একজন মুক্তিযোদ্ধার অভিজ্ঞতা
আব্দুল ওহিদ মোল্লা ওরফে খসরু ভাই আমার অগ্রজ এবং শ্রদ্ধাভাজন সঙ্গীতশিল্পী। ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের কিছু অভিজ্ঞতা সম্প্রতি আমার জানার সুযোগ হয়েছে। নিচে খসরু ভাইয়ের নিজের ভাষায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা সকলের জন্য তুলে দিলাম।
---------------------
আমি আব্দুল ওহিদ মোল্লা (মোঃ খসরু) বাংলাদেশের একজন বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং সঙ্গীত শিল্পী। চন্ডিবের মোল্লা বাড়ীতে আমার জন্ম। ভৈরব কলেজ মাঠে বড় একটা গ্রুপকে ট্রেনিং দিতে গিয়ে শুরু হয় আমার মুক্তিযুদ্ধ। আমার সাথে ছিল মনিরুজ্জামান, সাইফুল এবং ভৈরবের আরও কিছু যোদ্ধা, যারা পরে অনেকেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
ক্যাপ্টেন নাসিম সাহেব এসে উঠলেন গার্লস স্কুলে একটি প্লাটুন নিয়ে। ২/১ দিন পর হঠাৎ বিকাল বেলায় দু'টি জেট বিমান এসে এটাক করলো নাসিম সাহেবের উপর। ওনি সব গুটিয়ে আশুগঞ্জ জলিল হাজীর বাড়িতে গিয়ে উঠেন। তখন আমি ভৈরবের ছেলেদের নিয় ওনার সাথে যোগ দেই। কয়েক দিন পর ওনি আমাদেরকে সুবেদার বাসর ভাইয়ের সাথে লালপুর পাঠিয়ে দেন। তখন আমার সাথে ছিল ভৈরবের মান্নান, শাহজাহান, ইউসুফ বাবু, মিরু, বাবলা, রুহুল আমিন, মিজান এবং সুবেদার মেজবা। ২/১ দিন পর খবর পেলাম কিছু দূরে পাকিস্তানী নিশান উড়িয়ে একটি যুদ্ধ জাহাজ এসেছে। জাহাজটিকে রেকি করার জন্য আমি, মনা, শাহজাহান, ইউসুফ বাবু জেলে নৌকা নিয়ে এগিয়ে যাই। পাশের গ্রামে গিয়ে নামলাম। শুনলাম পাকিস্তানীরা এসে ছাগল, হাঁস, মুরগী ধরে নিয়ে গেছে। আমরা ফিরে এসে নাসিম সাহেবকে খবর পাঠাই। তখন নাসিম সাহেব একটি বেলেন্ডারসাইড এবং একটি RR দিয়ে কিছু আর্মি পাঠিয়ে দেন। বললেন, "আজ রাত অথবা ভোর বেলা তারা এটাক করতে পারে, তোমরা প্রস্তুত থেকো।" সারা রাত কেউ ঘুমায় নি। ঠিক ভোর বেলা জাহাজ আসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর যুদ্ধ শুরু হল।। আমরা ৫ মিনিটও টিকতে পারিনি। বিচ্ছিন্ন হয়ে পরি সবাই।
আমি বড়াইল হয়ে নবীনগর শাহজাহানের বোনের বাড়ীতে গিয়ে উঠি। এক রাত থেকে পরদিন আমি রওয়ানা হই আগরতলার পথে। শাহজাহান থেকে গেল। অনেক পথ ঘুরে অনেক কাহিনীর পর আগরতলায় এসে উঠলাম। বি এস এফ-এর সাহায্যে কর্নেল চৌমোহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসে পৌঁছই। এসে দেখি সিদ্দীক ভাই ও আপেল মাহমুদ সেখানে। মনে হয় লাকী আকন্দও ছিল। কথা হল আগামী কাল আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে চলে যাব। দুর্ভাগ্য আমার, রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই আমাকে আগরতলা VM হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। ৩/৪ দিন মুক্তিযোদ্ধা অফিসে ফিরে এসে দেখি আপেলরা চলে গেছে। সিদ্দীক ভাই এসে বলল, "কবি নজরুলও রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছে। তুমিও করবা।" ভৈরবের অনেক ছেলেদের নিয়ে একটি লরিতে উঠে বসলাম এবং চলে গেলাম বাংলাদেশের তলিয়াপাড়া আর ইন্ডিয়ার শিমলাতে। কয়েকদিন পর একদিন দুপুর বেলা পাকিস্তানীরা এটাক করে শিমলা ক্যাম্প। চলে গেলাম ওমপি নগর। সেখানে শুরু হয় ট্রেনিং। আলফা, ব্রাভো, চার্লি এবং ডেল্টা, এই চারটি কোম্পানি ছিল সেখানে। আমি চার্লি কোম্পানিতে। কমিশন র্যাংকে ছিলাম আমরা ৪ জন। বাহাউদ্দিন, আমি, আতিক এবং কিশোরগঞ্জের নুরু। চার্লি কোম্পানির ক্যাপ্টেন ছিল রাজপুত ক্যাপ্টেন সিউড়ি।
আমি ডেমুলেশন বা এক্সপ্লোসিভের উপর ট্রেনিং শেষ করি। সেখান থেকে চলে আসলাম হেজামারা ক্যাম্পে। সেখান থেকে ৮ জনকে নিয়ে বাংলাদেশে আসি। আমার সাথে ছিল আতিক, খুরশীদ, হুমায়ুন, ফরিদ, সুলতান, গোলাপ, এবং আরেকজনের নাম মনে নেই। এসে উঠলাম বেলাবো। আমি ম্যালেরিয়ায় অসুস্থ ছিলাম। আতিক কয়েকজনকে নিয়ে এক রাতে দৌলতকান্দি স্টেশনের সামনে কয়েকটি বিদ্যুৎ টাওয়ার উড়িয়ে দেয়। একদিন আমাকে না জানিয়ে মমতাজ পাগলাকে মারার জন্য ভৈরব যায়। সাথে ছিল তার এক ভাই নুরু, আরেকজন আর্মি মোহন। সেই অপারেশনে নুরুর জন্য নুরু এবং আতিককে প্রাণ হারাতে হয়। এর কয়েকদিন পর এক ভোর রাতে বেলাবোতে এটাক হয়। সেখানেও বেলেন্ডারসাইড ফায়ার হয়নি বলে প্রাণ দিতে হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা খুরশীদ সহ আর্মি সুবেদার বশির, আনসার মতি, এবং আরও বেশ কয়েকজনকে। চলে আসলাম নারায়ণপুর। এখানে এসে আমার প্রথম অপারেশন করলাম শ্রীনিধি স্টেশনের রেলওয়ে ব্রিজ। আমার গ্রুপ ছাড়াও সাথে ছিল ভৈরবের সাদেক, তারা মিয়া, ইদ্রিস ডাকাত এবং রহমান ডাকাত। কয়েকদিন পর এদের সবাইকে নিয়ে আমি রামনগর ব্রিজের নিচে গ্যাস লাইনে অপারেশন করি ভোর রাতে। কিছুদিন পর চলে গেলাম আগরতলা। এসে উঠলাম ৩ নং সেক্টরের সিধাই ক্যাম্পে। সেখান থেকে চিফ অফ স্টাফ সফিউল্লাহ এবং নুরুজ্জামান আমাকে নিয়ে যায় আগরতলা 91 বি এস এফ ক্যাম্পে। সেখানে আমাকে লিম্পট মাইনের উপর ছবি দেখানো হয়। কিভাবে জাহাজে মাইন লাগাতে হয় সেসব শেখানো হয়। সাথে ছিল নরসিংদীর হারুন এবং ইরন, এবং আরও কয়েকজন। আমরা সবাই যখন নৌকায় উঠলাম, তখন আমি উসখুস করছিলাম। তা দেখে ভৈরব থানার ওসি (মনে হয় কুতুব উদ্দিন নাম ছিল) ২ প্যাকেট সিগারেট বের করে আমাকে দিলেন। তারপর নুরুজ্জামান সাহেব হাঁটু পানিতে নেমে নৌকার ছই ধুলেন এবং আমাকে বললেন, "খসরু তুমি যদি মরেও যাও আমার এই অপারেশনটা করে দিয়ে যেও।" আমি তখন ওনার কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম, "স্যার আমি মরে যাব তবুও এই অপারেশন করতে পিছপা হবো না।" ওনি তখন নৌকাটি ভাসিয়ে দিলেন। আমরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলাম। অনেক পথ ঘুরে এসে উঠলাম নরসিংদীর বাল্লাকান্দি বাজারের পাশে একটি বাড়ীতে। আমরা যাচ্ছি নরসিংদী PIDC জুট মিল এবং চাঁদপুর জুট মিলের পাশের দু'টি বড় বড় বার্জে, যা জুট মিলের সমস্ত চট বোঝাই করে পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে। সেটা ডুবাতেই আমরা যাচ্ছি। অবশেষে অনেক কাহিনীর পর ভোর রাতে একটি বার্জ ডুবাতে সক্ষম হয়েছি। এবং এই খবর সাথে সাথেই আগরতলার ৩ নং সেক্টরে চলে যায়।
ফিরে আসলাম ৩ নং সেক্টরে। একদিন ক্যাম্পে নাসিম সাহেব এসে সবার সামনে আমাকে একটি রকেট লঞ্চার হাতে তুলে দেন। ট্রেনিং এবং ফায়ারিং-এর পর আবার আমাকে বাংলাদেশে পাঠায়। সেই পুরানো দল আমার সাথে। সাথে যোগ হয় আরও নতুন ৩ জন। নাম - ক্যাপ্টেন তাজ, স্বাধীন এবং লোহানী। অনেক পথ ঘুরে এসে উঠলাম তাজের বাড়ীতে। ছিলাম কয়েকদিন। তারপর তাজ, লোহানী এবং স্বাধীন রয়ে গেল বাঞ্ছারামপুরে। আমি চলে আসলাম নরসিংদীতে। সেখানে হারুন, ইরান রয়ে গেলো। আমি, ফরিদ, হুমায়ুন, সুলতান, আর কে মনে নেই, চলে আসলাম ভৈরব। তখনও ভৈরব স্বাধীন হয়নি।
---------------------
আমি আব্দুল ওহিদ মোল্লা (মোঃ খসরু) বাংলাদেশের একজন বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং সঙ্গীত শিল্পী। চন্ডিবের মোল্লা বাড়ীতে আমার জন্ম। ভৈরব কলেজ মাঠে বড় একটা গ্রুপকে ট্রেনিং দিতে গিয়ে শুরু হয় আমার মুক্তিযুদ্ধ। আমার সাথে ছিল মনিরুজ্জামান, সাইফুল এবং ভৈরবের আরও কিছু যোদ্ধা, যারা পরে অনেকেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
ক্যাপ্টেন নাসিম সাহেব এসে উঠলেন গার্লস স্কুলে একটি প্লাটুন নিয়ে। ২/১ দিন পর হঠাৎ বিকাল বেলায় দু'টি জেট বিমান এসে এটাক করলো নাসিম সাহেবের উপর। ওনি সব গুটিয়ে আশুগঞ্জ জলিল হাজীর বাড়িতে গিয়ে উঠেন। তখন আমি ভৈরবের ছেলেদের নিয় ওনার সাথে যোগ দেই। কয়েক দিন পর ওনি আমাদেরকে সুবেদার বাসর ভাইয়ের সাথে লালপুর পাঠিয়ে দেন। তখন আমার সাথে ছিল ভৈরবের মান্নান, শাহজাহান, ইউসুফ বাবু, মিরু, বাবলা, রুহুল আমিন, মিজান এবং সুবেদার মেজবা। ২/১ দিন পর খবর পেলাম কিছু দূরে পাকিস্তানী নিশান উড়িয়ে একটি যুদ্ধ জাহাজ এসেছে। জাহাজটিকে রেকি করার জন্য আমি, মনা, শাহজাহান, ইউসুফ বাবু জেলে নৌকা নিয়ে এগিয়ে যাই। পাশের গ্রামে গিয়ে নামলাম। শুনলাম পাকিস্তানীরা এসে ছাগল, হাঁস, মুরগী ধরে নিয়ে গেছে। আমরা ফিরে এসে নাসিম সাহেবকে খবর পাঠাই। তখন নাসিম সাহেব একটি বেলেন্ডারসাইড এবং একটি RR দিয়ে কিছু আর্মি পাঠিয়ে দেন। বললেন, "আজ রাত অথবা ভোর বেলা তারা এটাক করতে পারে, তোমরা প্রস্তুত থেকো।" সারা রাত কেউ ঘুমায় নি। ঠিক ভোর বেলা জাহাজ আসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর যুদ্ধ শুরু হল।। আমরা ৫ মিনিটও টিকতে পারিনি। বিচ্ছিন্ন হয়ে পরি সবাই।
আমি বড়াইল হয়ে নবীনগর শাহজাহানের বোনের বাড়ীতে গিয়ে উঠি। এক রাত থেকে পরদিন আমি রওয়ানা হই আগরতলার পথে। শাহজাহান থেকে গেল। অনেক পথ ঘুরে অনেক কাহিনীর পর আগরতলায় এসে উঠলাম। বি এস এফ-এর সাহায্যে কর্নেল চৌমোহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসে পৌঁছই। এসে দেখি সিদ্দীক ভাই ও আপেল মাহমুদ সেখানে। মনে হয় লাকী আকন্দও ছিল। কথা হল আগামী কাল আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে চলে যাব। দুর্ভাগ্য আমার, রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই আমাকে আগরতলা VM হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। ৩/৪ দিন মুক্তিযোদ্ধা অফিসে ফিরে এসে দেখি আপেলরা চলে গেছে। সিদ্দীক ভাই এসে বলল, "কবি নজরুলও রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছে। তুমিও করবা।" ভৈরবের অনেক ছেলেদের নিয়ে একটি লরিতে উঠে বসলাম এবং চলে গেলাম বাংলাদেশের তলিয়াপাড়া আর ইন্ডিয়ার শিমলাতে। কয়েকদিন পর একদিন দুপুর বেলা পাকিস্তানীরা এটাক করে শিমলা ক্যাম্প। চলে গেলাম ওমপি নগর। সেখানে শুরু হয় ট্রেনিং। আলফা, ব্রাভো, চার্লি এবং ডেল্টা, এই চারটি কোম্পানি ছিল সেখানে। আমি চার্লি কোম্পানিতে। কমিশন র্যাংকে ছিলাম আমরা ৪ জন। বাহাউদ্দিন, আমি, আতিক এবং কিশোরগঞ্জের নুরু। চার্লি কোম্পানির ক্যাপ্টেন ছিল রাজপুত ক্যাপ্টেন সিউড়ি।
আমি ডেমুলেশন বা এক্সপ্লোসিভের উপর ট্রেনিং শেষ করি। সেখান থেকে চলে আসলাম হেজামারা ক্যাম্পে। সেখান থেকে ৮ জনকে নিয়ে বাংলাদেশে আসি। আমার সাথে ছিল আতিক, খুরশীদ, হুমায়ুন, ফরিদ, সুলতান, গোলাপ, এবং আরেকজনের নাম মনে নেই। এসে উঠলাম বেলাবো। আমি ম্যালেরিয়ায় অসুস্থ ছিলাম। আতিক কয়েকজনকে নিয়ে এক রাতে দৌলতকান্দি স্টেশনের সামনে কয়েকটি বিদ্যুৎ টাওয়ার উড়িয়ে দেয়। একদিন আমাকে না জানিয়ে মমতাজ পাগলাকে মারার জন্য ভৈরব যায়। সাথে ছিল তার এক ভাই নুরু, আরেকজন আর্মি মোহন। সেই অপারেশনে নুরুর জন্য নুরু এবং আতিককে প্রাণ হারাতে হয়। এর কয়েকদিন পর এক ভোর রাতে বেলাবোতে এটাক হয়। সেখানেও বেলেন্ডারসাইড ফায়ার হয়নি বলে প্রাণ দিতে হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা খুরশীদ সহ আর্মি সুবেদার বশির, আনসার মতি, এবং আরও বেশ কয়েকজনকে। চলে আসলাম নারায়ণপুর। এখানে এসে আমার প্রথম অপারেশন করলাম শ্রীনিধি স্টেশনের রেলওয়ে ব্রিজ। আমার গ্রুপ ছাড়াও সাথে ছিল ভৈরবের সাদেক, তারা মিয়া, ইদ্রিস ডাকাত এবং রহমান ডাকাত। কয়েকদিন পর এদের সবাইকে নিয়ে আমি রামনগর ব্রিজের নিচে গ্যাস লাইনে অপারেশন করি ভোর রাতে। কিছুদিন পর চলে গেলাম আগরতলা। এসে উঠলাম ৩ নং সেক্টরের সিধাই ক্যাম্পে। সেখান থেকে চিফ অফ স্টাফ সফিউল্লাহ এবং নুরুজ্জামান আমাকে নিয়ে যায় আগরতলা 91 বি এস এফ ক্যাম্পে। সেখানে আমাকে লিম্পট মাইনের উপর ছবি দেখানো হয়। কিভাবে জাহাজে মাইন লাগাতে হয় সেসব শেখানো হয়। সাথে ছিল নরসিংদীর হারুন এবং ইরন, এবং আরও কয়েকজন। আমরা সবাই যখন নৌকায় উঠলাম, তখন আমি উসখুস করছিলাম। তা দেখে ভৈরব থানার ওসি (মনে হয় কুতুব উদ্দিন নাম ছিল) ২ প্যাকেট সিগারেট বের করে আমাকে দিলেন। তারপর নুরুজ্জামান সাহেব হাঁটু পানিতে নেমে নৌকার ছই ধুলেন এবং আমাকে বললেন, "খসরু তুমি যদি মরেও যাও আমার এই অপারেশনটা করে দিয়ে যেও।" আমি তখন ওনার কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম, "স্যার আমি মরে যাব তবুও এই অপারেশন করতে পিছপা হবো না।" ওনি তখন নৌকাটি ভাসিয়ে দিলেন। আমরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলাম। অনেক পথ ঘুরে এসে উঠলাম নরসিংদীর বাল্লাকান্দি বাজারের পাশে একটি বাড়ীতে। আমরা যাচ্ছি নরসিংদী PIDC জুট মিল এবং চাঁদপুর জুট মিলের পাশের দু'টি বড় বড় বার্জে, যা জুট মিলের সমস্ত চট বোঝাই করে পাকিস্তান নিয়ে যাচ্ছে। সেটা ডুবাতেই আমরা যাচ্ছি। অবশেষে অনেক কাহিনীর পর ভোর রাতে একটি বার্জ ডুবাতে সক্ষম হয়েছি। এবং এই খবর সাথে সাথেই আগরতলার ৩ নং সেক্টরে চলে যায়।
ফিরে আসলাম ৩ নং সেক্টরে। একদিন ক্যাম্পে নাসিম সাহেব এসে সবার সামনে আমাকে একটি রকেট লঞ্চার হাতে তুলে দেন। ট্রেনিং এবং ফায়ারিং-এর পর আবার আমাকে বাংলাদেশে পাঠায়। সেই পুরানো দল আমার সাথে। সাথে যোগ হয় আরও নতুন ৩ জন। নাম - ক্যাপ্টেন তাজ, স্বাধীন এবং লোহানী। অনেক পথ ঘুরে এসে উঠলাম তাজের বাড়ীতে। ছিলাম কয়েকদিন। তারপর তাজ, লোহানী এবং স্বাধীন রয়ে গেল বাঞ্ছারামপুরে। আমি চলে আসলাম নরসিংদীতে। সেখানে হারুন, ইরান রয়ে গেলো। আমি, ফরিদ, হুমায়ুন, সুলতান, আর কে মনে নেই, চলে আসলাম ভৈরব। তখনও ভৈরব স্বাধীন হয়নি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কামরুজ্জামান সাদ ০৬/১০/২০১৭সুন্দর উপস্থাপনা
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ০২/০৯/২০১৫ভালো লাগল।
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ০৩/০২/২০১৫অসাধারণ! মন ছুঁয়ে গেল....
-
এমএসবি নাজনীন লাকী ২৯/১২/২০১৪আমিও যেন ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় টা। ভাল লাগলো!!
-
আবু সাহেদ সরকার ২৯/১২/২০১৪বেশ লাগলো পড়ে।
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ২৯/১২/২০১৪তথ্যগুলো ভালো লাগলো॥
-
দীপঙ্কর বেরা ২২/১২/২০১৪দারুন
-
শিমুল শুভ্র ১৮/১২/২০১৪দারুণ তথ্যসমৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা কথা । অসাধারণ
-
সায়েম খান ১৮/১২/২০১৪একজন মুক্তিযোদ্ধা ব্লগার পেয়ে ভাল লাগলো।