www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বন্ধুত্ব (আত্মপ্রকাশ পর্ব)

ক্রীং-ক্রীং-ক্রীং ...।
ল্যাণ্ড ফোনের শব্দে তড়ি ঘরি করে ঘরে ঢুকলো আদি। পরনের লুঙ্গির গিঁটটা কোনরকমে জড়িয়ে ফোনটা ধরলো। মাত্র  দু'তিন মাস হলো ফোনের কানেকশান পেয়েছে সে। তাই ফোন এলেই বেশ আনন্দিত হয়। বেশ আনন্দ মিশ্রিত গলায় বলে
-হ্যালো-কে বলছেন?
-হ্যালো, আ-আ-আমি সায়ন! ও প্রান্ত থেকে আবেগ তাড়িত কণ্ঠ ভেসে এলো। এ গলা ভোলার নয়। তাই কোন সায়ন বলার দরকার হলো না আদির। মুহুর্তের মধ্যে আদির সারা শরিরে বিদ্যুত খেলে গেলো। কণ্ঠটা এতোটাই ধরে এলো যে কোন কথাই সে আর বলতে পারছিল না। অনেক কষ্টে বললো-
-বল
-কেমন আছিস?
-খুব ভালো । আমি কি খারাপ থাকতে পারি!
-তুই কেমন আছিস?
-আ-আ-মি খুব কষ্ট পাচ্ছি রে আদি। খুব কষ্ট। আ-আ-আমার নিজেকে খুব অপরাধি লাগে। আমরা কি পারিনা আগের মতো আবার ফিরে যেতে? বল আদি, বল। আমি খুব সাহস করে, বড় আশা করে তোকে ফোন করেছি। আমাকে নিরাশ করিস না। প্লীজ!
একদমে কথা গুলো বলে থামলো সায়ন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো সায়নের চোঁখে জল।
সবে একতলা একটি বাড়ী খাঁড়া করেছে আদি। আর সেই বাড়িতে এখন কাঠের মিশ্ত্রী কাজ করছে। তাদের সঞ্গেই হাত লাগাচ্ছিল আদি। গায়ে ঘাম- চোখে জল। কয়েক মুহুর্ত চুপ চাপ থেকে নিজেকে সামলে নিল আদি। বললো
-আমার ফোন নাম্বার কি করে পেলি?
-ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় বন্ধু।
সায়নও নিজেকে বেশ সামলে নিয়েছে ইতি মধ্যে। বরাবরই সায়ন এরকমই। সবসময় একটা হেয়ালী রেখে দেবেই। এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা লেগেই থাকতো। আদি বললো
-তোর পড়া শুনো কেমন ছলছে?
-ভালো - তবে একদম ভালো লাগেনা এখানে। জানিস তোকে ছাড়া আমার খুব খারাপ লাগে।
-কেন এখন তো তোর অনেক বন্ধু ওখানে।
-বন্ধু অনেক আছে ঠিকই- কিন্তু মনের বন্ধু নেই কেউ। যাক সে কথা। এখন কি করছিস তুই?
-যা করার কথা ছিল বন্ধু, আমি আমাতেই আছি...
-জানি তুই চিরকাল আদিতেই থাকবি, শধু আমিই বোধ হয় পরিবর্তন করেছি নিজেকে- নইলে...
-থাকনা ওসব কথা। এতো বছর পর যখন আমরা আবার কথা বলছি... অতীতকে আর টেনে লাভ নেই, অতীত অতীতই থাক ভাই।
আমি এখন বাড়ীটা দাড় করানোর চেষ্টা করছি, আর চাকরিটা এখনো করছি। যদিও কোন প্রোমোশন এখনো পাইনি। নেতাদের ধরা-ধরি করা আমার ধাতে সইবে না। আর বড় বাবুদের  উৎকোচ দেবার সাধ বা সাধ্য কোনোটাই যে আমার নেই, তা বিলক্ষণ জানিস। এবার তোর কথা বল। কবে শেষ হছে তোর ডাক্তারী পড়া। আমাদের গ্রামে একটা ভালো ডাক্তার খুব দরকার।
-গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। আমার এখনো দু'বছর বাকী। আর আমার থেকেও অনেক ভালো ডাক্তার ওখানে আছে।
-তারা তো পয়সা নেবে। তুই এলে তো ফ্রী...
- হা- হা-হা। সস্তার তিন অবস্থা জানিস তো?
-হা-হা-হা। তা যা বলেছিস।
-আমাদের কবে দেখা হবে?
- আমি পুজোর ছুটিতে বাডী যাব। তোদের ক'দিন ছুটি আছে?
-আমাদের আবার ছুটি! সাকুল্যে দু'দিন। অষ্টমী আর বিজয়া।
-বেশ ওই দু'দিনই আমরা দু'জন বেরোবো পুজো দেখতে। কী ঠিক আছে তো।
- আছা সে হবেখন। এখন রাখি। অফিসে  যাব। পরে ফোন করিস। আর হ্যা । তোর ফোন নাম্বারটা দে।
- উহু! আমি তো আমার নাম্বার দেব না। আমার মতো করে আমার নাম্বারটা জোগাড় করো বন্ধু।
-চ্যালেঞ্জ!
-চ্যালেঞ্জ।
-বেশ তা হলে তাই হোক। আজ রাখি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৯৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৯/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আত্মপ্রকাশে পর্বে ভালই চ্যালেঞ্জ।
    দারুন বন্ধুত্ব! খুব জমবে, ভালো থাকুন আর এইভাবে লিখতে থাকুন। শুভ কামনা।
    • তপন দাস ৩০/০৯/২০১৫
      প্রিয় বন্ধু, আপনার এই সুন্দর অনুপ্রেরণ মূলক মন্তব্য আমার পাথেই।

      আশা রাখি এভাবেই পাশে পাব সবসময়।
  • বাহ !! ভালো লাগল দাদা ।
  • আত্মপ্রকাশ পর্ব , মানে আরও আছে। অনেক কৌতুহল হচ্ছে , অতীতের ইতিহাস নিয়ে। বেশ চলছে চলুক। শেষ না দেখে ভালো মন্দ বলিনা।
    • তপন দাস ৩০/০৯/২০১৫
      ভালো মননশিল মন্তব্য সব সময় মনকে দোলা দেয়, লেখার প্রেরণা যোগায়।
      অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
      ভালো থাকুন সবসময়।
  • অভিষেক মিত্র ৩০/০৯/২০১৫
    বাঃ। খুব ভালো হয়েছে তপনদা।
 
Quantcast