কালের চাকা
আকাশের দিকে তাকিয়ে মালতী বলে, "আর পারা যায় না!".... দিনের পর দিন অভাবের তাড়নায় জীর্ণ হয়ে যাওয়া শরীর-মন আজ আর যুজতে পারছে না কালের চাকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। একটা হৃদয়ও কী বুঝতে পারে না এই জ্বালার ব্যথা-বেদনা? ...পারে, পারে...পারবে না কেন? বুঝতে না চাওয়া বা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকার আড়ালে যে কত নিষ্ঠুর হ্ৃদয় মুখোশ ধারণ করে আছে মানবিকতার মিথে্য পরিচয়ে, তার প্রতিটি লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি উঠেছেও মালতীর কাছে...।
পঁাচ-দশটা বাড়িতে কাজ করেও তার সংসার চলে না। স্বামী কাজ করে এক ফ্যাকটারিতে। ...কোথায়?...না, ঐ যে সিল হয়ে বছরের পর বছর পরে থাকা ডানলপ কোম্পানি, সেখানে...! তার ছোটো তিনটে ছেলে-মেয়ে, পড়াশোনা করার টাকা নেই, নেই সেই মানসিকতাও। সত্যিই তো দিন আনা দিন খাওয়া সংসারেতে কে ওদের পড়াশোনা শেখাবে? ...বলেছিল পাড়ার এক সহ্ৃদয়প্রবণ মাষ্টারমশাই, পড়াবে ওদের বিনে পয়সায়। কিন্তু দু'দিন না যেতে যেতেই সব মিথ্যে আশ্বাস তলিয়ে গেল স্মৃতির অতল গভীর থেকে গভীরান্তরে! ...কে যেন মাস্টারমশাইকে বুঝিয়েছে, ওদের পড়াশোনা শিখিয়ে লাভ নেই! আজকালকার দিনে ক'জন আছে বিনে পয়সায় এই গরীব ছেলে-মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখানোর....! মানবিকতার মূল্য কতজনই বা দেয়, যে মাস্টারমশাই তার "শিক্ষাদান" নামক ব্যবসার খাতে লোকসান করিয়ে তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে লাভের মুখ দেখাবেন....। অতএব, শিক্ষাদান....না, না, ওসব আর বিনে পয়সাটিতে হচ্ছে না..।
দুঃশাসনের মতো সমাজের গরীবিয়ানা হাতটান দিচ্ছে এই নিম্নবিত্ত, খেটে-খাওয়া, দিনমজুরে মানুষগুলোর জীবন থেকে সামান্যতম বঁেচে থাকার বাসনাটাকে ধঁুয়ে-মুছে ফেলতে চাইছে! রাজপ্রাসাদের বড়-বড় শ্বেতপাথরের ঘরে এ.সি, টি.ভি, আর আরামদায়কের সাথে মনোরঞ্জনের যাবতীয় আসবাবপত্রের সাথে নিত্যদিনের আয়েস-বিলাস। কিন্তু কৈ.....এই গরীব-দুখী, না-খাওয়া মানুষগুলোর কথা ক'জনা ভাবে আজকাল....? ...নেই, নেই, টাইম নেই..., সময়ের বড় অভাব এসব চিন্তা করার..। চাকরি করে আর কতটুকু টাইম বঁাচে এসব মানুষগুলোর কথা ভাববার! সারাদিনের শেষে ক্লান্তিতে, অবসাদে শরীর-মন যখন আর চাইছে না যন্ত্রের সঙো, চাইছে মনোরঞ্জনের ছঁোয়া,....সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে....অসম্ভব..!
চব্বিশ ঘন্টাকে আর একটু বাড়িয়ে অথর্াৎ ত্রিশ-চল্লিশ ঘন্টার সারাদিনের হিসেবেরও বেশি কাজ করে টাকা আসে না,....পেট ভরার টাকা আসেনা..! পরের দিন যাতে বের হতে না হয়, সেই টাকাও তো আসেনা....!
ট্রাফিকে দঁাড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো থেকে উকঁি দিয়ে যায় সেই উচ্চবিত্তের চোখ। সিগ্নালের পাশে দঁাড়িয়ে আছে ঐ ভিখিরি ছেলে-মেয়েগুলো। কারো হাতে ফুল, কারো হাতে ময়লা টুকরো কাপড়...গাড়ি থামলেই একটু পরিষ্কারের ছলে শুধু টাকা চাওয়ার ধান্দায়!...কিন্তু বোঝেনা, বোঝেনা...। বোঝে ক'জন এটা কোনো ছলনা নয়, নয় কোনো সখ্, পেটের দায়ে জীর্ণ হয়ে যাওয়া শরীর-মন যখন আর যুজতে পারেনা এই সময়ের সাথে, কালের সাথে....তখনই তো এইভাবে জীবনকে একটা পর্যায়ে নামিয়ে আনা...! আর এইভাবেই সারাটা জীবন লড়তে হয় তাদের, লড়তে হয় বঁাচার তাগিদে, পেটের দায়ে...!
পঁাচ-দশটা বাড়িতে কাজ করেও তার সংসার চলে না। স্বামী কাজ করে এক ফ্যাকটারিতে। ...কোথায়?...না, ঐ যে সিল হয়ে বছরের পর বছর পরে থাকা ডানলপ কোম্পানি, সেখানে...! তার ছোটো তিনটে ছেলে-মেয়ে, পড়াশোনা করার টাকা নেই, নেই সেই মানসিকতাও। সত্যিই তো দিন আনা দিন খাওয়া সংসারেতে কে ওদের পড়াশোনা শেখাবে? ...বলেছিল পাড়ার এক সহ্ৃদয়প্রবণ মাষ্টারমশাই, পড়াবে ওদের বিনে পয়সায়। কিন্তু দু'দিন না যেতে যেতেই সব মিথ্যে আশ্বাস তলিয়ে গেল স্মৃতির অতল গভীর থেকে গভীরান্তরে! ...কে যেন মাস্টারমশাইকে বুঝিয়েছে, ওদের পড়াশোনা শিখিয়ে লাভ নেই! আজকালকার দিনে ক'জন আছে বিনে পয়সায় এই গরীব ছেলে-মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখানোর....! মানবিকতার মূল্য কতজনই বা দেয়, যে মাস্টারমশাই তার "শিক্ষাদান" নামক ব্যবসার খাতে লোকসান করিয়ে তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে লাভের মুখ দেখাবেন....। অতএব, শিক্ষাদান....না, না, ওসব আর বিনে পয়সাটিতে হচ্ছে না..।
দুঃশাসনের মতো সমাজের গরীবিয়ানা হাতটান দিচ্ছে এই নিম্নবিত্ত, খেটে-খাওয়া, দিনমজুরে মানুষগুলোর জীবন থেকে সামান্যতম বঁেচে থাকার বাসনাটাকে ধঁুয়ে-মুছে ফেলতে চাইছে! রাজপ্রাসাদের বড়-বড় শ্বেতপাথরের ঘরে এ.সি, টি.ভি, আর আরামদায়কের সাথে মনোরঞ্জনের যাবতীয় আসবাবপত্রের সাথে নিত্যদিনের আয়েস-বিলাস। কিন্তু কৈ.....এই গরীব-দুখী, না-খাওয়া মানুষগুলোর কথা ক'জনা ভাবে আজকাল....? ...নেই, নেই, টাইম নেই..., সময়ের বড় অভাব এসব চিন্তা করার..। চাকরি করে আর কতটুকু টাইম বঁাচে এসব মানুষগুলোর কথা ভাববার! সারাদিনের শেষে ক্লান্তিতে, অবসাদে শরীর-মন যখন আর চাইছে না যন্ত্রের সঙো, চাইছে মনোরঞ্জনের ছঁোয়া,....সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে....অসম্ভব..!
চব্বিশ ঘন্টাকে আর একটু বাড়িয়ে অথর্াৎ ত্রিশ-চল্লিশ ঘন্টার সারাদিনের হিসেবেরও বেশি কাজ করে টাকা আসে না,....পেট ভরার টাকা আসেনা..! পরের দিন যাতে বের হতে না হয়, সেই টাকাও তো আসেনা....!
ট্রাফিকে দঁাড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো থেকে উকঁি দিয়ে যায় সেই উচ্চবিত্তের চোখ। সিগ্নালের পাশে দঁাড়িয়ে আছে ঐ ভিখিরি ছেলে-মেয়েগুলো। কারো হাতে ফুল, কারো হাতে ময়লা টুকরো কাপড়...গাড়ি থামলেই একটু পরিষ্কারের ছলে শুধু টাকা চাওয়ার ধান্দায়!...কিন্তু বোঝেনা, বোঝেনা...। বোঝে ক'জন এটা কোনো ছলনা নয়, নয় কোনো সখ্, পেটের দায়ে জীর্ণ হয়ে যাওয়া শরীর-মন যখন আর যুজতে পারেনা এই সময়ের সাথে, কালের সাথে....তখনই তো এইভাবে জীবনকে একটা পর্যায়ে নামিয়ে আনা...! আর এইভাবেই সারাটা জীবন লড়তে হয় তাদের, লড়তে হয় বঁাচার তাগিদে, পেটের দায়ে...!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শিমুদা ২২/০৮/২০১৪
-
প্রবাসী পাঠক ০৪/০১/২০১৪চমৎকার বর্ণনায় সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা তুলে এনেছেন আপনার লেখায়। লেখাটা ভাল লাগল।
-
এফ সাকি ০৪/০১/২০১৪চলুক!!
খুব সুন্দর ভাবে কিছু ছোট ছোট জীবনকে গল্পে টেনে এনে কি চমৎকার বর্ণনায় মহান করে তুলেছেন। যখন পড়ছিলাম তখন সমস্ত চরিত্র গুলো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছিল। কিছু বেদনার ও উদগিরণ হচ্ছির। খুব ভাল লেগেছে।