অবেলা ৮
আজ রবিবার,রবিবার মানেই চাকুরে মানুষদের জীবনযাত্রায় একটা আলাদা মাত্রা যোগ হয় । সকালে একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠা, গতানুগতিকতার বাইড়ে কিছু প্রাতঃরাশ,তার পর পাঞ্জাবীটা পরে বাজারের ব্যাগ হাতে রাস্তায় বেড়োনো, বাজাড়ে গিয়ে একটু অন্যরকম কেনাকাটা যেমন ছোট মাছ, মাংস ইত্যাদি, তারপর সারাদিন হৈ হুল্লুর করে রান্না খাওয়া, বিকেলে একটু কোথাও ঘুড়ে আসা । এমনটাই হওয়ার কথা, সুরভী দেখে আসছে এমন । কিন্তু তার জীবনে ! রবিবার মানেই কাপের পর কাপ চা করা, পার্টিশানের দড়জা চাপিয়ে টিভি দেখা এই যা । সারাদিন অনিন্দ্য খুব খুব ব্যস্ত থাকে , কি যেন মিটিং থাকে তার, বিচিত্র সব মানুষের আনাগোনা চলে এই দিনটাতে । দাড়িওয়ালা বেশ কজন কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো চেনা মানুষের নিয়মিত যাতায়াত চলে এই দিনটাতে । ওরা হিন্দু না মুসলীম চেনা বড় দায় । প্রায়শঃই দুপুরের খাবারও খায় ওরা কিন্তু তার জন্য কোনদিন আলাদা কোন আয়োজনের প্রয়োজন হয়নি কিংবা আয়োজন করার মতো ইচ্ছাও অনিন্দ্য'র মধ্যে দেখা যায়নি, একেবারে সাধাসিধা, যখন যেমন থাকে তাতেই পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে খায়, খাওয়া দেখলে মনে হয় যেন অনেক দিনের ক্ষুদার্থ । সুরভী খাবার দেয় কিন্তু কোনদিন সুরভীর প্রতি ওদের কোন দৃষ্টি আছে বলে মনে হয়নি বরঞ্চ মাঝে মধ্যে মনে হয় সুরভী'কে ওদের কাম্য নয় । পাশের ঘরে বসে প্রতি সপ্তাহে কীষের এত মিটিং হয় ! সুরভীর ম্নের মধ্যে যে এই কৌতুহল আসেনি তা কিন্তু নয় । কিন্তু চেষ্টা করেও কিছু বুজার জো নেই । ঊনারা নিজেরা নিজেদের মতো করে ফিস ফিস করে কথা বলে, যতটা না বলে তার চাইতে বেশী ভাবে । একদৃষ্টে চেয়ে থাকে , উদাস কিনা সুরভী জানে না, তবে ভাবনার গভীরতা টের পায় সে । আজকে সবগুলো চেনামুখের ভীড়ে দুটি নতুন মুখ রয়েছে , চা দেওয়ার ফাকে সুরভী উপলব্ধি করতে পেরেছে, সবাই যখন ভাবনার গভীরে ঐ দুটি নতুন মুখ চরম উন্মুখতায় সন্দীপ্ত । ওদের চোখে মুখে এক দুরুহ আগামীর অতীব ঔৎসুক্যতা রয়েছে । বাংলা, এপার বাংলা, ওপার বাংলা, অপার বাংলা ইত্যাদি সমস্ত বিষয় নিয়ে সংগঠন না যতটুকু তার চাইতে গবেষনা যেন অনেক বেশি । সুরভীর মাহাত্ম্য জানার ইচ্ছে থাকলেও জানতে চাওয়ার অ ধিকার নেই এতটুকু জানে, অথচ তারও মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হয় , কি এমন বিষয় ! যা নিয়ে অনিন্দ্যরা সংসার, রোজগার, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, ভোগ, বিলাস সমম্ত কিছুর উর্দ্ধে এক বুক উদাসীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা যায় ! জানতেই হবে তাকে । এই প্রতিজ্ঞা করে মনে মনে সুরভী আজকে রোজদিনকার মতো টেলিভিশনের রঙীন পর্দ্দায় চোখ রাখেনি, দড়জা ভেজানো কিন্তু মন তার পাঠানো দেয়ালের ওপাশে, যেখানে কয়েকজন নিমগ্ন রয়েছেন গভীর এক ভাবনায়, যে ভাবনা নিত্য নৈমত্তিক হালকা পাতলা জীবন ধারন-জীবন যাপনের অনেক অনেক বাইড়ে ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
তুষার রায় ২৮/০৩/২০১৫একটুখানি বানান.........তাছাড়া বাকিটা অসাধারণ লেখক
-
দ্বীপ সরকার ২৪/০৩/২০১৫nice