যুক্তরাষ্ট্রের H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা
আমাদের তরুণ সমাজের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে সুন্দর ও সফল এক জীবন গড়ে তোলার। এজন্য জমিজমা বিক্রি করতেও অনেকে পিছপা হয় না। আর কিছু সুযোগসন্ধানী আছে যারা তারুণ্যের এই স্বপ্নকে পূঁজি করে গড়ে তুলেছে টাকা কামানোর বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এদের কেউ বা বিদেশের শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে, আর কেউ ছাত্র হিসাবে বিদেশে পাঠানোর মুলো ঝুলিয়ে ভাল কামাই করে নিচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকে। এদের খপ্পরে পরে বিদেশে যাওয়ার আগেই অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে। অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার পরে। মাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রে খবর পাই যে দালালের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক বাংলাদেশী। বিদেশে ছাত্র পাঠানোর এজন্টগুলোর বেশিরভাগও এমন এমন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পাঠায় যেগুলো তৈরিই হয়েছে এসব ব্যবসা করার জন্য। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই কোন বৈধ অনুমোদন নেই, এবং এদের দেয়া ডিগ্রীও অচল টাকার মতোই অকেজো।
বেশিরভাগ তরুণই এসব সুযোগসন্ধানীর পাল্লায় গিয়ে পড়ছে মূলতঃ বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায়। তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশের জীবনকে যেভাবে মনে চায় নিজের মতো করে আরও স্বপ্নীল ও আকর্ষনীয় করে তাদের সামনে তুলে ধরছে এইসব দালালেরা। তাদের কথা শুনলে মনে হবে কোথাও কোন সমস্যা নেই। একবার কোনমতে বিদেশে গিয়ে পৌছাতে পারলেই সব মুশকিল আসান। বিদেশের জীবনের তুলনায় দালালকে দেয়া টাকা তখন বেশ কমই মনে হয়। অতএব যা হাতে আছে, এবং যা নেই তা ম্যানেজ করে হলেও দালালের হাতে খুশিমনে তুলে দেই বিদেশে যাবার জন্য। অথচ বিদেশে চাকরী বা পড়ালেখার ভাল দিকগুলোর পাশাপাশি সমস্যাগুলো সম্পর্কেও যদি আগে থেকে ধারণা থাকতো, এবং ঠিক কি কি বিষয়ে প্রশ্ন করে বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে তা জানা থাকতো, তখন ভুয়া দালালেরা আর সহজে ফাঁদে ফেলতে পারতো না এদের।
সম্প্রতি আমার পরিচিত এক ছোটভাই জানালো ইদানীং বাংলাদেশের কোন এক প্রতিষ্ঠান H1B ভিসায় (প্রফেসনাল ওয়ার্ক পারমিট) যুক্তরাষ্ট্রে লোক পাঠানোর উপর ভাল প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে H1B ভিসা পেতে গেলে প্রথমে বায়োডাটা (CV) দিয়ে তা যাঁচাই করার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। বায়োডাটা দেখে তারা যদি বলে যে সে H1B-এর জন্য যোগ্য, তখন ওয়ার্ক অর্ডার প্রসেস করার জন্য ফি দিতে হবে ৫০০ ডলার। আর ভিসা হয়ে গেলে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ঐ প্রতিষ্ঠানকে আরও ৬.৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের দেশের অনেকেরই H1B ভিসা সম্পর্কে ভাল কোন ধারণা নেই। তাই প্রফেসনাল চাকুরী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার এই ব্যবস্থাকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস করার জন্য প্রার্থীকে কোন ফি দিতে হয় না। যে কোম্পানী চাকুরীর প্রস্তাব দিচ্ছে, এটা তাদেরই করার কথা। আমি নিজে H1B ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি ৬ বছর হলো। H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা প্রসেসিং-এর পাশাপাশি এর ভাল-মন্দ দুই দিক সম্পর্কেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর তার আলোকেই আজ এ নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম, যেন কোন দালালের খপ্পরে পড়ার আগে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পায় পাঠক।
H1B কি?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসনাল বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকের অভাব পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর অন্যান্য দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রফেসনাল লোককে H1B ক্যাটাগরীতে যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরীর অনুমোদন ও ভিসা দিয়ে থাকে। ২০১২ অর্থবছরে সাধারণ কোটায় ৬৫০০০ ও উচ্চতর ডিগ্রীধারীর (যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমানের শিক্ষা) কোটায় আরও ২০০০০ আবেদনকারীকে H1B-র অনুমোদন দেয়া হবে। আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয় প্রতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে। ২০১২ সালের দুই কোটায় ইতিমধ্যেই ৪৩৩০০ ও ১৯৬০০ লোককে অনুমোদন দেয়া হয়ে গেছে। (সর্বশেষ অবস্থা জানতে এখানে ক্লিক করুন।) অর্থাৎ দুই কোটায় ২০১২ সালের এপ্রিলের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আর সর্বোচ্চ ২১৭০০ ও ৪০০ লোক নেয়া হবে। কোন কোন চাকুরীক্ষেত্রে H1B ভিসা দেয়া হয় তা জানার জন্যে এখানে ক্লিক করতে পারেনঃ
http://www.h1base.com/content/h1boccupations
কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
যে পেশায় চাকুরীর জন্য H1B-এর আবেদন করা হবে, প্রার্থীকে তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ে ন্যূনতম যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ব্যাচেলর ডিগ্রীর সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। অর্থাৎ, কম্পিউটারের কোন চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কম্পিউটার সায়েন্স বা আই টি-র উপর যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হতে হবে। এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।
H1B প্রসেসিং
H1B-এর পুরো প্রক্রিয়া মোটামুটিভাবে বলা যায় দুই পর্যায়ে বিভক্তঃ H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা। প্রথম অংশ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পুরোটাই চাকুরীদাতা কোম্পানীর, এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের দায়িত্ব প্রার্থীর।
H1B ওয়ার্ক পারমিট
প্রথমে চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক কোম্পানীর নির্দিষ্ট পজিশনে দক্ষ লোক দরকার। এক্ষেত্রে
- এই পজিশনটি H1B-এর জন্য তালিকাভুক্ত কর্মক্ষেত্রের মধ্যে হতে হবে।
- চাকুরীর বেতন যুক্তরাষ্ট্রের "স্টেট এমপ্লয়মেন্ট সিকিউরিটি এজেন্সী"-র নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতনের সমান বা বেশি হতে হবে।
- কোম্পানীটিকে এই বেতনে কর্মচারী রাখার মতো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন হতে হবে।
- বিগত তিন মাসে এই কোম্পানী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিককে বরখাস্ত করার রেকর্ড থাকা যাবে না। (http://www.lawfirms.com/resources/immigration-law/us-visa/2011-h1b-application-issues.htm)
এখন এই কোম্পানী যদি যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসকারীদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক খুঁজে না পায়, তখন অন্যান্য দেশের প্রার্থীদের মধ্য থেকে কোন এক প্রার্থীকে তারা বাছাই করতে পারে। এজন্য প্রার্থীকে যেসব ডকুমেন্ট দিতে হবেঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
- পাসপোর্টের সব পাতার ফটোকপি
- প্রফেশনাল বায়োডাটা
- বিভিন্ন কোম্পানীতে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
শিক্ষাসনদ মূল্যায়নের (Evaluation) জন্য Josef Silny ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। এসবের কোন একটায় সার্টিফিকেট ও মার্কশীটের মূল কপি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ পাওয়া সম্ভব।
প্রার্থী বাছাইয়ের পর কোম্পানীটি প্রথম DOL (Department of Labor)-এ LCA (Labor Certification Application)-এর জন্য আবেদন করবে। এখানে তাকে প্রমান করতে হবে যে সে এই পজিশনে সরকার নির্ধারিত বেতনে চাকুরী দিতে সক্ষম এবং এজন্য নাগরিকদের মধ্য থেকে সমান যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। এবং H1B প্রার্থীকে এখানের নাগরিকের সমান সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। LCA-র সার্টিফিকেট হাতে এলে তখন কোম্পানী তার অফিসের নোটিসবোর্ডে ন্যূনতম ১০ দিনের জন্য চাকুরীর বেতনসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিবে। এবিষয়ে অফিসের কারও কোন অভিযোগ না থাকলে এবং স্থানীয় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তখন কোম্পানীটি USCIS (U.S. Citizenship and Immigration Services)-এ বিদেশী প্রার্থীর H1B ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিবে। আবেদনের সাথে কোম্পানীর বিভিন্ন ডকুমেন্টের পাশাপাশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সনদ, বায়োডাটা ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনের ফি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রদান করতে হবে, প্রার্থীকে না। কোম্পানী সাধারণ বা প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর জন্য আবেদন জমা দিতে পারে। প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর ক্ষেত্রে সাধারণ আবেদনের ফি থেকেও আরও ১০০০ ডলারের মতো বেশি ফি দিতে হবে। যদি প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর আবেদন করে থাকে, তাহলে আবেদনের ফলাফল দুই সপ্তাহের মধ্যেই কোম্পানী পেয়ে যাবে। নইলে এক্ষেত্রে কয়েক মাসের মতো সময় লাগবে।
সব কিছু ঠিক থাকলে USCIS প্রার্থীকে শুধুমাত্র ঐ কোম্পানীতে চাকুরী করার শর্তে ৩ বছরের জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করবে। ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে পাঠানো হবে। তখন তারা প্রার্থীর কাছে কোম্পানীর পক্ষ থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি পাঠাবে, সাথে ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপির নিচের অংশটুকু (প্রার্থীর অংশ) পাঠানো হবে।
H1B ভিসা
কোম্পানী থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি ও ওয়ার্ক পারমিটের কপি হাতে এলে প্রার্থী যে দেশে থাকে সেখানকার আমেরিকান এম্বেসীতে H1B ভিসার জন্য আবেদন করবে। অনেকে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা এই দু'টোকে গুলিয়ে ফেলেন। H1B ওয়ার্ক পারমিট হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে সেদেশে চাকুরী করার অনুমোদন, আর H1B ভিসা হলো সেই অনুমোদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমোদন। কেউ যদি ইতিমধ্যেই অন্য কোন ভিসায় (যেমন ছাত্র হিসাবে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর সেখানে বসবাসরত অবস্থায় H1B ওয়ার্ক পারমিট পায়, সেক্ষেত্রে তাকে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর নতুন করে আবার ভিসা নিতে হবে না। ভিসার আবেদনের সাথে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবেঃ
- কোম্পানী থেকে পাঠানো চাকুরী প্রদানের চিঠি
- h1B ওয়ার্ক পারমিটের মূল অংশ (প্রার্থীর অংশ) ও পুরো পারমিটের ফটোকপি
- পাসপোর্ট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মূল কপি), যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
- বায়োডাটা
- অভিজ্ঞতার সনদ ইত্যাদি।
ভিসার ইন্টারভিউ অফিসার যেধরণের প্রশ্ন করতে পারেঃ
- আপনার কোম্পানী কি টাইপের কাজ করে?
- চাকুরীতে আপনার দায়িত্ব কি কি হবে?
- বেতন কতো হবে? বেতনের পাশাপাশি আর কি কি সুবিধা দিবে কোম্পানী?
- কোম্পানীতে মোট কতোজন কাজ করে?
- কোম্পানীর বার্ষিক আয় কতো?
- আপনার বিশেষ দক্ষতা কোন কোন ক্ষেত্রে?
- বর্তমান কোম্পানীতে কতোদিন যাবত আছেন?
- এখানে আপনার দায়িত্ব কি কি?
- কোথায় পড়ালেখা করেছেন? সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
- যুক্তরাষ্ট্রে কতোদিন থাকার প্ল্যান?
সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হবার কথা না। তবে ভিসা অফিসার যেসব বিষয় দেখবে তা হলোঃ
- ওয়ার্ক পারমিট আসল কিনা
- কোম্পানী জেনুইন কিনা
- প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সঠিক কিনা
- প্রার্থীর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা। (যেকোন নন-ইমিগ্রেশন ভিসায় শুরুতেই ধরে নেয়া হয় যে প্রার্থী একজন সম্ভাব্য অভিবাসনকারী। এটা প্রার্থীর দায়িত্ব প্রমান করা যে তার যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই)।
সব ঠিক থাকলে ইন্টারভিউ শেষে ভিসা অফিসার পাসপোর্টে ১ বছরের জন্য H1B ভিসার অনুমোদন দিয়ে দিবে। ব্যস, ঝামেলা শেষ! এখন বিমানের টিকেট কাটা ও লম্বা যাত্রার অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন।
পরিবারের জন্য H4 ভিসা
H1B প্রার্থী তার স্বামী/স্ত্রী এবং অনুর্ধ ১৮ বছরের সন্তানদের সাথে নিয়ে যেতে পারবে। এজন্য তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট হওয়া পর্যন্ত আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না। তবে ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে H1B ভিসার আবেদনের সময় তাদের প্রত্যেকের জন্যে H4 ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে। সবার ইন্টারভিউ একসাথেই হবে। যদি প্রার্থীর H1B ভিসার সব ডকুমেন্ট ঠিক থাকে, তাহলে পরিবারের অন্যান্যদের ভিসার জন্য শুধুমাত্র পারিবারিক সম্পর্ক প্রমান করলেই চলবে। তাদের ভিসার জন্য অন্য কোন যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে না। স্বামী/স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামা ও রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেটের ইংরেজী কপি ও বিয়ের অনুষ্ঠানের যতো বেশি সম্ভব ছবি সাথে নিতে হবে। আর সন্তানদের ক্ষেত্রে তাদের আইডি, জন্ম নিবন্ধন, পরিবারের অন্যান্যদের সবার সাথে ছবি ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর H1B ভিসার অনুমোদন হয়ে গেলে অন্যান্যদের H4 ভিসার অনুমোদনও দিয়ে দেয়ার কথা সহজেই। H4-এর মেয়াদ প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদের সমান হবে, তবে ভিসা দেয়া হবে শুধুমাত্র ১ বছরের জন্য।
H4-এর উপর বিস্তারিত আরও জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কটি দেখতে পারেনঃ
http://www.path2usa.com/h4-dependent-visa
H1B-এর মেয়াদ
H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রতিবার ৩ বছরের জন্য দেয়া হয়। প্রথমবারের ৩ বছর পার হয়ে যাবার আগে আগে চাকুরীদাতা কোম্পানী H1B ওয়ার্ক পারমিট রিনিউ করার আবেদন করবে। রিনিউ করার ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো তেমন একটা ঝামেলা নেই। যদিও চাকুরীদাতা কোম্পানীকে আগের মতোই তার এবং প্রার্থীর সব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। তবে এবার আর বাৎসরিক আবেদিনকারীর কোটার ভিতরে তাদের হিসাব করা হবে না। মূলতঃ দেখা হবে প্রার্থীর বেতন ঠিক আছে কিনা, এবং কোম্পানী ঠিক আছে কিনা। প্রতিবার রিনিউ করলে আবারও ৩ বছরের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে। এভাবে কোন এক প্রার্থী একটানা সর্বোচ্চ ৬ বছর H1B ওয়ার্ক পারমিটের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে। ৬ বছরের মধ্যে যদি গ্রীন কার্ড না হয়, তবে ঐ প্রার্থীকে নতুন করে আর ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে না, এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। নতুন করে আবারও H1B-এর জন্য আবেদন করার আগে ঐ প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ন্যূনতম ১ বছর পার করতে হবে।
মজার ব্যপার হলো ওয়ার্ক পারমিট ৩ বছরের জন্য দেয়া হলেও তার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশীদের H1B ভিসা দেয়া হয় মাত্র ১ বছরের। ভিসার প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য। একবার প্রবেশ করলে এর পর ওয়ার্ক পারমিটই যথেষ্ট এখানের বৈধতা বজায় রাখার জন্য। ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় একজন যতো খুশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে কোন সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার অন্য কোন দেশে গেলে ফিরে আসার সময় আবারও H1B ভিসার আবেদন করতে হবে। সব কিছু বৈধ থাকলে সাধারণত নতুন ভিসা দিতে আর সমস্যা করার কথা না এম্বেসীর।
চাকুরী পরিবর্তন
প্রার্থীকে H1B ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় শুধু মাত্র আবেদনকারী নির্দিষ্ট কোম্পানীর নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে চাকুরী করার জন্য। কর্মক্ষেত্র বা কোম্পানীর পরিবর্তনের সাথে সাথেই ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানও অবৈধ হয়ে যায়। চাকুরী পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে নতুন কোম্পানীকেও প্রার্থীর জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করতে হবে, এবং পুরানো কোম্পানীর চাকুরী ছাড়ার আগেই নতুন কোম্পানীর ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছাতে হবে। অর্থাৎ নতুন কোম্পানী USCIS থেকে আবেদন প্রাপ্তির রশিদ হাতে পেলেই তখন থেকে প্রার্থী নতুন কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করতে পারছে। এরপর মূল ওয়ার্ক পারমিট হাতে আসতে কয়েক মাস লাগলেও কোন সমস্যা নেই।
এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী যদি যেকোন সময় প্রার্থীকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে, তখনও প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা হারাবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী ও তার পরিবারের সবাইকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর খরচ কোম্পানী বহন করতে বাধ্য, যা কিনা অনেক প্রার্থীই জানে না।
গ্রীন কার্ড
H1B প্রার্থীকে তার গ্রীনকার্ডও চাকুরীদাতা কোম্পানীর মাধ্যমেই প্রসেস করতে হবে। প্রতিবার H1B ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে ৩ বছর করে। কোন কোম্পানী যদি প্রার্থীকে এর চেয়ে লম্বা সময়ের জন্য স্থায়ীভাবে চাকুরীতে রাখতে চায়, তখন সে USCIS-এর কাছে প্রার্থীর স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিটের (Permanent Labor Certificate) জন্য আবেদন করবে। USCIS যদি এর অনুমোদন দেয়, তখন তার উপর ভিত্তি করে গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
H1B-এর সীমাবদ্ধতা ও কিছু বাস্তবচিত্র
H1B প্রার্থীর মূল সীমাবদ্ধতা হলো
- চাইলেই সে কোম্পানীর চাকুরী ছাড়তে পারছে না। (চাকুরী ছাড়ার আগেই অন্য কোন কোম্পানী থেকে H1B ম্যানেজ করতে হবে)।
- ভবিষ্যতের গ্রীনকার্ডের জন্যেও তাকে চাকুরীদাতার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে।
আর যেসব কোম্পানী চাকুরী দেয়, তারাও এই সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে ভালমতোই জানে। এর সুবিধা নিতেও তারা ছাড়ে না। বিশেষ করে ভারতীয়, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর অনেকেই কাগজে-কলমে এখানের হিসাবে বেতন দেখালেও তার চেয়ে অনেক কম বেতনে কাজ করানোর জন্য H1B-তে লোক নিয়ে আসে। তারপর না সেই বেতন আর ঠিকমতো বাড়ে, না সেই প্রার্থী হুট করে চাকুরীর পরিবর্তন করতে পারে। তার উপর কোম্পানীর ভাব হচ্ছে "আমাদের দয়াতেই তো যুক্তরাষ্ট্রে আসার মতো সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছ।" তারা যে এখানের আইন ভঙ্গ করে কর্মচারীকে তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করছে, সেসম্পর্কে তাদের কোন অপরাধবোধই নেই। বরং নাকের সামনে গ্রীন কার্ডের মুলো ঝুলিয়ে দেই-দিচ্ছি করতে করতেই বছরের পর বছর পার করে দেয় কোম্পানীগুলো। প্রার্থীরও তখন একটাই টার্গেট থাকে, কষ্টে-সৃষ্টে কোনমতে যদি একবার গ্রীনকার্ডটা হয়ে যায়! সেই গ্রীনকার্ডের জন্যেও শেষে প্রার্থীকেই খরচপাতি করতে হয়, পাশাপাশি কোম্পানীর হাত-পা ধরে তাদের ১০১-টা মামাবাড়ীর আব্দার মাথা নত করে মেনে দিন পার করতে হয়।
আবার ভারতীয় কিছু কোম্পানী আছে, তাদের কাছে H1B-তে লোক আনাটাই একটা ব্যবসা। তারা হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে H1B এর নাম করে নানারকম ফি নেয়। তারপরে আদৌ যে কয়জনের H1B চূড়ান্ত হয়, তাদের থেকেও মোটা অংকের সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। তাদের অনেকেই আবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দেখে যে তাদের স্থায়ী কোন চাকুরী নেই। অন্য কোথাও কন্ট্রাক্টে কাজ পেলে তাদের কোম্পানী তাদের সেখানে পাঠায়, আর তেমন কোন কাজ হাতে না থাকলে কয়েক সপ্তাহেই তাদের চাকুরী নট হয়ে যায়। স্বপ্নের ভেলায় ভেসে ভেসে তারা এসে অথৈ সাগরে পড়ে।
ইদানীং বাংলাদেশেও তেমনটাই শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই এধরণের কোন কোম্পানীর খপ্পড়ে পরে গাঁটের পয়সা খরচ করার আগে সবাইকে ভালমতো সেই কোম্পানী, যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোম্পানী H1B-এর জন্য আবেদন করবে, তাদের মোট কতোজন লোক দরকার, কি হিসাবে লোক পাঠাচ্ছে, চাকুরীর ধরণ কি স্থায়ী নাকি কন্ট্রাক্ট ভিত্তিক, কোন হিসাবে তারা বিভিন্ন ফি দাবী করছে, কে এই ফি পাবে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন প্রশ্ন করে। যে কোম্পানী লোক নিবে, সে না হয়ে অন্য কোন দালাল কোম্পানী হলে তাদের সাথে কোন কন্ট্রাক্টে যাবেন না দয়া করে। মনে রাখবেন, আপনার দরকার বলে তারা আপনাকে চাকুরী দিচ্ছে না। বরং তাদের আপনার মতো কাউকে দরকার বলেই চাকুরীর অফার দিচ্ছে।
পরিশেষে
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদেরা বেশ ভাল একটা অবস্থান করে নিয়েছে H1B-এর মাধ্যমে এখানে এসে। আমাদের দেশেরও অনেকেই এখানে আছে আমার মতো। আরও অনেকেই আসছে, যদিও অর্থনৈতিক মন্দার সরাসরি প্রভাবে H1B-তে চাকুরী দেয়ার মতো কোম্পানীর সংখ্যাও আগের থেকে অনেক অনেক কমে গেছে । আমরা চাই তারপরেও আরও অনেকে আসুক এখানে, এবং নিজের ভাল একটা অবস্থান তৈরী করে নিয়ে এখান থেকে দেশের জন্যেও প্রযুক্তি খাতে কিছু করুক। তবে সেজন্য দালালের খপ্পড়ে না পড়ে নিজের থেকে ভালমতো খোঁজখবর নিয়ে সরাসরি চাকুরীদাতা কোম্পানীর সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করবো। নিচে কিছু ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিলাম যেখানে বর্তমান বাজারের H1B ভিত্তিক চাকুরীর তথ্য পাওয়া যাবে ও আবেদন করা যাবে।
- http://www.myvisajobs.com/H1B_Visa.aspx - এই ওয়েবসাইটে চাকুরীর তথ্যের পাশাপাশি কোন কোন কোম্পানী কোন বছর কতোজন লোক H1B-তে নিয়েছে এবং গড়ে বেতন কতো তার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবে। সাইটটিতে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে এই সার্ভিস পাবেন।
- http://www.h1bvisa.info/h1b_jobs
- http://www.h1visajobs.com/
এছাড়াও নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে সার্চ কী-ওয়ার্ডে চাকুরীর পজিশনের পাশাপাশি "H1B", "H-1B", "H1-B" ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে এধরণের আরও চাকুরী খুঁজে পাবেন।
- http://www.careerbuilder.com/
- http://www.monster.com/
- http://www.dice.com/
বেশিরভাগ তরুণই এসব সুযোগসন্ধানীর পাল্লায় গিয়ে পড়ছে মূলতঃ বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায়। তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশের জীবনকে যেভাবে মনে চায় নিজের মতো করে আরও স্বপ্নীল ও আকর্ষনীয় করে তাদের সামনে তুলে ধরছে এইসব দালালেরা। তাদের কথা শুনলে মনে হবে কোথাও কোন সমস্যা নেই। একবার কোনমতে বিদেশে গিয়ে পৌছাতে পারলেই সব মুশকিল আসান। বিদেশের জীবনের তুলনায় দালালকে দেয়া টাকা তখন বেশ কমই মনে হয়। অতএব যা হাতে আছে, এবং যা নেই তা ম্যানেজ করে হলেও দালালের হাতে খুশিমনে তুলে দেই বিদেশে যাবার জন্য। অথচ বিদেশে চাকরী বা পড়ালেখার ভাল দিকগুলোর পাশাপাশি সমস্যাগুলো সম্পর্কেও যদি আগে থেকে ধারণা থাকতো, এবং ঠিক কি কি বিষয়ে প্রশ্ন করে বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে তা জানা থাকতো, তখন ভুয়া দালালেরা আর সহজে ফাঁদে ফেলতে পারতো না এদের।
সম্প্রতি আমার পরিচিত এক ছোটভাই জানালো ইদানীং বাংলাদেশের কোন এক প্রতিষ্ঠান H1B ভিসায় (প্রফেসনাল ওয়ার্ক পারমিট) যুক্তরাষ্ট্রে লোক পাঠানোর উপর ভাল প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে H1B ভিসা পেতে গেলে প্রথমে বায়োডাটা (CV) দিয়ে তা যাঁচাই করার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। বায়োডাটা দেখে তারা যদি বলে যে সে H1B-এর জন্য যোগ্য, তখন ওয়ার্ক অর্ডার প্রসেস করার জন্য ফি দিতে হবে ৫০০ ডলার। আর ভিসা হয়ে গেলে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ঐ প্রতিষ্ঠানকে আরও ৬.৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের দেশের অনেকেরই H1B ভিসা সম্পর্কে ভাল কোন ধারণা নেই। তাই প্রফেসনাল চাকুরী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার এই ব্যবস্থাকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস করার জন্য প্রার্থীকে কোন ফি দিতে হয় না। যে কোম্পানী চাকুরীর প্রস্তাব দিচ্ছে, এটা তাদেরই করার কথা। আমি নিজে H1B ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি ৬ বছর হলো। H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা প্রসেসিং-এর পাশাপাশি এর ভাল-মন্দ দুই দিক সম্পর্কেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর তার আলোকেই আজ এ নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম, যেন কোন দালালের খপ্পরে পড়ার আগে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পায় পাঠক।
H1B কি?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসনাল বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকের অভাব পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর অন্যান্য দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রফেসনাল লোককে H1B ক্যাটাগরীতে যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরীর অনুমোদন ও ভিসা দিয়ে থাকে। ২০১২ অর্থবছরে সাধারণ কোটায় ৬৫০০০ ও উচ্চতর ডিগ্রীধারীর (যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমানের শিক্ষা) কোটায় আরও ২০০০০ আবেদনকারীকে H1B-র অনুমোদন দেয়া হবে। আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয় প্রতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে। ২০১২ সালের দুই কোটায় ইতিমধ্যেই ৪৩৩০০ ও ১৯৬০০ লোককে অনুমোদন দেয়া হয়ে গেছে। (সর্বশেষ অবস্থা জানতে এখানে ক্লিক করুন।) অর্থাৎ দুই কোটায় ২০১২ সালের এপ্রিলের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আর সর্বোচ্চ ২১৭০০ ও ৪০০ লোক নেয়া হবে। কোন কোন চাকুরীক্ষেত্রে H1B ভিসা দেয়া হয় তা জানার জন্যে এখানে ক্লিক করতে পারেনঃ
http://www.h1base.com/content/h1boccupations
কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
যে পেশায় চাকুরীর জন্য H1B-এর আবেদন করা হবে, প্রার্থীকে তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ে ন্যূনতম যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ব্যাচেলর ডিগ্রীর সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। অর্থাৎ, কম্পিউটারের কোন চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কম্পিউটার সায়েন্স বা আই টি-র উপর যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হতে হবে। এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।
H1B প্রসেসিং
H1B-এর পুরো প্রক্রিয়া মোটামুটিভাবে বলা যায় দুই পর্যায়ে বিভক্তঃ H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা। প্রথম অংশ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পুরোটাই চাকুরীদাতা কোম্পানীর, এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের দায়িত্ব প্রার্থীর।
H1B ওয়ার্ক পারমিট
প্রথমে চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক কোম্পানীর নির্দিষ্ট পজিশনে দক্ষ লোক দরকার। এক্ষেত্রে
- এই পজিশনটি H1B-এর জন্য তালিকাভুক্ত কর্মক্ষেত্রের মধ্যে হতে হবে।
- চাকুরীর বেতন যুক্তরাষ্ট্রের "স্টেট এমপ্লয়মেন্ট সিকিউরিটি এজেন্সী"-র নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতনের সমান বা বেশি হতে হবে।
- কোম্পানীটিকে এই বেতনে কর্মচারী রাখার মতো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন হতে হবে।
- বিগত তিন মাসে এই কোম্পানী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিককে বরখাস্ত করার রেকর্ড থাকা যাবে না। (http://www.lawfirms.com/resources/immigration-law/us-visa/2011-h1b-application-issues.htm)
এখন এই কোম্পানী যদি যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসকারীদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক খুঁজে না পায়, তখন অন্যান্য দেশের প্রার্থীদের মধ্য থেকে কোন এক প্রার্থীকে তারা বাছাই করতে পারে। এজন্য প্রার্থীকে যেসব ডকুমেন্ট দিতে হবেঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
- পাসপোর্টের সব পাতার ফটোকপি
- প্রফেশনাল বায়োডাটা
- বিভিন্ন কোম্পানীতে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
শিক্ষাসনদ মূল্যায়নের (Evaluation) জন্য Josef Silny ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। এসবের কোন একটায় সার্টিফিকেট ও মার্কশীটের মূল কপি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ পাওয়া সম্ভব।
প্রার্থী বাছাইয়ের পর কোম্পানীটি প্রথম DOL (Department of Labor)-এ LCA (Labor Certification Application)-এর জন্য আবেদন করবে। এখানে তাকে প্রমান করতে হবে যে সে এই পজিশনে সরকার নির্ধারিত বেতনে চাকুরী দিতে সক্ষম এবং এজন্য নাগরিকদের মধ্য থেকে সমান যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। এবং H1B প্রার্থীকে এখানের নাগরিকের সমান সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। LCA-র সার্টিফিকেট হাতে এলে তখন কোম্পানী তার অফিসের নোটিসবোর্ডে ন্যূনতম ১০ দিনের জন্য চাকুরীর বেতনসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিবে। এবিষয়ে অফিসের কারও কোন অভিযোগ না থাকলে এবং স্থানীয় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তখন কোম্পানীটি USCIS (U.S. Citizenship and Immigration Services)-এ বিদেশী প্রার্থীর H1B ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিবে। আবেদনের সাথে কোম্পানীর বিভিন্ন ডকুমেন্টের পাশাপাশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সনদ, বায়োডাটা ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনের ফি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রদান করতে হবে, প্রার্থীকে না। কোম্পানী সাধারণ বা প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর জন্য আবেদন জমা দিতে পারে। প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর ক্ষেত্রে সাধারণ আবেদনের ফি থেকেও আরও ১০০০ ডলারের মতো বেশি ফি দিতে হবে। যদি প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর আবেদন করে থাকে, তাহলে আবেদনের ফলাফল দুই সপ্তাহের মধ্যেই কোম্পানী পেয়ে যাবে। নইলে এক্ষেত্রে কয়েক মাসের মতো সময় লাগবে।
সব কিছু ঠিক থাকলে USCIS প্রার্থীকে শুধুমাত্র ঐ কোম্পানীতে চাকুরী করার শর্তে ৩ বছরের জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করবে। ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে পাঠানো হবে। তখন তারা প্রার্থীর কাছে কোম্পানীর পক্ষ থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি পাঠাবে, সাথে ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপির নিচের অংশটুকু (প্রার্থীর অংশ) পাঠানো হবে।
H1B ভিসা
কোম্পানী থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি ও ওয়ার্ক পারমিটের কপি হাতে এলে প্রার্থী যে দেশে থাকে সেখানকার আমেরিকান এম্বেসীতে H1B ভিসার জন্য আবেদন করবে। অনেকে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা এই দু'টোকে গুলিয়ে ফেলেন। H1B ওয়ার্ক পারমিট হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে সেদেশে চাকুরী করার অনুমোদন, আর H1B ভিসা হলো সেই অনুমোদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমোদন। কেউ যদি ইতিমধ্যেই অন্য কোন ভিসায় (যেমন ছাত্র হিসাবে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর সেখানে বসবাসরত অবস্থায় H1B ওয়ার্ক পারমিট পায়, সেক্ষেত্রে তাকে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর নতুন করে আবার ভিসা নিতে হবে না। ভিসার আবেদনের সাথে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবেঃ
- কোম্পানী থেকে পাঠানো চাকুরী প্রদানের চিঠি
- h1B ওয়ার্ক পারমিটের মূল অংশ (প্রার্থীর অংশ) ও পুরো পারমিটের ফটোকপি
- পাসপোর্ট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মূল কপি), যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
- বায়োডাটা
- অভিজ্ঞতার সনদ ইত্যাদি।
ভিসার ইন্টারভিউ অফিসার যেধরণের প্রশ্ন করতে পারেঃ
- আপনার কোম্পানী কি টাইপের কাজ করে?
- চাকুরীতে আপনার দায়িত্ব কি কি হবে?
- বেতন কতো হবে? বেতনের পাশাপাশি আর কি কি সুবিধা দিবে কোম্পানী?
- কোম্পানীতে মোট কতোজন কাজ করে?
- কোম্পানীর বার্ষিক আয় কতো?
- আপনার বিশেষ দক্ষতা কোন কোন ক্ষেত্রে?
- বর্তমান কোম্পানীতে কতোদিন যাবত আছেন?
- এখানে আপনার দায়িত্ব কি কি?
- কোথায় পড়ালেখা করেছেন? সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
- যুক্তরাষ্ট্রে কতোদিন থাকার প্ল্যান?
সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হবার কথা না। তবে ভিসা অফিসার যেসব বিষয় দেখবে তা হলোঃ
- ওয়ার্ক পারমিট আসল কিনা
- কোম্পানী জেনুইন কিনা
- প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সঠিক কিনা
- প্রার্থীর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা। (যেকোন নন-ইমিগ্রেশন ভিসায় শুরুতেই ধরে নেয়া হয় যে প্রার্থী একজন সম্ভাব্য অভিবাসনকারী। এটা প্রার্থীর দায়িত্ব প্রমান করা যে তার যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই)।
সব ঠিক থাকলে ইন্টারভিউ শেষে ভিসা অফিসার পাসপোর্টে ১ বছরের জন্য H1B ভিসার অনুমোদন দিয়ে দিবে। ব্যস, ঝামেলা শেষ! এখন বিমানের টিকেট কাটা ও লম্বা যাত্রার অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন।
পরিবারের জন্য H4 ভিসা
H1B প্রার্থী তার স্বামী/স্ত্রী এবং অনুর্ধ ১৮ বছরের সন্তানদের সাথে নিয়ে যেতে পারবে। এজন্য তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট হওয়া পর্যন্ত আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না। তবে ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে H1B ভিসার আবেদনের সময় তাদের প্রত্যেকের জন্যে H4 ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে। সবার ইন্টারভিউ একসাথেই হবে। যদি প্রার্থীর H1B ভিসার সব ডকুমেন্ট ঠিক থাকে, তাহলে পরিবারের অন্যান্যদের ভিসার জন্য শুধুমাত্র পারিবারিক সম্পর্ক প্রমান করলেই চলবে। তাদের ভিসার জন্য অন্য কোন যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে না। স্বামী/স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামা ও রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেটের ইংরেজী কপি ও বিয়ের অনুষ্ঠানের যতো বেশি সম্ভব ছবি সাথে নিতে হবে। আর সন্তানদের ক্ষেত্রে তাদের আইডি, জন্ম নিবন্ধন, পরিবারের অন্যান্যদের সবার সাথে ছবি ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর H1B ভিসার অনুমোদন হয়ে গেলে অন্যান্যদের H4 ভিসার অনুমোদনও দিয়ে দেয়ার কথা সহজেই। H4-এর মেয়াদ প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদের সমান হবে, তবে ভিসা দেয়া হবে শুধুমাত্র ১ বছরের জন্য।
H4-এর উপর বিস্তারিত আরও জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কটি দেখতে পারেনঃ
http://www.path2usa.com/h4-dependent-visa
H1B-এর মেয়াদ
H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রতিবার ৩ বছরের জন্য দেয়া হয়। প্রথমবারের ৩ বছর পার হয়ে যাবার আগে আগে চাকুরীদাতা কোম্পানী H1B ওয়ার্ক পারমিট রিনিউ করার আবেদন করবে। রিনিউ করার ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো তেমন একটা ঝামেলা নেই। যদিও চাকুরীদাতা কোম্পানীকে আগের মতোই তার এবং প্রার্থীর সব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। তবে এবার আর বাৎসরিক আবেদিনকারীর কোটার ভিতরে তাদের হিসাব করা হবে না। মূলতঃ দেখা হবে প্রার্থীর বেতন ঠিক আছে কিনা, এবং কোম্পানী ঠিক আছে কিনা। প্রতিবার রিনিউ করলে আবারও ৩ বছরের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে। এভাবে কোন এক প্রার্থী একটানা সর্বোচ্চ ৬ বছর H1B ওয়ার্ক পারমিটের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে। ৬ বছরের মধ্যে যদি গ্রীন কার্ড না হয়, তবে ঐ প্রার্থীকে নতুন করে আর ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে না, এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। নতুন করে আবারও H1B-এর জন্য আবেদন করার আগে ঐ প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ন্যূনতম ১ বছর পার করতে হবে।
মজার ব্যপার হলো ওয়ার্ক পারমিট ৩ বছরের জন্য দেয়া হলেও তার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশীদের H1B ভিসা দেয়া হয় মাত্র ১ বছরের। ভিসার প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য। একবার প্রবেশ করলে এর পর ওয়ার্ক পারমিটই যথেষ্ট এখানের বৈধতা বজায় রাখার জন্য। ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় একজন যতো খুশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে কোন সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার অন্য কোন দেশে গেলে ফিরে আসার সময় আবারও H1B ভিসার আবেদন করতে হবে। সব কিছু বৈধ থাকলে সাধারণত নতুন ভিসা দিতে আর সমস্যা করার কথা না এম্বেসীর।
চাকুরী পরিবর্তন
প্রার্থীকে H1B ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় শুধু মাত্র আবেদনকারী নির্দিষ্ট কোম্পানীর নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে চাকুরী করার জন্য। কর্মক্ষেত্র বা কোম্পানীর পরিবর্তনের সাথে সাথেই ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানও অবৈধ হয়ে যায়। চাকুরী পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে নতুন কোম্পানীকেও প্রার্থীর জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করতে হবে, এবং পুরানো কোম্পানীর চাকুরী ছাড়ার আগেই নতুন কোম্পানীর ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছাতে হবে। অর্থাৎ নতুন কোম্পানী USCIS থেকে আবেদন প্রাপ্তির রশিদ হাতে পেলেই তখন থেকে প্রার্থী নতুন কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করতে পারছে। এরপর মূল ওয়ার্ক পারমিট হাতে আসতে কয়েক মাস লাগলেও কোন সমস্যা নেই।
এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী যদি যেকোন সময় প্রার্থীকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে, তখনও প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা হারাবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী ও তার পরিবারের সবাইকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর খরচ কোম্পানী বহন করতে বাধ্য, যা কিনা অনেক প্রার্থীই জানে না।
গ্রীন কার্ড
H1B প্রার্থীকে তার গ্রীনকার্ডও চাকুরীদাতা কোম্পানীর মাধ্যমেই প্রসেস করতে হবে। প্রতিবার H1B ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে ৩ বছর করে। কোন কোম্পানী যদি প্রার্থীকে এর চেয়ে লম্বা সময়ের জন্য স্থায়ীভাবে চাকুরীতে রাখতে চায়, তখন সে USCIS-এর কাছে প্রার্থীর স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিটের (Permanent Labor Certificate) জন্য আবেদন করবে। USCIS যদি এর অনুমোদন দেয়, তখন তার উপর ভিত্তি করে গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
H1B-এর সীমাবদ্ধতা ও কিছু বাস্তবচিত্র
H1B প্রার্থীর মূল সীমাবদ্ধতা হলো
- চাইলেই সে কোম্পানীর চাকুরী ছাড়তে পারছে না। (চাকুরী ছাড়ার আগেই অন্য কোন কোম্পানী থেকে H1B ম্যানেজ করতে হবে)।
- ভবিষ্যতের গ্রীনকার্ডের জন্যেও তাকে চাকুরীদাতার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে।
আর যেসব কোম্পানী চাকুরী দেয়, তারাও এই সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে ভালমতোই জানে। এর সুবিধা নিতেও তারা ছাড়ে না। বিশেষ করে ভারতীয়, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর অনেকেই কাগজে-কলমে এখানের হিসাবে বেতন দেখালেও তার চেয়ে অনেক কম বেতনে কাজ করানোর জন্য H1B-তে লোক নিয়ে আসে। তারপর না সেই বেতন আর ঠিকমতো বাড়ে, না সেই প্রার্থী হুট করে চাকুরীর পরিবর্তন করতে পারে। তার উপর কোম্পানীর ভাব হচ্ছে "আমাদের দয়াতেই তো যুক্তরাষ্ট্রে আসার মতো সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছ।" তারা যে এখানের আইন ভঙ্গ করে কর্মচারীকে তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করছে, সেসম্পর্কে তাদের কোন অপরাধবোধই নেই। বরং নাকের সামনে গ্রীন কার্ডের মুলো ঝুলিয়ে দেই-দিচ্ছি করতে করতেই বছরের পর বছর পার করে দেয় কোম্পানীগুলো। প্রার্থীরও তখন একটাই টার্গেট থাকে, কষ্টে-সৃষ্টে কোনমতে যদি একবার গ্রীনকার্ডটা হয়ে যায়! সেই গ্রীনকার্ডের জন্যেও শেষে প্রার্থীকেই খরচপাতি করতে হয়, পাশাপাশি কোম্পানীর হাত-পা ধরে তাদের ১০১-টা মামাবাড়ীর আব্দার মাথা নত করে মেনে দিন পার করতে হয়।
আবার ভারতীয় কিছু কোম্পানী আছে, তাদের কাছে H1B-তে লোক আনাটাই একটা ব্যবসা। তারা হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে H1B এর নাম করে নানারকম ফি নেয়। তারপরে আদৌ যে কয়জনের H1B চূড়ান্ত হয়, তাদের থেকেও মোটা অংকের সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। তাদের অনেকেই আবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দেখে যে তাদের স্থায়ী কোন চাকুরী নেই। অন্য কোথাও কন্ট্রাক্টে কাজ পেলে তাদের কোম্পানী তাদের সেখানে পাঠায়, আর তেমন কোন কাজ হাতে না থাকলে কয়েক সপ্তাহেই তাদের চাকুরী নট হয়ে যায়। স্বপ্নের ভেলায় ভেসে ভেসে তারা এসে অথৈ সাগরে পড়ে।
ইদানীং বাংলাদেশেও তেমনটাই শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই এধরণের কোন কোম্পানীর খপ্পড়ে পরে গাঁটের পয়সা খরচ করার আগে সবাইকে ভালমতো সেই কোম্পানী, যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোম্পানী H1B-এর জন্য আবেদন করবে, তাদের মোট কতোজন লোক দরকার, কি হিসাবে লোক পাঠাচ্ছে, চাকুরীর ধরণ কি স্থায়ী নাকি কন্ট্রাক্ট ভিত্তিক, কোন হিসাবে তারা বিভিন্ন ফি দাবী করছে, কে এই ফি পাবে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন প্রশ্ন করে। যে কোম্পানী লোক নিবে, সে না হয়ে অন্য কোন দালাল কোম্পানী হলে তাদের সাথে কোন কন্ট্রাক্টে যাবেন না দয়া করে। মনে রাখবেন, আপনার দরকার বলে তারা আপনাকে চাকুরী দিচ্ছে না। বরং তাদের আপনার মতো কাউকে দরকার বলেই চাকুরীর অফার দিচ্ছে।
পরিশেষে
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদেরা বেশ ভাল একটা অবস্থান করে নিয়েছে H1B-এর মাধ্যমে এখানে এসে। আমাদের দেশেরও অনেকেই এখানে আছে আমার মতো। আরও অনেকেই আসছে, যদিও অর্থনৈতিক মন্দার সরাসরি প্রভাবে H1B-তে চাকুরী দেয়ার মতো কোম্পানীর সংখ্যাও আগের থেকে অনেক অনেক কমে গেছে । আমরা চাই তারপরেও আরও অনেকে আসুক এখানে, এবং নিজের ভাল একটা অবস্থান তৈরী করে নিয়ে এখান থেকে দেশের জন্যেও প্রযুক্তি খাতে কিছু করুক। তবে সেজন্য দালালের খপ্পড়ে না পড়ে নিজের থেকে ভালমতো খোঁজখবর নিয়ে সরাসরি চাকুরীদাতা কোম্পানীর সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করবো। নিচে কিছু ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিলাম যেখানে বর্তমান বাজারের H1B ভিত্তিক চাকুরীর তথ্য পাওয়া যাবে ও আবেদন করা যাবে।
- http://www.myvisajobs.com/H1B_Visa.aspx - এই ওয়েবসাইটে চাকুরীর তথ্যের পাশাপাশি কোন কোন কোম্পানী কোন বছর কতোজন লোক H1B-তে নিয়েছে এবং গড়ে বেতন কতো তার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবে। সাইটটিতে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে এই সার্ভিস পাবেন।
- http://www.h1bvisa.info/h1b_jobs
- http://www.h1visajobs.com/
এছাড়াও নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে সার্চ কী-ওয়ার্ডে চাকুরীর পজিশনের পাশাপাশি "H1B", "H-1B", "H1-B" ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে এধরণের আরও চাকুরী খুঁজে পাবেন।
- http://www.careerbuilder.com/
- http://www.monster.com/
- http://www.dice.com/
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কবীর ১৮/০৯/২০১৩তথ্য পূর্ণ ভালো পোস্টের জন্য ধন্যবাদ !
-
সালমান মাহফুজ ১৫/০৯/২০১৩বেশ মূল্যবান পোস্ট । খুব পরিশ্রম ও আন্তরিকতা ছাড়া এমন লেখা্ অসম্ভব । আপনার পরিশ্রম ও আন্তরিকতার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা ।
-
Înšigniã Āvî ১৫/০৯/২০১৩ধন্যবাদ জানাই, প্রচুর তথ্য আমাদের জানাবার জন্য (Y)