পাতা
কুয়াশার চাদর ঠেলে তুহিন আস্তে আস্তে হেঁটে স্টেশনের দিকে এগিয়ে চলল।গ্রামের রাস্তা ,রাস্তার দুইপাশে নানাবিধ গাছের সারি রয়েছে।আর এমন রাস্তা দিয়েই তুহিন স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শীতকাল তাই কুয়াশায় চারদিক ছেয়ে আছে।এ গ্রামে সে এসেছিল শীতবস্ত্র বিতরণের কাজে।একটি ছোট গার্মেন্টস রয়েছে তুহিনের।সে প্রতি বছর শীতের দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে গরীব মানুষদের শীতের পোষাক দান করে থাকে।যাতে মানুষ শীতের ঠান্ডা থেকে নিজেদেরকে কিছুটা রক্ষা করতে পারে।
গতকালই কাপড় বিতরণ শেষ করেছিল তুহিন কিন্তু সে শহরে ফিরে যায়নি।কারণ কাজ শেষ করতে তার বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল।আর সারাদিনের ক্লান্তির কারণে সে আর ফিরে যায়নি।রাতটা এলাকার কমিশনারের বাড়িতে সে অতিথি হয়ে ছিল।
ভোর হতেই সে স্টেশনের দিকে রওনা হয়েছে।সকালের প্রথম ট্রেন ধরার জন্য সে খুব ভোরবেলাই রওনা হয়েছে স্টেশনের দিকে।তাই কুয়াশার চাদর ঠেলে তাকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে।এত ভোরে কোনো রিক্সা পেল না সে।কারণ গ্রামে এত ভোরে কোনো রিক্সা অথবা আর কোনো গাড়ি বের হয় না।সুতরাং তুহিনকে পায়ে হেঁটেই স্টেশনে আসতে হলো।
সাতটা বেজে গেল তার ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছাতে।
বেশ আগেভাগেই সে এসে গেছে।স্টেশন মাষ্টার তাকে বলল আরো এক থেকে দেড় ঘন্টা লেগে যাবে ট্রেন আসতে।কি আর করা,ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। একটু জায়গা নিয়ে সে বেঞ্চির ওপরে বসে পরলো।তার শরীরে ক্লান্তি রয়ে গেছে এখনো তাই সে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক।কিন্তু ঘুমাতে পারলো না সে।
কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু তার ঘুম আসলো না।সহসা রুমে বোরকা পরা একটা মেয়ে প্রবেশ করলো।সে এসে তার উল্টা দিকের বেঞ্চির ওপরে বসলো।প্রায় মুখোমুখি বসল মেয়েটা।তুহিন এতোক্ষণ একাকি এই ওয়েটিং রুমে ছিল।এখন মেয়েটা আসায় তার অন্ততঃ একজন নীরব সঙ্গি হলো।
কিছুক্ষণ পরে তুহিন খেয়াল করলো মেয়েটা তার দিকে বারবার তাকিয়ে তাকে দেখছে তার অগোচরে। তার কাছে বিষয়টা খটকা লাগল।এতো ভোরে এই মেয়ে এই স্টেশনে এলোও বা কোথা থেকে।তার মনে মেয়েটা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জেগে উঠল।কিন্তু তা সে প্রকাশ করতে পারলো না।কারণ অপরিচিত এই মেয়েকে কিছু বলতে গিয়ে সে আবার কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না।তাই সে নিশ্চুপই রইল।আপনার মনে সে আপনাতেই ডুবে থাকার চেষ্টা করতে লাগল।
কিন্তু নিশ্চুপ থাকা তার আর হলো না। সহসা মেয়েটা তাকে লক্ষ্য করে জিগ্যেস করলো,তুহিন তুমি এখানে,ভালো আছ?
মেয়েটার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল তুহিন।কে এই মেয়ে সে যে তাকে চেনে।এবার সে পাল্টা প্রশ্ন করল,কে আপনি?
তুহিনের প্রশ্ন শুনে মেয়েটা এবার তার বোরকার মুখটা খুলে বলল,আমি পাতা আমাকে চিনতে পারছ।
পাতাকে চিনবে না তুহিন তা কি হয়।বহু বছর হয়ে গেছে তাই কন্ঠটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে।এবার তর মুখটা দেখে তুহিন আবারও চমকে উঠল।এত বছর পর এভাবে পাতার সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাবে তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি।
এবার সে পাতার কাছে জানতে চাইল,তুমি এখানে?
তুহিনের কথার জবাবে পাতা বলল,হ্যাঁ আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক ফুফাতো বোনের বাসায়।কয়েকদিন ছিলাম এখানে আর আজ বাসায় ফিরে যাব তাই ভোরবেলাই রওনা হয়েছি।আর তুমি তুহিন এই দূর গ্রামে এখানে এলে কিভাবে?
একটা কাজে এসেছিলাম।গতকাল রাতে কাজটা শেষ হতে দেরি হয়েছিল তাই আর ফিরে যেতে পারিনি।সে জন্য একটু মনে কষ্টও হয়েছিল আমার কারণ ওদিকে আমার অনেক কাজ পরে রয়েছে।কিন্তু এখন আর কোনো কষ্ট নেই।কালকে দেরি হওয়াতে আজ এত বছর পর এই অচেনা দূর গাঁয়ের এই স্টেশনে তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তা তুমি কেমন আছ পাতা! তুহিন পাতার কথার জবাবে বলল আর পাতা কেমন আছে তা জানতে চাইল।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল পাতা।
কিছু বলছ না যে?কেমন আছ তুমি পাতা?তুহিন আবারও জানতে চাইল।
আমি কেমন আছি সে কথা বাদ দাও।বলতে পারো ভালোই আছি।তা তুমি কি কাজে এসেছিলে এখানে?এবার তুহিনের কাছে পাতা জানতে চাইল।
এই গরীব মানুষের জন্য কিছু শীতের কাপড় আর কম্বল নিয়ে এসেছিলাম এখানে।আমি প্রতি বছর শীতের দিনে আমার গার্মেন্টস থেকে গরীবদের কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকি।দেশের যেকোনো গ্রামে বা শহরেও যদি প্রকৃত গরীবদের সন্ধান পাই তাহলে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আর এ কারণেই এই গ্রামে আমি কালকে এসেছিলাম। পাতার কথার জবাবে তুহিন বলল।
খুব ভালো।আগের মতো মানুষের বিপদে এখনো এগিয়ে যাও তাহলে।শুধু আমার বিপদে এগিয়ে আসতে পারনি।গার্মেন্টস এর ব্যবসা দিয়েছ তাহলে।বেশ ভালো আছ,কিন্তু আমাকে তো ভুলে যাবার কথা ছিলনা তোমার।তুমি বলেছিলে আমাকে চিরকাল মনে রাখবে।পাতা বলল।
পাতার কথা শুনে নিশ্চুপ রইল তুহিন।
পাতা আবার বলল,কি চুপ করে আছ যে।
এবার তুহিন বলল,না তোমাকে ভুলে যাই নি তো।তুমি আগের মতোই বুকের মাঝে রয়ে গেছ।
কিভাবে তাতো টের পেলাম না।আমি যখন প্রথম তোমার সঙ্গে কথা বললাম তুমি আমাকে চিনতেই পারলে না।পাতা বলল।
দশটি বছর কেটে গেছে।তোমার কন্ঠটা একটু তো অচেনা লাগবেই।কিন্তু তোমাকে কখনই ভুলে যাইনি।তুমি আগে যেমন ছিলে এখনো তেমনই আমার ভালোবাসায় মিশে রয়েছ।আমি তোমাকে কখনও ভুলে যাইনি।কিন্তু তুমি তো সবকিছু ভুলে আমাকে ছেড়ে আরেক জনের হাত ধরে চলেই গেলে। তুহিন অনুযোগের সুরে বলল।
দোষটা তো আমার ই হবে।কিন্তু তুমি তো কোনো ভূমিকা রাখনি তখন।নিশ্চুপ ঠায় দাঁড়িয়ে আমার বাবার কথা মেনে নিয়েছিলে আর আমাকে কষ্টের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলে।তখন জোড় করে আমাকে নিয়ে যেতে কেন পার নি আর এখন আমার দোষ দিচ্ছ।পাতা নিজের কষ্টের কথা বলল।
কি করবো,কি করতে পারতাম আমি তখন।তোমার বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল আমার সাথে তোমাকে বিয়ে দেবে না তা আমি যত চেষ্টাই করি না কেন।সে কোনো ভালো চাকুরিজীবীর সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেবে।কোনো ব্যবসায়ী তার পছন্দ নয়।আর আমি তো চাকুরী করার কোনো চেষ্টাই করি নি কোনোদিন।সেই ছাত্রজীবন থেকেই তুমি জান আমি কোনো ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা করেছি।আর আজ একটা ব্যবসা দাড় করিয়েছি।আমি আসলে তোমাদের পরিবারের কাউকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে আপন করতে চাইনি।আমার ইচ্ছা ছিল সবাইকে খুশি রেখেই তোমার আমার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।কিন্তু তা তো আর হলো না।তুহিন বলল।
কাউকে কষ্ট দিতে চাও নি,কিন্তু আমাকে তো কষ্ট দিলে।পাতা বলল।
সেটা ছিল আমার ব্যর্থতা।তুহিন বলল।
তুমি একটু শক্ত হলে হয়ত আমার জীবনটা এমন হতো না।তুমি বাবার কথা না মানলেই তো হতো।আমি তো তোমার সাথে চলে যেতেও রাজি ছিলাম।তুমিই আসলে আমাকে ভালোবাসনি।পাতা বলল।
হয়ত তাই ঠিক।তুহিন বলল।
এরপরে দুজনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইল।তাদের হারানো ভালোবাসার কষ্টে দুজনেই নিথর নিশ্চুপ হয়ে আপনার মনে আপনি কষ্ট উপভোগ করল।এত বছর পরে অজান্তেই দেখা হয়ে গেল তুহিনের পাতার সাথে এই ওয়েটিং রুমে।যা তারা দুজনে জীবনে কখনো আশাও করেনি।কিন্তু ভাগ্যচক্রে তাদের দেখা হয়ে গেল।হয়ত এর মাঝে তাদের দুজনের জন্য কোনো মঙ্গল লুকিয়ে রয়েছে।এই ওয়েটিং রুমে এখন তারা শুধু দুইজনে এই কুয়াশায় ঢাকা ভোরবেলা তাদের সহসা দেখা হয়ে যাওয়ায় তাদের মনের কষ্টগুলো জেগে উঠেছে।
নিরবতা ভেঙ্গে এবার পাতা বলল,আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা।যা হবার তাতো হয়ে গেছে।আমাদের ফেলে আসা সময়ের ভালোবাসাকে নিয়ে এত কষ্ট পেলে চলবে না।এখন বল তুমি কেমন আছ।তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা?
পাতার কথা শুনে নিরব রইল তুহিন।
তুহিনকে নিরব থাকতে দেখে পাতা বলল,কি চুপ রইলে যে,তোমার পরিবারের কথা বলবে না?
না তা নয়। তুহিন বলল।
তাহলে কি?পাতা আবার জানতে চাইল।
আসলে হয়েছে কি,ব্যবসা নিয়ে সময় পার করতে গিয়ে আর ঐ পথে যাই নি।তুহিন বলল।
মানে।পাতা বলল।
মানে আর কিছু নয়।আমি এখনও পরিবার সৃষ্টির চেষ্টা করি নি।তুহিন বলল।
কি বলছ?পাতা বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
হ্যাঁ এটাই ঠিক।আমি বিয়ে করিনি।মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি আর ঐ পথে যাবার সময়ও বোধহয় আমার আর নেই।তুহিন বলল।
তুহিনের কথা শুনে পাতা বেশ বিস্মিত হয়ে গেল।তাহলে তুহিন এখন পর্যন্ত বিয়ে করে নি।তার স্মৃতিকে বুকে আকরে রেখে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে।বড় কষ্টের কথা,বিশেষ করে পাতার জন্য বেশ দুঃখের বিষয় এটা।তার কারনে কেউ নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছে এতো বছর ধরে আর তা সে জানতেও পারলো না।বেশ কষ্ট পেল পাতা এবার।সে আর কোনো কথা বলতে পারছে না।সে নিশ্চুপ তুহিনের দিকে তাকিয়ে রইল।
দুজনে আবার কিছুক্ষণ নীরব রইল।
সহস নীরবতা ভেঙ্গে তুহিন বলল,বাদ দাও আমার কথা।তোমার কথা বল।তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে।আর তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা?
তুহিনের কথা শুনে পাতা এবার আতকে উঠল।তার যে বলার মতো কেউ নাই সে কথা তুহিনের তো জানার কথা নয়।কি বলবে পাতা।সেও যে একা,তার যে আপনার কেউ নাই।সে কথা এখন কিভাবে পাতা বলবে তুহিনের কাছে। তার বুকের মাঝেও যে একরাশ মেঘ জমে আছে তাতো কেউ জানে না।সেও যে বুকের মাঝে কষ্ট লুকিয়ে রেখে তার জীবনের সময় পার করে দিচ্ছে তাতো কেউ জানে না।কি বলবে সে এখন।তুহিনের কাছে সবকিছু কি খুলে বলবে নাকি নিজের জীবনের কষ্টের কথা নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখবে।ভাবতে লাগল পাতা কি করবে সে.তুহিনের কাছে বলে দেবে সে তার জীবনের নিঠুর পরিণতির কথা নাকি এড়িয়ে যাবে সবকিছু বলবে ভালোই আছি।
আবার ভাবলো পাতা এড়িয়ে গিয়ে কি হবে আর।সবকিছু না হয় তুহিন জানল।তাতে তো কারো কিছু এসে যাবে না।আর তুহিনের চেয়ে আপন সে আর কাউকে তো পাবে না আর এ জীবনে।সুতরাং সেও তো তার পরিবারের একজনের মতো।তার কাছে সবকিছু বলা যায়।
আর বেশিকিছু ভাবতে পারলো না পাতা।তার ভাবনায় ছেদ টানল তুহিন।সে বলল,কি এত ভাবছ পাতা।বললে না তোমাদের কথা।তোমার স্বামী সন্তান কে কেমন আছে।
এবার পাতা বলল,কেউ নেই।
মানে? তুহিন চমকিত হয়ে বলে উঠল।
হ্যাঁ এটাই ঠিক।এখন আমি একা আমার কেউ নেই।আমি আগের মতোই বাবা মায়ের কাছে থাকি।তোমার সাথে আমার যোগাযোগ নাই তাই তুমি জানো না। আমি আগের মতোই আছি।একাকি জীবন যাপন করছি,আর বেশ ভালোই আছি। পাতা বলল।
পাতার কথা শুনে তুহিন বুঝতে পারল কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে পাতার জীবনে তাই সে পাতাকে বলল,আমাকে সবকিছু খুলে বল পাতা।
পাতা বলল,কি আর বলব।আমার কষ্টের কথা তোমার ভালো লাগবে না।
তুহিন বলল,তবু তুমি বল আমি শুনতে চাই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাতা বলল,আমার কপাল ভালো না।তোমাকে তো হারালাম তারপরে যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তাকেও ধরে রাখতে পারি নি।তাই এখন আমার কেউ নেই।
তাকে কেন হারালে আমাকে একটু খুলে বল।তুহিন সবকিছু বিস্তারিত জানতে চাইল।
এবার পাতা বলতে শুরু করলো,সেই যে বাবা তোমাকে রাগারাগি করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলল তারপরে বাবা কিছুটা একরোখা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।তোমাকে হারাতে হলো তাই আমি আর তেমন কঠোর না হয়ে বাবার কথাই মেনে নিলাম।মা একটু বাঁধা দিয়েছিল কারণ তার ছেলেটাকে তেমন পছন্দ হয়েছিল না।কিন্তু বাবার দৃঢ়তার কাছে মা র বাঁধা টিকল না।বাবা আমার বিয়েটা তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে ই দিয়ে দিল।
বিয়ের দুই বছর কেটে গেল। আমাদের সংসার ভালোই চলছিল।তোমাকে হারানোর কষ্ট নিয়ে আমি মন মরা হয়ে তার সাথে সব বিষয়ে সায় দিয়ে চলছিলাম।কিন্তু একসময় আর পারলাম না।কারণ সে ছিল অন্যরকম,দুই বছর সে তার আসল চরিত্র প্রকাশ করলো।বড় চাকুরি করতো তার চলাফেরা ছিল ভিন্ন।সে ক্লাব, পার্টি এসব করতো।আমি জীবনে কোনোদিন মদ দেখিনি,কিন্তু সে আমাকে তার সাথে পার্টিতে গিয়ে মদ খাওয়ার জন্য বলতো।আমি অবাক হতাম। আমি তাকে বলে দিলাম এভাবে আমার পক্ষে সম্ভব নয।
সে খুব রাগ করলো।আমি মধ্যবিত্ত সমাজের ভাব ধারায় বড় হয়েছি তার সাথে বেশিদিন আর সায় দিয়ে চলতে পারলাম না।সে রাগ করে আমার বাবার কাছে আমাকে আর রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল।বাবা আমার কাছে জানতে চাইল কি হয়েছে তোদের মাঝে কি বোঝাপরা এখনও ঠিকভাবে হয়নি।আমি আমার পরিবারের কারো কাছে কিছু খুলে বলিনি কিন্তু এবার বাবার কাছে আমি সবকিছু বললাম।সবকিছু শুনে বাবা ও বেশ রেগে গেল।সে বলল আমার মেয়েকে আমি এরকম বদ চরিত্রের ছেলের সঙ্গে আর রাখব না।
যা হবার তাই হলো।আমাদের আর একসঙ্গে থাকা হলো না।আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।এরপরে এই আট বছর কেটে গেল।বাবা আমাকে আবার বিয়ে দেবার জন্য বহু চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি আর রাজি হয়নি।অনেকে বাবার কাছে এসেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু আমি রাজি হই নি।বাবাও আমাকে আর তেমন একটা জোড় করেনি।বাবা বলেছে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি তোকে তোর পছন্দের ছেলের কাছে বিয়ে না দিয়ে আর তোর সাথে জোড় করবো না মা।যদি কোনোদিন মনে করিস তুই বিয়ে করবি তবেই আবার তোর জন্য চেষ্টা করবো।কিন্তু আমি আর ঐ ভুল করতে রাজি হইনি।
একসাথে বিস্তারিত সবকিছু বলে পাতা এবার চুপ করলো।
পাতার জীবনের ব্যাথার কথা শুনে তুহিনও মনে মনে অনেক ব্যথিত হলো।সবকিছু শুনে এবার সে বলল,তা মানিয়ে চলতে পারতে।
কতদিন পারতাম।ঐ রকম স্বভাবের মানুষের সাথে আমি মিলতে পারতাম না।তারা নিজেদেরকে উঁচু স্তরের মানুষ হিসেবে মনে করে।আমরা আসলে ঐ রকমভাবে মানুষ হইনি তুমি জানো তা সুতরাং সেপারেশনটাই ছিল বাস্তবতা।পাতা বলল।
ঠিক আছে।তারপরে এত সময় নষ্ট করলে কেন।আবার বিয়ে করে নিলে না কেন।তুহিন বলল।
সেটা আমার ইচ্ছা আমি কাউকে বলতে চাই না।পাতা বলল।
না আমাকে বলতে পারো।আমি তো আর কোনো কাউকে বলতে যাব না।তুহিন পাতার আবার বিয়ে না করার কারণ জানতে চেয়ে বলল।
এবার পাতা বলল,না তেমন কোনো কারণ নেই।আমার আর বিয়ে করতে ইচ্ছে করে নি তাই আর বিয়ে করিনি আর করতেও চাই না।এ জীবনে কতবার বিয়ে করবো।বুড়ো তো হয়ে গেছি।এ জীবনটা এখন একা ই কাটিয়ে দিতে চাই।
দূরে ট্রেন আসার শব্দ শোনা গেল।
ট্রেনের শব্দ শুনে পাতা বলল,আমার কথা বাদ দাও,তুমি বিয়ে করলে না কেন।তোমার উচিত বিয়ে করে নেয়া না হলে চিরকাল আমি নিজেকে অপরাধী হিসেবে ভেবে যাব।কারণ আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে পাওনি তাই আর বিয়েও করনি।
তুহিন বলল,এমনটা ভেবে নিজেকে অপরাধী ভাববে না এটা আমার অনুরোধ কারণ তোমার ভাবনা ভুলও তো হতে পারে।আর আমি তোমাকে অপরাধী হিসেবে কখনো ভাবিনি।
সে যাই হোক ট্রেন এসে গেছে তোমাকে একটা অনুরোধ করে যাই তুমি বিয়ে করে নিও তুহিন।এতটুকু বলে পাতা তার বোরকার মুখটা আটকে নিল।
তুহিন আবার কিছু হারাবার ভয়ে আতকে উঠলো সহসা।পাতাকে সে যেন বহু বছর পর আবার আপন করে পেয়েছিল এই স্টেশনের ওয়েটিং রুমে।সে তার মুখ আটকাতে আবার যেন হারানোর ভয় পেল তুহিন।
সে বলল,পাতা আমাদের কি আবার দেখা হতে পারে না।
না।আমি বলব আমাদের যেন আর কোনোদিন দেখা না হয়।শুধু আমার শেষ অনুরোধটুকু রেখ তুহিন।এইটুকু বলে পাতা ট্রেনে উঠে পরলো।
তুহিন শুধু বলল,আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।
এতটুকু বলে সেও পাতার সাথে ট্রেনে উঠে পরলো।কিন্তু সে আর পাতার সাথে বসতে পারলো না।পাতা আর কয়েকজন মেয়ের সাথে বসে পরলো।যদিও তুহিনের খুব ইচ্ছে করছিল পাতার সঙ্গে আরো কিছু কথা বলার।আরো কিছু বলার জন্য তার মনটা আকুপাকু করছিল।কিন্তু তাতো আর হলো না।ট্রেন ছুটে চলল আপন গতিতে।আর তুহিনের মনটাও ছুটে চলল আপন গতিতে পাতার মনের কাছে।পাতার মনে এখন কি আছে যদি ও তা তুহিনের জানা নেই।
পাতাকে আর কিছু বলা হয়নি তুহিনের কারণ পাতা তার আগের স্টেশনে নেমে গেল।সে তুহিনের দিকে একবার তাকিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পরলো।তুহিন মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল কিন্তু তা কতটা বাস্তবতা পাবে তা সে জানে না।
সপ্তাহ পার হয়ে গেল।তুহিন পাতার শেষ অনুরোধটুকু রাখার জন্য তাদের বাসায় এসে হাজির হলো।
দরজা খুলে তুহিনকে দেখে চমকিত হলো পাতার বাবা। সে বলল,তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন দেখেছিলাম বলতে পারো বাবা।
আমি তুহিন।আমার সাথে আপনার একবারই দেখা হয়েছিল।তুহিন বলল।
তুহিন , তুমি বাবা , আমি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু তুমি এত বছর পরে এলে বাবা এসো ভিতরে এসো । আমিতো আরো বহু বছর আগে থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম বাবা।পাতার বাবা বলল।
কেন চাচা?তুহিন জানতে চাইল।
আমার পাতা যে বড় একা হয়ে জীবন কাটাচ্ছে বাবা।পাতার বাবা অসহায়ের মতো বলে উঠল।
এবার তুহিন বলল,পাতা কোথায় চাচা আমি কি একটু ওর সঙ্গে কথা বলতে পারি ।
কেন পারবে না।তুমি বসো আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।এতটুকু বলে পাতার বাবা ভিতরের রুমে চলে গেল।
তুহিন পাতার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।পাচ মিনিট পরে পাতা তার সামনে এসে বলল,তুমি এখানে আমি তো আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাইনি।
না তোমার শেষ অনুরোধটুকু রক্ষা করার জন্য এসেছি।তুহিন বলল।
মানে,বুঝলাম না।পাতা বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
তুমি আমাকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলে আমি সেটা করার চেষ্টা করছি।আর তার জন্য তোমার অনুমতি দরকার।তুহিন বলল।
পাতা জানতে চাইল,তুমি কি বলতে চাইছ?
এবার তুহিন বলল,পরিস্কার ভাষায় বললে আমি তোমার অনুরোধ রাখতে চাই আর সেজন্য তোমাকে বিয়ে করে তোমার কথা রাখতে চাই।এখন তুমি রাজি হলেই আমি তোমার অনুরোধ রাখতে পারব।
এটা কোনোদিনও সম্ভব নয়। আমি তোমাকে আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলাম।সেটা তুমি এখন আমার ওপরে ফলাতে এসেছ।আমি রাজি না তুমি আসতে পারো।পাতা বলল।
ঠিক আছে তবে জেনে রেখ আমিও কোনোদিন তোমার অনুরোধ রাখব না।আর আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।তুহিন রাগ করে বলে উঠল।
আচ্ছা যাও আমি চাই তুমি আর কোনো ভালো মেয়ের সাথে জীবন জড়াও।আমাকে ঘৃণা করো।তুমি এখন আসতে পারো।পাতা আরো রাগ করে বলে উঠল।
পাতার কথায় তুহিন উঠে পরলো।সে উঠতেই পিছন থেকে পাতার মা বলল, বাবা তুমি উঠবে না।তুমি বসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।
তুহিন আবার বসল আর পাতার দিকে তাকাল।
পাতা তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আসতে পারো বসার দরকার নেই।
না আন্টি যখন বলেছে চা টা খেয়েই যাই।তুহিন বলল।
এবার পাতার মা তুহিনের হাতে চা তুলে দিয়ে বলল, বাবা তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। পাতার অনুমতির দরকার নাই।আমি বলছি ও রাজি আছে।
পাতা মায়ের ওপর রাগ করে বলল, মা তুমি এসব কি বলছ।
তুমি ভিতরে যাও।আমি যা বলছি তাই হবে,তুমি গিয়ে তুহিনের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করো।ও রাতে আমাদের সঙ্গে খাবে।পাতার মা তাকে নির্দেশ দিয়ে বলল।
মা আমার কথা শুনবে না।পাতা বলল।
তোমার কথা পরে শুনব।এখন যা বলছি তাই করো।পাতার মা আবার তাকে হুকুমের সুরে বলল।
এবার পাতার বাবাও সামনে এসে তার মেয়েকে বলল,মায়ের কথা মেনে নে মা।
বাবার কথা শুনে এবার পাতা তার বাবার সম্মতিটাও পেয়ে গেল।যদিও তার বাবা আরো আগে থেকেই তুহিনের পথ চেয়ে ছিল যদি তুহিন কোনোদিন ফিরে আসতো সেই আশা নিয়ে দিন কাটাতে ছিল আর আজ তার সেই আশা পূরণ হলো।
বাবার কথা শুনে আর কোনো কথা বলল না পাতা।সে ভিতরে চলে গেল।
আর পাতার মনের কথা তুহিন বুঝে গেল।সে পাতার নীরব সম্মতি পেয়ে গেল।
রাতে খাবার সময় পাতা তুহিনকে বলল,এ তুমি কি করলে।
তুহিন বলল,কিছুই করিনি শুধু তোমার অনুরোধ রেখেছি।আর দেরিতে হলে ও আমার মনের মানুষকে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েছি।
তুমি খুশি হয়েছ?পাতা তুহিনের কাছে জানতে চাইল।
পাতার হাতটি ধরে এবার তুহিন বলল,অনেক খুশি হয়েছি।আমার কোনোদিন ভাবনায় ও আসে নাই এইভাবে তোমাকে ফিরে পাব।জানি না হয়ত এই কারণেই আমি অজান্তেই তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম।আজ আমার অপেক্ষার অবসান হলো।
তুহিনের কথা শুনে এবার পাতা নীরবে একটু মুচকি হাসল আর কিছু বলল না।
গতকালই কাপড় বিতরণ শেষ করেছিল তুহিন কিন্তু সে শহরে ফিরে যায়নি।কারণ কাজ শেষ করতে তার বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল।আর সারাদিনের ক্লান্তির কারণে সে আর ফিরে যায়নি।রাতটা এলাকার কমিশনারের বাড়িতে সে অতিথি হয়ে ছিল।
ভোর হতেই সে স্টেশনের দিকে রওনা হয়েছে।সকালের প্রথম ট্রেন ধরার জন্য সে খুব ভোরবেলাই রওনা হয়েছে স্টেশনের দিকে।তাই কুয়াশার চাদর ঠেলে তাকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে।এত ভোরে কোনো রিক্সা পেল না সে।কারণ গ্রামে এত ভোরে কোনো রিক্সা অথবা আর কোনো গাড়ি বের হয় না।সুতরাং তুহিনকে পায়ে হেঁটেই স্টেশনে আসতে হলো।
সাতটা বেজে গেল তার ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছাতে।
বেশ আগেভাগেই সে এসে গেছে।স্টেশন মাষ্টার তাকে বলল আরো এক থেকে দেড় ঘন্টা লেগে যাবে ট্রেন আসতে।কি আর করা,ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। একটু জায়গা নিয়ে সে বেঞ্চির ওপরে বসে পরলো।তার শরীরে ক্লান্তি রয়ে গেছে এখনো তাই সে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক।কিন্তু ঘুমাতে পারলো না সে।
কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলো ঠিকই কিন্তু তার ঘুম আসলো না।সহসা রুমে বোরকা পরা একটা মেয়ে প্রবেশ করলো।সে এসে তার উল্টা দিকের বেঞ্চির ওপরে বসলো।প্রায় মুখোমুখি বসল মেয়েটা।তুহিন এতোক্ষণ একাকি এই ওয়েটিং রুমে ছিল।এখন মেয়েটা আসায় তার অন্ততঃ একজন নীরব সঙ্গি হলো।
কিছুক্ষণ পরে তুহিন খেয়াল করলো মেয়েটা তার দিকে বারবার তাকিয়ে তাকে দেখছে তার অগোচরে। তার কাছে বিষয়টা খটকা লাগল।এতো ভোরে এই মেয়ে এই স্টেশনে এলোও বা কোথা থেকে।তার মনে মেয়েটা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জেগে উঠল।কিন্তু তা সে প্রকাশ করতে পারলো না।কারণ অপরিচিত এই মেয়েকে কিছু বলতে গিয়ে সে আবার কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না।তাই সে নিশ্চুপই রইল।আপনার মনে সে আপনাতেই ডুবে থাকার চেষ্টা করতে লাগল।
কিন্তু নিশ্চুপ থাকা তার আর হলো না। সহসা মেয়েটা তাকে লক্ষ্য করে জিগ্যেস করলো,তুহিন তুমি এখানে,ভালো আছ?
মেয়েটার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল তুহিন।কে এই মেয়ে সে যে তাকে চেনে।এবার সে পাল্টা প্রশ্ন করল,কে আপনি?
তুহিনের প্রশ্ন শুনে মেয়েটা এবার তার বোরকার মুখটা খুলে বলল,আমি পাতা আমাকে চিনতে পারছ।
পাতাকে চিনবে না তুহিন তা কি হয়।বহু বছর হয়ে গেছে তাই কন্ঠটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে।এবার তর মুখটা দেখে তুহিন আবারও চমকে উঠল।এত বছর পর এভাবে পাতার সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাবে তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি।
এবার সে পাতার কাছে জানতে চাইল,তুমি এখানে?
তুহিনের কথার জবাবে পাতা বলল,হ্যাঁ আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক ফুফাতো বোনের বাসায়।কয়েকদিন ছিলাম এখানে আর আজ বাসায় ফিরে যাব তাই ভোরবেলাই রওনা হয়েছি।আর তুমি তুহিন এই দূর গ্রামে এখানে এলে কিভাবে?
একটা কাজে এসেছিলাম।গতকাল রাতে কাজটা শেষ হতে দেরি হয়েছিল তাই আর ফিরে যেতে পারিনি।সে জন্য একটু মনে কষ্টও হয়েছিল আমার কারণ ওদিকে আমার অনেক কাজ পরে রয়েছে।কিন্তু এখন আর কোনো কষ্ট নেই।কালকে দেরি হওয়াতে আজ এত বছর পর এই অচেনা দূর গাঁয়ের এই স্টেশনে তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তা তুমি কেমন আছ পাতা! তুহিন পাতার কথার জবাবে বলল আর পাতা কেমন আছে তা জানতে চাইল।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল পাতা।
কিছু বলছ না যে?কেমন আছ তুমি পাতা?তুহিন আবারও জানতে চাইল।
আমি কেমন আছি সে কথা বাদ দাও।বলতে পারো ভালোই আছি।তা তুমি কি কাজে এসেছিলে এখানে?এবার তুহিনের কাছে পাতা জানতে চাইল।
এই গরীব মানুষের জন্য কিছু শীতের কাপড় আর কম্বল নিয়ে এসেছিলাম এখানে।আমি প্রতি বছর শীতের দিনে আমার গার্মেন্টস থেকে গরীবদের কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকি।দেশের যেকোনো গ্রামে বা শহরেও যদি প্রকৃত গরীবদের সন্ধান পাই তাহলে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আর এ কারণেই এই গ্রামে আমি কালকে এসেছিলাম। পাতার কথার জবাবে তুহিন বলল।
খুব ভালো।আগের মতো মানুষের বিপদে এখনো এগিয়ে যাও তাহলে।শুধু আমার বিপদে এগিয়ে আসতে পারনি।গার্মেন্টস এর ব্যবসা দিয়েছ তাহলে।বেশ ভালো আছ,কিন্তু আমাকে তো ভুলে যাবার কথা ছিলনা তোমার।তুমি বলেছিলে আমাকে চিরকাল মনে রাখবে।পাতা বলল।
পাতার কথা শুনে নিশ্চুপ রইল তুহিন।
পাতা আবার বলল,কি চুপ করে আছ যে।
এবার তুহিন বলল,না তোমাকে ভুলে যাই নি তো।তুমি আগের মতোই বুকের মাঝে রয়ে গেছ।
কিভাবে তাতো টের পেলাম না।আমি যখন প্রথম তোমার সঙ্গে কথা বললাম তুমি আমাকে চিনতেই পারলে না।পাতা বলল।
দশটি বছর কেটে গেছে।তোমার কন্ঠটা একটু তো অচেনা লাগবেই।কিন্তু তোমাকে কখনই ভুলে যাইনি।তুমি আগে যেমন ছিলে এখনো তেমনই আমার ভালোবাসায় মিশে রয়েছ।আমি তোমাকে কখনও ভুলে যাইনি।কিন্তু তুমি তো সবকিছু ভুলে আমাকে ছেড়ে আরেক জনের হাত ধরে চলেই গেলে। তুহিন অনুযোগের সুরে বলল।
দোষটা তো আমার ই হবে।কিন্তু তুমি তো কোনো ভূমিকা রাখনি তখন।নিশ্চুপ ঠায় দাঁড়িয়ে আমার বাবার কথা মেনে নিয়েছিলে আর আমাকে কষ্টের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলে।তখন জোড় করে আমাকে নিয়ে যেতে কেন পার নি আর এখন আমার দোষ দিচ্ছ।পাতা নিজের কষ্টের কথা বলল।
কি করবো,কি করতে পারতাম আমি তখন।তোমার বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল আমার সাথে তোমাকে বিয়ে দেবে না তা আমি যত চেষ্টাই করি না কেন।সে কোনো ভালো চাকুরিজীবীর সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দেবে।কোনো ব্যবসায়ী তার পছন্দ নয়।আর আমি তো চাকুরী করার কোনো চেষ্টাই করি নি কোনোদিন।সেই ছাত্রজীবন থেকেই তুমি জান আমি কোনো ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা করেছি।আর আজ একটা ব্যবসা দাড় করিয়েছি।আমি আসলে তোমাদের পরিবারের কাউকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে আপন করতে চাইনি।আমার ইচ্ছা ছিল সবাইকে খুশি রেখেই তোমার আমার সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।কিন্তু তা তো আর হলো না।তুহিন বলল।
কাউকে কষ্ট দিতে চাও নি,কিন্তু আমাকে তো কষ্ট দিলে।পাতা বলল।
সেটা ছিল আমার ব্যর্থতা।তুহিন বলল।
তুমি একটু শক্ত হলে হয়ত আমার জীবনটা এমন হতো না।তুমি বাবার কথা না মানলেই তো হতো।আমি তো তোমার সাথে চলে যেতেও রাজি ছিলাম।তুমিই আসলে আমাকে ভালোবাসনি।পাতা বলল।
হয়ত তাই ঠিক।তুহিন বলল।
এরপরে দুজনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইল।তাদের হারানো ভালোবাসার কষ্টে দুজনেই নিথর নিশ্চুপ হয়ে আপনার মনে আপনি কষ্ট উপভোগ করল।এত বছর পরে অজান্তেই দেখা হয়ে গেল তুহিনের পাতার সাথে এই ওয়েটিং রুমে।যা তারা দুজনে জীবনে কখনো আশাও করেনি।কিন্তু ভাগ্যচক্রে তাদের দেখা হয়ে গেল।হয়ত এর মাঝে তাদের দুজনের জন্য কোনো মঙ্গল লুকিয়ে রয়েছে।এই ওয়েটিং রুমে এখন তারা শুধু দুইজনে এই কুয়াশায় ঢাকা ভোরবেলা তাদের সহসা দেখা হয়ে যাওয়ায় তাদের মনের কষ্টগুলো জেগে উঠেছে।
নিরবতা ভেঙ্গে এবার পাতা বলল,আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা।যা হবার তাতো হয়ে গেছে।আমাদের ফেলে আসা সময়ের ভালোবাসাকে নিয়ে এত কষ্ট পেলে চলবে না।এখন বল তুমি কেমন আছ।তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা?
পাতার কথা শুনে নিরব রইল তুহিন।
তুহিনকে নিরব থাকতে দেখে পাতা বলল,কি চুপ রইলে যে,তোমার পরিবারের কথা বলবে না?
না তা নয়। তুহিন বলল।
তাহলে কি?পাতা আবার জানতে চাইল।
আসলে হয়েছে কি,ব্যবসা নিয়ে সময় পার করতে গিয়ে আর ঐ পথে যাই নি।তুহিন বলল।
মানে।পাতা বলল।
মানে আর কিছু নয়।আমি এখনও পরিবার সৃষ্টির চেষ্টা করি নি।তুহিন বলল।
কি বলছ?পাতা বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
হ্যাঁ এটাই ঠিক।আমি বিয়ে করিনি।মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি আর ঐ পথে যাবার সময়ও বোধহয় আমার আর নেই।তুহিন বলল।
তুহিনের কথা শুনে পাতা বেশ বিস্মিত হয়ে গেল।তাহলে তুহিন এখন পর্যন্ত বিয়ে করে নি।তার স্মৃতিকে বুকে আকরে রেখে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে।বড় কষ্টের কথা,বিশেষ করে পাতার জন্য বেশ দুঃখের বিষয় এটা।তার কারনে কেউ নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছে এতো বছর ধরে আর তা সে জানতেও পারলো না।বেশ কষ্ট পেল পাতা এবার।সে আর কোনো কথা বলতে পারছে না।সে নিশ্চুপ তুহিনের দিকে তাকিয়ে রইল।
দুজনে আবার কিছুক্ষণ নীরব রইল।
সহস নীরবতা ভেঙ্গে তুহিন বলল,বাদ দাও আমার কথা।তোমার কথা বল।তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে।আর তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা?
তুহিনের কথা শুনে পাতা এবার আতকে উঠল।তার যে বলার মতো কেউ নাই সে কথা তুহিনের তো জানার কথা নয়।কি বলবে পাতা।সেও যে একা,তার যে আপনার কেউ নাই।সে কথা এখন কিভাবে পাতা বলবে তুহিনের কাছে। তার বুকের মাঝেও যে একরাশ মেঘ জমে আছে তাতো কেউ জানে না।সেও যে বুকের মাঝে কষ্ট লুকিয়ে রেখে তার জীবনের সময় পার করে দিচ্ছে তাতো কেউ জানে না।কি বলবে সে এখন।তুহিনের কাছে সবকিছু কি খুলে বলবে নাকি নিজের জীবনের কষ্টের কথা নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখবে।ভাবতে লাগল পাতা কি করবে সে.তুহিনের কাছে বলে দেবে সে তার জীবনের নিঠুর পরিণতির কথা নাকি এড়িয়ে যাবে সবকিছু বলবে ভালোই আছি।
আবার ভাবলো পাতা এড়িয়ে গিয়ে কি হবে আর।সবকিছু না হয় তুহিন জানল।তাতে তো কারো কিছু এসে যাবে না।আর তুহিনের চেয়ে আপন সে আর কাউকে তো পাবে না আর এ জীবনে।সুতরাং সেও তো তার পরিবারের একজনের মতো।তার কাছে সবকিছু বলা যায়।
আর বেশিকিছু ভাবতে পারলো না পাতা।তার ভাবনায় ছেদ টানল তুহিন।সে বলল,কি এত ভাবছ পাতা।বললে না তোমাদের কথা।তোমার স্বামী সন্তান কে কেমন আছে।
এবার পাতা বলল,কেউ নেই।
মানে? তুহিন চমকিত হয়ে বলে উঠল।
হ্যাঁ এটাই ঠিক।এখন আমি একা আমার কেউ নেই।আমি আগের মতোই বাবা মায়ের কাছে থাকি।তোমার সাথে আমার যোগাযোগ নাই তাই তুমি জানো না। আমি আগের মতোই আছি।একাকি জীবন যাপন করছি,আর বেশ ভালোই আছি। পাতা বলল।
পাতার কথা শুনে তুহিন বুঝতে পারল কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে পাতার জীবনে তাই সে পাতাকে বলল,আমাকে সবকিছু খুলে বল পাতা।
পাতা বলল,কি আর বলব।আমার কষ্টের কথা তোমার ভালো লাগবে না।
তুহিন বলল,তবু তুমি বল আমি শুনতে চাই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাতা বলল,আমার কপাল ভালো না।তোমাকে তো হারালাম তারপরে যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তাকেও ধরে রাখতে পারি নি।তাই এখন আমার কেউ নেই।
তাকে কেন হারালে আমাকে একটু খুলে বল।তুহিন সবকিছু বিস্তারিত জানতে চাইল।
এবার পাতা বলতে শুরু করলো,সেই যে বাবা তোমাকে রাগারাগি করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলল তারপরে বাবা কিছুটা একরোখা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।তোমাকে হারাতে হলো তাই আমি আর তেমন কঠোর না হয়ে বাবার কথাই মেনে নিলাম।মা একটু বাঁধা দিয়েছিল কারণ তার ছেলেটাকে তেমন পছন্দ হয়েছিল না।কিন্তু বাবার দৃঢ়তার কাছে মা র বাঁধা টিকল না।বাবা আমার বিয়েটা তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে ই দিয়ে দিল।
বিয়ের দুই বছর কেটে গেল। আমাদের সংসার ভালোই চলছিল।তোমাকে হারানোর কষ্ট নিয়ে আমি মন মরা হয়ে তার সাথে সব বিষয়ে সায় দিয়ে চলছিলাম।কিন্তু একসময় আর পারলাম না।কারণ সে ছিল অন্যরকম,দুই বছর সে তার আসল চরিত্র প্রকাশ করলো।বড় চাকুরি করতো তার চলাফেরা ছিল ভিন্ন।সে ক্লাব, পার্টি এসব করতো।আমি জীবনে কোনোদিন মদ দেখিনি,কিন্তু সে আমাকে তার সাথে পার্টিতে গিয়ে মদ খাওয়ার জন্য বলতো।আমি অবাক হতাম। আমি তাকে বলে দিলাম এভাবে আমার পক্ষে সম্ভব নয।
সে খুব রাগ করলো।আমি মধ্যবিত্ত সমাজের ভাব ধারায় বড় হয়েছি তার সাথে বেশিদিন আর সায় দিয়ে চলতে পারলাম না।সে রাগ করে আমার বাবার কাছে আমাকে আর রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিল।বাবা আমার কাছে জানতে চাইল কি হয়েছে তোদের মাঝে কি বোঝাপরা এখনও ঠিকভাবে হয়নি।আমি আমার পরিবারের কারো কাছে কিছু খুলে বলিনি কিন্তু এবার বাবার কাছে আমি সবকিছু বললাম।সবকিছু শুনে বাবা ও বেশ রেগে গেল।সে বলল আমার মেয়েকে আমি এরকম বদ চরিত্রের ছেলের সঙ্গে আর রাখব না।
যা হবার তাই হলো।আমাদের আর একসঙ্গে থাকা হলো না।আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।এরপরে এই আট বছর কেটে গেল।বাবা আমাকে আবার বিয়ে দেবার জন্য বহু চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি আর রাজি হয়নি।অনেকে বাবার কাছে এসেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু আমি রাজি হই নি।বাবাও আমাকে আর তেমন একটা জোড় করেনি।বাবা বলেছে জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি তোকে তোর পছন্দের ছেলের কাছে বিয়ে না দিয়ে আর তোর সাথে জোড় করবো না মা।যদি কোনোদিন মনে করিস তুই বিয়ে করবি তবেই আবার তোর জন্য চেষ্টা করবো।কিন্তু আমি আর ঐ ভুল করতে রাজি হইনি।
একসাথে বিস্তারিত সবকিছু বলে পাতা এবার চুপ করলো।
পাতার জীবনের ব্যাথার কথা শুনে তুহিনও মনে মনে অনেক ব্যথিত হলো।সবকিছু শুনে এবার সে বলল,তা মানিয়ে চলতে পারতে।
কতদিন পারতাম।ঐ রকম স্বভাবের মানুষের সাথে আমি মিলতে পারতাম না।তারা নিজেদেরকে উঁচু স্তরের মানুষ হিসেবে মনে করে।আমরা আসলে ঐ রকমভাবে মানুষ হইনি তুমি জানো তা সুতরাং সেপারেশনটাই ছিল বাস্তবতা।পাতা বলল।
ঠিক আছে।তারপরে এত সময় নষ্ট করলে কেন।আবার বিয়ে করে নিলে না কেন।তুহিন বলল।
সেটা আমার ইচ্ছা আমি কাউকে বলতে চাই না।পাতা বলল।
না আমাকে বলতে পারো।আমি তো আর কোনো কাউকে বলতে যাব না।তুহিন পাতার আবার বিয়ে না করার কারণ জানতে চেয়ে বলল।
এবার পাতা বলল,না তেমন কোনো কারণ নেই।আমার আর বিয়ে করতে ইচ্ছে করে নি তাই আর বিয়ে করিনি আর করতেও চাই না।এ জীবনে কতবার বিয়ে করবো।বুড়ো তো হয়ে গেছি।এ জীবনটা এখন একা ই কাটিয়ে দিতে চাই।
দূরে ট্রেন আসার শব্দ শোনা গেল।
ট্রেনের শব্দ শুনে পাতা বলল,আমার কথা বাদ দাও,তুমি বিয়ে করলে না কেন।তোমার উচিত বিয়ে করে নেয়া না হলে চিরকাল আমি নিজেকে অপরাধী হিসেবে ভেবে যাব।কারণ আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে পাওনি তাই আর বিয়েও করনি।
তুহিন বলল,এমনটা ভেবে নিজেকে অপরাধী ভাববে না এটা আমার অনুরোধ কারণ তোমার ভাবনা ভুলও তো হতে পারে।আর আমি তোমাকে অপরাধী হিসেবে কখনো ভাবিনি।
সে যাই হোক ট্রেন এসে গেছে তোমাকে একটা অনুরোধ করে যাই তুমি বিয়ে করে নিও তুহিন।এতটুকু বলে পাতা তার বোরকার মুখটা আটকে নিল।
তুহিন আবার কিছু হারাবার ভয়ে আতকে উঠলো সহসা।পাতাকে সে যেন বহু বছর পর আবার আপন করে পেয়েছিল এই স্টেশনের ওয়েটিং রুমে।সে তার মুখ আটকাতে আবার যেন হারানোর ভয় পেল তুহিন।
সে বলল,পাতা আমাদের কি আবার দেখা হতে পারে না।
না।আমি বলব আমাদের যেন আর কোনোদিন দেখা না হয়।শুধু আমার শেষ অনুরোধটুকু রেখ তুহিন।এইটুকু বলে পাতা ট্রেনে উঠে পরলো।
তুহিন শুধু বলল,আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।
এতটুকু বলে সেও পাতার সাথে ট্রেনে উঠে পরলো।কিন্তু সে আর পাতার সাথে বসতে পারলো না।পাতা আর কয়েকজন মেয়ের সাথে বসে পরলো।যদিও তুহিনের খুব ইচ্ছে করছিল পাতার সঙ্গে আরো কিছু কথা বলার।আরো কিছু বলার জন্য তার মনটা আকুপাকু করছিল।কিন্তু তাতো আর হলো না।ট্রেন ছুটে চলল আপন গতিতে।আর তুহিনের মনটাও ছুটে চলল আপন গতিতে পাতার মনের কাছে।পাতার মনে এখন কি আছে যদি ও তা তুহিনের জানা নেই।
পাতাকে আর কিছু বলা হয়নি তুহিনের কারণ পাতা তার আগের স্টেশনে নেমে গেল।সে তুহিনের দিকে একবার তাকিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পরলো।তুহিন মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল কিন্তু তা কতটা বাস্তবতা পাবে তা সে জানে না।
সপ্তাহ পার হয়ে গেল।তুহিন পাতার শেষ অনুরোধটুকু রাখার জন্য তাদের বাসায় এসে হাজির হলো।
দরজা খুলে তুহিনকে দেখে চমকিত হলো পাতার বাবা। সে বলল,তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন দেখেছিলাম বলতে পারো বাবা।
আমি তুহিন।আমার সাথে আপনার একবারই দেখা হয়েছিল।তুহিন বলল।
তুহিন , তুমি বাবা , আমি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু তুমি এত বছর পরে এলে বাবা এসো ভিতরে এসো । আমিতো আরো বহু বছর আগে থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম বাবা।পাতার বাবা বলল।
কেন চাচা?তুহিন জানতে চাইল।
আমার পাতা যে বড় একা হয়ে জীবন কাটাচ্ছে বাবা।পাতার বাবা অসহায়ের মতো বলে উঠল।
এবার তুহিন বলল,পাতা কোথায় চাচা আমি কি একটু ওর সঙ্গে কথা বলতে পারি ।
কেন পারবে না।তুমি বসো আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।এতটুকু বলে পাতার বাবা ভিতরের রুমে চলে গেল।
তুহিন পাতার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।পাচ মিনিট পরে পাতা তার সামনে এসে বলল,তুমি এখানে আমি তো আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাইনি।
না তোমার শেষ অনুরোধটুকু রক্ষা করার জন্য এসেছি।তুহিন বলল।
মানে,বুঝলাম না।পাতা বিস্মিত হয়ে বলে উঠল।
তুমি আমাকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলে আমি সেটা করার চেষ্টা করছি।আর তার জন্য তোমার অনুমতি দরকার।তুহিন বলল।
পাতা জানতে চাইল,তুমি কি বলতে চাইছ?
এবার তুহিন বলল,পরিস্কার ভাষায় বললে আমি তোমার অনুরোধ রাখতে চাই আর সেজন্য তোমাকে বিয়ে করে তোমার কথা রাখতে চাই।এখন তুমি রাজি হলেই আমি তোমার অনুরোধ রাখতে পারব।
এটা কোনোদিনও সম্ভব নয়। আমি তোমাকে আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলাম।সেটা তুমি এখন আমার ওপরে ফলাতে এসেছ।আমি রাজি না তুমি আসতে পারো।পাতা বলল।
ঠিক আছে তবে জেনে রেখ আমিও কোনোদিন তোমার অনুরোধ রাখব না।আর আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।তুহিন রাগ করে বলে উঠল।
আচ্ছা যাও আমি চাই তুমি আর কোনো ভালো মেয়ের সাথে জীবন জড়াও।আমাকে ঘৃণা করো।তুমি এখন আসতে পারো।পাতা আরো রাগ করে বলে উঠল।
পাতার কথায় তুহিন উঠে পরলো।সে উঠতেই পিছন থেকে পাতার মা বলল, বাবা তুমি উঠবে না।তুমি বসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।
তুহিন আবার বসল আর পাতার দিকে তাকাল।
পাতা তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আসতে পারো বসার দরকার নেই।
না আন্টি যখন বলেছে চা টা খেয়েই যাই।তুহিন বলল।
এবার পাতার মা তুহিনের হাতে চা তুলে দিয়ে বলল, বাবা তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। পাতার অনুমতির দরকার নাই।আমি বলছি ও রাজি আছে।
পাতা মায়ের ওপর রাগ করে বলল, মা তুমি এসব কি বলছ।
তুমি ভিতরে যাও।আমি যা বলছি তাই হবে,তুমি গিয়ে তুহিনের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করো।ও রাতে আমাদের সঙ্গে খাবে।পাতার মা তাকে নির্দেশ দিয়ে বলল।
মা আমার কথা শুনবে না।পাতা বলল।
তোমার কথা পরে শুনব।এখন যা বলছি তাই করো।পাতার মা আবার তাকে হুকুমের সুরে বলল।
এবার পাতার বাবাও সামনে এসে তার মেয়েকে বলল,মায়ের কথা মেনে নে মা।
বাবার কথা শুনে এবার পাতা তার বাবার সম্মতিটাও পেয়ে গেল।যদিও তার বাবা আরো আগে থেকেই তুহিনের পথ চেয়ে ছিল যদি তুহিন কোনোদিন ফিরে আসতো সেই আশা নিয়ে দিন কাটাতে ছিল আর আজ তার সেই আশা পূরণ হলো।
বাবার কথা শুনে আর কোনো কথা বলল না পাতা।সে ভিতরে চলে গেল।
আর পাতার মনের কথা তুহিন বুঝে গেল।সে পাতার নীরব সম্মতি পেয়ে গেল।
রাতে খাবার সময় পাতা তুহিনকে বলল,এ তুমি কি করলে।
তুহিন বলল,কিছুই করিনি শুধু তোমার অনুরোধ রেখেছি।আর দেরিতে হলে ও আমার মনের মানুষকে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েছি।
তুমি খুশি হয়েছ?পাতা তুহিনের কাছে জানতে চাইল।
পাতার হাতটি ধরে এবার তুহিন বলল,অনেক খুশি হয়েছি।আমার কোনোদিন ভাবনায় ও আসে নাই এইভাবে তোমাকে ফিরে পাব।জানি না হয়ত এই কারণেই আমি অজান্তেই তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম।আজ আমার অপেক্ষার অবসান হলো।
তুহিনের কথা শুনে এবার পাতা নীরবে একটু মুচকি হাসল আর কিছু বলল না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০২/০৭/২০২৩নাইস
-
অধীতি ২৮/০৬/২০২০কুয়াশার চাদর ঠেলে তুহিন....
কুয়াশার সাথে তুহিন বেশ যায়। -
কে এম শাহ্ রিয়ার ২৩/০৬/২০২০চমৎকার লাগলো!
-
Md. Rayhan Kazi ২২/০৬/২০২০দারুন
-
ফয়জুল মহী ২০/০৬/২০২০অসাধারণ উপস্থাপন ।👌