www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আগন্তুক

আপনি সময় মতো না এলে আমি ঘোর বিপদে পড়ে যেতাম।কিন্তু আপনি সময়মতো সহসা এখানে এলেন কোথা থেকে?শিলা আগন্তুক লোকটার কাছে জানতে চাইল।
আকাশের ওপর থেকে। অচেনা লোকটা আস্তে আস্তে বলল। তার কথা বলার ধরণ অন্যরকম। আর সব সাধারণ মানুষের মতো নয়। শিলা বিষয়টা লক্ষ্য করল।
দুজনে চুপচাপ হাটছিল আর একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করছিল বোধহয়।
একটু আগে শিলা একটা কঠিন বিপদে পড়েছিল।কিছু বখাটে পথভ্রষ্ট ছেলেরা শিলার পথ আটকেছিল অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে।
ঠিক এমন সময়ই অচেনা এই লোকটা এসে শিলাকে বখাটে ছেলেদের হাত থেকে রক্ষা করল। কিছু চড় লাথি এজন্য আগন্তুক লোকটাকে ব্যবহার করতে হয়েছে।


শিলা আগন্তুক লোকটার সঙ্গে হাটতে লাগল। কিছুক্ষণ হাটার পর লোকটা শিলাকে জিগ্যেস করল,আমি তাহলে আসি কি বলেন,একাকি যেতে পারবেন তো?
শিলা এখন ও কাপছিল মনে মনে সে খুব ভয় পেয়েছে।যদিও সে হাটছিল তবুও এই লোকটার জন্যই তার মনে শক্তি এসেছে।তাই লোকটার কথার জবাবে শিলা বলে উঠল,না না সেটা হবে না আমাকে পৌছে দিয়ে আসতে হবে। আমি খুব ভয় পেয়েছি,প্লিজ আর একটু উপকার করুন।
আচ্ছা চলুন। আগন্তুক লোকটা সহজেই রাজি হয়ে গেল।


কিছুক্ষণ চুপচাপ হাটার পর শিলা আগন্তুক লোকটাকে বলল,আচ্ছা আপনার সঙ্গে এতক্ষণ ধরে হাটছি অথচ আপনার নামটাই জানা হলো না।
আমার নাম রাকিব,আপনার?রাকিব নিজের নাম বলে শিলার নাম জানতে চাইল।
আমি শিলা। চলুন আর বেশিক্ষণ হাটতে হবে না,আর দুইটা বাড়ি তারপরই আমাদের বাড়ি।শিলা বলল।
রাকিব শিলাকে বাসায় পৌছে দিল।শিলা রাকিবকে বাসার ভিতরে আসার জন্য বলল। রাকিব শিলার আহবানে সাড়া দিল না।সে চলে যেতে উদ্যত হলো।শিলা কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে বলল,চলে যাচ্ছেন।আপনি কোথায় থাকেন?আপনার সাথে আর দেখা হবে না?
জবাবে রাকিব বলল,আপনার কাছাকাছি ই থাকি।আপনি মন থেকে আমাকে ডাকলেই আমি চলে আসব।আর তখনই আমাদের দেখা হতে পারে।চললাম।


রাকিব শিলার মনে দাগ কেটে চলে গেল। কঠিন বিপদ থেকে শিলাকে রক্ষা করেছে রাকিব তাই শিলার মনে রাকিবের জন্য অনুভূতির তৈরি হয়েছে।বারবার তার মনটা রাকিব কে দেখার জন্য ছটফট করছিল।কিন্তু কোনো ঠিকানাই তো রাখা হয়নি রাকিবের।শিলা যে কি বোকা রাকিবের মোবাইল নাম্বারটাও চেয়ে রাখেনি আর রাকিবকে একবার ধন্যবাদও জানানো হয়নি তার।শিলা নিজেকে খুব ধিক্কার দিতে লাগল।

পরদিন কলেজে এসে শিলা আবার একটা ঝামেলায় পড়ল ।কলেজের এক বড় ভাই শিলাকে খুব পছন্দ করে।সে শিলার পথ আটকাল,আর তার প্রেমের বিষয়ে নানান কথা বলতে লাগল । শিলার এই লোকটাকে মোটেও পছন্দ নয়।শিলা ভাবতে লাগল কি করা যায় কিভাবে এই লোকটার কথার অত্যাচার থেকে বাচা যায়।হঠাৎ রাকিবের কথা মনে পড়ল শিলার,রাকিব বলেছিল তাকে মন থেকে ডাকলেই সে চলে আসবে।
শিলা রাকিবের কথা ভাবতে লাগল।
রাকিবের কথা ভাবতেই শিলা লক্ষ্য করল কেউ বোধহয় তাকে পিছন থেকে শিলা বলে ডাকছে। শিলা পিছনে তাকাল,সে বিস্মিত হলো সত্যিই রাকিব তাকে ডাকছে। রাকিব তাকে ডেকে বলছে, এই শিলা আমি এখানে এদিকে আসুন ওখানে কি করছেন।
তৎক্ষণাৎ শিলা বিরক্তিকর বড় ভাইকে বলল,ভাইয়া আমি আসি ,আমার এক প্রিয় বন্ধু আমাকে ডাকছে।শিলা রাকিবকে দেখে যারপরনাই খুশি হলো।
সে দ্রুতপদে রাকিবের কাছে গিয়ে বলল,বাচালেন আমাকে আপনি সময়মতো এসে পড়েছেন,যা ঝামেলায় ছিলাম এতক্ষণ।
কেন কি হয়েছে?রাকিব জানতে চাইল।
আর বলবেন না,বিরক্তিকর এক বড় ভাই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকে । তার সামনে পড়ছিলাম এখন। আপনি এসে গেলেন তাই আপনার জন্য রেহাই পেলাম।
ও আচ্ছা, তাহলে আপনি চাইলে আমি ঐ লোকটাকে সাইজ করে দিতে পারি। রাকিব বলল।
না,না তার দরকার হবে না। আপনি কিছুদিন আমার সঙ্গে থাকলেই সবাই বুঝে যাবে আপনার সঙ্গে আমার প্রেম হয়ে গেছে। শিলা বলল।
কিন্তু প্রেম তো হয়নি,আর সেটা সম্ভবও নয়।রাকিব বলল।
শিলার মনটা খারাপ হয়ে গেল রাকিবের কথা শুনে। কথা ঘুরিয়ে এবার সে বলল,না,না আমি এমনিতেই বলেছি। আপনি চাইলে আমার এই উপকারটুকু করতে পারেন মানে আমাকে কয়দিন সঙ্গ দিলে সবাই বুঝে যাবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তখন আর কেউ আমাকে কখনো বিরক্ত করবে না।
শিলা যদি ও কথা ঘুরিয়ে বলছে,কিন্তু সে মন থেকে রাকিবকে ভালোবেসে ফেলেছে।প্রথম দিনই রাকিবকে তার ভালো লেগে গেছে।"মনের ব্যাপার মনে যদি বাশি বেজে ওঠে মানুষ কি করবে,সে তো ভালোবাসায় জড়াবেই।"
শিলার কথা শুনে এবার রাকিব বলল,আচ্ছা ঠিক আছে সেটা আমি কিছুদিনের জন্য করতে পারব, ভালোবাসা হোক বা না হোক আপনাকে আর কেউ ঝামেলা করতে পারবে না সে ব্যবস্থা আমি করে যাব।
রাকিবের কথা শুনে শিলা খুশি হয়ে বলল, অনেক ধন্যবাদ।


এরপরে রাকিব শিলাকে রোজ সঙ্গ দিতে লাগল। শিলার সমস্ত সমস্যায় রাকিব সামনে থেকে সমাধান করে দিত। শিলা পুরোপুরি রাকিবের ভালোবাসায় ডুবে গেল। শিলা নানান ভাবে তার ভালোবাসার কথা রাকিবকে বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগল।এমন পুরুষই তার চাই যে সমস্ত বিপদে সারাক্ষণ ছায়া হয়ে পাশে থাকবে।কিন্তু শিলার কাছে মনে হচ্ছে রাকিবের অনুভূতি যেন খুব কম।কিছুই বুঝতে চায়না ছেলেটা।শুধু বলে ভালোবাসা সম্ভব নয়। শিলার মনটা তাই খুব খারাপ । রাকিবের সাথে অভিমান করে সে কয়েকদিন কলেজে গেল না।


সহসা একদিন শিলা ঘুমিয়েছিল এমন সময় রাকিব এসে শিলাদের বাড়িতে হাজির হলো। রাকিব শিলার বিছানার কাছে এসে শিলাকে ডাক দিল।শিলার ঘুম ভেঙ্গে গেল।রাকিবকে তার বিছানার কাছে দেখে শিলা খুব খুশি হলো।সে বলে উঠল,আরে তুমি?
রাকিব বলল,জ্বি,আমি। তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি।
শিলা বিস্মিত হয়ে বলল,মানে।
এবার রাকিব বলল,আমি আসলে এখানকার কেউ নই।ভিন্ন জগত থেকে এখানে এসেছিলাম ঘুরতে।আমি ভবিষ্যত মানব, ২১০০ সালে আসব,আমার সময় শেষ ।বিদায় শিলা।
এভাবে তুমি যেতে পার না।আমি তোমাকে কত্ত ভালোবাসি জানো তুমি। শিলা রাকিবের হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠল।
রাকিব জবাবে বলল,তুমি হাত জড়িয়ে থাকো এভাবে আর আমি সে অবস্থায়ই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছি । আমার সময় একেবারেই শেষ। ভালো থেক।
এতটুকু বলে রাকিব শিলার চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল।
সহসা এভাবে রাকিবের অদৃশ্য হয়ে যাওয়াতে শিলা নির্বাক হয়ে গেল। শুধু তার আখিকোনে অশ্রুধারা বয়ে চলল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast