www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জারোয়ার দ্বীপে


শাঁ করে তীরটা বাঁ পায়ে লাগতেই ষণ্ডামার্কা লোকটা কাটা কলা গাছের মত মামার সামনে পড়ে গেল । আর লিকলিকে সাকরেদ মালিকের এহেন অবস্থা দেখে পিস্তলটা থেকে চোখ সরাতেই টুটুন দিল সজোরে কিক । ওদিকে ইনস্পেক্টর আইয়ার সদলবলে ঘিরে ধরেছেন দুই চোরাশিকারীকে । গল্পটা এখানেই শেষ হলেও এর শুরুটা ছিল বেশ মজাদার ।
রূপালী আগুনের অভিযান সবে শেষ হয়েছে । মামার কি মনে হল জানি না নির্ভেজাল ছুটি কাটাতে দ্বিতীয়বারের জন্য পাড়ি জমায় আন্দামানের মিডিলস্টেটে পঁচিশে মার্চ । আগেভাগেই জারোয়াদের দেখার জন্য ভারত সরকারের স্পেশাল পারমিশন নিয়ে নিয়েছিল । আর ঠিক এখানেই ছাব্বিশে মার্চ মামার হাতে এল ছোট্ট একটা চিঠি । মামার কথানুসারে “ ওপেন চ্যালেঞ্জ ।” চিঠির মূল বিষয় বাংলায় করলে এরকম দাঁড়ায় – “ ...মি. ব্যানার্জী , রূপালী আগুনে অনেক খেল দেখিয়েছেন । হিম্মৎ থাকলে আসুন । মধ্যস্থানে হবে দেখা /সহস্র দাঁতে টানবো রেখা – ২৮ চন্দ্র সদ্য যৌবন...। ইতি...।।”
“ মামা আবার সেই !”
“আমার কপাল বুঝলি কিনা । তবে শেষ লাইনটা তারিখ ।”
“ কি করে ?” গলায় বিস্ময় । মামা দিব্যি গুনগুন করে গলায় গান ভাঁজছে । আচমকা থেমে বলে ওঠে “ একে পক্ষ দুইয়ে নেত্র আর তিনে...কি রে?”
“ নেত্র । তো !”
“ সিম্পিল – ২৮.০৩ । আচ্ছা তুই সবে অ্যাডাল্ট তাই না !”
“ ও গড । ২৮.০৩.১৮... !! আর বাকী দুই লাইন ?”
“ রূপালী আগুনের কথা যখন লিখেছে তাহলে এখানেও নির্ঘাত চোরাশিকারী । আর দেখা হবে ‘ মধ্যস্থানে ’...” কথাটা বলে মামা চুপ করে যায় ।

পরের দিন লঞ্চ চেপে খাঁড়ি পেড়িয়ে বারাটাং-এ মাড ভলকানো দেখে ফেরার পথে সমুদ্রের সবুজ জলে ভুস করে একটা নাক । মামা টুটুনের হাতটা ধরে টান মেরে হাঁসতে হাঁসতে বলে ‘সহস্র দাঁত’...!”
ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি মাঝে লোকাল পুলিশের সাথে দু-একজন কৃষ্ণনীল জারোয়া দেখলাম । অসাধারণ রূপ । প্রকৃতি যেন উজাড় করে দিয়েছে সব লাবণ্য ওদের প্রতিটি শিড়ায়-উপশিড়ায় । গায়ে হালকা জামা । এরা আগের থেকে অনেক সিভিলাইজড্‌ । মামার মত অবশ্য ভিন্ন । যাক পড়ে অন্যখানে এদের নিয়ে বিস্তারে গপ্প করা যাবে । এখানে বলে রাখা ভালো আমরা যা প্রকৃতিকে দিতে পারছি না এরা কিন্তু চেষ্টা করে সেই ঋণ শোধ করতে ।

আঠাশ তারিখ সকালে মামা লাফাতে লাফাতে বলে “ কি বুদ্ধুই না বনে যাচ্ছিলাম । ‘ মধ্যস্থান বলতে ভেবেছিলাম পোর্টব্লেয়ার হবে কিন্তু...কিন্তু মিডিলস্টেট রে , আমরা যেখানে আছি ।”
আগেই পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছিল । সুতরাং সেদিন বিকালে সূর্য হালকা পশ্চিমে হেলেছে । খাঁড়ি থেকে কিছুটা দূরেই আমরা দাঁড়িয়ে । কয়েকটা বক ডাকতে ডাকতে উড়ে যাচ্ছে । আচমকা প্রায় অন্ধকার ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসে সেই ষণ্ডামার্কা । চোখ ঘোরাতেই আরেকজন কোথা থেকে উদয় হয়ে মামার কানের পাশে ঠাণ্ডা পিস্তলটা ধরে । আমি হতভম্ব ।
ষণ্ডাটা খ্যাঁকখ্যাঁক করে দাঁতে দাঁত চিপে বলে “ ব্যানার্জী বাবু এবার খেল খতম । কুমীরের চামড়া এবার তো পাচার করবই... ।” আর ঠিক তখনই প্রায় অন্ধকার চিড়ে ধেয়ে আসে তীর । অবাক হয়ে তাকালাম এদিক ওদিক কিন্তু ঘন জঙ্গলটা খানিকটা নড়ে ওঠা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না ।পড়ে বুঝেছিলাম জারোয়াদের কাণ্ড ।
*পুনশ্চ – পরে আবার অন্যখানে এই অভিযানটা বিস্তারে বলা যাবে ।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৯১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৪/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast