! তা সে নিজেও জানে না । আগে কেউই বার করতে পারে নি । অনেকটা পথ অশ্ব ছুটিয়ে শ্রান্ত হয়ে পরে আদরের রাজপুত্র । শেষে ক্লান্ত রাজপুত্র অশ্ব থেকে নেমে এক গাছের কোটরে সে রাতটা কাটায় ।
পূব আকাশ লাল হতেই রাজপুত্রের ঘুম ভাঙে কিছু কিচির মিচির শব্দে । ভাল করে কান পাততেই শোনে লালমন ও নীলমন দুই পাখী নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে –
“ টি টা টই টুরুল –
রাজা বড়ই সরল ।
নরম হাতে মিষ্টি ভাষা –
সংসারে এ নিয়ম ভাবাই দুরাশা !”
এ কথা শুনে রাজপুত্র কোটর থেকে বেড়িয়ে পাখীদের বলে –
“ লালমন নীলমন –
কথা বল এ কেমন !
দিলে ভালোবাসা –
রাজ্যে শান্তি এটাই আশা ।”
এ কথা শুনে পাখীরা হেসে রাজপুত্রের কাঁধের উপর উড়ে এসে এক পরামর্শ দেয় । নানারকম শলা-আলোচনা শুনে রাজপুত্রের মুখ খুশীতে ভরে ওঠে । হয়ত ওষুধ পেয়েছে , দেরী করা উচিৎ হবে না । তাই সে প্রবল বেগে অশ্ব ছুটিয়ে টগ বগিয়ে তৎক্ষণাৎ রওনা দেয় রাজপ্রাসাদের দিকে । আর ফিরেই সে রাজাকে সব ঘটনা বিস্তারিত বলে । রাজাও বুঝতে পারেন সব । চমৎকার ওষুধ । তিনি ঘোষকদের বলে দেন তার বার্তা রাজ্যবাসীকে জানিয়ে দিতে ।
পরদিন সকালেই ঘোষকের দল রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করে –
“ শোন শোন সবে শুন দিয়া মন –
যে মাতা-পিতা হত্যা করিবে সন্তান আপন ,
মহারাজা দিবে তাকে সহস্র কোটি ধন...।”

ঘোষণা শুনে প্রজারা ভাবল রাজা উন্মাদ হয়ে গেছেন ! তখনই তারা একত্রিত ভাবে হাতে হাত মিলিয়ে রাজসভায় আসে । এসেই শুরু করে দেয় প্রবল প্রতিবাদ । এমন সিদ্ধান্ত মহারাজের অন্যায় ! নিজ সন্তান হত্যা ! রাজা তাদের ক্ষান্ত করে বলেন –
“ ঘোষকের ঘোষণায় কেন এত বিচলিত ?
আপন সন্তানের প্রানের তরে মন বিগলিত !
পূর্বে , শুধুই সকলেই অপরকে হানিত –
আজ দেখ , সব ভুলে সবে হয়েছ মিলিত ।”
রাজার এহেন কথায় রাজ্যের সকলে বুঝতে পারে সংসারে দুঃখ থাকতেই পারে । কিন্তু তার অর্থ হিংসা নয় ! জীবন অতি মূল্যবান । আর সম্মিলিত প্রয়াসেই সব সমাধান হয় । এত বছর পরে রানীরাও বোঝেন তাদের ভুল । লজ্জায় ছোটরানী মাটিতে মিশে যাবার যোগার । কিন্তু ছোটর এই ভুলকে বড়রানী , রাজা ক্ষমা করে দেন ।
ছোটরানী বুকে জড়িয়ে ধরেন রাজকুমারকে পুনরায় । ধীরে ধীরে ফিরে আসে শান্তিধারা গোটা রাজ্যে ।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৪/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast