মহানুভবতা
না রনজু তোমাদের দিয়ে কিছু আশা করা যায় না।একটা কাজও তোমরা করতে পারো না।শুধু শুধু আমি তোমাদের পিছনে টাকা নষ্ট করি।চেয়ারম্যান নকীব খান নিজের শালা বাবু রনজু সম্পর্কে অভিযোগ আকারে কথাগুলো বলল।
রনজু তার এক বন্ধুকে নিয়ে চেয়ারম্যান নকীব খানের ডানহাত বামহাত হিসেবে ক্জ করে আর সবধরনের অপকর্মে সাহায্য করে থাকে।আজকে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে বোধহয় আর সে কারণেই নকীবখানের এমন মন্তব্য।তার কথা শুনে রনজু একটু বিব্রতবোধ করলো। কালক্ষেপণ না করে উল্টা রনজু নকীব খান কে পাল্টা প্রশ্ন করলো,কেন কি হয়েছে দুলাভাই ,আমি আর মজিদ কি শুধু বসে বসে খাই ,কোনো কাজ করিনা।কি হয়েছে আবার নতুন করে?
তেমন কিছু নয়। এই যে দেখ আঞ্চলিক খবরের কাগজে আমার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমি নাকি ত্রাণ এর অর্ধেক এর বেশি মেরে দিয়েছি ।সাথে সাথে আমি নাকি আরো নানা ধরণের অপকর্ম করেছি যা ধারাবাহিকভাবে সবকিছু প্রকাশ করা হবে।বোঝ এবার অবস্থা , আমার ইজ্জত আর চেয়ারম্যানগীরি কি আর থাকবে ? নকীবখান কথাগুলো বলে রনজু র হাতে খবরের কাগজটা ধরিয়ে দিলো।
রনজু খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে লাগল। আর তার বন্ধু মজিদ পাশে বসে খবরের কাগজটা পড়তে লাগল।খবরের কাগজ পড়ে মজিদ মনে মনে বলল,যা লিখেছে তা তো ঠিকই লিখেছে,গ্রামের সব ধরণের অপকর্মের হোতা তো আপনি ই আর আমরা আপনার হুকুমের গোলাম। ভাগ্যিস মজিদ উচ্চ শব্দে কথাগুলো বলেনি।তাহলে এক্ষুণি তার রফাদফা হয়ে যেত।
রনজু সবটুকু পড়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল। কারণ সহকারি হিসেবে তার ও মজিদের নামও রয়েছে সেখানে।খবরের কাগজটা ভাজ করে রেখে দিয়ে রনজু বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা বের করে হাতে নিয়ে তার দুলাভাইকে বলল,দুলাভাই খবরটা প্রকাশকারি সাংবাদিক তো ঐ পাড়ার রফিক মাষ্টার তাই না? আমি তার ব্যবস্থা করে আসছি যেন সে ধারাবাহিকভাবে খবর প্রকাশ করতে না পারে।
জবাবে নকীব খান বলল,ঠিক আছে যা ,তবে যদি কথা না শোনে তবে একেবারে ব্যবস্থা করে আসিস।
দুলাভাইয়ের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে রনজু রফিক মাষ্টারকে একেবারে শেষ করে দেবার জন্য মজিদকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে রাতের আঁধার নেমে এসেছে ধরার বুকে।চারিদিকে ঘুটঘুটে আঁধার নেমেছে। মজিদ রনজুকে বলল,চল এখনই সময়।রফিক মাষ্টারকে হয়তো বাজারে পাওয়া যেতে পারে।
যেই বলা সেই কাজ। মজিদের কথা অনুযায়ি দুজনে বাজারে গিয়ে রফিক মাষ্টারকে খুঁজতে লাগল। বাজার তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোথাও পেল না তাকে। কিছুটা হতাশ হলেো রনজু আর মজিদ। এই মাষ্টারকে থামাতে না পারলে আবার আগামিকাল তো খবরের কাগজে প্রকাশিত হবে তাদের সবার অপকর্মের কথা।সুতরাং মাষ্টারকে থামাতেই হবে তাদের।একটু ভাবলো রনজু।
সহসা তার মোবাইল ফোন বেজে উঠল।তার দুলাভাই কল করেছে।রিসিভ করে রনজু বলল,জ্বি দুলাভাই বলেন।
কোনো খবর আছে। কিছু করতে পারছিস।নকীব খান জানতে চাইল।
না খুঁজেই তো পাইনি। কিভাবে কি করবো। রনজু বলল।
আরে বোকা এখন বাড়ীতে গিয়ে খুঁজে দেখ।আর শোন প্রথমে ভয় দেখাবি আর হুমকি দিবি তাতে যদি কথা শোনে কিছু করার দরকার নাই।আর যদি কথা না শুনে বেশি বাড়াবাড়ি করে তোর কথা না মানে আর আমাদের খবর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে চায় তবে খবর বানিয়ে ওকেই শেষ করে দিস। নকীব খান রফিক মাষ্টারকে শেষ করে দেবার হুকুম দিয়ে দিল রনজু আর মজিদকে।
তার কথা শুনে রনজু বলল, ঠিক আছে দুলাভাই তোমার কথা অনুযায়ি কাজ হবে। এতটুকু বলে রনজু মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
এবার মজিদ আর রনজু দুজনে সরাসরি রফিক স্যারের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হলো।তারা দুইজনেই উত্তেজিত হয়ে আছে। কারণ দুইঘন্টা পর্যন্ত তারা রফিক মাষ্টারকে খুঁজেছে।কিন্তু তার দেখা পায়নি। তাই মজিদ জোড়ে দরজায় টোকা মেরে রফিক স্যারকে ডাক দিয়ে বলল, স্যার বাড়িতে আছেন।একটু বাইরে আসেন কথা আছে।
ভিতর থেকে জবাব এলো মহিলা কন্ঠে,তোমাদের স্যার বাড়ীতে নেই ,মসজিদে এশার নামায পড়তে গেছেন।
রনজু আর মজিদ একটুও অপেক্ষা করলো না।দুইজনে রফিক মাষ্টারের মৃতু্যদূত হয়ে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হলো।
ততক্ষণে এশার নামায শেষ হয়ে গেছে। বাড়ীর কাছেই মসজিদ,তাই সবার শেষে দু রাকায়াত নফল নামায পড়ে বের হন রফিক মাষ্টার ।মসজিদের দরজা প্রায় দিনই সে বন্ধ করে আসে।মসজিদের দরজা দিয়ে রনজু আর মজিদ ভিতরে রফিক মাষ্টারকে দেখতে পেল,বসে আছে।বিদু্যতের আলোতে পরিস্কারভাবে দেখা যাচ্ছে তাকে।রনজু একবার ভাবলো এখান থেকেই শেষ করে দেই শালারে। আবার ভাবলো না যদি কথা মেনে নেয় তাহলে তো খুন করতে নিষেধ করেছে তার দুলাভাই। আগে বলেই দেখি। খুনির কাছে সবকিছুই সমান।এটা যে মসজিদ তা ও সে ভুলে গেল।সোজা ঢুকে পড়লো মসজিদে।
রফিক মাষ্টার তাদেরকে দেখে ভয় পেয়ে গেল।দাঁড়িয়ে বলল,তোমরা এখন কি চাও আমি তো মসজিদ বন্ধ করে দেব ভাবছিলাম।তোমরা কি নামায পড়বে?
হা হা করে হাসলো রনজু আর মজিদ।তারপরে পিস্তলটা বের করে রফিক মাষ্টারের মাথায় ধরে রনজু বলল,আমরা তো আপনার জীবনটাই এখন বন্ধ করে দেব।যদি আমাদের কথা না শোনেন।
তোমরা কি চাও? রফিক মাষ্টার জানতে চাইল।
দুলাভাই আর আমাদের নামে আর কোনো অপকর্মের খবর ছাপা হাবে না ঐ খবরের কাগজে,এটাই আমাদের চাওয়া।রনজু হুমকি দিয়ে বলল।
যা সত্য তা তো প্রকাশিত হবেই।তোমরা অপরাধ ছেড়ে ভালো পথে ফিরে এসো।আমার অনুরোধ পিস্তলটা সরিয়ে নাও।রফিক মাষ্টার রনজুকে অনুরোধ করে বলল।
না প্রকাশিত হবে না।আর কোনো খবর প্রকাশিত হবে না।আমরা চাই যেটুকু হয়েছে তার জন্যও ভুল স্বীকার করতে হবে।রনজু আবার বলল।
সেটা সম্ভব নয়।আমি সত্যি লিখবই।আর চেয়ারম্যান এর অপকর্ম এর সব পর্ব সম্পাদকের কাছে জমা দেয়া হয়ে গেছে।সুতরাং তোমরা ভালো হও তোমাদের দুলাভাই সহ। রফিক মাষ্টার আবার রনজুদেরকে ভালো হবার আহ্বান জানিয়ে বলল।
তাহলে আমাদের কথা শুনবেন না।রনজু কঠোরভাবে রফিক মাষ্টারকে বলল।
কিছুতেই না। রফিক মাষ্টারের সোজা জবাব।
তাহলে আপনাকে কেউই এখন বাঁচাতে পারবে না।সুতরাং রেডি হন মৃতু্যর জন্য।রনজু গুলি করার জন্য প্রস্তুত হলো।
আমার বিশ্বাস আল্লাহ্ আমাকে বাঁচাবেন। রফিক মাষ্টার রনজুদেরকে এ কথা বলে মনে মনে কলেমা পড়তে লাগলো।
রফিক মাষ্টারের বিম্বাসই সত্য প্রমানিত হলো।আল্লাহ্ ই তার সহায় হলেন।যেই গুলি করতে যাবে রনজু ওমনি বিদু্যত চলে গেল।আর রফিক মাষ্টার এক লাফে মসজিদের এক কোনে চলে গেল।অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।রনজু হাক দিয়ে মজিদকে বলল,ঐ মজিদ জেনারেটরের লাইনটা অন কর।
জবাবে মজিদ বলল,কোথায় আমি জানি না।
মজিদের কথা শুনে রনজু নিজেই এবার জেনারেটরের লাইনটা খুঁজতে লাগল।আর এদিকে বিদু্যতের লাইনের একটা তার ছেঁড়া ছিল তার সঙ্গে গিয়ে রনজুর হাত লাগল। যেহেতু রনজু আর মজিদের মসজিদে আসা যাওয়া নেই তাই তাদের জানা ছিল নিা কোথায় কি আছে। অত্রএব রনজু ছেঁড়া তার ধরে হাতাতে লাগলো ,নাড়াচাড়া দিতে লাগলো।সহসা বিদু্যত চলে এলো। রনজু শক খেয়ে বিদু্যতের তারের সঙ্গে আটকে গেল।ভয়ে মজিদ দিল দৌঁড়।
এ পরিস্থিতি দেখে রফিক স্যারের বিবেক নাড়া দিল।সে মজিদকে ডাক দিয়ে বলল,এই মজিদ পালিয়ে যেও না রনজুকে ছাড়াতে হবে তো।
রফিক মাষ্টারের কথা শুনে এবার মজিদ থেমে গেল ।দ্রুত রফিক স্যার মসজিদের বিদু্যতের লাইন বন্ধ করে দিল।রনজু ফ্লোরের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। রফিক স্যার আবার বিদু্যতের লাইন সংযোগ দিয়ে দিল।
রফিক স্যার মজিদকে তাগাদা দিয়ে বলল,দ্রুত ধরো রনজুকে, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দুইজনে ধরে রনজুকে নিয়ে রাস্তায় উঠতেই একটা ভ্যান গাড়ী পেয়ে গেল।রনজুর ভাগ্য ভালোই বলতে হবে।
হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হলো রনজুকে।আল্লাহ্ র রহমতে রনজু বেঁচে গেল।তার জ্ঞান ফিরে এলো।রফিক স্যার আলহামদুলিল্লাহ্ বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো।
রফিক মাষ্টার চলে যেতে এবার মজিদ নকীব খানকে মোবাইলে খবর দিল।খবর শোনা মাত্র নকীব খান তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হলো।ভাইকে জড়িয়ে ধরে নকীব খানের স্ত্রী কাঁদতে লাগলো।
এবার নকীব খান মজিদের কাছে বিস্তারিত সবকিছু জানতে চাইল।
মসজিদে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা স-বিস্তার মজিদ খুলে বলল সবার কাছে। মজিদের কথা শুনে সবাই বিস্মিত হলো।নকীব খান মনে মনে একটা বড় ধাক্কা খেলেন।যাকে খুন করতে গেল রনজু সেই রফিক মাষ্টার ই আজ রনজুকে বাঁচাল।আমি অমানুষ হয়ে গেছিলাম,তাই এমন মহানুভব মানুষকে মারার জন্য রনজুকে পাঠিয়েছিলাম।নকীব খান যেন পুনরায় বিবেক ফিরে পেলেন।মনে মনে আল্লাহ্ র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
রাতেই রনজুকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো সবাই।
সকালে দরজায় টোকা শুনে রফিক মাষ্টার দরজা খুলে দিল।সে কিছুটা অবাক হলো কারণ চেয়ারম্যান নকীব খান সহ সবাই তার বাসায় এসে হাজির হয়েছে।
স্যার আমাকে মাফ করে দেন বলে রফিক স্যারের দুই পা জড়িয়ে ধরলো রনজু।নকীব খান আর তার স্ত্রীও তার পায়ে পড়ল।রফিক স্যার বিব্রতবোধ করলো। সে বলল,তোমরা সবাই ওঠো,আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমাদের প্রতি। আশা করি তোমরা সবাই সঠিক পথে ফিরে আসবে।আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি।আল্লাহ্ তোমাদের হেফাযত করবেন।
রফিক স্যারের কথা শুনে নকীব খান তার কান ধরে বলল,এই কান ধরে বলছি স্যার আর জীবনেও অপরাধ করবো না।সবকিছু দিয়ে হলেও মানুষের সেবা করবো।
তোমার মনের আশা পূরণ হোক আমি এই দোয়া করি। রফিক স্যার নকীব খানকে দোয়া করে বলল।
নকীব খান সবাইকে নিয়ে ফিরে আসার আগে বলল,স্যার আপনার বিশ্বাস দেখে আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখে,আল্লাহ্ র ওপরে মজবুত বিশ্বাস দেখে আমার মনে যে পরিবর্তন এসেছে তা যেন ধরে রাখতে পারি এই দোয়াটুকু ও করবেন স্যার।
রফিক মাষ্টার দেখল এবার সবার সত্যিকারের সুশিক্ষা হয়েছে তারা হয়তো এবার মানুষের কাজে লাগবে।তাই সে হাসিমুখে স্কুলের পথ ধরলো আর সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলল,আল্লাহ্ র ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তোমরা এগিয়ে গেলে জীবনে সফল হতে পারবে। আর আমি সবার জন্য সেই দোয়াই করি। আমি স্কুলে চললাম আর তোমরা মানুষের কল্যাণে কিছু করার জন্য এগিয়ে যাও।
রনজু তার এক বন্ধুকে নিয়ে চেয়ারম্যান নকীব খানের ডানহাত বামহাত হিসেবে ক্জ করে আর সবধরনের অপকর্মে সাহায্য করে থাকে।আজকে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে বোধহয় আর সে কারণেই নকীবখানের এমন মন্তব্য।তার কথা শুনে রনজু একটু বিব্রতবোধ করলো। কালক্ষেপণ না করে উল্টা রনজু নকীব খান কে পাল্টা প্রশ্ন করলো,কেন কি হয়েছে দুলাভাই ,আমি আর মজিদ কি শুধু বসে বসে খাই ,কোনো কাজ করিনা।কি হয়েছে আবার নতুন করে?
তেমন কিছু নয়। এই যে দেখ আঞ্চলিক খবরের কাগজে আমার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমি নাকি ত্রাণ এর অর্ধেক এর বেশি মেরে দিয়েছি ।সাথে সাথে আমি নাকি আরো নানা ধরণের অপকর্ম করেছি যা ধারাবাহিকভাবে সবকিছু প্রকাশ করা হবে।বোঝ এবার অবস্থা , আমার ইজ্জত আর চেয়ারম্যানগীরি কি আর থাকবে ? নকীবখান কথাগুলো বলে রনজু র হাতে খবরের কাগজটা ধরিয়ে দিলো।
রনজু খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পড়তে লাগল। আর তার বন্ধু মজিদ পাশে বসে খবরের কাগজটা পড়তে লাগল।খবরের কাগজ পড়ে মজিদ মনে মনে বলল,যা লিখেছে তা তো ঠিকই লিখেছে,গ্রামের সব ধরণের অপকর্মের হোতা তো আপনি ই আর আমরা আপনার হুকুমের গোলাম। ভাগ্যিস মজিদ উচ্চ শব্দে কথাগুলো বলেনি।তাহলে এক্ষুণি তার রফাদফা হয়ে যেত।
রনজু সবটুকু পড়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল। কারণ সহকারি হিসেবে তার ও মজিদের নামও রয়েছে সেখানে।খবরের কাগজটা ভাজ করে রেখে দিয়ে রনজু বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা বের করে হাতে নিয়ে তার দুলাভাইকে বলল,দুলাভাই খবরটা প্রকাশকারি সাংবাদিক তো ঐ পাড়ার রফিক মাষ্টার তাই না? আমি তার ব্যবস্থা করে আসছি যেন সে ধারাবাহিকভাবে খবর প্রকাশ করতে না পারে।
জবাবে নকীব খান বলল,ঠিক আছে যা ,তবে যদি কথা না শোনে তবে একেবারে ব্যবস্থা করে আসিস।
দুলাভাইয়ের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে রনজু রফিক মাষ্টারকে একেবারে শেষ করে দেবার জন্য মজিদকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে রাতের আঁধার নেমে এসেছে ধরার বুকে।চারিদিকে ঘুটঘুটে আঁধার নেমেছে। মজিদ রনজুকে বলল,চল এখনই সময়।রফিক মাষ্টারকে হয়তো বাজারে পাওয়া যেতে পারে।
যেই বলা সেই কাজ। মজিদের কথা অনুযায়ি দুজনে বাজারে গিয়ে রফিক মাষ্টারকে খুঁজতে লাগল। বাজার তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোথাও পেল না তাকে। কিছুটা হতাশ হলেো রনজু আর মজিদ। এই মাষ্টারকে থামাতে না পারলে আবার আগামিকাল তো খবরের কাগজে প্রকাশিত হবে তাদের সবার অপকর্মের কথা।সুতরাং মাষ্টারকে থামাতেই হবে তাদের।একটু ভাবলো রনজু।
সহসা তার মোবাইল ফোন বেজে উঠল।তার দুলাভাই কল করেছে।রিসিভ করে রনজু বলল,জ্বি দুলাভাই বলেন।
কোনো খবর আছে। কিছু করতে পারছিস।নকীব খান জানতে চাইল।
না খুঁজেই তো পাইনি। কিভাবে কি করবো। রনজু বলল।
আরে বোকা এখন বাড়ীতে গিয়ে খুঁজে দেখ।আর শোন প্রথমে ভয় দেখাবি আর হুমকি দিবি তাতে যদি কথা শোনে কিছু করার দরকার নাই।আর যদি কথা না শুনে বেশি বাড়াবাড়ি করে তোর কথা না মানে আর আমাদের খবর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে চায় তবে খবর বানিয়ে ওকেই শেষ করে দিস। নকীব খান রফিক মাষ্টারকে শেষ করে দেবার হুকুম দিয়ে দিল রনজু আর মজিদকে।
তার কথা শুনে রনজু বলল, ঠিক আছে দুলাভাই তোমার কথা অনুযায়ি কাজ হবে। এতটুকু বলে রনজু মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
এবার মজিদ আর রনজু দুজনে সরাসরি রফিক স্যারের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হলো।তারা দুইজনেই উত্তেজিত হয়ে আছে। কারণ দুইঘন্টা পর্যন্ত তারা রফিক মাষ্টারকে খুঁজেছে।কিন্তু তার দেখা পায়নি। তাই মজিদ জোড়ে দরজায় টোকা মেরে রফিক স্যারকে ডাক দিয়ে বলল, স্যার বাড়িতে আছেন।একটু বাইরে আসেন কথা আছে।
ভিতর থেকে জবাব এলো মহিলা কন্ঠে,তোমাদের স্যার বাড়ীতে নেই ,মসজিদে এশার নামায পড়তে গেছেন।
রনজু আর মজিদ একটুও অপেক্ষা করলো না।দুইজনে রফিক মাষ্টারের মৃতু্যদূত হয়ে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হলো।
ততক্ষণে এশার নামায শেষ হয়ে গেছে। বাড়ীর কাছেই মসজিদ,তাই সবার শেষে দু রাকায়াত নফল নামায পড়ে বের হন রফিক মাষ্টার ।মসজিদের দরজা প্রায় দিনই সে বন্ধ করে আসে।মসজিদের দরজা দিয়ে রনজু আর মজিদ ভিতরে রফিক মাষ্টারকে দেখতে পেল,বসে আছে।বিদু্যতের আলোতে পরিস্কারভাবে দেখা যাচ্ছে তাকে।রনজু একবার ভাবলো এখান থেকেই শেষ করে দেই শালারে। আবার ভাবলো না যদি কথা মেনে নেয় তাহলে তো খুন করতে নিষেধ করেছে তার দুলাভাই। আগে বলেই দেখি। খুনির কাছে সবকিছুই সমান।এটা যে মসজিদ তা ও সে ভুলে গেল।সোজা ঢুকে পড়লো মসজিদে।
রফিক মাষ্টার তাদেরকে দেখে ভয় পেয়ে গেল।দাঁড়িয়ে বলল,তোমরা এখন কি চাও আমি তো মসজিদ বন্ধ করে দেব ভাবছিলাম।তোমরা কি নামায পড়বে?
হা হা করে হাসলো রনজু আর মজিদ।তারপরে পিস্তলটা বের করে রফিক মাষ্টারের মাথায় ধরে রনজু বলল,আমরা তো আপনার জীবনটাই এখন বন্ধ করে দেব।যদি আমাদের কথা না শোনেন।
তোমরা কি চাও? রফিক মাষ্টার জানতে চাইল।
দুলাভাই আর আমাদের নামে আর কোনো অপকর্মের খবর ছাপা হাবে না ঐ খবরের কাগজে,এটাই আমাদের চাওয়া।রনজু হুমকি দিয়ে বলল।
যা সত্য তা তো প্রকাশিত হবেই।তোমরা অপরাধ ছেড়ে ভালো পথে ফিরে এসো।আমার অনুরোধ পিস্তলটা সরিয়ে নাও।রফিক মাষ্টার রনজুকে অনুরোধ করে বলল।
না প্রকাশিত হবে না।আর কোনো খবর প্রকাশিত হবে না।আমরা চাই যেটুকু হয়েছে তার জন্যও ভুল স্বীকার করতে হবে।রনজু আবার বলল।
সেটা সম্ভব নয়।আমি সত্যি লিখবই।আর চেয়ারম্যান এর অপকর্ম এর সব পর্ব সম্পাদকের কাছে জমা দেয়া হয়ে গেছে।সুতরাং তোমরা ভালো হও তোমাদের দুলাভাই সহ। রফিক মাষ্টার আবার রনজুদেরকে ভালো হবার আহ্বান জানিয়ে বলল।
তাহলে আমাদের কথা শুনবেন না।রনজু কঠোরভাবে রফিক মাষ্টারকে বলল।
কিছুতেই না। রফিক মাষ্টারের সোজা জবাব।
তাহলে আপনাকে কেউই এখন বাঁচাতে পারবে না।সুতরাং রেডি হন মৃতু্যর জন্য।রনজু গুলি করার জন্য প্রস্তুত হলো।
আমার বিশ্বাস আল্লাহ্ আমাকে বাঁচাবেন। রফিক মাষ্টার রনজুদেরকে এ কথা বলে মনে মনে কলেমা পড়তে লাগলো।
রফিক মাষ্টারের বিম্বাসই সত্য প্রমানিত হলো।আল্লাহ্ ই তার সহায় হলেন।যেই গুলি করতে যাবে রনজু ওমনি বিদু্যত চলে গেল।আর রফিক মাষ্টার এক লাফে মসজিদের এক কোনে চলে গেল।অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।রনজু হাক দিয়ে মজিদকে বলল,ঐ মজিদ জেনারেটরের লাইনটা অন কর।
জবাবে মজিদ বলল,কোথায় আমি জানি না।
মজিদের কথা শুনে রনজু নিজেই এবার জেনারেটরের লাইনটা খুঁজতে লাগল।আর এদিকে বিদু্যতের লাইনের একটা তার ছেঁড়া ছিল তার সঙ্গে গিয়ে রনজুর হাত লাগল। যেহেতু রনজু আর মজিদের মসজিদে আসা যাওয়া নেই তাই তাদের জানা ছিল নিা কোথায় কি আছে। অত্রএব রনজু ছেঁড়া তার ধরে হাতাতে লাগলো ,নাড়াচাড়া দিতে লাগলো।সহসা বিদু্যত চলে এলো। রনজু শক খেয়ে বিদু্যতের তারের সঙ্গে আটকে গেল।ভয়ে মজিদ দিল দৌঁড়।
এ পরিস্থিতি দেখে রফিক স্যারের বিবেক নাড়া দিল।সে মজিদকে ডাক দিয়ে বলল,এই মজিদ পালিয়ে যেও না রনজুকে ছাড়াতে হবে তো।
রফিক মাষ্টারের কথা শুনে এবার মজিদ থেমে গেল ।দ্রুত রফিক স্যার মসজিদের বিদু্যতের লাইন বন্ধ করে দিল।রনজু ফ্লোরের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। রফিক স্যার আবার বিদু্যতের লাইন সংযোগ দিয়ে দিল।
রফিক স্যার মজিদকে তাগাদা দিয়ে বলল,দ্রুত ধরো রনজুকে, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। দুইজনে ধরে রনজুকে নিয়ে রাস্তায় উঠতেই একটা ভ্যান গাড়ী পেয়ে গেল।রনজুর ভাগ্য ভালোই বলতে হবে।
হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হলো রনজুকে।আল্লাহ্ র রহমতে রনজু বেঁচে গেল।তার জ্ঞান ফিরে এলো।রফিক স্যার আলহামদুলিল্লাহ্ বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো।
রফিক মাষ্টার চলে যেতে এবার মজিদ নকীব খানকে মোবাইলে খবর দিল।খবর শোনা মাত্র নকীব খান তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হলো।ভাইকে জড়িয়ে ধরে নকীব খানের স্ত্রী কাঁদতে লাগলো।
এবার নকীব খান মজিদের কাছে বিস্তারিত সবকিছু জানতে চাইল।
মসজিদে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা স-বিস্তার মজিদ খুলে বলল সবার কাছে। মজিদের কথা শুনে সবাই বিস্মিত হলো।নকীব খান মনে মনে একটা বড় ধাক্কা খেলেন।যাকে খুন করতে গেল রনজু সেই রফিক মাষ্টার ই আজ রনজুকে বাঁচাল।আমি অমানুষ হয়ে গেছিলাম,তাই এমন মহানুভব মানুষকে মারার জন্য রনজুকে পাঠিয়েছিলাম।নকীব খান যেন পুনরায় বিবেক ফিরে পেলেন।মনে মনে আল্লাহ্ র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
রাতেই রনজুকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো সবাই।
সকালে দরজায় টোকা শুনে রফিক মাষ্টার দরজা খুলে দিল।সে কিছুটা অবাক হলো কারণ চেয়ারম্যান নকীব খান সহ সবাই তার বাসায় এসে হাজির হয়েছে।
স্যার আমাকে মাফ করে দেন বলে রফিক স্যারের দুই পা জড়িয়ে ধরলো রনজু।নকীব খান আর তার স্ত্রীও তার পায়ে পড়ল।রফিক স্যার বিব্রতবোধ করলো। সে বলল,তোমরা সবাই ওঠো,আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমাদের প্রতি। আশা করি তোমরা সবাই সঠিক পথে ফিরে আসবে।আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি।আল্লাহ্ তোমাদের হেফাযত করবেন।
রফিক স্যারের কথা শুনে নকীব খান তার কান ধরে বলল,এই কান ধরে বলছি স্যার আর জীবনেও অপরাধ করবো না।সবকিছু দিয়ে হলেও মানুষের সেবা করবো।
তোমার মনের আশা পূরণ হোক আমি এই দোয়া করি। রফিক স্যার নকীব খানকে দোয়া করে বলল।
নকীব খান সবাইকে নিয়ে ফিরে আসার আগে বলল,স্যার আপনার বিশ্বাস দেখে আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখে,আল্লাহ্ র ওপরে মজবুত বিশ্বাস দেখে আমার মনে যে পরিবর্তন এসেছে তা যেন ধরে রাখতে পারি এই দোয়াটুকু ও করবেন স্যার।
রফিক মাষ্টার দেখল এবার সবার সত্যিকারের সুশিক্ষা হয়েছে তারা হয়তো এবার মানুষের কাজে লাগবে।তাই সে হাসিমুখে স্কুলের পথ ধরলো আর সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলল,আল্লাহ্ র ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তোমরা এগিয়ে গেলে জীবনে সফল হতে পারবে। আর আমি সবার জন্য সেই দোয়াই করি। আমি স্কুলে চললাম আর তোমরা মানুষের কল্যাণে কিছু করার জন্য এগিয়ে যাও।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৩/০৭/২০২৩লেখাটি বেশ ভালো
-
মোহাম্মদ আফজাল হোসেন মাসুম ১১/০৯/২০২১মানুষের কল্যাণে কিছু করার মত আনন্দ আর কিছুতেই নেই। অসাধারণ লিখেছেন। লিখে যান মানব কল্যাণে।
-
আমিনুল ইসলাম সৈকত ০৯/০৯/২০২১শীতের সকাল। চারিদিকে ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে চলছে। ইফাজ, ইনান, ওহি, রুহি ও পুলক সাত সকালে একসাথে বেরিয়েছে ইংরেজি শিক্ষক রফিক স্যারের কাছে পড়তে। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তন্মধ্যে ইফাজ, ইনান, ওহি ও রুহি দশম শ্রেণীতে পড়ে। ইফাজ দশম শ্রেনীর ক্লাস ক্যাপ্টেন। তাকে প্রায় সবাই মান্য করে। অন্যদিকে পুলক নবম শ্রেনীতে পড়ে ইংরেজি বুঝার সুবিধার্থে ওদের সাথে যুক্ত হয়েছে। পথ চলতে চলতে হঠাৎ ইফাজের মাথায় একটা চিন্তা এলো। সে বাকিদের বললো আমদের আগামী রবিবার স্কুল বন্ধ, আমরা সবাই মিলে দিনটিকে উপভোগ করতে চাই । ওহি বললো হ্যাঁ তাইতো আমরা সবাই মিলে স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে পারি। ইনান বলনো কলোনির দীঘিতে সাঁতার প্রতিযোগিতা করতে পারি। এইসব বলতে বলতে তারা রফিক স্যারের বাড়িতে পৌঁছালো। জানতে পারলো স্যার জরুরি কাজে ঢাকা গিয়েছেন আজ পড়াবেন না। সবাই তো মহাখুশি। ইনান বললো আজ বৃহস্পতিবার। আজই অপারেশন টা নির্ধারণ করতে হবে। রুহি বলে হ্যাঁ আজই প্লান ক্লিয়ার করতে হবে। সময় কম, শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হতে পারবো না হোমওয়ার্ক আছে পরদিন শনিবার ক্লাস ও আছে। পুলক কিছুই বলছেনা বাকিরা যা বলবে সে তাই মেনে নিবে যেহেতু সে জুনিয়র।ইফাজ বললো আমাদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে তিন রাস্তার বার্লিংটন মোড়ের পাশে একটি পুরনো জমিদার বাড়ী আছে যেথায় কেউ থাকে না তোমরা জানো তো? সবাই উত্তর দিলো হ্যাঁ চিনি। পুলক বললো ওই বাড়িতে দেখার মতো কিছু নেই।তখনি রুহী বলে উঠলো ওই বাড়ী পুরো জঙ্গল হয়ে আছে। ওখানে আমি যাবো না আমার ভীষণ ভয় করবে।ওহী বলনো আরে ভীতুর ডিম আমরা সবই মিলে যেখানে যাবো সেখানে এসব ভয় টয় থাকবে না বুঝলি। ইফাজ বলে উঠলো আমারা জঙ্গলে কেনো যাবো পাগল হলাম নাকি? আমরা যাবো ডাব পাড়তে। গোটা বিশেক নারিকেল গাছ সেথায় আছে। ইফাজের কথা শুনে ইনান বললো বন্ধু আইডিয়াটা খুব ভালো লাগছে। এত বুদ্ধি কই রাখো? সমস্যা নাই আমি গাছে উঠতে পারি। আমি রাজি।ওহি বললো প্রতিবার তো আমরা বন্ধে খেলাধুলা করি এবার না হয় ভিন্ন কিছু হোক।রুহি এবার কোমল স্বরে বললো সবাই মিলে ডাব পেড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা, অন্যরকম অনুভূতি হবে।অবশেষে তারা প্লান নির্ধারণ করলো সবাই সেই বাড়িটাতে ডাব পেড়ে খাবে এরপর ঘুরবে তারপর ফিরবে। এবং এটাও নির্ধারণ হলো যে সবাই সকাল দশটাই বের হবে ও কাঁধে সকলে ব্যাগ নিয়ে আসবে যাতে কেউ চোর না ভাবে। এই মতে সবাই যার যার বাড়ি চলে গেলো। শুক্রবার, শনিবার পেরিয়ে গেলো। ঠিক দশটার সময় তারা যেই ভাবনা সেই কাজে বেরিয়ে পড়লো এবং সাড়ে দশটায় বার্লিংটন মোড়ে একত্রিত হলো। সবাই খুশি মনে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে যখন জমিদার বাড়ির নিকটে পৌঁছল তখন সকলের মুখ কালো হয়ে গেলো। তারা দেখতে পেলো কয়েকজন গাছ কাটার লোক জঙ্গল কেটে বাড়িটি পরিষ্কার করছে এবং দুজন ব্যক্তি সেটা মনিটরিং করছেন। মনে হয় তারা জমিদারের কোনো আত্নীয় হবেন। ইফাজ মাথায় হাত দিয়ে বললো ধুর! পুরো নকশাটা ভেস্তে গেলো। ওহি বললো আজকের দিনটাই মাটি হয়ে গেলো। পুলকের ও একই কথা। ইনান বললো মন খারাপ করে এখন আর কিছু হবে না। সামনে পার্ক আছে, চল সবাই পার্কের দিকে যায়। ইনানের কথায় সবাই পার্কের দিকে এগিয়ে চললো।যেতে যেতে পার্কের ঠিক কাছাকাছি তারা একটি ছোটো ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখলো। ইনান ব্যাগটি কুড়িয়ে নিলো এবং বুঝতে পারলো বুঝতে পারলো ব্যাগটি একটু ভারী। তার মনে হলো কোনো পাগল হয়তো কাঠের টুকরো কিংবা ইটের কনা ভরে ফেলে গেছে।তাই কৌতুহলী হয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে ইনান ব্যাগের চেইন খুললো। সবাই রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো। এতো টাকা! ইফাজ বললো চোখে ঝাপসা দেখছি মনে হয় ছুঁয়ে দেখে যে সবই ঠিক আছে। সকলের উদ্দীপনা বেড়ে গেলো। ব্যাগটি নিয়ে সবাই পার্কের নির্জন স্থানে বসলো।ইফাজ বললো টাকা গুলো আমরা সবাই গুনে দেখি। ব্যাগে বেশিরভাগ একশো আর পাঁচশো টাকার নোট। গুনতে গুনতে সবাই হিসেব করলো মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়েছে। সবাই অবাক। এত টাকা তারা জীবনেও ছুঁয়ে দেখে নি।কি করা যায়? সবার মাথায় নানারকম চিন্তা আসতে থাকলো রুহি বলে যেহুতু এই টাকার মালিক নেই আমরা টাকাগুলো ভাগ করে নিবো নাকি? ওহি বলে অারে নাহ এত টাকর দিয়ে আমরা কি করবো আর বাড়িতে নিলে বলবে চুরি করে এনেছি। ইফাজ বললো বাদ দে এসব আমরা সবাই মিলে দূরে রোমাঞ্চকর কোনো ট্যুরে যেতে পারি। পুলক বললো আমারা কি কি করছি সব আল্লাহ দেখছেন, কারো টাকা অাত্নসাৎ করলে আমাদের পাপ হবে। আমারদেরকে এই টাকার মালিক কে খুঁজতে হবে,কিন্তু কিভাবে? ইনান দেখলো ব্যাগটির একপাশে একট পকেট রয়েছে। ইফাজ ভাবলো সেখানে আরো টাকা আছে।ব্যাগের পকেট খুলে সে একটি কার্ড পেলো যেখানে লেখা আছে নামঃ সারোয়ার আলম, পেশাঃ এনজিও কর্মী, বয়সঃ ৩২ বছর, রক্তের গ্রুপ - বি পজেটিভ।এটা দেখে সবাই চমকে উঠলো।এবার আসল মালিককে খুঁজতে তাদের বেশি বেগ পেতে হবে না। সবার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরতে লাগলো। ইনান তার ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলো যে আমরা একটি টাকাভর্তি ব্যাগ কুড়ে পেয়েছি পার্কের পাশে কেউ আসল মালিকের সন্ধান দিন। পুলকের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। তার ব্যাগে কাগজ কলম আঠা সব আছে। সে তার ব্যাগ থেকে সাত আট পাতা অফসেট পেপার নিয়ে বড় অক্ষরে লিখলো মিস্টার সারোয়ার আলম সাহেব আমরা আপনার ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছি। ব্যাগটি নিতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। নিচে ইফাজের ফোন নাম্বার দিয়ে দেওয়া হলো।ইফাজের ব্যাগ লম্বা হওয়ার ইনান টাকার ব্যাগটি ইফাজের ব্যাগে সতর্কতার সহিত রাখলো যাতে পার্কে কেউ কিছু না বুঝতে পারে। ইফাজ বললো টাকাগুলো আমি বাড়িতে লোহার সিন্দুকে লুকিয়ে রাখবো কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না। কোন ব্যক্তি যোগাযোগ করলে আমরা সবাই মিলে তার ইটারভিউ নিবো কোনো এক দোকানে কিংবা স্কুল মাঠে। এরপর পুলকের তৈরি পেপারগুলো তারা পার্কের পাশে রাস্তার মোড়ে দেয়ালের সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিলো। এরপর সবাই বাড়ি ফিরে গেলো।সেদিন বিকেলে ইনান, ওহি, রুহি,পুলক স্কুল মাঠে গেলো। তাদের সাথে স্কুলের কতক বন্ধুর সাথে দেখা হলো। কিন্তু ইফাজ আসছেনা। সবার মনে প্রশ্ন ইফাজ কি টাকা নিয়ে ফেরারি হয়ে গেলো নাকি? এটা ভাবতে না ভাবতেই ইফাজ এসে হাজির। ইনান - কিরে কোনো খোঁজ পেলি?
ইফাজ - নাহ, কেউ যোগাযোগ করলো না।
এরপর তারা বসে মাঠে জুনিয়রদের খেলা উপভোগ করতে লাগলো। মিনিট দশেক পর হঠাৎ ইফাজের ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো।সবার কৌতুহল বেড়ে গেলো। ফোন রিসিভ করতে একটি লোক বললো আমি সারোয়ার আলম আমার একটি ব্যাগ হারিয়ে গেছে আজ আমি তোমাদের সাথে দেখা করতে চাই। ইফাজ বললো আপনি সোজা জিলা স্কুল মাঠে চলে আসেন, আমারা স্কুল মাঠেই আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে লোকটি আসলো। সবাই তাকে সালাম জানানো। লোকটিও সালামের উত্তর দিলো। ওহিঃ - আপনার নামই সারোয়ার আলম? লোকঃ- হ্যাঁ। রুহিঃ- আচ্ছা আপনার বয়স কত? লোকঃ ৩০ বছর।
ইনানঃ- ব্যাগে কি কি ছিলো আপনার? লোকঃ- আমার ব্যাগে কতগুলো টাকা আর কিছু কাগজ ছিলো। পুলকঃ- কত টাকা ছিলো ব্যাগে? লোকঃ-সেটা জানিনা আমার ছেলে কত হাজার পাঠিয়েছে।ইফাজঃ- আপনি কি কাজ করেন? লোকঃ- আমি একজন সিএনজি ড্রাইভার। এবার ইফাজ বললো আপনার কোনো তথ্য মিলেনি।আপনার কোনো ব্যাগ হারায়নি আপনি লোভে পড়ে এসেছেন। লোকটি লজ্জিত হয়ে চলে গেলো। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। সবাই যার যার মতো বাড়ি ফিরে গেলো। এরপর প্রায় দুই দিন হয়ে গেলো।কেউ আর যোগাযোগ করে নি। পরদিন সকালে ইফাজের ফোনে আরেকটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো। ইফাজ খুশিমনে ফোনটি রিসিভ করলো, ফোনে একজন লোক বললো আমি একজন এনজিও কর্মী আমার নাম সারওয়ার আলম।গতকয়দিন আমি বাড়ি থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে পার্ক এলাকায় আমার টাকাভর্তী ব্যাগ হারিয়ে যায়।আমি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা ঋন নিয়েছিলাম। ব্যাগে আমার পরিচয় কার্ড আছে।শুনে ইফাজের আগ্রহ বেড়ে গেল। সে বললো আপনার ব্যাগে কত টাকা ছিলো? লোকটি বললো আমার ব্যাগে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিলো।ইফাজ বললো আপনি জিলা স্কুল মাঠের পাশের চা দোকানে বিকাল চার টায় আসবেন। এই বলে ইফাজ দৌড়ে ইনানের কাছে যায় এবং বাকিদের ফোন করে আজ দ্রুত স্কুলে আসতে বলে। সবাই আটটা বাজে স্কুলে এসে হাজির। ইফাজ পুরো ঘটনা খুলে বলে।এরপর স্কুল ছুটির পর তারা দোকানের দিকে এগুতে থাকলো। দেখলো একটি লোক কোট সু পরে বসে আছেন। ইফাজ লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো আপনার নাম কি লোকটি বললো আমার নাম সারোয়ার আলম।এবং বললো আমার ব্যাগ কি তোমরা পেয়েছিলে। ইনান বললো হ্যাঁ পেয়েছি। তবে আঙ্কেল আপনাকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে। লোকটি বললো কি পরীক্ষা দিতে হবে? এবার ইনান বললো আপনি আমাদের সাথে পাশের মেডিকেল দোকানে চলেন আমরা আপনার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করবো।লোকটি তাদের সাথে মেডিকেল দোকানে গেলো। ইনান তার পকেটে থাকা একশো টাকা দিয়ে লোকটির রক্ত পরীক্ষা করালো।এরপর রিপোর্টে দেখা গেল রক্তের গ্রুফ বি পজেটিভ। দেখে তো সবাই আহ্লাদিত। ইফাজ দৌড়ে গিয়ে বাড়ি থেকে লুকিয়ে টাকার ব্যাগটা নিয়ে এলো।এবং লোকটিকে বললো আঙ্কেল আপনি এই ব্যাগের আসল মালিক। আসলে আমারা এই ব্যাগের আসল মালিককে খুঁজছিলাম। গতদুই দিন আগে একব্যক্তি ব্যাগের মালিক দাবি করে নিজের নাম পরিচয় সারোয়ার আলম দিয়েছিলো। কিন্তু টাকা অঙ্ক বাকি কিছুই মেলেনি। এজন্য আপনার পরীক্ষা নিয়েছিলাম আপনি কিছু মনে করবেন না। এই কথা শুনে সারোয়ার আলম অনেক খুশি হলেন এবং বললেন বাবারা তোমাদের কাছে আমি ঋনী। তোমরা আমাকে বাঁচিয়েছ। আমি আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম যে এ টাকা আর পাবোনা। আমি তোমাদের পুরস্কৃত করতে চাই এবং কিছু টাকা দিতে চাই তোমারা কি বলো । সবাই বললো অামাদের কিছু খেলার সামগ্রী কিনে দিলে আমরা এতেই খুশি এবং আমরা আপনার কাছে দোয়া চাই যেন বড় কিছু হতে পারি। সারোয়ার আলম একটি স্পোর্টস দোকান থেকে তাদের কে পাঁচটি ফুটবল,পাঁচটি ব্যাট,বল সহ আরপ কিছু জিনিস কিলে দিলেন। এবং বললেন আমার জন্য দোয়া করিও তোমারা। এই বলে তিনি বিদায় হলেন। খেলাধুলার সামগ্রী পেয়ে ইফাজ, ইনান, ওহি, রুহি ও পুলকের আনন্দের সীমা রইলো না। -
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩০/০৮/২০২১প্রতিদিনের গল্প।
-
ন্যান্সি দেওয়ান ২৯/০৮/২০২১Darun
-
আমান শেখ ২৮/০৮/২০২১বেশ ফুটিয়ে তুলেছেন। সুন্দর।