হাসু
গ্রামের নাম অশান্তপুর।যদিও গ্রামের মানুষগুলো খুবই শান্ত।তবে হাসুর মনটা খুব অশান্ত।আর গ্রামের এমন অদ্ভুত নাম যে কারা রেখেছিল হাসুর তা জানা নেই।সে মাঝে মাঝে গ্রামের চায়ের দোকানে বসে চুপচাপ বিষয়টা নিয়ে ভাবে।তবে কি হাসুর এই অশান্ত মনটার কথা ভেবেই প্রাচীনকালে কেউ বা কারা রেখেছিল গ্রামের নাম অশান্তপুর।একাকী নীরবে মুচকি হাসি দিয়ে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে হাসু।
মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভিতরে হাঁটলেই এই অশান্তপুর গ্রাম।সবুজে ঢাকা ,চারদিকে বন বনানীতে ভরপুর মাঝে মাঝে জনবসতি,খুবই সুন্দর একটি গ্রাম।মানুষের মাঝে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই,সহনশীলতার সহাবস্থান।আর এই গ্রামের নেতৃত্ব ধরে রেখেছেন কোব্বাত আলী।মানুষের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক গ্রামের সকল কাজের মাতুব্বরি করা তার চাই ই চাই।কেননা সে চেয়ারম্যান।তার একটা মূল্য আছে।এ রকমই ভেবে থাকে কোব্বাত আলী।
আর এই কোব্বাত আলী চেয়ারম্যানের সহকারী হচ্ছে হাসু।তার সার্বক্ষনিক সহকারী আর সকল কাজের সাক্ষী হচ্ছে এই হাসু।ছোটবেলা থেকে কোব্বাত আলীর কাছে মানুষ হয়েছে সে।শুনেছে এতিম ছিল সে,কে বা কারা পথ থেকে এনে চেয়ারম্যানের এর কাছে রেখেছিল তাকে.আর তার নিঃসন্তান স্ত্রী ভালোবেসে হাসুকে তখন নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন।
সেই থেকে হাসু চেয়ারম্যানের ঘরেই মানুষ।চেয়ারম্যানের স্ত্রী মারা গেছেন দুই বছর হলো।কিন্তু কোব্বাত আলী একটুও পরিবর্তন হয়নি।বরং তার অপকর্মের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এই রকম একটা বদ লোকের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে হাসুকে।এটা ভেবেই হাসুর মনটা ভীষণ অশান্ত।কিন্তু ছাড়তেও পারছে না।আর চেয়ারম্যান তাকে ছাড়বেও না।সকল অপকর্মের সাক্ষী এই হাসু।সে সবই জানে শুধু বাঁধা দিতে সাহস পায় না।আর এ কারণেই হাসুর বুকে চাপা ক্ষোভ।
গ্রামের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল হাসু।আর অশান্ত মনের বিবেকের শত প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করছিল সে।সহসা পিছন থেকে এক যুবক তাকে ডেকে বলে উঠল,হাসু রে চা খাচ্ছিস ?
জবাবে হাসু বলল,কেন বাবু কি হয়েছে?
চেয়ারম্যান সাহেব তোকে ডাকছে।বাড়ীতে গম বিতরণ হচ্ছে তুই সারাদিন কই থাকিস।বাবু তাগাদা দিয়ে বলল।
হাসু উঠে পড়ল।বাবুর পিঠে হাত দিয়ে বলল,আচ্ছা চল।
দুজনে কোব্বাত আলীর বাড়ীর দিকে এগিয়ে চলল।বাবু হচ্ছে গ্রামের ই এক সহজ সরল যুবক।তেমন শিক্ষা নেই তার তাই সে দৈনিক শ্রমিকের কাজ করে ।বেশির ভাগ সময় ই সে চেয়ারম্যানের কাজ করে থাকে ।
বাড়ীতে পৌঁছে হাসু দেখল গম বিতরণের কাজ শেষ।বাবু তাই আর সব শ্রমিককে নিয়ে চলে গেল।ঘরের মধ্যে ঢুকে হাসু দেখল গম তিন ভাগের এক ভাগ দেয়া হয়েছে বাকিটা ঘরেই আছে। তার বুকের মাঝে চাপা ক্ষোভ ছিল কিছুদিন ধরে তাই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে হাসু সরাসরি কোব্বাত আলী কে জিগ্যেস করলো,এত গম কেন রেখে দিয়েছেন।আর কত অপরাধ করবেন আপনি?
দরকার আছে ,এত চিৎকার করে কথা বলিস কেন?কোব্বাত আলী হাসুর কথা শুনে বলে উঠল।
কি দরকার ? গরীবের সব সম্পদ তো লুটে খাচ্ছেন রোজ।আমার চোখের সামনে পাচ পাচ টা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন আপনি।আর কতো আমি আর এসব সহ্য করতে পারিনা।নেহায়েত আপনার নুন খেয়েছি না হলে কিছু একটা করে বসতাম। হাসুর ক্ষোভ বিক্ষোভ হয়ে কন্ঠে জেগে উঠল।
হাসুর কথা শুনে চমকে উঠল কোব্বাত আলী। কষে একটা চড় বসিয়ে দিল হাসুর গালে।তারপরে বলল,কি বললি তুই কি করবি হারামীর বাচ্চা।
গালি দেবেন না।হাসু বাঁধা দিয়ে বলল।
কোব্বাত আলী হুংকার দিয়ে বলল,কি করবি তুই ,আমার বিরুদ্ধে কথা বললে কি হয় জানস না,তোর পালক মার কিভাবে ধীরে ধীরে মরণ হয়েছে দেখেছিস।আমার জ্বালা-যন্ত্রণা সইতে না পেরেই তো সে গত হয়েছে।তুই ও কিন্তু বাঁচবি না হাসু।
কোনো শয়তান আমাকে মারতে এলে আমিও তাকে ছেড়ে দেব না।আর কোনো অপকর্ম আমি সহ্য করবো না এই বলে গেলাম।কথাগুলো বলতে বলতে হাসু ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
হাসুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।আর হাসুর মন খারাপ হলে সে একটা কাজ করে।গ্রামের শিক্ষক হাসান সাহেবের বাড়ীতে সে চলে যায়।তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেই হাসুর মনটা ভালো হয়ে যায়।তারও একটি কারণ আছে, হাসান সাহেবের মেয়ে ময়না।ময়নাকে দেখলেই হাসুর মন ভালো হয়ে যায়।মনে মনে সে ময়নাকে ভালোবাসে ,কিন্তু সাহস করে সে কোনোদিন বলতে পারেনি।ময়নাও বিষয়টা বুঝতে পেরেছে তবুও সে ইচ্ছে করেই কোনো দিন কিছু বলেনি। এভাবেই চলছে হাসু ময়নার নীরবে মনের লেন দেন।
আজকেও হাসু মনটা ভালো করার জন্য ময়নাদের বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলো।কিন্তু ময়নাদের বাড়ীতে গিয়ে দেখল সেখানেও হতাশার মেঘ বইছে।ময়না কাঁদছে,তার বাবা মা কাঁদো কাঁদো স্বরে কথা বলছে।হাসু ভীতরে না গিয়ে ময়নার মাকে কাকী বলে ডাক দিল।
হাসু এসেছিস বাপ,আমাদের তো সর্বনাশ হতে চলেছে।কিছু শুনেছিস। হাসুকে দেখে ময়নার মা বলে উঠল।
কি হয়েছে আমাকে খুলে বলেন। হাসু জানতে চাইল।
এবার হাসান সাহেব ঘর থেকে বের হয়ে বলল,তাহলে তুমি কিছু জানো না।তবে শোনো, গতকাল রাতে কোব্বাত আলী এসেছিল।সে সরাসরি বলেছে আমার ময়নাকে তার মনে ধরেছে।ময়নাকে কোব্বাত আলী বিয়ে করতে চায়।আমি সরাসরি না বলেছি।তা শুনেই চিৎকার করে ওঠে কোব্বাত আলী।আর বলে গেছে- আমাদের গ্রাম ছাড়া করবে আর ময়নাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে।এখন আমরা কি করবো বলো। হাসান সাহেব বিস্তারিত বলে চুপ করলো।
হাসু যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে যারপরনাই বিস্মিত হলো।বুড়ো কোব্বাত আলী এবার তার বুকটা ধরে টান মেরেছে।সে হাসান সাহেব কে বলল,চাচা চিন্তা করবেন না।কান্নাকাটির কোনো দরকার নাই।আমি বাড়ীতে যাচ্ছি আর কোব্বাত আলীকে এ আশা বাদ দিতে বলছি আর কিভাবে তাকে থামানো যায় সে ব্যবস্থা আমি করছি।
হাসু ময়নাদের বাড়ী ছেড়ে কিছুদূর আসতেই দেখল বাবু দৌঁড়ে তার দিকেই আসছে। বাবু কাছে আসতেই তার কাছে হাসু জানতে চাইল,কি হয়েছে দৌঁড়ে আসছিস কেন?
তোর কাছেই আসছি । শোন আমি তোর সঙ্গে দেখা করতে তোদের বাড়ী গিয়েছিলাম।কিন্তু ঘরের কাছে যেতেই শুনলাম এবং যা দেখলাম তাতে আর ঘরের ভিতরে যাইনি।বুঝতে পেরেছি তুই বাসায় নাই।এক দমে বাবু বলে ফেলল।
কি হয়েছে খুলে বল। হাসু সবকিছু জানতে চাইল।
এবার বাবু বলল,শোন শহর থেকে কোব্বাত আলী তিনজন সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনছে।তাদের সবার হাতে অস্ত্র আছে।তারা চারজনে মিলে বুদ্ধি করেছে ময়নাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে আর তারপর তোকে খুন করবে।
কি বলছিস?হাসু চমকিত হয়ে বলে উঠল।
একটু ভাবল হাসু।তারপর বলল,তোর বন্ধু লাবু আছে না,তাকেও খবর দিয়ে নিয়ে আয়,কাজে লাগবে।
জবাবে বাবু বলল,যাব আর আসব।কিন্তু আমার মনে হয় তার আগে তোর ময়নাদের বাড়ীতে যাওয়া উচিত।যদি ইতিমধ্যে ওরা কিছু করে বসে।
ঠিক বলেছিস।বলেই হাসু দৌঁড় দিলো ময়নাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে। তার সমস্ত ক্ষোভ এখন অগ্নিরুপ ধারণ করেছে,যে কাউকে সে এখন খুনও করতে পারে।
বাবুর ধারণাই ঠিক হলো।ময়নাদের বাড়ী খানাই নিথর পড়ে আছে।জন মানুসের কোনো সাড়া শব্দ নেই।কোব্বাত আলী সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে।
হাসুর চেনা আছে কোব্বাত আলীর নির্জন কাছারী বাড়ীটা। যেখানে সে এর আগে পাচজন নারীর জীবন ধ্বংস করেছে।গ্রামের শেষের দিকে গাছ গাছালিতে পূর্ণ একটি ছোট বন আছে।তার মাঝ খানেই কোব্বাত আলী গড়ে তুলেছে একটি টিনের কাছারী ঘর।ময়না আর তার বাবা মাকে হয়তো ওখানেই উঠিয়ে নিয়ে গেছে শয়তানটা।
হাসু সেই দিকে রওনা হলো।কিছুদূর যেতে লাবু আর বাবুকে পেয়ে গেল।সে লাবুকে বলল,তুই থানায় যা আর গিয়ে পুলিশকে সবকিছু খুলে বল।আমি আর বাবু যাচ্ছি ওদেরকে শেষ করতে।
লাবু দৌঁড়ে থানার পথ ধরলো।
হাসু বাবুকে নিয়ে বুদ্ধি করলো।বিশাল আকারের দুটি বাঁশের লাঠি সঙ্গে নিল।আর নিল কিছু রশি। প্ল্যান করেই ওরা কাছারী ঘরের কাছে এল।
চারিদিকে আঁধার নেমে গেছে ততক্ষণে। আবছা আলোতে ওরা দেখল কাছারী ঘরের তিনদিকে তিনজন সন্ত্রাসী পাহাড়া দিচ্ছে।ঘরের বাইরে ময়নার বাবা মাকে মুখ আটকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।আর ঘরের ভেতরে দূর থেকে ময়নার চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
কোব্বাত আলী শয়তানটা হয়তো চাচ্ছে ময়নার জীবনটাও শেষ করে দিতে।কিন্তু হাসু যে কিনা কোব্বাত আলীর সন্তান সমতুল্য সে এবার আর তা হতে দেবে না।
অন্ধকার হতেই হাসু বুদ্ধি করে বাবুকে সঙ্গে নিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে একে একে পাকড়াও করলো।কিছু উত্তম মধ্যম দিয়ে একটা গাছের সঙ্গে সবাইকে বেঁধে রাখল।এদিকে কোব্বাত আলী নিজের শয়তানি চরিত্র প্রকাশ করতে উদ্যত হলো। হাসু আর বাবু দেরি করলো না। কাছারী ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুইজনে।ভিতরে ঢুকতেই কোব্বাত আলী তাদেরকে দেখে গুলি ছুড়ল,হাসু সরে গিয়ে বাঁশ দিয়ে জোড়ে কোব্বাত আলীর মাথায় আঘাত করলো।আর বাবু গুলিবিদ্ধ হলো।
এক আঘাতেই কোব্বাত আলী মৃতু্যমুখে পতিত হলো।আর আহত হলো বাবু।পিতৃতুল্য লোকটাকে হত্যা করে হাসু নিথর দাঁড়িয়ে রইল। তারপরেও এতোদিনে কেন জানি তার বুকটা শান্ত হলো।সব অপরাধকে সে নিজ হাতে শেষ করে দিল।
লাবু পুলিশ নিয়ে এল।সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাসুকে নিয়ে পুলিশ সম্মুখে অগ্রসর হলো।ময়না সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,আমার জন্য আপনার জীবনটা অন্ধকার হয়ে গেল।
হাসু হাসি দিয়ে বলল,না ময়না,আমার জীবনটা তোমার জন্য আলোকিত হয়ে গেল। তোমাকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আজ আমি অপরাধীকে শেষ করে দিতে সাহস পেয়েছিলাম।চিরতরে পাপ থেকে মুক্তির পথে যাত্রা করতে পারলাম। তুমি ভালো থেক,সুখে থেক।
হাসু পুলিশের সঙ্গে এগিয়ে গেল।আর ময়না দু’আঁখি মুছল।
মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভিতরে হাঁটলেই এই অশান্তপুর গ্রাম।সবুজে ঢাকা ,চারদিকে বন বনানীতে ভরপুর মাঝে মাঝে জনবসতি,খুবই সুন্দর একটি গ্রাম।মানুষের মাঝে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই,সহনশীলতার সহাবস্থান।আর এই গ্রামের নেতৃত্ব ধরে রেখেছেন কোব্বাত আলী।মানুষের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক গ্রামের সকল কাজের মাতুব্বরি করা তার চাই ই চাই।কেননা সে চেয়ারম্যান।তার একটা মূল্য আছে।এ রকমই ভেবে থাকে কোব্বাত আলী।
আর এই কোব্বাত আলী চেয়ারম্যানের সহকারী হচ্ছে হাসু।তার সার্বক্ষনিক সহকারী আর সকল কাজের সাক্ষী হচ্ছে এই হাসু।ছোটবেলা থেকে কোব্বাত আলীর কাছে মানুষ হয়েছে সে।শুনেছে এতিম ছিল সে,কে বা কারা পথ থেকে এনে চেয়ারম্যানের এর কাছে রেখেছিল তাকে.আর তার নিঃসন্তান স্ত্রী ভালোবেসে হাসুকে তখন নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন।
সেই থেকে হাসু চেয়ারম্যানের ঘরেই মানুষ।চেয়ারম্যানের স্ত্রী মারা গেছেন দুই বছর হলো।কিন্তু কোব্বাত আলী একটুও পরিবর্তন হয়নি।বরং তার অপকর্মের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এই রকম একটা বদ লোকের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে হাসুকে।এটা ভেবেই হাসুর মনটা ভীষণ অশান্ত।কিন্তু ছাড়তেও পারছে না।আর চেয়ারম্যান তাকে ছাড়বেও না।সকল অপকর্মের সাক্ষী এই হাসু।সে সবই জানে শুধু বাঁধা দিতে সাহস পায় না।আর এ কারণেই হাসুর বুকে চাপা ক্ষোভ।
গ্রামের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল হাসু।আর অশান্ত মনের বিবেকের শত প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করছিল সে।সহসা পিছন থেকে এক যুবক তাকে ডেকে বলে উঠল,হাসু রে চা খাচ্ছিস ?
জবাবে হাসু বলল,কেন বাবু কি হয়েছে?
চেয়ারম্যান সাহেব তোকে ডাকছে।বাড়ীতে গম বিতরণ হচ্ছে তুই সারাদিন কই থাকিস।বাবু তাগাদা দিয়ে বলল।
হাসু উঠে পড়ল।বাবুর পিঠে হাত দিয়ে বলল,আচ্ছা চল।
দুজনে কোব্বাত আলীর বাড়ীর দিকে এগিয়ে চলল।বাবু হচ্ছে গ্রামের ই এক সহজ সরল যুবক।তেমন শিক্ষা নেই তার তাই সে দৈনিক শ্রমিকের কাজ করে ।বেশির ভাগ সময় ই সে চেয়ারম্যানের কাজ করে থাকে ।
বাড়ীতে পৌঁছে হাসু দেখল গম বিতরণের কাজ শেষ।বাবু তাই আর সব শ্রমিককে নিয়ে চলে গেল।ঘরের মধ্যে ঢুকে হাসু দেখল গম তিন ভাগের এক ভাগ দেয়া হয়েছে বাকিটা ঘরেই আছে। তার বুকের মাঝে চাপা ক্ষোভ ছিল কিছুদিন ধরে তাই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে হাসু সরাসরি কোব্বাত আলী কে জিগ্যেস করলো,এত গম কেন রেখে দিয়েছেন।আর কত অপরাধ করবেন আপনি?
দরকার আছে ,এত চিৎকার করে কথা বলিস কেন?কোব্বাত আলী হাসুর কথা শুনে বলে উঠল।
কি দরকার ? গরীবের সব সম্পদ তো লুটে খাচ্ছেন রোজ।আমার চোখের সামনে পাচ পাচ টা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন আপনি।আর কতো আমি আর এসব সহ্য করতে পারিনা।নেহায়েত আপনার নুন খেয়েছি না হলে কিছু একটা করে বসতাম। হাসুর ক্ষোভ বিক্ষোভ হয়ে কন্ঠে জেগে উঠল।
হাসুর কথা শুনে চমকে উঠল কোব্বাত আলী। কষে একটা চড় বসিয়ে দিল হাসুর গালে।তারপরে বলল,কি বললি তুই কি করবি হারামীর বাচ্চা।
গালি দেবেন না।হাসু বাঁধা দিয়ে বলল।
কোব্বাত আলী হুংকার দিয়ে বলল,কি করবি তুই ,আমার বিরুদ্ধে কথা বললে কি হয় জানস না,তোর পালক মার কিভাবে ধীরে ধীরে মরণ হয়েছে দেখেছিস।আমার জ্বালা-যন্ত্রণা সইতে না পেরেই তো সে গত হয়েছে।তুই ও কিন্তু বাঁচবি না হাসু।
কোনো শয়তান আমাকে মারতে এলে আমিও তাকে ছেড়ে দেব না।আর কোনো অপকর্ম আমি সহ্য করবো না এই বলে গেলাম।কথাগুলো বলতে বলতে হাসু ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
হাসুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।আর হাসুর মন খারাপ হলে সে একটা কাজ করে।গ্রামের শিক্ষক হাসান সাহেবের বাড়ীতে সে চলে যায়।তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেই হাসুর মনটা ভালো হয়ে যায়।তারও একটি কারণ আছে, হাসান সাহেবের মেয়ে ময়না।ময়নাকে দেখলেই হাসুর মন ভালো হয়ে যায়।মনে মনে সে ময়নাকে ভালোবাসে ,কিন্তু সাহস করে সে কোনোদিন বলতে পারেনি।ময়নাও বিষয়টা বুঝতে পেরেছে তবুও সে ইচ্ছে করেই কোনো দিন কিছু বলেনি। এভাবেই চলছে হাসু ময়নার নীরবে মনের লেন দেন।
আজকেও হাসু মনটা ভালো করার জন্য ময়নাদের বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলো।কিন্তু ময়নাদের বাড়ীতে গিয়ে দেখল সেখানেও হতাশার মেঘ বইছে।ময়না কাঁদছে,তার বাবা মা কাঁদো কাঁদো স্বরে কথা বলছে।হাসু ভীতরে না গিয়ে ময়নার মাকে কাকী বলে ডাক দিল।
হাসু এসেছিস বাপ,আমাদের তো সর্বনাশ হতে চলেছে।কিছু শুনেছিস। হাসুকে দেখে ময়নার মা বলে উঠল।
কি হয়েছে আমাকে খুলে বলেন। হাসু জানতে চাইল।
এবার হাসান সাহেব ঘর থেকে বের হয়ে বলল,তাহলে তুমি কিছু জানো না।তবে শোনো, গতকাল রাতে কোব্বাত আলী এসেছিল।সে সরাসরি বলেছে আমার ময়নাকে তার মনে ধরেছে।ময়নাকে কোব্বাত আলী বিয়ে করতে চায়।আমি সরাসরি না বলেছি।তা শুনেই চিৎকার করে ওঠে কোব্বাত আলী।আর বলে গেছে- আমাদের গ্রাম ছাড়া করবে আর ময়নাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে।এখন আমরা কি করবো বলো। হাসান সাহেব বিস্তারিত বলে চুপ করলো।
হাসু যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে যারপরনাই বিস্মিত হলো।বুড়ো কোব্বাত আলী এবার তার বুকটা ধরে টান মেরেছে।সে হাসান সাহেব কে বলল,চাচা চিন্তা করবেন না।কান্নাকাটির কোনো দরকার নাই।আমি বাড়ীতে যাচ্ছি আর কোব্বাত আলীকে এ আশা বাদ দিতে বলছি আর কিভাবে তাকে থামানো যায় সে ব্যবস্থা আমি করছি।
হাসু ময়নাদের বাড়ী ছেড়ে কিছুদূর আসতেই দেখল বাবু দৌঁড়ে তার দিকেই আসছে। বাবু কাছে আসতেই তার কাছে হাসু জানতে চাইল,কি হয়েছে দৌঁড়ে আসছিস কেন?
তোর কাছেই আসছি । শোন আমি তোর সঙ্গে দেখা করতে তোদের বাড়ী গিয়েছিলাম।কিন্তু ঘরের কাছে যেতেই শুনলাম এবং যা দেখলাম তাতে আর ঘরের ভিতরে যাইনি।বুঝতে পেরেছি তুই বাসায় নাই।এক দমে বাবু বলে ফেলল।
কি হয়েছে খুলে বল। হাসু সবকিছু জানতে চাইল।
এবার বাবু বলল,শোন শহর থেকে কোব্বাত আলী তিনজন সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনছে।তাদের সবার হাতে অস্ত্র আছে।তারা চারজনে মিলে বুদ্ধি করেছে ময়নাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে আর তারপর তোকে খুন করবে।
কি বলছিস?হাসু চমকিত হয়ে বলে উঠল।
একটু ভাবল হাসু।তারপর বলল,তোর বন্ধু লাবু আছে না,তাকেও খবর দিয়ে নিয়ে আয়,কাজে লাগবে।
জবাবে বাবু বলল,যাব আর আসব।কিন্তু আমার মনে হয় তার আগে তোর ময়নাদের বাড়ীতে যাওয়া উচিত।যদি ইতিমধ্যে ওরা কিছু করে বসে।
ঠিক বলেছিস।বলেই হাসু দৌঁড় দিলো ময়নাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে। তার সমস্ত ক্ষোভ এখন অগ্নিরুপ ধারণ করেছে,যে কাউকে সে এখন খুনও করতে পারে।
বাবুর ধারণাই ঠিক হলো।ময়নাদের বাড়ী খানাই নিথর পড়ে আছে।জন মানুসের কোনো সাড়া শব্দ নেই।কোব্বাত আলী সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে।
হাসুর চেনা আছে কোব্বাত আলীর নির্জন কাছারী বাড়ীটা। যেখানে সে এর আগে পাচজন নারীর জীবন ধ্বংস করেছে।গ্রামের শেষের দিকে গাছ গাছালিতে পূর্ণ একটি ছোট বন আছে।তার মাঝ খানেই কোব্বাত আলী গড়ে তুলেছে একটি টিনের কাছারী ঘর।ময়না আর তার বাবা মাকে হয়তো ওখানেই উঠিয়ে নিয়ে গেছে শয়তানটা।
হাসু সেই দিকে রওনা হলো।কিছুদূর যেতে লাবু আর বাবুকে পেয়ে গেল।সে লাবুকে বলল,তুই থানায় যা আর গিয়ে পুলিশকে সবকিছু খুলে বল।আমি আর বাবু যাচ্ছি ওদেরকে শেষ করতে।
লাবু দৌঁড়ে থানার পথ ধরলো।
হাসু বাবুকে নিয়ে বুদ্ধি করলো।বিশাল আকারের দুটি বাঁশের লাঠি সঙ্গে নিল।আর নিল কিছু রশি। প্ল্যান করেই ওরা কাছারী ঘরের কাছে এল।
চারিদিকে আঁধার নেমে গেছে ততক্ষণে। আবছা আলোতে ওরা দেখল কাছারী ঘরের তিনদিকে তিনজন সন্ত্রাসী পাহাড়া দিচ্ছে।ঘরের বাইরে ময়নার বাবা মাকে মুখ আটকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।আর ঘরের ভেতরে দূর থেকে ময়নার চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
কোব্বাত আলী শয়তানটা হয়তো চাচ্ছে ময়নার জীবনটাও শেষ করে দিতে।কিন্তু হাসু যে কিনা কোব্বাত আলীর সন্তান সমতুল্য সে এবার আর তা হতে দেবে না।
অন্ধকার হতেই হাসু বুদ্ধি করে বাবুকে সঙ্গে নিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে একে একে পাকড়াও করলো।কিছু উত্তম মধ্যম দিয়ে একটা গাছের সঙ্গে সবাইকে বেঁধে রাখল।এদিকে কোব্বাত আলী নিজের শয়তানি চরিত্র প্রকাশ করতে উদ্যত হলো। হাসু আর বাবু দেরি করলো না। কাছারী ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুইজনে।ভিতরে ঢুকতেই কোব্বাত আলী তাদেরকে দেখে গুলি ছুড়ল,হাসু সরে গিয়ে বাঁশ দিয়ে জোড়ে কোব্বাত আলীর মাথায় আঘাত করলো।আর বাবু গুলিবিদ্ধ হলো।
এক আঘাতেই কোব্বাত আলী মৃতু্যমুখে পতিত হলো।আর আহত হলো বাবু।পিতৃতুল্য লোকটাকে হত্যা করে হাসু নিথর দাঁড়িয়ে রইল। তারপরেও এতোদিনে কেন জানি তার বুকটা শান্ত হলো।সব অপরাধকে সে নিজ হাতে শেষ করে দিল।
লাবু পুলিশ নিয়ে এল।সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাসুকে নিয়ে পুলিশ সম্মুখে অগ্রসর হলো।ময়না সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,আমার জন্য আপনার জীবনটা অন্ধকার হয়ে গেল।
হাসু হাসি দিয়ে বলল,না ময়না,আমার জীবনটা তোমার জন্য আলোকিত হয়ে গেল। তোমাকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আজ আমি অপরাধীকে শেষ করে দিতে সাহস পেয়েছিলাম।চিরতরে পাপ থেকে মুক্তির পথে যাত্রা করতে পারলাম। তুমি ভালো থেক,সুখে থেক।
হাসু পুলিশের সঙ্গে এগিয়ে গেল।আর ময়না দু’আঁখি মুছল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৮/০৩/২০২২বেশ ভাল সুন্দর
-
ন্যান্সি দেওয়ান ২১/০৫/২০২১Bah
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২১/০৫/২০২১অপূর্ব লেখনী।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৮/০৫/২০২১better...
-
ফয়জুল মহী ১৭/০৫/২০২১Valo laglo