সাধের শৈশব
ভোর হলেই মা কোলে করে ঘুম থেকে উঠাতেন। ব্রাশ করে স্কুলে। আজকের দিনের মত, তখন ব্যাগ ছিল না। থাকলেও সেটা বেশীরভাগছেলেমেয়ের মা-বাবার কাছে অপ্রয়োজনীয় বিলাসীতা। পেটির মলাটে বইগুলো জড়িয়ে নেওয়া হত। আমার একটা অ্যলমোনিয়ামের বাক্স ছিল, যাকে ট্রাঙ্ক বলতাম। ওতে করেই বই নিতাম। যাওয়ার সময় মা একগাদা সরিষার তেল দিয়ে মাথা আঁচড়ে দিতেন। হেটেই স্কুলে যেতাম। ইংরেজী স্যার খুব কড়া ছিলেন, তাই যেদিন পড়া তৈরী হত না, স্কুলে গিয়ে ১০৮বার মনে মনে ঠাকুরের নাম জপ করতাম স্যার যেন না আসেন। যদিও ঠাকুর এই অন্যায় আবদারে কদাচিৎ সায় দিতেন বটে , বেশিরভাগ সময় তিনি সবচেয়ে শক্ত বেতটা হাতে তুলে দিতেন। এখন সবই অতীত।
লেইজার পিরিয়ডে গোল্লাছুট, খুকু, কবাডি, কিত-কিত, কানামাছি, রাজা-রানী ইত্যাদি চলত। কত যে কবাডি খেলতে গিয়ে হাত--পা কেটেছি ঠিক নেই। তখন অআ্যন্টিসেপটিক মানে দুরকি পাতার রস। আর আ্যন্টিবায়োটিক হল মায়ের হাতের বেত। বন্ধু পাততাম গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে। আবার ঝগড়া করে কানি আঙ্গুল দিয়ে আড়ি খেতাম জনমের জন্যে। বড়জোর দু'ঘন্টা; জনমও শেষ, আড়িও শেষ। ভাব করতাম আবার আঙ্গুল দিয়ে। তখন আবার কথা বলা যেত।
স্কুলে আইসক্রিম ও পেপসি আসত। আইসক্রিম এক টাকা কিংবা দু'টাকা।বেশিরভাগ সময়ই এক টাকা দামেরটাই খেতাম। সেগারিন দেওয়া, বাশেঁর কাঠি। মুখে দিলেই ঠোঁট লাল। এতেই কত গর্ব। পেপসির দামও ১ টাকা। কিনলে সাথীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত কারটা সবার শেষে শেষ হয়। কলমের মুখ চিবুতে চিবুতে জানালা দিয়ে পাখি দেখতাম। কত যে পেন্সিল, রাবার হারিয়ে মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসাব নেই।
ক্লাসের মনিটর হলে কেউ যদি টু শব্দ করত ব্যাস্ অমনি খাতায় নাম উঠে যেত। আবার চকলেটের ঘুষ খেয়ে নাম কেটেও দিতাম। সাফাই ক্লাসে কে কত কম সাফাই করতে পারে সেটাই ছিল ক্রেডিট। বাড়ি আসার সময় অমুকের বাড়ির পেয়ারা, তুত, গাব ইত্যাদির উপর দলেবলে হামলা-পাল্টা হামলা চলত।
তখন গ্রামের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরাই স্কুলে খালি পায়ে যেত। জুতোর দাম যে খুব বেশী ছিল তা নয়, অভ্যাস ছিল না। এখন যেমন ইউনিফর্মের সঙ্গে টাই এবং সু আবশ্যিক হয়েছে, তেমন ছিলো না। তখন ইউনিফর্মেও শিথিলতা ছিল। অনেকে প্যান্টটা ইউনিফর্মের বাইরে অন্য রঙের পরে আসতো। যা হোক্, জুতো পরলেও সেটা হাওয়াই চটিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বর্ষায় ছাতির যায়গায় কচুপাতা বা কলাপাতা অনেকের মাথায়ই উঠতো। এখন তো রৌদ্রেও ছাতা মাথায় থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এবং সেটা প্রয়োজনীয়ও। তখন গ্রামে ছাতির থেকে বেশী কলাপাতা দেখা যেত। অনেকবার এমন হয়েছে যখন স্কুলের ফোটো ছাদ দিয়ে জল পরার করনে ক্লাস মুকুব। তখন একটা ফুটবল নিয়ে বৃষ্টি-কাঁদায় দৌড়াদৌড়ি করে কাঁদার হোলি খেলে বাড়িতে ফিরতাম। ঘরে ঢুকলে মায়ের উত্তম-মধ্যম যে একটাও মাটিতে পরবে না তা ঠিক জানতাম। তাই ইচ্ছা করে লাল মাটিতে দুবার পরে গিয়ে বলতাম, 'মা পরে গেছিলাম'।
বাড়ি গিয়ে সব ফেলে এক দৌড়ে পুকুরে। এক ঘন্টা জলের উপর হামলা-দপাদপি করে গায়ে একগাদা শ্যওলা নিয়ে বলতাম, 'স্নান শেষ'। কোনোরকমে একটু খেয়ে সোজা খেলতে বেড়িয়ে পরতাম। একটা পুরাতন সাইকেলের টায়ার, ঠুসকি, গুলাইল(গুলতি) এগুলি ছিলো খেলার সারঞ্জাম। সিজনে গুল্লি(মার্বেল) খেলার ধুম লেগে যেতো। তারপর ভরা দুপুরে মা চার বাড়ি খুঁজে এনে পিঠে দু'ঘা দিয়ে ঘুম পাড়াতেন। ঘুম থেকে উঠে আবার খেলা। ভিকি বল দিয়ে ক্রিকেট বা গোল্লাছুট, কবাডি এই চলত সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত।
তারপর হ্যরিকেনের আলোয় মায়ের কাছে পড়তে বসা। হাপানো মন পড়ায় একেবারেই সায় দিত না। সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় গনিত। লসাগু-গসাগু, ভাগ, সরল; এসবে গুলিয়ে কত মার খেয়েছি ইয়াত্তা নেই। সবচেয়ে ভীতির সঞ্চার হতো প্রশ্নের অংকে। লাভ না ক্ষতি কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। তার উপর দাদু-নাতির সবচেয়ে কঠিন ইম্পরটেন্ট অংকটা পরীক্ষায় আসবেই।
রবিবার বারোটায় তখন ডিডি ন্যাশান্যাল-এ শক্তিমান আসত। আমাদের বাড়িতে টিভি ছিল না, তাই সোজা চলে যেতাম আধ কিলোমিটার হেঁটে টিটনদের বাড়িতে। ওদের বাড়িতে একটা সাদা-কালো টিভি ছিল। সেখানেও কি ভীড়। আ্যন্টেনা ঘুরিয়ে সিগ্ন্যাল আনতে হত। বাইরে থেকে একজন আ্যন্টেনার বাশ ঘুরিয়ে চিৎকার করত, 'কিরে আইসে?' ভিতর থেকে উত্তর আসত 'না, আরেকটু ডাইনে ঘুরা, একটু বামে, বাস্ বাস্; আইসে'। একই চিত্র দেখা যেত শুক্রবার বিকাল তিনটায়। তখন বাংলাদেশের সিনেমা দেখার জন্য ঘরে উপচে পরা ভীড় হত। ঠাকুরকে ডাকতাম 'আ্যড্বেডাইস'(বিজ্ঞাপন) যাতে না দেয়। ঠাকুর সাড়া দিতেন কই! বিজ্ঞাপনের সময় বড়রা বিভিন্ন কথাবার্তা, কাজকর্ম সেরে নিত। আর আমরা বিজ্ঞাপন গুনতে থাকতাম। মুরগি মার্কা ঢেউ টিন, চাকা বল সাবান, ইস্পাহানী মির্জাপুর চা ইত্যাদি ইত্যাদি তিরিশটা হলেই সিনেমা আবার শুরু হবে।
তখন ওয়ান টাইম কলম ছিল প্রায় আধ হাত লম্বা। প্রতিযোগিতা হত কার কলম বেশি লম্বা। পরে এগুলিই বেত হিসাবে ব্যবহৃত হত। একই কলমে চার রকম রিফিল দেওয়া কলম ছিল। চেষ্টা করতাম চারটেই একসঙ্গে বের করতে। দোকানে টাকায় চারটা কমলা চকলেট পাওয়া যেত। ছিল ছড়ি চকলেট। এখনকার মত কেডবড়ি, কিটক্যাট, মাঞ্চ কিংবা কুরকুরে ছিলো না। বিস্কুট ছিলো দু'তিন রকমের, পারলে জি, ব্রিটানিয়া মারি আর গুড ডে। ছিল বেকারির লম্বা লম্বা লাঠি বিস্কুট, খাস্তা বিস্কুট, এস বিস্কুট কিংবা তক্তা বিস্কুট। বন আর স্লাইজ (পাউরুটি) পাওয়া যেত। এগুলি যদিও এখনো দেখা যায় কিন্তু এদের রূপ অনেকটাই পরিবর্তিত।
পূজা এলে নতুন জামা। কেউ পূজার আগে নতুন জামা পড়তো না, পুরাতন হয়ে যাবে ভেবে। নতুন ড্রেস পেতাম বছরে দু'বার, দূর্গাপূজায় আর নববর্ষে। পূজার অন্যতম আব্দার বন্দুক ও কেপ্। ব্যস্, এগুলি পেলে আর কিছু চাই না। মেয়েদের বায়না ছিল, স্প্রিং চুড়ি। মাতাবাড়ি দেওয়ালী মেলায় তখন পুতুল নাচ, নাগরদোলা, যাদু, সোনামনির পায়ের খেলা থাকতো। মেলার বায়না থাকতো, কাঠের ট্রাক এবং চরকা লাগানো গাড়ি। ট্রাকে বালি ভরে মুখে ভোওওও শব্দ তোলে দড়ি দিয়ে টানার মজা নিঃসন্দেহে আজকের রিমোট চালিত এরোপ্লেন থেকে শতগুণ অধিক।
মুঠোফোন তখন আমাদের হাত ও মননকে কলুষিত করতে পারে নি। ছিলোনা কোনো কার্টুন ক্যারেক্টার। দাদু-ঠাকুমার কাছে রাক্ষসের গল্প, আকাশের তারা গোনা, চাঁদের সেই চরকা কাটা বুড়ি, সাতজালি, আদমসুরুত নিয়ে কত কাহিনী মুখস্ত ছিল, তবুও শুনতাম। বাবু বাজার থেকে আসার সময় কমলা চকলেট, মুখশুদ্দি বা সনপাপরি আনা কিন্তু চাই। এগুলি সবই ছিল সোনালী অতীতের গৌরব ইতিহাস। সাধের ফেলে আসা শৈশব!
(২৯শে জুন, ২০১৭, বৃহস্পতিবার)
লেইজার পিরিয়ডে গোল্লাছুট, খুকু, কবাডি, কিত-কিত, কানামাছি, রাজা-রানী ইত্যাদি চলত। কত যে কবাডি খেলতে গিয়ে হাত--পা কেটেছি ঠিক নেই। তখন অআ্যন্টিসেপটিক মানে দুরকি পাতার রস। আর আ্যন্টিবায়োটিক হল মায়ের হাতের বেত। বন্ধু পাততাম গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে। আবার ঝগড়া করে কানি আঙ্গুল দিয়ে আড়ি খেতাম জনমের জন্যে। বড়জোর দু'ঘন্টা; জনমও শেষ, আড়িও শেষ। ভাব করতাম আবার আঙ্গুল দিয়ে। তখন আবার কথা বলা যেত।
স্কুলে আইসক্রিম ও পেপসি আসত। আইসক্রিম এক টাকা কিংবা দু'টাকা।বেশিরভাগ সময়ই এক টাকা দামেরটাই খেতাম। সেগারিন দেওয়া, বাশেঁর কাঠি। মুখে দিলেই ঠোঁট লাল। এতেই কত গর্ব। পেপসির দামও ১ টাকা। কিনলে সাথীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত কারটা সবার শেষে শেষ হয়। কলমের মুখ চিবুতে চিবুতে জানালা দিয়ে পাখি দেখতাম। কত যে পেন্সিল, রাবার হারিয়ে মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসাব নেই।
ক্লাসের মনিটর হলে কেউ যদি টু শব্দ করত ব্যাস্ অমনি খাতায় নাম উঠে যেত। আবার চকলেটের ঘুষ খেয়ে নাম কেটেও দিতাম। সাফাই ক্লাসে কে কত কম সাফাই করতে পারে সেটাই ছিল ক্রেডিট। বাড়ি আসার সময় অমুকের বাড়ির পেয়ারা, তুত, গাব ইত্যাদির উপর দলেবলে হামলা-পাল্টা হামলা চলত।
তখন গ্রামের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরাই স্কুলে খালি পায়ে যেত। জুতোর দাম যে খুব বেশী ছিল তা নয়, অভ্যাস ছিল না। এখন যেমন ইউনিফর্মের সঙ্গে টাই এবং সু আবশ্যিক হয়েছে, তেমন ছিলো না। তখন ইউনিফর্মেও শিথিলতা ছিল। অনেকে প্যান্টটা ইউনিফর্মের বাইরে অন্য রঙের পরে আসতো। যা হোক্, জুতো পরলেও সেটা হাওয়াই চটিতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বর্ষায় ছাতির যায়গায় কচুপাতা বা কলাপাতা অনেকের মাথায়ই উঠতো। এখন তো রৌদ্রেও ছাতা মাথায় থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এবং সেটা প্রয়োজনীয়ও। তখন গ্রামে ছাতির থেকে বেশী কলাপাতা দেখা যেত। অনেকবার এমন হয়েছে যখন স্কুলের ফোটো ছাদ দিয়ে জল পরার করনে ক্লাস মুকুব। তখন একটা ফুটবল নিয়ে বৃষ্টি-কাঁদায় দৌড়াদৌড়ি করে কাঁদার হোলি খেলে বাড়িতে ফিরতাম। ঘরে ঢুকলে মায়ের উত্তম-মধ্যম যে একটাও মাটিতে পরবে না তা ঠিক জানতাম। তাই ইচ্ছা করে লাল মাটিতে দুবার পরে গিয়ে বলতাম, 'মা পরে গেছিলাম'।
বাড়ি গিয়ে সব ফেলে এক দৌড়ে পুকুরে। এক ঘন্টা জলের উপর হামলা-দপাদপি করে গায়ে একগাদা শ্যওলা নিয়ে বলতাম, 'স্নান শেষ'। কোনোরকমে একটু খেয়ে সোজা খেলতে বেড়িয়ে পরতাম। একটা পুরাতন সাইকেলের টায়ার, ঠুসকি, গুলাইল(গুলতি) এগুলি ছিলো খেলার সারঞ্জাম। সিজনে গুল্লি(মার্বেল) খেলার ধুম লেগে যেতো। তারপর ভরা দুপুরে মা চার বাড়ি খুঁজে এনে পিঠে দু'ঘা দিয়ে ঘুম পাড়াতেন। ঘুম থেকে উঠে আবার খেলা। ভিকি বল দিয়ে ক্রিকেট বা গোল্লাছুট, কবাডি এই চলত সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত।
তারপর হ্যরিকেনের আলোয় মায়ের কাছে পড়তে বসা। হাপানো মন পড়ায় একেবারেই সায় দিত না। সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় গনিত। লসাগু-গসাগু, ভাগ, সরল; এসবে গুলিয়ে কত মার খেয়েছি ইয়াত্তা নেই। সবচেয়ে ভীতির সঞ্চার হতো প্রশ্নের অংকে। লাভ না ক্ষতি কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। তার উপর দাদু-নাতির সবচেয়ে কঠিন ইম্পরটেন্ট অংকটা পরীক্ষায় আসবেই।
রবিবার বারোটায় তখন ডিডি ন্যাশান্যাল-এ শক্তিমান আসত। আমাদের বাড়িতে টিভি ছিল না, তাই সোজা চলে যেতাম আধ কিলোমিটার হেঁটে টিটনদের বাড়িতে। ওদের বাড়িতে একটা সাদা-কালো টিভি ছিল। সেখানেও কি ভীড়। আ্যন্টেনা ঘুরিয়ে সিগ্ন্যাল আনতে হত। বাইরে থেকে একজন আ্যন্টেনার বাশ ঘুরিয়ে চিৎকার করত, 'কিরে আইসে?' ভিতর থেকে উত্তর আসত 'না, আরেকটু ডাইনে ঘুরা, একটু বামে, বাস্ বাস্; আইসে'। একই চিত্র দেখা যেত শুক্রবার বিকাল তিনটায়। তখন বাংলাদেশের সিনেমা দেখার জন্য ঘরে উপচে পরা ভীড় হত। ঠাকুরকে ডাকতাম 'আ্যড্বেডাইস'(বিজ্ঞাপন) যাতে না দেয়। ঠাকুর সাড়া দিতেন কই! বিজ্ঞাপনের সময় বড়রা বিভিন্ন কথাবার্তা, কাজকর্ম সেরে নিত। আর আমরা বিজ্ঞাপন গুনতে থাকতাম। মুরগি মার্কা ঢেউ টিন, চাকা বল সাবান, ইস্পাহানী মির্জাপুর চা ইত্যাদি ইত্যাদি তিরিশটা হলেই সিনেমা আবার শুরু হবে।
তখন ওয়ান টাইম কলম ছিল প্রায় আধ হাত লম্বা। প্রতিযোগিতা হত কার কলম বেশি লম্বা। পরে এগুলিই বেত হিসাবে ব্যবহৃত হত। একই কলমে চার রকম রিফিল দেওয়া কলম ছিল। চেষ্টা করতাম চারটেই একসঙ্গে বের করতে। দোকানে টাকায় চারটা কমলা চকলেট পাওয়া যেত। ছিল ছড়ি চকলেট। এখনকার মত কেডবড়ি, কিটক্যাট, মাঞ্চ কিংবা কুরকুরে ছিলো না। বিস্কুট ছিলো দু'তিন রকমের, পারলে জি, ব্রিটানিয়া মারি আর গুড ডে। ছিল বেকারির লম্বা লম্বা লাঠি বিস্কুট, খাস্তা বিস্কুট, এস বিস্কুট কিংবা তক্তা বিস্কুট। বন আর স্লাইজ (পাউরুটি) পাওয়া যেত। এগুলি যদিও এখনো দেখা যায় কিন্তু এদের রূপ অনেকটাই পরিবর্তিত।
পূজা এলে নতুন জামা। কেউ পূজার আগে নতুন জামা পড়তো না, পুরাতন হয়ে যাবে ভেবে। নতুন ড্রেস পেতাম বছরে দু'বার, দূর্গাপূজায় আর নববর্ষে। পূজার অন্যতম আব্দার বন্দুক ও কেপ্। ব্যস্, এগুলি পেলে আর কিছু চাই না। মেয়েদের বায়না ছিল, স্প্রিং চুড়ি। মাতাবাড়ি দেওয়ালী মেলায় তখন পুতুল নাচ, নাগরদোলা, যাদু, সোনামনির পায়ের খেলা থাকতো। মেলার বায়না থাকতো, কাঠের ট্রাক এবং চরকা লাগানো গাড়ি। ট্রাকে বালি ভরে মুখে ভোওওও শব্দ তোলে দড়ি দিয়ে টানার মজা নিঃসন্দেহে আজকের রিমোট চালিত এরোপ্লেন থেকে শতগুণ অধিক।
মুঠোফোন তখন আমাদের হাত ও মননকে কলুষিত করতে পারে নি। ছিলোনা কোনো কার্টুন ক্যারেক্টার। দাদু-ঠাকুমার কাছে রাক্ষসের গল্প, আকাশের তারা গোনা, চাঁদের সেই চরকা কাটা বুড়ি, সাতজালি, আদমসুরুত নিয়ে কত কাহিনী মুখস্ত ছিল, তবুও শুনতাম। বাবু বাজার থেকে আসার সময় কমলা চকলেট, মুখশুদ্দি বা সনপাপরি আনা কিন্তু চাই। এগুলি সবই ছিল সোনালী অতীতের গৌরব ইতিহাস। সাধের ফেলে আসা শৈশব!
(২৯শে জুন, ২০১৭, বৃহস্পতিবার)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রিজভী নাভিন ২৯/১০/২০১৭আবার ফিরে পেতে চাই সেই ভোর ।
-
সোলাইমান ২৯/১০/২০১৭অপূর্ব হয়েছে প্রিয় কবি
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।।। -
শেখ উবায়দুর রহমান ২৮/১০/২০১৭সত্যিই ভাল গল্প
-
শেখ উবায়দুর রহমান ২৮/১০/২০১৭অসাধারণ ..অনেক সুন্দর লেখা.. শুভকামনা রইল
-
শাহজাদা আল হাবীব ২৮/১০/২০১৭ভালো লেগেছে।
তবে বানানের ক্ষেতে লক্ষ্য রাখুন।
শুভ কামনা রইলো প্রিয়।। -
ফেরদৌস রায়হান ২৮/১০/২০১৭খুব ভালো লাগলো । লিখার মাজে রস আছে ।
-
আজাদ আলী ২৮/১০/২০১৭Valo likhechen