পাতালগড়ে রাত-বিরতে
১
পাতালগড় মনে নেই! কি সব্বনেসে কথা!!
হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়াবাবু কথাটা বলেই লোমহীন ভ্রূ জোড়া কপালে তুললেন। হাসার কোন কারণ নেই, ছোট থেকেই মায়ের হাতের ছ্যাঁচড়া খেতে এতটাই ভালবাসতেন যে একবার গোটা থালাটাই চেটে হাফিস করে দিচ্ছেলেন; যাইহোক, এ হেন ছ্যাঁচড়াবাবু বলেই ফেললেন সেই রাতের কথা। ও হো, একটা কথা ছ্যাঁচড়া বাবুকে আমরা ছ্যাঁচড়া বলেই জানবো।
ট্রেনটা ছাড়ার পর নিজের বার্থে দিব্বি ঘুম লাগিয়েছিলেন,দুম করে ঝাঁকুনিতে গাড়িটা থামলে চোখ পিটপিট করে দেখলেন, বাইরেটা পুরোটাই অন্ধকার, এদিক ও দিক দিয়ে চেয়ে দেখলেন প্ল্যাটফর্ম তো দূর অস্ত জন মনিষ্যির নাম গন্ধ নেই – শুধু জোনাকিরা তাদের ল্যাজে টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে ছটাছুটি করছে। কিছুক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে থাকার পর সম্বিৎ ফিরে পান হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়া।
“ও মশাই, বলি হলটা কি!”, মিনমিন স্বরে দু-এক জনকে জিজ্ঞাসা করতেই লাফ দিয়ে উঠলেন।
“ট্রেন আর যাবে না” – ফ্যাসফ্যাসে গলায় মাফলার জড়ানো লোকটি পড়ি কি মড়ি অবস্থায় যেতে যেতে টুক করে বলে হাঁটা লাগালেন।
প্রবল ঝড়ে গাছের ডাল পরে তার ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য এ আপদ এসে উপস্থিত। তখনকার দিনে অধিকাংশ সিঙ্গেল লাইন ছিল, তাই আর কোন উপায় নেই। ছ্যাঁচড়ার জিনিস বলতে একটা কাপড়ের পুটুলি, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কিছু খাবার দিয়েছিলেন, আর জিনিস বলতে একজোড়া কাপড়। লাফ দিয়ে নেমেই ছ্যাঁচড়া ভাবছিলেন যাই কোথা! অচেনা জায়গা, কাছাকাছি কোন ষ্টেশনও নেই। অতএব, পাগলের মত হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
“বলি হে খোকা, যাচ্চ কতা !” হঠাৎ কথাটা শুনে ছ্যাঁচড়া ভিড়মি খাওয়ার জোগাড়। পাশ ফিরে দ্যাখে, একমুখ পাকা দাড়িতে কালো একটা দাঁত বার করে ফিচেল হাসিতে মুখ নাড়িয়ে এক বুড়ো কথাটা বলল। বয়স আর কত হবে! গোটা একশো , তা আর এমন কি? অনুমান করে ছ্যাঁচড়া কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “ কি করে বলি খুঁড়ো। পথ ঘাটও চিনি না, দেখি যদি আজ রাত টা...”।
“শোনো খোকা, দেরী করো নি, আমার হাতটা ধর। আর বাপু তুমি জোয়ান ছ্যালে, পা টা একটু বেশী চালাও, নাত-বিরেত কখন যে কি হয়”, বলেই এক হ্যাঁচকায় ছ্যাঁচড়ার হাতটা ধরে টান দিল বুড়ো।
“ কোথায় যাবো খুঁড়ো?” কোনমতে ছ্যাঁচড়া কথাটা বলতেই, খনখনে স্বরে বুড়ো বলে ওঠে, “ পা চালাও তো, এ হল পাতালগড়, বাগ-শ্যাল আচেই,আর যেটা আচে...হরি হরি, চলো পা চালাও”।
কে বলবে বুড়োর বয়স একশো, শিনশিন করছে ছ্যাঁচড়ার হাত, মনে হচ্ছে হাঁটার বদলে স্কুলে চারশো মিটারের দৌড় । অন্ধকারটা আরও যেন জাঁকিয়ে থাবা গেড়ে বসেছে। জোনাকির সাথে তাল মিলিয়েছে অজানা পাখির খ্যাক-খ্যাকে ডাক। হাওয়াটায় ঠাণ্ডা জোলো ভাব। বুড়ো যেন উড়তে উড়তে বলে, “ পাতালগড়ে, আরও আচে...ডালে ডালে নেত্ত”।
কতক্ষন হেঁটেছে খেয়াল নেই। প্রায় আধমরা অবস্থায় গদাম করে ধাক্কা খেতেই ছ্যাঁচড়া বুঝল, একটা বাড়ির দরজা। ভীজে শ্যাওলার গন্ধ। এতক্ষণ পর বুড়ো সেই ফিচেল হাসি হেসে বলে, “ যাও বাছা, উদিক পানে যে ঘড়টা আচে, উদিকে রেতটা কাটাও। আর শোনো, রেত বিরেতে কতাও বেড়িও নি”।
পাশেই একটা কুঁজো ছিল, ছ্যাঁচড়া দৌড়লো সেদিকে,গলা তার শুকিয়ে কাঠ। হাতিপাতি করে মুখ রাখতেই বুঝল, বৃথা চেষ্টা। অদূড়েই খুঁড়ো যেন হেসে আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না, নড়বড়ে একটা কেলো দাঁতে সে কি হাসি, মাটিতে গড়াগড়ি খায় আর কি। পেট টিপে কোনমতে বলে, “জল পাবে নি বাপ, রোস আমি এনে দি”, বলেই বুড়ো যেন ফুরুত করে উড়ে গেল। ছ্যাঁচড়ার অবস্থা ঠিক যেন রোব্বারের ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়ার মত...শীল নোড়া দিয়ে দুম দুম করে মাথায় কেউ যেন হাতুড়ি মারছে।
“ন্যাও, জলটুকু দিয়ে পুটুলিতে নাখা কাবার চাড্ডি খে ফেলো তো হাপুস করে”- বুড়োর কথায় আমাদের ছ্যাঁচড়াবাবু চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে, বাব্বা খুঁড়ো যে অন্তর্যামী। বাক্যব্যয় না করে পোটলার চিঁড়ে বার করে চিবোতে লাগলো, ভাগ্যিস মা জোড় করেই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “দ্যাখ ছ্যাঁচড়, কথা না বলে যা বলছি শোন”।
ট্যাঁ-ট্যাঁ করে ফড়ফড়িয়ে রাত পাখিরা যেন খুঁড়োর ভুতুরে বাড়িকে পাহারা দিচ্ছে। ঘুম নেই চোখে। নানা কথা মাথার মধ্যে ডিগবাজি খাচ্ছে, আ হা, এতক্ষনে কলাপুরে কখন পৌঁছিয়ে যেতাম। কদলীমাসীর হাতের রান্না দিব্ব্যি...এত্ত বড় মাছের গাদা, ইয়া মাছের কাঁটা, মোটা চালের ভাত...উহ! ভাবা যায়! আর শেষে সরেস একটা কলা আর ধলো গাইয়ের দুধ। কাঁটা চিবানোর কথা ভাবতেই ছ্যাঁচড়ার চোখ বুজে এলো।
আকাশে বাঁকা চাঁদ যেন টুকরো টুকরো মেঘের সাথে রাত বিরেতে খেলা করছে, শীতের হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়া পাল্লাহীন জানলা দিয়ে ছ্যাঁচড়ার গায়ে আছড়ে পরছে। মাঝে মাঝে পাকা বাতাবী লেবুর গন্ধ বাতাসে লাফালাফি করছে, কখনোবা থাকতে না পেরে ধুপ ধাপ করে মাটিতে আছাড় খাচ্ছে।
২
হেতমপুরে আজ জমজমাট আড্ডা। ভাবা যায় কত্তদিন পর কুলকুল ঠান্ডা হাওয়া, সাথে থকথকে কুয়াশা... চাঁদ মামা এখন মেঘের কম্বল মুড়ি দিয়ে নাক ডাকাচ্ছে। “জানিস চিংড়ী, এর বয়স কত?”- হাঁই তুলে মুখে তুড়ি মেরে বলল।
-“বাব্বা, তুমি এরই মধ্যে হাঁই তুলছো গেছো মেসো ! কত্ত আর হবে এই দুশো বছর”।
-“ছ্যা ছ্যা, এই জন্নি তোর উন্নতি হল নি, অরে আমার ঠাকুরদার বাবা শ্রী শ্রী গলদাচরণ, তার দাদু এই গাছে গাছে দোল খেতেন রে হতচ্ছারা”, কথাটা বলে একটা পা ডাল থেকে ছাড়িয়ে পেন্নাম ঠুকল।
হাল্কা হাওয়ায় প্রাচীন বটগাছটার ইয়া বড় বড় জট পাকানো দাড়িগুলো দোলা খাচ্ছে, তার পেটের মাঝে হাঁ করা জম্পেশ একটা কোটর। এখানেই এদের ঘড় সংসার। এই তো গেল বার চিংড়ী এখানেই হয়েছে, এরই মধ্যে হালকা সরু সরু গোঁফ গজিয়েছে। কত কথা মনে পরে যাচ্ছে গেছো মেসোর। এই জোয়ান ছেলেকে তিনিই তো শেখালেন কি ভাবে দাঁতে শাণ দিতে হয়, গাছের ডালে পা দিয়ে ঝুলে কি ভাবে মাথা নীচু করে গপ্প করতে হয়।
“বলি হ্যা লা গেছো, হাড়ী কি আজ উননে চড়াবো নি, কটা বাজলো সে খেয়াল আচে! তোদের বয়েসে আমি কি খাটুনি না খেটেছি, আর তোরা !!”- টিং টিং-এ বুড়ি ঠাকমার তারস্বরে গেছো মেসোর চিন্তার তাল গেল কেটে।
হেতমপুর থেকে পাতালগড়ের দুরত্ব বেশি নয়, ডানা একটু নাড়াতে পারলেই বড় জোর পাঁচ মিনিটের রাস্তা। খবরটা অনেক আগেই পেয়েছে। চারিদিকে স্পাই ছড়ানো। খিদেটাও পেয়েছে জবর। গেছো মেসো পিঁ-পিঁ করে চিংড়ী,হুলো,নদু সব ইয়াং ছেলেদের হাঁক পারলো।
“ওরে চল বাবা, ডানা চালা, অনেকদিন পর বুঝলি কিনা তাজা টকটকে...” মুখে টক করে আওয়াজ করে মুড়ো ঝাঁটার মত গোঁফে তা দিয়ে মাতব্বরির স্বরে বলে ওঠে।
হালকা বাতাসে ভর করে ফিনফিনে ডানা চালিয়ে চলল সব পাতালগড়ে । কালো আকাশ আরও কালো করে সোঁ – সোঁ আওয়াজে নিশুতি রাত আরও বেশী যেন অন্ধকারে ডুবে গেল।
ছ্যাঁচড়ার তখন কলির সন্ধ্যে, সারাদিন ধকলের পর ঘুমটা আদর করে চোখের উপর বিছানা পেতেছে। কলা, দুধ, মাছের মুড়ো – লাফালাফি করছে আর ছ্যাঁচড়া তেলো হাঁড়ির মধ্যে মুখ ডুকিয়ে গোগ্রাসে খেয়েই যাচ্ছে। কপাটহীন জানলায় উঁকি মারে চিংড়ী মস্তান। “ওরে বাবা, এ যে টাটকা”, ভাবতেই চিংড়ীর জীভ দিয়ে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পরে।
গায়ে জল পরতেই নদু দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে। গত হপ্তা থেকে নদুর যে কি হয়েছে কে জানে! টিং টিং ঠাকমা কত বদ্যি দেখালেন। হদুল কবরেজ নাড়ী দেখে মুখ নাক কাতলা মাছের মত করে বলেছিল, “ জম্মে এমন ছটুনোকে নুগী দেখি নি বাপু, এ নিচ্চয় বোস্টম নক্ত খেয়েচে”।
হয়েছিলটা কি, গত হপ্তায় বৈষ্ণব পাড়ায় খোঁড়া বোস্টম এমন কীর্তন গাইল, আর তার সাথে সে কি ধুতী বাগিয়ে নাচ জুড়ল যে,নদু থাকতে না পেরে টপাস করে উড়ে গিয়ে খোঁড়া বোস্টম – এর ঘাড়ে চকাম করে তার সরু পানা মুখ লাগাল। বেচারা খোঁড়া বোস্টম সবে আবার নেত্য করার জন্য পা তুলেছে, মুখ দিয়ে ‘হ হ –আম’, করে ধাঁই করে বসে পড়ে। হাত বুলিয়ে দেখে পুচকে এক বিন্দু রক্ত! তা দেখেই সটান খোল কত্তাল ছেড়ে সে কি দৌড়। এসব দেখে নদু মূর্ছা যায় আর কি। সেই থেকেই বংশের মুখে কালি মাখিয়ে নদু ফল-ফুলের জুশ ফুটিয়ে খায় ।
পা টিপে টিপে ঘড়ে ঢোকে,ভাগ্যিস আলো নেই। গেছো মেসোর চোখের ইশারায় ওরা ফাটা দেওয়ালের ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকে, আসলে এখনও ওদের ট্রানিং পিরিয়ড যাই নি তো- তাই গেছো মেসো প্রানপণ খাটছে। মেসো টুপ করে উড়ে ছ্যাঁচড়ার তিনকুলের ভাঙা খাটের পাশে এসে বসে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে
বলে, “ ও ছ্যাঁচড়াবাবু,শুনতি পাচ্চেন, ছ্যাঁচড়া মশাই...”। জেগে নেই, মেজাজ খুশ। দিব্বি গেছো মেসো পা দোলাচ্ছিল আনন্দে;ঘোড়ৎ করে ছ্যাঁচড়ার নাকের হুঙ্কারে আর নাকের ভিতরে জমাট হাওয়ায় ছিটকে পড়লো দশ হাত দূরে। মেসোর এ হেন দশা দেখে নদু আগেই পগাড় পার, চিংড়ী পালাই পালাই করছে, হুলো নাম সার্থক করে হুমদো মুখে হাল্কা স্বরে গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে ডানা মেলে পালানোর চেষ্টায় মাথা ঠুকচ্ছে। কিন্তু মেসো ছাড়ার পাত্র নন। যতই হোক অভিজ্ঞ, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। সুতরাং, আবার এগোতে লাগলো; চিংড়ীকে হাতের কাছে পেয়ে অল্প হতবুদ্ধি হয়ে বলল, “ দেখ, এ সব হয়, তুই ব্যাটা নদুর কান ধরে টেনে নিয়ে আয়”।
মেসোর আজ্ঞা শুনে পটাস করে ডানা মেলে বাইরে বেরিয়ে চিংড়ী দেখে নদু পাশের জাম গাছে পাকা জাম চোখ বুজে খাচ্ছে। দেখেই চিংড়ী দাদাগিরী করে ওর গালে বুম করে এক থাপ্পর। মুখের জাম মুখে ধরেই নদু চলল। এরই মধ্যে গেছো মেসো মুখ মুছতে মুছতে বাইরে বেড়িয়ে কেলে কুস্টি চায়ের কেটলির মত মুখ করে বেশ রাগী গলাই কাই কাই করে বলে, “ লবাব পুত্তুর, চল একন ঘড় পানে, আমার হইয়ে গেচে”।
৩
কদলীমাসি পা ছড়িয়ে সারা পাড়া জানিয়ে সকাল থেকেই চিল চীৎকার করে কান্না জুড়েছেন। বেলা পড়ে এলো, কান্না এখন থেমে থেমে ফিচ ফিচ করে সুর ধরেছে। আর কতক্ষণই বা পারেন ! এইবার ভাদ্রমাসে চার কুড়ি হল, তাও আবার আন্দাজ। বাগানের ফল সব্জি এবার কেমন হবে তা নাকি মাসির হাতেই লেখা, একথা শুনেই বুড়ি সাদা মাথার তালুতে বেশ করে ঠান্ডা তেল থাবড়ে হাঁটা দিয়েছিলেন পাতালগড়ে। শুনেছিলেন কারো মুখে পাতালগড়ের ঝাঁকড়া বটগাছের নীচে খুব ভোরে স্বর্গ-মত্ত-পাতাল ফুঁ দিয়েই দেখতে পারেন বাবা শ্রী শ্রী ২০১৫ ফোক্লেশ্বর মহারাজ।
“বাবা গো, কয়ে দাও বাবা কেমন হবে আমার নাউ, বেগুন? হতচ্ছারা চামচিকে আমার বাগানের সব নষ্ট করলো গেল বার, আর ওই নচ্চার জগার কেলো রামপাটাটা সেদিন আমার সাধের বাগানে কি নেত্যই কল্ল...”, বলে কদলীমাসি নিজের কোমর ধরে হাপুস নয়নে ডাক ছেড়ে ফোক্লেশ্বর মহারাজের পায়ের উপর মাথা ঠুকে মাটি ভিজিয়ে তুললেন।
“ওটো খুকি, অমন করে ভোরে শ্যালের মত হাঁক ছাড়লে চলবে নি বাচা; তা কোমরে খ্যালে তো...” ধমক দিয়েই দাড়ির হাঁক দিয়ে খুক খুক করে হাসলেন বাবাজী।
হঠাৎ ধমক খেয়ে মাসি করুণ গলায় মিউ মিউ করে হাত জোড় করে বললেন, “ তুমি তিকাল দেখতে পাও বাবা, জানই তো জগার বুড়ো রামপাটাটার শিং-এ কি জোর, যেই না হ্যাট হ্যাট কইরেচি। ওমনি মারল দু গুঁতো”।
বাবা শ্রী শ্রী ২০১৫ ফোক্লেশ্বর মহারাজ, তারপর মাসির কানে কি যে বললেন, সেই থেকে কান্না শুরু। জিজ্ঞেস করলেই নাক দিয়ে ভোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আর বলে, “বাবা কয়েচেন, হবে বাগানে সব হবে, আর তিনি কি যেন মন্তর তন্তর কলেন...
যাবে চইলে চামচিকা
আইসবে ফিরে কলা কপি-
হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা
কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি”।
পাড়ার বিজ্ঞ বুড়ো রোদে পোড়া টাক চুলকাতে চুলকাতে বিড় বিড় করে বলল, “তা খুঁড়ি এ যে গভীর সমিস্যে ! নিদান কিচু দ্যালেন নাকি ?”
“দ্যাছে রে। ছাগলের নাদি লাল কাপড়ে বেইধে, বাগানের কোণে ঝুলিয়ে রাখতি হবে” চোখের জল মুছে কদলীমাসি ঢোক গিলে বললেন। খানিক দম নিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে , কপালে হাত ঠেকিয়ে, “বাবার সে কি মন্তর, ... হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা...কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি !”
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মাসি সাদা চুলের নুড়ি ঝাঁকিয়ে কাক তাড়ানো গলায় বলে ওঠে, “ আমার ছ্যাঁচড়া কই !!”
-“ ও খুঁড়ি তোমার কি ভেম্মতি হয়েচে নাকি! তুমি কাঠ বেধবা, দুপ্পুর বেলা কাঁটা দিয়ে ছ্যাঁচড়া খাবে!”- মুখের কথা মুখেই থাকল, তার আগেই মাসি কপাত করে কথাটাকে ক্যাচ ধরে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, “ হতচ্ছাড়া, পচা বাঁশের উইপোকা... অ্যাঁ, আমার বোনপো ছ্যাঁচড়া চরণের কতা কইচি। গত নাতের বেলাই তো আসার কতা! ও মা গো আমি যাই কণে! সক্কাল গড়িয়ে বেলা হল একনো তো এলো নি...”।
৪
গত রাতে টিং টিং ঠাকমা আর কি করে। সাত কুলে তার কেও নেই। এই গেছো, চিংড়ী, হুলো, নদু এদের নিয়েই তার সংসার। আমপুরের ঘনার সাথে বহুকাল আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘনা রাতের বেলা ভম্বল মাকড়সার হাতে মারা পরল। আর তারপর থেকেই পাতালগড়ের বটগাছেই স্থান। টিং টিং ঠাকমা দেখতে এই বয়সেও বেশ মিষ্টি, আর কথার বাক্যি যেন পাতাল থেকে আসা খাসা পাকা আমের রস। ডানা দুটি মেলে ধরে যখন পোকায় ধরা সরু একটা দাঁত বার করে হাঁক পাড়ে তখন আ হা, মিষ্টি খোল পচা গন্ধে চারিদিক ম ম করে। কতবার গেছো মেসো বলেছে, “ দাও তোমার দাঁত দুটো বাদিয়ে দি”।
যাক সে কথা, গত রাতে বটগাছে ফিরে নদুর মত সবাইকে বট ফল চিবিতে হয়েছে। গেছো মামার জ্বর জ্বর ভাব, ছুঁচলো নাক এখন টেনিস বল। টিং টিং ঠাকমা নাকে বিচুটি পাতার লেপ লাগিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “ খবরদার গেছো নাক চুলকালেও হাত দিবিনে,ওটাই ব্যাতা-ফোলা কমানোর আসল অসুদ... মনিস্যিরা জানে না, কতবার তোদের ঘনা দাদুকে নুকিয়ে নুকিয়ে নাগিয়ে দেচি”।
ছ্যাঁচড়ার ঘুম যদিও খুবই ভাল। নাকের ভিতর দিয়ে যে কত সুন্দর সুর-তাল-লয় বের হয় তা যারা নাক ডাকে না তারা আর বুঝল কই ! এতাই ছ্যাঁচড়ার দুঃখ। তবে ঘুমিয়ে পরলে হুঁশ থাকে না। কাল রাতে হাল্কা চাঁদের আলোয় দ্যেখে, বিটকেলে একটা বাদুর আবার নাকের ডগায় বসে গান শুনছিল, উদ্ভট চামচিকেটার সাহস কম না! দাঁত বার করে মুখ ভ্যাংচাচ্ছিল। কাঁহাতক সহ্য হয়, ছ্যাঁচড়া থাকতে না পেরে আধা অন্ধকা্রে দিল তার পুটুলিটাকে বাঁই বাঁই করে ঘুড়িয়ে।
তারপর কখন যে দিনের আলো ফুটল, কখন যে কুয়াশা গেল কেটে তা জানে না। তবে ওই দাঁত আর উৎকট ভ্যাপসা ডালের গন্ধে ভরা বাদুরটার কথা মনে যেন গেঁথে বসেছে। আর যতই চিন্তা করছে ছ্যাঁচড়া ততই তার পা দ্রুত চলছে। ফোকলা বুড়োর কথা মাথাতেই নেই তার। আজ সকালে যে করেই হোক কদলী মাসির বাড়ি যেতেই হবে। সকাল বেলা দিব্যি চারিদিক দেখা যাচ্ছে। গাছে গাছে ভরা। পচা পচা ছোট ছোট পুকুর। শ্যাওলা ধরা জোলো রাস্তা। না না পাখির ঘ্যাক ঘ্যাক , চিঁ চিঁ নানা কথাবার্তা।
বেশ খানিক হাঁটার পর পাকা রাস্তা। লোকদের জিজ্ঞাসা করে ছ্যাঁচড়া যখন কদলীমাসির বাড়ি পৌঁছালো তখন বেলা কাবার প্রায়। কদলীমাসি তখন দেশি মুর্গীর ডিম দিয়ে চাড্ডি ভাত খেয়ে দিবা নিদ্রা শেষ করে সন্ধ্যের পিদিম জ্বালানোর জন্য তুলসী তলায় গলায় কাপড় জড়িয়ে পেন্নাম ঠুকছেন। ছ্যাঁচড়াকে দেখে তিনি কি ভাবলেন জানি না, শুধু মুখ দিয়ে, “ আঁক আঁক আর ছ্যাচ” শব্দটুকু বের করতে পারলেন অতি কস্টে।
শেষে চিনতে পেরে হাঁক পেড়ে যেই কাঁদতে উঠতে যাচ্ছিলেন তখন পাশের নেড়ি কুকুরটাও সুর মেলানোর জন্য সমস্বরে ডেকে উঠতেই মাসি থম মেরে বলল, “ আয় বাচা ভিতর পানে আয় দিকি, ওই নেড়িটা যখন তখন কামড়ায়”।
রাতে খেতে বসে কদলী মাসি তার দুখি দুখি মুখে দুখু দুখু গলায় সব কথা ছ্যাঁচড়াকে বলল, “ জানিস ছ্যাঁচোড়, ধন্যি বাবা-ইয়া চোক, যেন ভাঁটার মত ঘুরতেচে আর নাকে আই এত্ত বড় ঢিবলি, কি যেন অসুদ পত্তর নাগিয়েচে”।
খেতে খেতে ছ্যাঁচড়া আঙুল চাটতে চাটতে বলল, “ঢিবলি !! কেন গো মাসি?”
হাঁই তুলে মাসি বলে, “ তা কি করে কই বাচা, দ্যাবতাদের কতা কি করে কই, জানিস নোকে বলে তেনার নাকি একশো বচর বয়স! হ্যাঁ রে ছ্যাঁচড়া, তোর ওই বুড়োর কি হল?”
কদলী মাসি খেয়াল করে নি ছ্যাঁচড়া খাওয়া বন্ধ করে কথাগুলো গিলছে আর ঢোক ঢোক করে জল খাচ্ছে।
রাতে শুয়েই ছ্যাঁচড়া ঠিক করলো কাল সকালের আলো ফুটতেই সট্টান দেবে, কি ভূতুড়ে জায়গা রে বাবা! মাথার মধ্যে নানা খেয়াল আসছে, একশো বছর বয়স, তিকাল দর্শী, ঢিবলি, চামচিকের দাঁত বার করা হাঁসি... না না কাল পালাতেই হবে।
গরু আর মোরগের মিলিত সঙ্গীতে ঘুম ভাঙতেই কদলী মাসি হাসি হাসি মুখ করে এক গেলাস দুধ নিয়ে হাজির।
“ মাসি গো আমি এক্ষুনি বেরবো”, থাকতে না পেরে বলে ওঠে ছ্যাঁচড়া।
“যাবি, একন! তা যা , রেতে আবার মুশকিল, বেলা বেলা যা”।
যাওয়ার সময়ে মাসির করুণ মুখেও হাসি। নধর নধর গোটা দুই লাউ, কিছু ফল-পাকুড় দিয়ে দিলেন। আর বললেন, “ দ্যাক, বিপদে পললে, ‘যাবে চইলে চামচিকা
আইসবে ফিরে কলা কপি-হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা,কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি’...এই মন্তর টা জপবি”।
বলা বাহুল্য, মাসির বাগানে আর বাদুরের উৎপাত হয় নি এর পর। কেষ্ট-শিব --,হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়া নিশ্চিন্তে বাড়ি পৌঁছলো। শোনা যায় যে,পাতালপুড়ে সব বাদুর এখন বৈষ্ণব হয়ে গিয়ে শুধু শুধু হরি হরি করে।।
……………………………………xxxxxxxxxxx…………………………………..
পাতালগড় মনে নেই! কি সব্বনেসে কথা!!
হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়াবাবু কথাটা বলেই লোমহীন ভ্রূ জোড়া কপালে তুললেন। হাসার কোন কারণ নেই, ছোট থেকেই মায়ের হাতের ছ্যাঁচড়া খেতে এতটাই ভালবাসতেন যে একবার গোটা থালাটাই চেটে হাফিস করে দিচ্ছেলেন; যাইহোক, এ হেন ছ্যাঁচড়াবাবু বলেই ফেললেন সেই রাতের কথা। ও হো, একটা কথা ছ্যাঁচড়া বাবুকে আমরা ছ্যাঁচড়া বলেই জানবো।
ট্রেনটা ছাড়ার পর নিজের বার্থে দিব্বি ঘুম লাগিয়েছিলেন,দুম করে ঝাঁকুনিতে গাড়িটা থামলে চোখ পিটপিট করে দেখলেন, বাইরেটা পুরোটাই অন্ধকার, এদিক ও দিক দিয়ে চেয়ে দেখলেন প্ল্যাটফর্ম তো দূর অস্ত জন মনিষ্যির নাম গন্ধ নেই – শুধু জোনাকিরা তাদের ল্যাজে টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে ছটাছুটি করছে। কিছুক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে থাকার পর সম্বিৎ ফিরে পান হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়া।
“ও মশাই, বলি হলটা কি!”, মিনমিন স্বরে দু-এক জনকে জিজ্ঞাসা করতেই লাফ দিয়ে উঠলেন।
“ট্রেন আর যাবে না” – ফ্যাসফ্যাসে গলায় মাফলার জড়ানো লোকটি পড়ি কি মড়ি অবস্থায় যেতে যেতে টুক করে বলে হাঁটা লাগালেন।
প্রবল ঝড়ে গাছের ডাল পরে তার ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য এ আপদ এসে উপস্থিত। তখনকার দিনে অধিকাংশ সিঙ্গেল লাইন ছিল, তাই আর কোন উপায় নেই। ছ্যাঁচড়ার জিনিস বলতে একটা কাপড়ের পুটুলি, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কিছু খাবার দিয়েছিলেন, আর জিনিস বলতে একজোড়া কাপড়। লাফ দিয়ে নেমেই ছ্যাঁচড়া ভাবছিলেন যাই কোথা! অচেনা জায়গা, কাছাকাছি কোন ষ্টেশনও নেই। অতএব, পাগলের মত হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।
“বলি হে খোকা, যাচ্চ কতা !” হঠাৎ কথাটা শুনে ছ্যাঁচড়া ভিড়মি খাওয়ার জোগাড়। পাশ ফিরে দ্যাখে, একমুখ পাকা দাড়িতে কালো একটা দাঁত বার করে ফিচেল হাসিতে মুখ নাড়িয়ে এক বুড়ো কথাটা বলল। বয়স আর কত হবে! গোটা একশো , তা আর এমন কি? অনুমান করে ছ্যাঁচড়া কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “ কি করে বলি খুঁড়ো। পথ ঘাটও চিনি না, দেখি যদি আজ রাত টা...”।
“শোনো খোকা, দেরী করো নি, আমার হাতটা ধর। আর বাপু তুমি জোয়ান ছ্যালে, পা টা একটু বেশী চালাও, নাত-বিরেত কখন যে কি হয়”, বলেই এক হ্যাঁচকায় ছ্যাঁচড়ার হাতটা ধরে টান দিল বুড়ো।
“ কোথায় যাবো খুঁড়ো?” কোনমতে ছ্যাঁচড়া কথাটা বলতেই, খনখনে স্বরে বুড়ো বলে ওঠে, “ পা চালাও তো, এ হল পাতালগড়, বাগ-শ্যাল আচেই,আর যেটা আচে...হরি হরি, চলো পা চালাও”।
কে বলবে বুড়োর বয়স একশো, শিনশিন করছে ছ্যাঁচড়ার হাত, মনে হচ্ছে হাঁটার বদলে স্কুলে চারশো মিটারের দৌড় । অন্ধকারটা আরও যেন জাঁকিয়ে থাবা গেড়ে বসেছে। জোনাকির সাথে তাল মিলিয়েছে অজানা পাখির খ্যাক-খ্যাকে ডাক। হাওয়াটায় ঠাণ্ডা জোলো ভাব। বুড়ো যেন উড়তে উড়তে বলে, “ পাতালগড়ে, আরও আচে...ডালে ডালে নেত্ত”।
কতক্ষন হেঁটেছে খেয়াল নেই। প্রায় আধমরা অবস্থায় গদাম করে ধাক্কা খেতেই ছ্যাঁচড়া বুঝল, একটা বাড়ির দরজা। ভীজে শ্যাওলার গন্ধ। এতক্ষণ পর বুড়ো সেই ফিচেল হাসি হেসে বলে, “ যাও বাছা, উদিক পানে যে ঘড়টা আচে, উদিকে রেতটা কাটাও। আর শোনো, রেত বিরেতে কতাও বেড়িও নি”।
পাশেই একটা কুঁজো ছিল, ছ্যাঁচড়া দৌড়লো সেদিকে,গলা তার শুকিয়ে কাঠ। হাতিপাতি করে মুখ রাখতেই বুঝল, বৃথা চেষ্টা। অদূড়েই খুঁড়ো যেন হেসে আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না, নড়বড়ে একটা কেলো দাঁতে সে কি হাসি, মাটিতে গড়াগড়ি খায় আর কি। পেট টিপে কোনমতে বলে, “জল পাবে নি বাপ, রোস আমি এনে দি”, বলেই বুড়ো যেন ফুরুত করে উড়ে গেল। ছ্যাঁচড়ার অবস্থা ঠিক যেন রোব্বারের ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে ছ্যাঁচড়ার মত...শীল নোড়া দিয়ে দুম দুম করে মাথায় কেউ যেন হাতুড়ি মারছে।
“ন্যাও, জলটুকু দিয়ে পুটুলিতে নাখা কাবার চাড্ডি খে ফেলো তো হাপুস করে”- বুড়োর কথায় আমাদের ছ্যাঁচড়াবাবু চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে, বাব্বা খুঁড়ো যে অন্তর্যামী। বাক্যব্যয় না করে পোটলার চিঁড়ে বার করে চিবোতে লাগলো, ভাগ্যিস মা জোড় করেই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “দ্যাখ ছ্যাঁচড়, কথা না বলে যা বলছি শোন”।
ট্যাঁ-ট্যাঁ করে ফড়ফড়িয়ে রাত পাখিরা যেন খুঁড়োর ভুতুরে বাড়িকে পাহারা দিচ্ছে। ঘুম নেই চোখে। নানা কথা মাথার মধ্যে ডিগবাজি খাচ্ছে, আ হা, এতক্ষনে কলাপুরে কখন পৌঁছিয়ে যেতাম। কদলীমাসীর হাতের রান্না দিব্ব্যি...এত্ত বড় মাছের গাদা, ইয়া মাছের কাঁটা, মোটা চালের ভাত...উহ! ভাবা যায়! আর শেষে সরেস একটা কলা আর ধলো গাইয়ের দুধ। কাঁটা চিবানোর কথা ভাবতেই ছ্যাঁচড়ার চোখ বুজে এলো।
আকাশে বাঁকা চাঁদ যেন টুকরো টুকরো মেঘের সাথে রাত বিরেতে খেলা করছে, শীতের হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়া পাল্লাহীন জানলা দিয়ে ছ্যাঁচড়ার গায়ে আছড়ে পরছে। মাঝে মাঝে পাকা বাতাবী লেবুর গন্ধ বাতাসে লাফালাফি করছে, কখনোবা থাকতে না পেরে ধুপ ধাপ করে মাটিতে আছাড় খাচ্ছে।
২
হেতমপুরে আজ জমজমাট আড্ডা। ভাবা যায় কত্তদিন পর কুলকুল ঠান্ডা হাওয়া, সাথে থকথকে কুয়াশা... চাঁদ মামা এখন মেঘের কম্বল মুড়ি দিয়ে নাক ডাকাচ্ছে। “জানিস চিংড়ী, এর বয়স কত?”- হাঁই তুলে মুখে তুড়ি মেরে বলল।
-“বাব্বা, তুমি এরই মধ্যে হাঁই তুলছো গেছো মেসো ! কত্ত আর হবে এই দুশো বছর”।
-“ছ্যা ছ্যা, এই জন্নি তোর উন্নতি হল নি, অরে আমার ঠাকুরদার বাবা শ্রী শ্রী গলদাচরণ, তার দাদু এই গাছে গাছে দোল খেতেন রে হতচ্ছারা”, কথাটা বলে একটা পা ডাল থেকে ছাড়িয়ে পেন্নাম ঠুকল।
হাল্কা হাওয়ায় প্রাচীন বটগাছটার ইয়া বড় বড় জট পাকানো দাড়িগুলো দোলা খাচ্ছে, তার পেটের মাঝে হাঁ করা জম্পেশ একটা কোটর। এখানেই এদের ঘড় সংসার। এই তো গেল বার চিংড়ী এখানেই হয়েছে, এরই মধ্যে হালকা সরু সরু গোঁফ গজিয়েছে। কত কথা মনে পরে যাচ্ছে গেছো মেসোর। এই জোয়ান ছেলেকে তিনিই তো শেখালেন কি ভাবে দাঁতে শাণ দিতে হয়, গাছের ডালে পা দিয়ে ঝুলে কি ভাবে মাথা নীচু করে গপ্প করতে হয়।
“বলি হ্যা লা গেছো, হাড়ী কি আজ উননে চড়াবো নি, কটা বাজলো সে খেয়াল আচে! তোদের বয়েসে আমি কি খাটুনি না খেটেছি, আর তোরা !!”- টিং টিং-এ বুড়ি ঠাকমার তারস্বরে গেছো মেসোর চিন্তার তাল গেল কেটে।
হেতমপুর থেকে পাতালগড়ের দুরত্ব বেশি নয়, ডানা একটু নাড়াতে পারলেই বড় জোর পাঁচ মিনিটের রাস্তা। খবরটা অনেক আগেই পেয়েছে। চারিদিকে স্পাই ছড়ানো। খিদেটাও পেয়েছে জবর। গেছো মেসো পিঁ-পিঁ করে চিংড়ী,হুলো,নদু সব ইয়াং ছেলেদের হাঁক পারলো।
“ওরে চল বাবা, ডানা চালা, অনেকদিন পর বুঝলি কিনা তাজা টকটকে...” মুখে টক করে আওয়াজ করে মুড়ো ঝাঁটার মত গোঁফে তা দিয়ে মাতব্বরির স্বরে বলে ওঠে।
হালকা বাতাসে ভর করে ফিনফিনে ডানা চালিয়ে চলল সব পাতালগড়ে । কালো আকাশ আরও কালো করে সোঁ – সোঁ আওয়াজে নিশুতি রাত আরও বেশী যেন অন্ধকারে ডুবে গেল।
ছ্যাঁচড়ার তখন কলির সন্ধ্যে, সারাদিন ধকলের পর ঘুমটা আদর করে চোখের উপর বিছানা পেতেছে। কলা, দুধ, মাছের মুড়ো – লাফালাফি করছে আর ছ্যাঁচড়া তেলো হাঁড়ির মধ্যে মুখ ডুকিয়ে গোগ্রাসে খেয়েই যাচ্ছে। কপাটহীন জানলায় উঁকি মারে চিংড়ী মস্তান। “ওরে বাবা, এ যে টাটকা”, ভাবতেই চিংড়ীর জীভ দিয়ে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পরে।
গায়ে জল পরতেই নদু দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে। গত হপ্তা থেকে নদুর যে কি হয়েছে কে জানে! টিং টিং ঠাকমা কত বদ্যি দেখালেন। হদুল কবরেজ নাড়ী দেখে মুখ নাক কাতলা মাছের মত করে বলেছিল, “ জম্মে এমন ছটুনোকে নুগী দেখি নি বাপু, এ নিচ্চয় বোস্টম নক্ত খেয়েচে”।
হয়েছিলটা কি, গত হপ্তায় বৈষ্ণব পাড়ায় খোঁড়া বোস্টম এমন কীর্তন গাইল, আর তার সাথে সে কি ধুতী বাগিয়ে নাচ জুড়ল যে,নদু থাকতে না পেরে টপাস করে উড়ে গিয়ে খোঁড়া বোস্টম – এর ঘাড়ে চকাম করে তার সরু পানা মুখ লাগাল। বেচারা খোঁড়া বোস্টম সবে আবার নেত্য করার জন্য পা তুলেছে, মুখ দিয়ে ‘হ হ –আম’, করে ধাঁই করে বসে পড়ে। হাত বুলিয়ে দেখে পুচকে এক বিন্দু রক্ত! তা দেখেই সটান খোল কত্তাল ছেড়ে সে কি দৌড়। এসব দেখে নদু মূর্ছা যায় আর কি। সেই থেকেই বংশের মুখে কালি মাখিয়ে নদু ফল-ফুলের জুশ ফুটিয়ে খায় ।
পা টিপে টিপে ঘড়ে ঢোকে,ভাগ্যিস আলো নেই। গেছো মেসোর চোখের ইশারায় ওরা ফাটা দেওয়ালের ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকে, আসলে এখনও ওদের ট্রানিং পিরিয়ড যাই নি তো- তাই গেছো মেসো প্রানপণ খাটছে। মেসো টুপ করে উড়ে ছ্যাঁচড়ার তিনকুলের ভাঙা খাটের পাশে এসে বসে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে
বলে, “ ও ছ্যাঁচড়াবাবু,শুনতি পাচ্চেন, ছ্যাঁচড়া মশাই...”। জেগে নেই, মেজাজ খুশ। দিব্বি গেছো মেসো পা দোলাচ্ছিল আনন্দে;ঘোড়ৎ করে ছ্যাঁচড়ার নাকের হুঙ্কারে আর নাকের ভিতরে জমাট হাওয়ায় ছিটকে পড়লো দশ হাত দূরে। মেসোর এ হেন দশা দেখে নদু আগেই পগাড় পার, চিংড়ী পালাই পালাই করছে, হুলো নাম সার্থক করে হুমদো মুখে হাল্কা স্বরে গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে ডানা মেলে পালানোর চেষ্টায় মাথা ঠুকচ্ছে। কিন্তু মেসো ছাড়ার পাত্র নন। যতই হোক অভিজ্ঞ, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। সুতরাং, আবার এগোতে লাগলো; চিংড়ীকে হাতের কাছে পেয়ে অল্প হতবুদ্ধি হয়ে বলল, “ দেখ, এ সব হয়, তুই ব্যাটা নদুর কান ধরে টেনে নিয়ে আয়”।
মেসোর আজ্ঞা শুনে পটাস করে ডানা মেলে বাইরে বেরিয়ে চিংড়ী দেখে নদু পাশের জাম গাছে পাকা জাম চোখ বুজে খাচ্ছে। দেখেই চিংড়ী দাদাগিরী করে ওর গালে বুম করে এক থাপ্পর। মুখের জাম মুখে ধরেই নদু চলল। এরই মধ্যে গেছো মেসো মুখ মুছতে মুছতে বাইরে বেড়িয়ে কেলে কুস্টি চায়ের কেটলির মত মুখ করে বেশ রাগী গলাই কাই কাই করে বলে, “ লবাব পুত্তুর, চল একন ঘড় পানে, আমার হইয়ে গেচে”।
৩
কদলীমাসি পা ছড়িয়ে সারা পাড়া জানিয়ে সকাল থেকেই চিল চীৎকার করে কান্না জুড়েছেন। বেলা পড়ে এলো, কান্না এখন থেমে থেমে ফিচ ফিচ করে সুর ধরেছে। আর কতক্ষণই বা পারেন ! এইবার ভাদ্রমাসে চার কুড়ি হল, তাও আবার আন্দাজ। বাগানের ফল সব্জি এবার কেমন হবে তা নাকি মাসির হাতেই লেখা, একথা শুনেই বুড়ি সাদা মাথার তালুতে বেশ করে ঠান্ডা তেল থাবড়ে হাঁটা দিয়েছিলেন পাতালগড়ে। শুনেছিলেন কারো মুখে পাতালগড়ের ঝাঁকড়া বটগাছের নীচে খুব ভোরে স্বর্গ-মত্ত-পাতাল ফুঁ দিয়েই দেখতে পারেন বাবা শ্রী শ্রী ২০১৫ ফোক্লেশ্বর মহারাজ।
“বাবা গো, কয়ে দাও বাবা কেমন হবে আমার নাউ, বেগুন? হতচ্ছারা চামচিকে আমার বাগানের সব নষ্ট করলো গেল বার, আর ওই নচ্চার জগার কেলো রামপাটাটা সেদিন আমার সাধের বাগানে কি নেত্যই কল্ল...”, বলে কদলীমাসি নিজের কোমর ধরে হাপুস নয়নে ডাক ছেড়ে ফোক্লেশ্বর মহারাজের পায়ের উপর মাথা ঠুকে মাটি ভিজিয়ে তুললেন।
“ওটো খুকি, অমন করে ভোরে শ্যালের মত হাঁক ছাড়লে চলবে নি বাচা; তা কোমরে খ্যালে তো...” ধমক দিয়েই দাড়ির হাঁক দিয়ে খুক খুক করে হাসলেন বাবাজী।
হঠাৎ ধমক খেয়ে মাসি করুণ গলায় মিউ মিউ করে হাত জোড় করে বললেন, “ তুমি তিকাল দেখতে পাও বাবা, জানই তো জগার বুড়ো রামপাটাটার শিং-এ কি জোর, যেই না হ্যাট হ্যাট কইরেচি। ওমনি মারল দু গুঁতো”।
বাবা শ্রী শ্রী ২০১৫ ফোক্লেশ্বর মহারাজ, তারপর মাসির কানে কি যে বললেন, সেই থেকে কান্না শুরু। জিজ্ঞেস করলেই নাক দিয়ে ভোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আর বলে, “বাবা কয়েচেন, হবে বাগানে সব হবে, আর তিনি কি যেন মন্তর তন্তর কলেন...
যাবে চইলে চামচিকা
আইসবে ফিরে কলা কপি-
হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা
কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি”।
পাড়ার বিজ্ঞ বুড়ো রোদে পোড়া টাক চুলকাতে চুলকাতে বিড় বিড় করে বলল, “তা খুঁড়ি এ যে গভীর সমিস্যে ! নিদান কিচু দ্যালেন নাকি ?”
“দ্যাছে রে। ছাগলের নাদি লাল কাপড়ে বেইধে, বাগানের কোণে ঝুলিয়ে রাখতি হবে” চোখের জল মুছে কদলীমাসি ঢোক গিলে বললেন। খানিক দম নিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে , কপালে হাত ঠেকিয়ে, “বাবার সে কি মন্তর, ... হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা...কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি !”
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মাসি সাদা চুলের নুড়ি ঝাঁকিয়ে কাক তাড়ানো গলায় বলে ওঠে, “ আমার ছ্যাঁচড়া কই !!”
-“ ও খুঁড়ি তোমার কি ভেম্মতি হয়েচে নাকি! তুমি কাঠ বেধবা, দুপ্পুর বেলা কাঁটা দিয়ে ছ্যাঁচড়া খাবে!”- মুখের কথা মুখেই থাকল, তার আগেই মাসি কপাত করে কথাটাকে ক্যাচ ধরে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, “ হতচ্ছাড়া, পচা বাঁশের উইপোকা... অ্যাঁ, আমার বোনপো ছ্যাঁচড়া চরণের কতা কইচি। গত নাতের বেলাই তো আসার কতা! ও মা গো আমি যাই কণে! সক্কাল গড়িয়ে বেলা হল একনো তো এলো নি...”।
৪
গত রাতে টিং টিং ঠাকমা আর কি করে। সাত কুলে তার কেও নেই। এই গেছো, চিংড়ী, হুলো, নদু এদের নিয়েই তার সংসার। আমপুরের ঘনার সাথে বহুকাল আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘনা রাতের বেলা ভম্বল মাকড়সার হাতে মারা পরল। আর তারপর থেকেই পাতালগড়ের বটগাছেই স্থান। টিং টিং ঠাকমা দেখতে এই বয়সেও বেশ মিষ্টি, আর কথার বাক্যি যেন পাতাল থেকে আসা খাসা পাকা আমের রস। ডানা দুটি মেলে ধরে যখন পোকায় ধরা সরু একটা দাঁত বার করে হাঁক পাড়ে তখন আ হা, মিষ্টি খোল পচা গন্ধে চারিদিক ম ম করে। কতবার গেছো মেসো বলেছে, “ দাও তোমার দাঁত দুটো বাদিয়ে দি”।
যাক সে কথা, গত রাতে বটগাছে ফিরে নদুর মত সবাইকে বট ফল চিবিতে হয়েছে। গেছো মামার জ্বর জ্বর ভাব, ছুঁচলো নাক এখন টেনিস বল। টিং টিং ঠাকমা নাকে বিচুটি পাতার লেপ লাগিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “ খবরদার গেছো নাক চুলকালেও হাত দিবিনে,ওটাই ব্যাতা-ফোলা কমানোর আসল অসুদ... মনিস্যিরা জানে না, কতবার তোদের ঘনা দাদুকে নুকিয়ে নুকিয়ে নাগিয়ে দেচি”।
ছ্যাঁচড়ার ঘুম যদিও খুবই ভাল। নাকের ভিতর দিয়ে যে কত সুন্দর সুর-তাল-লয় বের হয় তা যারা নাক ডাকে না তারা আর বুঝল কই ! এতাই ছ্যাঁচড়ার দুঃখ। তবে ঘুমিয়ে পরলে হুঁশ থাকে না। কাল রাতে হাল্কা চাঁদের আলোয় দ্যেখে, বিটকেলে একটা বাদুর আবার নাকের ডগায় বসে গান শুনছিল, উদ্ভট চামচিকেটার সাহস কম না! দাঁত বার করে মুখ ভ্যাংচাচ্ছিল। কাঁহাতক সহ্য হয়, ছ্যাঁচড়া থাকতে না পেরে আধা অন্ধকা্রে দিল তার পুটুলিটাকে বাঁই বাঁই করে ঘুড়িয়ে।
তারপর কখন যে দিনের আলো ফুটল, কখন যে কুয়াশা গেল কেটে তা জানে না। তবে ওই দাঁত আর উৎকট ভ্যাপসা ডালের গন্ধে ভরা বাদুরটার কথা মনে যেন গেঁথে বসেছে। আর যতই চিন্তা করছে ছ্যাঁচড়া ততই তার পা দ্রুত চলছে। ফোকলা বুড়োর কথা মাথাতেই নেই তার। আজ সকালে যে করেই হোক কদলী মাসির বাড়ি যেতেই হবে। সকাল বেলা দিব্যি চারিদিক দেখা যাচ্ছে। গাছে গাছে ভরা। পচা পচা ছোট ছোট পুকুর। শ্যাওলা ধরা জোলো রাস্তা। না না পাখির ঘ্যাক ঘ্যাক , চিঁ চিঁ নানা কথাবার্তা।
বেশ খানিক হাঁটার পর পাকা রাস্তা। লোকদের জিজ্ঞাসা করে ছ্যাঁচড়া যখন কদলীমাসির বাড়ি পৌঁছালো তখন বেলা কাবার প্রায়। কদলীমাসি তখন দেশি মুর্গীর ডিম দিয়ে চাড্ডি ভাত খেয়ে দিবা নিদ্রা শেষ করে সন্ধ্যের পিদিম জ্বালানোর জন্য তুলসী তলায় গলায় কাপড় জড়িয়ে পেন্নাম ঠুকছেন। ছ্যাঁচড়াকে দেখে তিনি কি ভাবলেন জানি না, শুধু মুখ দিয়ে, “ আঁক আঁক আর ছ্যাচ” শব্দটুকু বের করতে পারলেন অতি কস্টে।
শেষে চিনতে পেরে হাঁক পেড়ে যেই কাঁদতে উঠতে যাচ্ছিলেন তখন পাশের নেড়ি কুকুরটাও সুর মেলানোর জন্য সমস্বরে ডেকে উঠতেই মাসি থম মেরে বলল, “ আয় বাচা ভিতর পানে আয় দিকি, ওই নেড়িটা যখন তখন কামড়ায়”।
রাতে খেতে বসে কদলী মাসি তার দুখি দুখি মুখে দুখু দুখু গলায় সব কথা ছ্যাঁচড়াকে বলল, “ জানিস ছ্যাঁচোড়, ধন্যি বাবা-ইয়া চোক, যেন ভাঁটার মত ঘুরতেচে আর নাকে আই এত্ত বড় ঢিবলি, কি যেন অসুদ পত্তর নাগিয়েচে”।
খেতে খেতে ছ্যাঁচড়া আঙুল চাটতে চাটতে বলল, “ঢিবলি !! কেন গো মাসি?”
হাঁই তুলে মাসি বলে, “ তা কি করে কই বাচা, দ্যাবতাদের কতা কি করে কই, জানিস নোকে বলে তেনার নাকি একশো বচর বয়স! হ্যাঁ রে ছ্যাঁচড়া, তোর ওই বুড়োর কি হল?”
কদলী মাসি খেয়াল করে নি ছ্যাঁচড়া খাওয়া বন্ধ করে কথাগুলো গিলছে আর ঢোক ঢোক করে জল খাচ্ছে।
রাতে শুয়েই ছ্যাঁচড়া ঠিক করলো কাল সকালের আলো ফুটতেই সট্টান দেবে, কি ভূতুড়ে জায়গা রে বাবা! মাথার মধ্যে নানা খেয়াল আসছে, একশো বছর বয়স, তিকাল দর্শী, ঢিবলি, চামচিকের দাঁত বার করা হাঁসি... না না কাল পালাতেই হবে।
গরু আর মোরগের মিলিত সঙ্গীতে ঘুম ভাঙতেই কদলী মাসি হাসি হাসি মুখ করে এক গেলাস দুধ নিয়ে হাজির।
“ মাসি গো আমি এক্ষুনি বেরবো”, থাকতে না পেরে বলে ওঠে ছ্যাঁচড়া।
“যাবি, একন! তা যা , রেতে আবার মুশকিল, বেলা বেলা যা”।
যাওয়ার সময়ে মাসির করুণ মুখেও হাসি। নধর নধর গোটা দুই লাউ, কিছু ফল-পাকুড় দিয়ে দিলেন। আর বললেন, “ দ্যাক, বিপদে পললে, ‘যাবে চইলে চামচিকা
আইসবে ফিরে কলা কপি-হাতে ধইরা চাড্ডি সিকা,কেষ্ট-শিব ঘড় নাম জপি’...এই মন্তর টা জপবি”।
বলা বাহুল্য, মাসির বাগানে আর বাদুরের উৎপাত হয় নি এর পর। কেষ্ট-শিব --,হরিহরপুরের ছ্যাঁচড়া নিশ্চিন্তে বাড়ি পৌঁছলো। শোনা যায় যে,পাতালপুড়ে সব বাদুর এখন বৈষ্ণব হয়ে গিয়ে শুধু শুধু হরি হরি করে।।
……………………………………xxxxxxxxxxx…………………………………..
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৮/০৪/২০১৮চমৎকার লেখা।মুগ্ধতা রেখে গেলাম।