পরকীয়া
দিপকের বিয়ে হয়েছে তা প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল, দু বছরের একটা মেয়েও আছে তার। বউ , মেয়ে নিয়ে তার মোটামুটি সুখেরই সংসার। এহেন সুখের সংসারে দিপকের জীবনে একটু অন্যধরনের সুর বাজতে শুরু করলো, কিছুটা তার জন্য কিছুটা হয়তো তার কপালের জন্য।
দিপক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কাজেই কম্পিউটার ইন্টারনেট তার কাছে জলভাত, তবে এসবের ভালো আর খারাপ দুটো দিকই যে আছে তা দিপক বেশ ভালো ভাবেই জানতো, কিন্তু জানলে কি হবে মানুষের মন , সব জেনে শুনেও সে ভুল কাজটি করবেই, আর সেটাই দিপক করেছিল।
দিপক দুপুরে লাঞ্চের পড়ে মিনিট কুড়ি ডিজিটাল লেখা লেখি করতো যাকে বলে চ্যাটিং। সেখানে যেমন অনেক চেনা বন্ধু থাকত সেরকম আবার অনেক অচেনা বন্ধুও ছিল। আর ছেলেরা একটু অচেনা মেয়ে বন্ধুই বেশী পছন্দ করে এই ধরনের আলাপে, কিন্তু সেখানে কে আসল ছেলে আর কে আসল মেয়ে সেটা জানা খুব দুরুহ ব্যপার ছিল। দিপক এটা বেশ ভালো ভাবেই জানতো আর তাই এ ব্যাপারে সে বেশ সতর্ক ও ছিল।
এরকম এক দুপুরে তার ডিজিটাল লেখালেখির মাঝে সে একটা অন্য ধরনের মেসেজ পায়- যে লিখেছিল সে তার অচেনা কেউ, নাম দেওয়া – “আমি হারিয়ে গেছি” তার মেসেজটা ছিল একটা হিন্দি গানের লাইন আর তারপর ছিল এক জিজ্ঞাসা – এই গান টা কোন বইয়ের বলতে পারো?
দিপক ভাল করে গানের লাইনটা দেখে বুঝল বেশ পুরনো , তবে কোন সিনেমা সে পাঁচ মিনিটে বলতে পারবে গুগুলদার সৌজন্যে। যথারীতি সে সার্চ করে উত্তর লিখে পাঠিয়ে মনে মনে ভাবল – লোকে এখনও ইন্টারনেটটা ঠিকমত ব্যবহার করতে শেখেনি।
ওদিক থেকে উত্তর এলো – ধন্যবাদ।
দিপক এবার টাইপ করলো- মেল না ফিমেল?
ওদিক থেকে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর উত্তর এলো ফিমেল।
দিপকের মনটা মুহূর্তের জন্য একটু পুলকিত হয়ে উঠল কিন্ত সে পুরো বিশ্বাস করতে পারল না, সে বলল-বয়স?
ওদিক থেকে উত্তর এলো – মেয়েদের বয়স বলতে নেই।
দিপক এবার একটু বিশ্বাস করল কারন যদি এটা ফেক হত তাহলে উত্তর আসতো উনিশ কি কুড়ি। দিপক এবার লিখল- বাড়ি?
ওদিক থেকে প্রায় দশ মিনিট পর লেখা এল – আমার না রুমা, বাড়ি বেলগাছিয়া, অবিবাহিতা আর আমি একটা ইস্কুলে পড়াই।
দিপক এতটা আশা করেনি , সে কিছুক্ষণ ভাবল তারপর সে লিখল- আমি দিপক, বয়স তিরিশ, বাড়ি বালিগঞ্জ , সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার এবং বিবাহিত।
বিবাহিত কথাটা সে সবজায়গায় লেখে , তার ধারণা মেয়েরা একটু বেশী বিবাহিত পুরুষদের পছন্দ করে।
তার লেখা যাবার সাথে সাথেই রুমার লেখা এলো- ক বছর হোল বিয়ে করেছ?
দিপক এ যায়গায় একটু কমিয়ে বলে – বলল দু বছর।
ওদিক দিয়ে লেখা এল- ছেলে মেয়ে আছে?
দিপক বলল – ছ মাসের একটা মেয়ে। দিপক তার সাথে যোগ করল – তুমি এখনো বিয়ে করনি কেন?
রুমা এবার যা লিখল সেটা সচরাচর কোন মেয়ে খুব অল্প পরিচয়ে লেখে না, রুমা লিখল – আমার প্রেমিক আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমি এখন খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। তুমি আমার বন্ধু হবে।
দিপক লিখল- নিশ্চয়। দিপক একটু প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলো লিখল – তুমি বুঝি গান খুব ভালোবাসো?
রুমা লিখল – এটা নিয়েই আমি এখন পড়ে আছি, তুমি গান ভালোবাসো না?
দিপক অতটা গান পাগল নয় কিন্তু এখানে সেটা জানানো যাবে না সে লিখল – হ্যাঁ খুব।
ওদিক থেকে লেখা এল – তাহলে আমি কয়েকটা গানের লিস্ট দেব তুমি একটু আমাকে ওইসব গান কোন সিনেমা আর কে গায়ক সেটাও আমাকে লিখে দিও।
দিপক বলতে যাচ্ছিল গুগুলদার কথা কিন্ত ভাবল, না বলে দিল বন্ধুত্ব টা শেষও হয়ে যেতে পারে।
দিপক লিখল – তুমি দিও ।
ওদিক থেকে আবার একটা অন্যরকম লেখা এল- জানো আমার না কিছু ভালো লাগে না, ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর খালি মনে হয় , আমি মরে যাই।
দিপক এবার দার্শনিকের মতন লিখল – মরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয় না রুমা, একটা কথা মনে রাখবে খারাপ কিছুর পরেই ভালো কিছু হয়, আমাদের শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হয় না হলে আগামী দিনের আরও ভালো কিছু হয়তো আমরা চিরদিনের মতন হারিয়ে ফেলব।
দিপক লেখা টা পাঠানোর পর ভাবল – একটু বেশী হয়ে গেল বোধহয়।
ওদিক থেকে মিনিট দশেক পর উত্তর এলো – তুমি বেশ ভালো লেখোতো।
দিপক আবার প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য লিখল – তোমার প্রিয় খাবার কি?
ওদিক থেকে উত্তর এল – চাইনিজ আর তোমার।
দিপকের যদিও বিরিয়ানি ফেবারিট , কিন্তু সে লিখল চাইনিজ।
ওদিক থেকে উত্তর এলো – বাঃ বেশ মিল তো আমাদের মধ্যে।
দিপক একটা হাসির ছবি পাঠিয়ে দিল।
ওদিক থেকে এবার লেখা এল – আজ উঠি, দাদা এসেগেছে , কাল আবার কথা হবে।
সে দিন দিপকের মনে আচমকা একটা অন্যধরনের ভাললাগা চলে এলো, মনে হোল আরও কিছুক্ষণ কথা হলে ভালো হত , সত্যই মানুষের মন কি অদ্ভুদ, বাড়ির বউকে ভালবেসেও অন্য নারীকে ও ভালবাসার স্বপ্ন দেখা যায়।
পরদিনও এক্ই সময়ে দিপক অনলাইন হোল, সেদিনও দুজনের মধ্যে বেশ অনেক্ষন লেখালেখি চলল। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল।
দিপক বেশ বুজতে পারল সে রুমার প্রতি একরকম আচ্ছন্ন হয়ে পরেছে, এটাকে প্রেম বলে নাকি আকর্ষণ সে ধরতে পারলনা। কিন্তু রুমার সাথে তার কথা না হলে তার মন ভালো লাগে না, এবং এ কারনেই হয়তো সে এই সপ্তাহে বাড়িতে বউ শিলাকে বেশী সময় দেয়নি।
পরের সপ্তাহে আরেকটি ঘটনা ঘটল যাতে দিপক রুমার প্রতি আরও আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।
মিলি গেছে বাপের বাড়ি, দিপক নিজেই ড্রাইভ করে দিয়ে এসেছে রবিবার সন্ধ্যে বেলায়। সে রাতে সে বাড়িতে বসে একবার চেষ্টা করেছিল অনলাইনে রুমাকে ধরার , কিন্তু রুমা একবারের জন্যও অনলাইন হয়নি।
পরদিন দুপরেও রুমা এলো না, তার পরের দিন ও না, দিপক একটা অফলাইনে মেসেজ করে রাখল – সব ঠিক আছে তো?
জবাব এল তার পরদিন দুপুরে , দিপক অনলাইন হবার সাথে সাথেই – সরি , কদিন ছিলাম না , আমার জন্য কি তোমার মন খারাপ করছিল?
দিপক কি জবাব দেবে বুঝে উঠতে পারছিলনা , কিছুক্ষণ পর লিখল – না , অনেকদিন খবর নেই তো তাই চিন্তা করছিলাম।
এবার একটা অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল – যে লেখাটা এলো ওদিক থেকে তার জন্য দিপক একেবারেই প্রস্তুত ছিলোনা – এবার থেকে চিন্তা করলে এই নাম্বারে ফোন করে খোঁজ নিয়ো। নিচে একটা ফোন নাম্বার দেওয়া।
দিপক চমকে উঠলেও তার মনে একটা ভালোলাগা ছেয়ে গেল। সে শুধু লিখল - ধন্যবাদ ।
ওদিক থেকে আবার একটা অভাবনীয় লেখা এল – তুমি এখনো আমায় ফোন করতে পারো।
দিপক রুমার দেওয়া ওই নাম্বারে ফোন করল , ফোনটা করার সময় তার মনটা একটু দুরুদুরু করছিল , যদি এটা ফেক হয় তাহলে , যা হোক তার আশঙ্কাকে ভুল প্রমান করে একটি মেয়েলি কণ্ঠই ফোনটা ধরল।
ধরে বলল- আমিই রুমা, তোমার চিন্তার কিছু নেই, এটা ফেক নয়।
দিপক এবার একটু মিথ্যাই বলল- আমি আসল আর ফেক ভালো করেই বুঝতে পারি।
রুমা খিল খিল করে হেঁসে উঠে বলল – ভেরি স্মার্ট।
দিপক জিজ্ঞেস করলো – কোথায় ঘুরতে গেছিলে?
রুমা উত্তর দিল – দিঘা, ইস্কুলের বন্ধুদের সাথে।
দুজনের মধ্যে এবার ফোনালাপ জমে উঠল, রুমা কোন ইস্কুলে পড়ায়, বাড়িতে কে কে আছে , কোথায় ঘুরতে যেতে ভালো বাসে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা জিনিস রুমা শুধু পরিষ্কার করে দিল যে সে তার দাদাকে খুব ভয় পায় আর তার দাদা একটু সেকেলের সুতরাং সে রাত্রে কোন কথা বলতে পারবে না।
দিপকের এতে সুবিধেই হোল, কারন রাতে তার অসুবিধে, ঘরে শিলা আছে।
রাত্রে কথা না হলেও দুজনের মধ্যে মোবাইলের এসে-মেস শুরু হোল, শিলা মোবাইলে অতটা সড়গড় না হয়াতে এই মোবাইল মেসেজ নিয়ে দিপক কে খুব একটা বিপদে পরতে হলনা।
দিপকের মধ্যে একটু পরিবর্তন হোল, আগে শিলাকে সে বেশ সময় দিত, এখন সেটা একদমই কমে গেল, শিলা ফোনে মাঝে মাঝে বললে দিপক কাজের চাপ বলে শিলাকে শ্বান্ত রাখতো।
এর মধ্যে শিলা বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এল, শিলা এখন তার বাচ্ছাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত , তার খাওয়াদাওয়া, ঘুম পাড়ানো সবই শিলা সামলাত, দিপক শুধু প্রক্সি দিত আর রুমার সঙ্গে ইন্টারনেট আর ফোনে কথা চালিয়ে যেতে লাগলো।
রুমা মাঝে মাঝে দিপক কে বলতো – তুমি যে এতো কথা বোলো , মেসেজ করো তোমার বউ জানে?
দিপক বেশ গর্ব করে বলতো – আমি দুদিক ব্যলেন্স করে চলতে পারি, যাতে বউও খুশী থাকে আর আমাদের মধ্যে কথাবার্তাও ভালো মতন চলে।
রুমা তার বিখ্যাত হাসি হেঁসে বলত – যেদিন ধরা পড়বে সেদিন বুঝবে।
দিপক বলল – নো ম্যাডাম , আমি এ ব্যপারে একটু স্মার্টই আছি।
এরপর এক সন্ধ্যে বেলায় এক ঘটনা ঘটলো। সেদিন ছিল শনিবার, দিপকের অফিসের এক কলিগের বাড়িতে ককটেল পার্টি ছিল, সেটা রুমা আর শিলা দুজনেই জানতো, তো সেই পার্টি শেষ করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল একটু নেশাগ্রস্থ হয়ে দিপক নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিল।
হটাত তার ফোন টা বেজে উঠলো আর কলারের নাম টা দেখে সে নিজেই চমকে উঠলো – রুমার ফোন, এতো রাতে , ওতো বলেছিল রাতে ফোন করতে পারবে না তা হোলে? ফোনটা রিসিভ করলো দিপক ।
ও প্রান্তে রুমা বলল – কোথায়?
দিপক বলল – ড্রাইভ করছি।
রুমা বলল - সাবধানে ফিরও, নিশ্চয়ই নেশা করে আছো? সাবধানে ড্রাইভ করো, তোমার জন্য আমার চিন্তা হচ্ছিল।
দিপক একেবারে মোহিত হয়ে গেল এই কথাতে, সে একটু নেশা গ্রস্থ ছিল তার মন টা একটু ভারী হয়ে গেল সে রুমাকে বলল- তুমি খুব ভালো মেয়ে রুমা, এতদিন আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু শিলা কোনদিন আমাকে এভাবে ফোন করেনি, দিপকের মুখ থেকে অজান্তে বেরিয়ে এলো – আই লাভ ইউ রুমা।
রুমা ও প্রান্ত থেকে বলল ধ্যাত, নেশার ঘোরে যা তা বলছে, সাবধানে বাড়ি ফেরো।
দিপক বাড়ি ফিরে দেখল শিলা জেগে বসে রয়েছে আর তার দু বছরের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দিপকের হটাত শিলার উপর খুব রাগ হোল, সে কোন কথা না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। শিলা তার কাছে এগিয়ে এসে বলল – খুব মজা করলে না?
দিপক কোন কথা না বলে পাশ ফিরে শুল। শিলা এবার তার গায়ের উপর প্রায় শুয়ে বলল – কি হোল , কথা বলছ না যে।
দিপক ওভাবেই শুয়ে বলল – শিলা তুমি আমাকে ভালোবাসো?
শিলা এবার জোর করে দিপক কে কাত করে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল – জানিনা।
দিপক আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না , সে শিলা কে জাপটে ধরে ভালবাসার দুনিয়ায় হারিয়ে গেল। বিছানার ভালবাসা শেষ হবার পর তার নেশা টা একটু কমে গেল, এমন সময় তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসার আওয়াজ হোল, মোবাইল টা নিয়ে সে দেখল – রুমা করেছে – আশা করি সাবধানে বাড়ি পৌঁছে গেছ , যদি চাও কাল আমরা দেখা করতে পারি সকাল এগারোটায়।
দিপক রিপ্লাই করলো – ঠিক আছে।
পাশ থেকে শিলা বলল – কার মেসেজ
দিপক বলল – বসের।
দিপকের সে রাতে ঘুম এলনা, তার একপাশে মেয়ে শুয়ে আছে আর এক পাশে শিলা, ঘরের নাইট ল্যম্পে শিলার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবল – এই মেয়ে স্বামী ছাড়া বাইরে আর কোনো জগত থাকতে পারে তা বোধ হয় বিশ্বাসই করে না আর রুমা, সে বিবাহিত জেনেও তাকে এক অজানা সম্পর্কের আহ্বানে ডেকে যাচ্ছে।
দিপকের কাছে সেই মুহূর্তে রুমাকে একটু হলেও বিরক্ত লাগলো, সে শিলাকে বুকের কাছে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
সকালে ঘুম ভাঙল শিলার ডাকে- শিলা চা নিয়ে অপেক্ষা করছে পাশের ঘরে, আজ রবিবার , দিপক উঠে পড়লো , সে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরনোর মুখে মোবাইল টা বেজে উঠল, দিপক দ্রুত গিয়ে দেখল রুমার ফোন। ফোন টা নিয়ে সে ব্যাল্কনির দিকে চলে গেল।
রুমার কথা ভেসে এল – সরি , রবিবারে তোমাকে ফোন করে অসুবিধে করলাম নাতো?
দিপক বলল - না।
রুমা জিজ্ঞেস করল- তা আজ দেখা হচ্ছে তো?
দিপক একটু চুপ করে গেল। দিপক কে চুপ করে থাকতে দেখে রুমা ও প্রান্তে বলল- অসুবিধে থাকলে থাক , অন্য দিন দেখা করা যাবে।
দিপকের কি মনে হোল সে বলে বসলো – না আজই করবো, কিন্তু দশটায় নয়, বিকেল তিনটের সময় রাজারহাটের ইকো পার্কে। দিপক মনে মনে চাইল , আজ দেখা করে সম্পর্ক টাকে ইতি করে দিয়ে আসবে।
রুমা ঠিক আছে বলে ফোন টা কেটে দিল।
কিন্তু রুমার ফোন টা পাওয়ার পর তার মনে আবার একটা নিষিদ্ধ আকর্ষণ কাজ করতে শুরু করল রুমার প্রতি, এক মাস হয়ে গেল তাদের সাথে কথাবার্তা চলছে না এবার দেখা করতেই হবে। কিন্তু দেখা করে কি করবে , কি বলবে ভাবতে ভাবতে শিলার ডাক শোনা গেল – কি গো চা যে ঠাণ্ডা হয়ে গেল , এসো।
দিপক শিলা কে বলল আজ তার বসের বাড়িতে একটা টি পার্টি আছে, সে দুপুর দুটোয় বেরিয়ে যাবে আসতে আসতে রাত হতে পারে, তবে রাতের ডিনারটা সে এসে একসাথেই করবে।
শিলা একটু অভিমান করে বলল – একটা ছুটির দিন তাও বাড়ি থাকতে পারো না।
দিপক হাসতে হাসতে বলল – কি করবো বোল , বসের হুকুম।
হালকা একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী আর জিন্স পড়ে দিপক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল, তার বাড়ি থেকে ইকো পার্ক ঘণ্টা খানেকের রাস্তা, রওনা হবার আগে সে রুমাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে পার্কে ঢোকার মুখে সে দাঁড়িয়ে থাকবে , রুমা যেন ওখানেই চলে আসে।
দিপক গাড়ি পার্ক করে গেটের সামনে একটা দোকান ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল, তখন ঠিক বেলা তিনটে পাঁচ, লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে, দিপকের মনে একটা ভয় হোল যদি কোন চেনা লোক দেখে ফেলে তাকে, সত্যিইতো সে বিবাহিত , তার একটা মেয়েও আছে , এসব পরকীয়া তার কি শোভা পায়। ভাবতে ভাবতে রুমার ফোনটা এল – কোথায় তুমি? আমি এসে গেছি
দিপক সামনে তাকাল , না সেরকম কোন মেয়েকে দেখতে পেল না, ফোনে বলল – আমি আগেই চলে এসেছি, বাঁদিকের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, তুমি কোথায়?
রুমা বলল তুমি কি পড়ে আছো?
দিপক উত্তর দিল – নীল রঙের পাঞ্জাবী।
সঙ্গে সঙ্গে রুমা বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মনে হচ্ছে দেখতে পেয়েছি। দিপক সামনে সেরকম কোন মেয়েকে দেখতে পেলনা, তার মনে একটু হলেও একটা আশঙ্কা হোল – ফোনে তো বেশ গলাটা সুন্দর , বাস্তবে কি হবে কে জানে, না আগে থেকে একটা ছবি চেয়ে পাঠালে ভালো হতো, ইন্টারনেট যুগে ফেক হবার চান্সই বেশী।
ঠিক সে সময় তার কানের সামনে একটা মেয়েলী কণ্ঠ বলল – হায়!
পর্ব - ২
দিপক বাঁদিক ঘুরে দেখল তারদিকে চেয়ে একটি মেয়ে হাসছে, দিপক একটু থতমত খেয়ে বলল – হায় আমি দিপক আর তুমি নিচ্ছয়ই রুমা।
রুমা সেই বিখ্যাত হাসি হেঁসে বলল – একদম ঠিক, তা কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে?
দিপক বলল এই মিনিট পনেরো।
রুমা বলল চলো ভিতরে যাওয়া যাক।
দিপক মিনিট খানেক কিছু না বলে রুমাকে দেখতে লাগলো, মেয়টি হয়তো সুন্দরী নয় কিন্তু তার শরীরে এক দুর্নিবার আকর্ষণ আছে যা যে কোন পুরুষ মানুষ কে অতি সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে,দিপকের হটাত মনে হোল সেত রুমার শরীর নিয়ে এর আগে কোনদিন ভাবেনি, সে তার কথাবার্তায় অনেক টা মোহিত হয়েছিল কিন্তু আজ তাকে দেখে তার প্রতি সে একটু শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করলো, তার মানে কি পরকীয়া প্রেমে মনের ভালবাসা নয় শরীরীই কথা বলে।
রুমা আবার খিক খিক করে হেঁসে বলল , কি মশাই অত কি দেখছেন, দেখার দিন অনেক পড়ে আছে, ভিতরে চলো।
দিপক যেন এবার সত্যিই রুমার প্রতি আরও যেন মোহিত হয়ে পরল, তার মনে হোল রুমাকে নিয়ে সে একাকি অনেক দূর চলে যায়, সে হটাত অফার করে বসল – পার্কে না ঢুকে চলো আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরি।
রুমা একটু মিচকি হেঁসে বলল – বেশ তাহলে তাই চলো।
রুমা দিপকের পাশে বসে, দিপক গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে, সে এর আগেও শিলাকে নিয়ে লং ড্রাইভে গেছিল, কিন্তু কেন জানে না আজ তার মধ্যে একটা অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে, চালাতে চালাতে সে মাঝে মাঝে রুমার দিকে তাকাচ্ছিল, রুমা তার লাস্যময়ী মুখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে, এভাবে মিনিট পনেরো চলার পর রুমা মুখ খুলল – মশাই সামনের দিকে তাকাও, এক্সিডেন্ট করবে যে।
দিপক একটু লজ্জা পেয়ে গেল, হেঁসে বলল – না না, এসব রাস্তা আমার চেনা।
রুমা বলল – আগে কাকে নিয়ে এসেছিলে? বউকে?
দিপক্ক বলল – তা এসছিলাম।
রুমা বলল – বউ জানে যে আজ আমার সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছ?
দিপক বলল – না, বলেছি বসের বাড়ি যাচ্ছি, অফিসের কাজ আছে।
রুমা আবার সেই সেই খিল খিল করে হেঁসে বলল – তা বউ বিশ্বাস করেছে?
দিপক বলল – আমার বউ একটু সাদাসিধে, আমাকে অবিশ্বাস করে না।
রুমা এবার একটু গম্ভীর মুখে বলল – সাদাসিধে বলে ঠকাচ্ছ?
দিপক বলল – ঠকানোর কি আছে, বিয়ের পর কি মেয়ে বন্ধু কি থাকতে পারে না।
রুমা এবার বলে উঠলো- তা পারে , তবে ছুটির দিনে বউকে মিথ্যে বলে সেই বান্ধবীকে নিয়ে গাড়িতে পাশে বসিয়ে কি কেউ লং ড্রাইভে যায়?
দিপক এবার জিনিস টাকে হালকা করার জন্য বলল – হ্যাঁ যায়, সে বান্ধবী যদি তোমার মত সুন্দরী হয়।
রুমা এবার একটু ন্যকা গলায় বলল – মশাই আমি কিন্তু সুন্দরী নই, ও তোমার চোখের ভুল, চোখের ডাক্তার দেখাও।
দিপক বলল – চোখ আমার একদম ঠিক, তোমারই চোখ খারাপ ওই জন্য আয়নাতে তুমি তোমার মুখ ভালো করে দেখতে পাওনা।
এরকম আরও গল্প , কথা এগিয়ে চলল, এমন সময় একটা ছোট্ট অথচ দিপকের মন কাড়ানো একটা ঘটনা ঘটলো-
দিপক গাড়ির গিয়ার চেঞ্জ করার জন্য গিয়ারে হাত দিয়ে বুঝল সে হাত টা রেখেছে রুমার ডান হাতের ওপরে, মুহূর্তের জন্য তাদের কথা থেমে গেল, কেউই হাত সরানোর চেষ্টা করলো না।
এভাবে মিনিট পাচেক চলার পর – দিপক বলল – তোমার মতন মেয়েকে তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কেন ছেড়ে চলে গেল বুঝতে পারছিনা।
রুমা এবার হাত টা সরিয়ে নিয়ে একটু উদাস গলায় বলল – আমার কপাল, ভগবান এই জিনিস টা আমায় একদমই ভালো দেয় নি। বাদ দাও তার কথা।
দিপক এবার জিজ্ঞেস করলো – তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
রুমা এবার একটু যেন থমকে গেল , একটু ভেবে বলল – দাদা, বৌদি, মা আর বাবা।
দিপক বলল – তোমার দাদা তো শুনেছি খুব কড়া, তা কি বলে আজ বেরোলে?
রুমা বলল – বন্ধুর বাড়ি অনুষ্ঠান আছে বলে বেরিয়ে এসেছি, আমাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
দিপক এতক্ষণে খেয়াল করল যে তারা কথা বলতে বলতে অনেক দূর চলে এসেছে, বেলা গরিয়ে সন্ধ্যে হবার মুখে, এধারের রাস্তা গুলো বেশ ফাঁকা, পাশে গাছপালা ভর্তি, সে বুঝল সে কোলকাতা ছাড়িয়ে মফঃস্বলের দিকে ঢুকে পড়েছে।
দিপক গাড়ি ঘুরিয়ে দিল, রুমাকে জিজ্ঞেস করলো – তোমায় কি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব?
রুমা বলল না না অত দূর যেতে হবে না, আমাকে এয়ারপোর্টের সামনে নামিয়ে দিলেই হবে।
এবার ফেরার পালা, আবার টুকিটাকি গল্প করতে করতে রুমা হটাতই বলল – কাল রাতে কি বলেছিলে তোমার খেয়াল আছে?
দিপকের শুধু মনে আছে সে কাল রাতে পার্টি করে ফিরছিল, নেশা করেছিল আর রুমা তাকে ফোন করেছিল, কিন্তু কি কথা সে বলেছিল সেটা তার একদমিই মনে নেই। সে একটু বোকার মতন বলল – কি বলেছি বলোতো?
রুমা আবার সেই খিল খিল করে হেঁসে বলল – মনে করার চেষ্টা করো ।
দিপক অনেক বার ভাবলো, কিন্তু তার কিছুতেই মনে পড়লো না। আবার সে রুমাকে বলল – তুমিই বলো।
রুমা এবার একটু গম্ভীর মুখে বলল – মনে না পরা মানে , তুমি যা বলেছিলে সেটা মন থেকে বলোনি। আর যা মন থেকে বলোনি, তা ভুলে গেলে মনে করানো উচিৎ নয়।
দিপক ভেবে পেলনা সে কি এমন কথা বলেছে যা রুমার মনে গেঁথে আছে। দিপক এবার রুমার একটা হাত চেপে বলল – দেখো নেশার ঘোরে যদি কোন বাজে কথা বলে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত।
রুমা এবার একটু হেঁসে বলল – বাজে কথা নয় মশাই, তুমি একটি খুব সুন্দর কথা বলেছিলে।
দিপক এবার গাড়িটাকে একটু সাইড করে দাড় করাল, জায়গাটা একটু বেশীই নির্জন, কিন্তু তাকে জানতেই হবে সে কাল রাতে কি এমন কথা বলেছিল।
গাড়ি দাড় করাতে দেখে রুমা জিজ্ঞেস করল- কি হোল? গাড়ি দাড় করালে কেন?
দিপক একটু হেঁসে বলল – কাল রাতে আমি কি বলেছিলাম না বললে আমি আর গাড়ি চালাব না।
রুমা বলল – কি মুশকিল, বললাম তো আমি বলতে পারবো না, তুমি আজ ভাব, কাল ভাব, পরশু ভাব তারপর মনে না পরলে আমায় জিজ্ঞেস করো।
দিপক রুমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল, হটাত তার চোখ দুটো নিবিদ্ধ হোল রুমার ঠোঁটের উপর, এরকম পাতলা লাল ঠোঁট আর তার মধ্যে একটা যৌনতার আবেদন সে অনেকদিন যেন দেখেনি, দিপক আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না, সে ঝাপিয়ে পড়ে রুমার ঠোঁটের মধ্যে নিজের ঠোঁট দুটি দুবিয়ে দিল।
রুমা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও কোন বাঁধা দিলনা, এবং দিপকের সাথে সে পুরো সহযোগিতা করলো। এভাবে মিনিট পাঁচেক কাটলো, রুমা আস্তে করে বলল – ছাড়ো এবার।
দিপক ছেড়ে দিল, রুমা মুখটা মুছে বাঁদিকে তাকিয়ে রইল, দিপকের মনে হোল রুমা বোধহয় রাগ করেছে , সে শুধু একবার সরি বলে গাড়ি স্টার্ট করে দিল।
আসার পথে রুমা গাড়িতে আর কোন কথা বলল না, দিপক ও একটু ঘাবড়ে গেল, তার মনে হোল সে এটা ঠিক করে নি।
এয়ারপোর্টের সামনে রুমা গাড়ি থেকে নামার সময় দিপক আবার বলল রুমা আমি সত্যিই সরি।
রুমা এবার একটা মায়াবী হাসি হেঁসে বলল- আমি কিন্তু সরি নই।
রুমা নেমে চলে গেল , দিপক চেয়ে দেখল রুমা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
দিপকের মধ্যে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো, মনের মধ্যে একটা নিষিদ্ধ কাজ করার এক অজানা আনন্দ ঘুরে বেড়াতে লাগলো, মনে হোল সেকি আবার প্রেমে পড়েছে নাকি এটা নিছকই এক শরীরী আকর্ষণ। মোবাইলে মেসেজের আওয়াজ এলো- রুমার মেসেজ ,সেটা পড়ে দিপক চমকে উঠলো
- কাল রাতে তুমি আমায় বলেছিলে , আই লাভ ইউ। মনে পড়েছে মশাই।
দিপকের কিন্তু তাও মনে পরলনা যে সে এটা বলেছিল কিনা, আবার একটা মেসেজ এলো, আবার রুমা ,
- আই লাভ ইউ দিপক।
দিপক কিন্তু মেসেজটা টা পেয়ে এক অজানা ভয়ে সেটা ডিলিট করে দিল, হটাত তার শিলার কথা মনে পড়ল, ঘরিতে দেখল রাত আটটা বেজে গেছে, দিপক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল।
ক্রমশ...
দিপক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কাজেই কম্পিউটার ইন্টারনেট তার কাছে জলভাত, তবে এসবের ভালো আর খারাপ দুটো দিকই যে আছে তা দিপক বেশ ভালো ভাবেই জানতো, কিন্তু জানলে কি হবে মানুষের মন , সব জেনে শুনেও সে ভুল কাজটি করবেই, আর সেটাই দিপক করেছিল।
দিপক দুপুরে লাঞ্চের পড়ে মিনিট কুড়ি ডিজিটাল লেখা লেখি করতো যাকে বলে চ্যাটিং। সেখানে যেমন অনেক চেনা বন্ধু থাকত সেরকম আবার অনেক অচেনা বন্ধুও ছিল। আর ছেলেরা একটু অচেনা মেয়ে বন্ধুই বেশী পছন্দ করে এই ধরনের আলাপে, কিন্তু সেখানে কে আসল ছেলে আর কে আসল মেয়ে সেটা জানা খুব দুরুহ ব্যপার ছিল। দিপক এটা বেশ ভালো ভাবেই জানতো আর তাই এ ব্যাপারে সে বেশ সতর্ক ও ছিল।
এরকম এক দুপুরে তার ডিজিটাল লেখালেখির মাঝে সে একটা অন্য ধরনের মেসেজ পায়- যে লিখেছিল সে তার অচেনা কেউ, নাম দেওয়া – “আমি হারিয়ে গেছি” তার মেসেজটা ছিল একটা হিন্দি গানের লাইন আর তারপর ছিল এক জিজ্ঞাসা – এই গান টা কোন বইয়ের বলতে পারো?
দিপক ভাল করে গানের লাইনটা দেখে বুঝল বেশ পুরনো , তবে কোন সিনেমা সে পাঁচ মিনিটে বলতে পারবে গুগুলদার সৌজন্যে। যথারীতি সে সার্চ করে উত্তর লিখে পাঠিয়ে মনে মনে ভাবল – লোকে এখনও ইন্টারনেটটা ঠিকমত ব্যবহার করতে শেখেনি।
ওদিক থেকে উত্তর এলো – ধন্যবাদ।
দিপক এবার টাইপ করলো- মেল না ফিমেল?
ওদিক থেকে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর উত্তর এলো ফিমেল।
দিপকের মনটা মুহূর্তের জন্য একটু পুলকিত হয়ে উঠল কিন্ত সে পুরো বিশ্বাস করতে পারল না, সে বলল-বয়স?
ওদিক থেকে উত্তর এলো – মেয়েদের বয়স বলতে নেই।
দিপক এবার একটু বিশ্বাস করল কারন যদি এটা ফেক হত তাহলে উত্তর আসতো উনিশ কি কুড়ি। দিপক এবার লিখল- বাড়ি?
ওদিক থেকে প্রায় দশ মিনিট পর লেখা এল – আমার না রুমা, বাড়ি বেলগাছিয়া, অবিবাহিতা আর আমি একটা ইস্কুলে পড়াই।
দিপক এতটা আশা করেনি , সে কিছুক্ষণ ভাবল তারপর সে লিখল- আমি দিপক, বয়স তিরিশ, বাড়ি বালিগঞ্জ , সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার এবং বিবাহিত।
বিবাহিত কথাটা সে সবজায়গায় লেখে , তার ধারণা মেয়েরা একটু বেশী বিবাহিত পুরুষদের পছন্দ করে।
তার লেখা যাবার সাথে সাথেই রুমার লেখা এলো- ক বছর হোল বিয়ে করেছ?
দিপক এ যায়গায় একটু কমিয়ে বলে – বলল দু বছর।
ওদিক দিয়ে লেখা এল- ছেলে মেয়ে আছে?
দিপক বলল – ছ মাসের একটা মেয়ে। দিপক তার সাথে যোগ করল – তুমি এখনো বিয়ে করনি কেন?
রুমা এবার যা লিখল সেটা সচরাচর কোন মেয়ে খুব অল্প পরিচয়ে লেখে না, রুমা লিখল – আমার প্রেমিক আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমি এখন খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। তুমি আমার বন্ধু হবে।
দিপক লিখল- নিশ্চয়। দিপক একটু প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করলো লিখল – তুমি বুঝি গান খুব ভালোবাসো?
রুমা লিখল – এটা নিয়েই আমি এখন পড়ে আছি, তুমি গান ভালোবাসো না?
দিপক অতটা গান পাগল নয় কিন্তু এখানে সেটা জানানো যাবে না সে লিখল – হ্যাঁ খুব।
ওদিক থেকে লেখা এল – তাহলে আমি কয়েকটা গানের লিস্ট দেব তুমি একটু আমাকে ওইসব গান কোন সিনেমা আর কে গায়ক সেটাও আমাকে লিখে দিও।
দিপক বলতে যাচ্ছিল গুগুলদার কথা কিন্ত ভাবল, না বলে দিল বন্ধুত্ব টা শেষও হয়ে যেতে পারে।
দিপক লিখল – তুমি দিও ।
ওদিক থেকে আবার একটা অন্যরকম লেখা এল- জানো আমার না কিছু ভালো লাগে না, ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর খালি মনে হয় , আমি মরে যাই।
দিপক এবার দার্শনিকের মতন লিখল – মরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয় না রুমা, একটা কথা মনে রাখবে খারাপ কিছুর পরেই ভালো কিছু হয়, আমাদের শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হয় না হলে আগামী দিনের আরও ভালো কিছু হয়তো আমরা চিরদিনের মতন হারিয়ে ফেলব।
দিপক লেখা টা পাঠানোর পর ভাবল – একটু বেশী হয়ে গেল বোধহয়।
ওদিক থেকে মিনিট দশেক পর উত্তর এলো – তুমি বেশ ভালো লেখোতো।
দিপক আবার প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য লিখল – তোমার প্রিয় খাবার কি?
ওদিক থেকে উত্তর এল – চাইনিজ আর তোমার।
দিপকের যদিও বিরিয়ানি ফেবারিট , কিন্তু সে লিখল চাইনিজ।
ওদিক থেকে উত্তর এলো – বাঃ বেশ মিল তো আমাদের মধ্যে।
দিপক একটা হাসির ছবি পাঠিয়ে দিল।
ওদিক থেকে এবার লেখা এল – আজ উঠি, দাদা এসেগেছে , কাল আবার কথা হবে।
সে দিন দিপকের মনে আচমকা একটা অন্যধরনের ভাললাগা চলে এলো, মনে হোল আরও কিছুক্ষণ কথা হলে ভালো হত , সত্যই মানুষের মন কি অদ্ভুদ, বাড়ির বউকে ভালবেসেও অন্য নারীকে ও ভালবাসার স্বপ্ন দেখা যায়।
পরদিনও এক্ই সময়ে দিপক অনলাইন হোল, সেদিনও দুজনের মধ্যে বেশ অনেক্ষন লেখালেখি চলল। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল।
দিপক বেশ বুজতে পারল সে রুমার প্রতি একরকম আচ্ছন্ন হয়ে পরেছে, এটাকে প্রেম বলে নাকি আকর্ষণ সে ধরতে পারলনা। কিন্তু রুমার সাথে তার কথা না হলে তার মন ভালো লাগে না, এবং এ কারনেই হয়তো সে এই সপ্তাহে বাড়িতে বউ শিলাকে বেশী সময় দেয়নি।
পরের সপ্তাহে আরেকটি ঘটনা ঘটল যাতে দিপক রুমার প্রতি আরও আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।
মিলি গেছে বাপের বাড়ি, দিপক নিজেই ড্রাইভ করে দিয়ে এসেছে রবিবার সন্ধ্যে বেলায়। সে রাতে সে বাড়িতে বসে একবার চেষ্টা করেছিল অনলাইনে রুমাকে ধরার , কিন্তু রুমা একবারের জন্যও অনলাইন হয়নি।
পরদিন দুপরেও রুমা এলো না, তার পরের দিন ও না, দিপক একটা অফলাইনে মেসেজ করে রাখল – সব ঠিক আছে তো?
জবাব এল তার পরদিন দুপুরে , দিপক অনলাইন হবার সাথে সাথেই – সরি , কদিন ছিলাম না , আমার জন্য কি তোমার মন খারাপ করছিল?
দিপক কি জবাব দেবে বুঝে উঠতে পারছিলনা , কিছুক্ষণ পর লিখল – না , অনেকদিন খবর নেই তো তাই চিন্তা করছিলাম।
এবার একটা অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল – যে লেখাটা এলো ওদিক থেকে তার জন্য দিপক একেবারেই প্রস্তুত ছিলোনা – এবার থেকে চিন্তা করলে এই নাম্বারে ফোন করে খোঁজ নিয়ো। নিচে একটা ফোন নাম্বার দেওয়া।
দিপক চমকে উঠলেও তার মনে একটা ভালোলাগা ছেয়ে গেল। সে শুধু লিখল - ধন্যবাদ ।
ওদিক থেকে আবার একটা অভাবনীয় লেখা এল – তুমি এখনো আমায় ফোন করতে পারো।
দিপক রুমার দেওয়া ওই নাম্বারে ফোন করল , ফোনটা করার সময় তার মনটা একটু দুরুদুরু করছিল , যদি এটা ফেক হয় তাহলে , যা হোক তার আশঙ্কাকে ভুল প্রমান করে একটি মেয়েলি কণ্ঠই ফোনটা ধরল।
ধরে বলল- আমিই রুমা, তোমার চিন্তার কিছু নেই, এটা ফেক নয়।
দিপক এবার একটু মিথ্যাই বলল- আমি আসল আর ফেক ভালো করেই বুঝতে পারি।
রুমা খিল খিল করে হেঁসে উঠে বলল – ভেরি স্মার্ট।
দিপক জিজ্ঞেস করলো – কোথায় ঘুরতে গেছিলে?
রুমা উত্তর দিল – দিঘা, ইস্কুলের বন্ধুদের সাথে।
দুজনের মধ্যে এবার ফোনালাপ জমে উঠল, রুমা কোন ইস্কুলে পড়ায়, বাড়িতে কে কে আছে , কোথায় ঘুরতে যেতে ভালো বাসে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা জিনিস রুমা শুধু পরিষ্কার করে দিল যে সে তার দাদাকে খুব ভয় পায় আর তার দাদা একটু সেকেলের সুতরাং সে রাত্রে কোন কথা বলতে পারবে না।
দিপকের এতে সুবিধেই হোল, কারন রাতে তার অসুবিধে, ঘরে শিলা আছে।
রাত্রে কথা না হলেও দুজনের মধ্যে মোবাইলের এসে-মেস শুরু হোল, শিলা মোবাইলে অতটা সড়গড় না হয়াতে এই মোবাইল মেসেজ নিয়ে দিপক কে খুব একটা বিপদে পরতে হলনা।
দিপকের মধ্যে একটু পরিবর্তন হোল, আগে শিলাকে সে বেশ সময় দিত, এখন সেটা একদমই কমে গেল, শিলা ফোনে মাঝে মাঝে বললে দিপক কাজের চাপ বলে শিলাকে শ্বান্ত রাখতো।
এর মধ্যে শিলা বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এল, শিলা এখন তার বাচ্ছাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত , তার খাওয়াদাওয়া, ঘুম পাড়ানো সবই শিলা সামলাত, দিপক শুধু প্রক্সি দিত আর রুমার সঙ্গে ইন্টারনেট আর ফোনে কথা চালিয়ে যেতে লাগলো।
রুমা মাঝে মাঝে দিপক কে বলতো – তুমি যে এতো কথা বোলো , মেসেজ করো তোমার বউ জানে?
দিপক বেশ গর্ব করে বলতো – আমি দুদিক ব্যলেন্স করে চলতে পারি, যাতে বউও খুশী থাকে আর আমাদের মধ্যে কথাবার্তাও ভালো মতন চলে।
রুমা তার বিখ্যাত হাসি হেঁসে বলত – যেদিন ধরা পড়বে সেদিন বুঝবে।
দিপক বলল – নো ম্যাডাম , আমি এ ব্যপারে একটু স্মার্টই আছি।
এরপর এক সন্ধ্যে বেলায় এক ঘটনা ঘটলো। সেদিন ছিল শনিবার, দিপকের অফিসের এক কলিগের বাড়িতে ককটেল পার্টি ছিল, সেটা রুমা আর শিলা দুজনেই জানতো, তো সেই পার্টি শেষ করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল একটু নেশাগ্রস্থ হয়ে দিপক নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিল।
হটাত তার ফোন টা বেজে উঠলো আর কলারের নাম টা দেখে সে নিজেই চমকে উঠলো – রুমার ফোন, এতো রাতে , ওতো বলেছিল রাতে ফোন করতে পারবে না তা হোলে? ফোনটা রিসিভ করলো দিপক ।
ও প্রান্তে রুমা বলল – কোথায়?
দিপক বলল – ড্রাইভ করছি।
রুমা বলল - সাবধানে ফিরও, নিশ্চয়ই নেশা করে আছো? সাবধানে ড্রাইভ করো, তোমার জন্য আমার চিন্তা হচ্ছিল।
দিপক একেবারে মোহিত হয়ে গেল এই কথাতে, সে একটু নেশা গ্রস্থ ছিল তার মন টা একটু ভারী হয়ে গেল সে রুমাকে বলল- তুমি খুব ভালো মেয়ে রুমা, এতদিন আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু শিলা কোনদিন আমাকে এভাবে ফোন করেনি, দিপকের মুখ থেকে অজান্তে বেরিয়ে এলো – আই লাভ ইউ রুমা।
রুমা ও প্রান্ত থেকে বলল ধ্যাত, নেশার ঘোরে যা তা বলছে, সাবধানে বাড়ি ফেরো।
দিপক বাড়ি ফিরে দেখল শিলা জেগে বসে রয়েছে আর তার দু বছরের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। দিপকের হটাত শিলার উপর খুব রাগ হোল, সে কোন কথা না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। শিলা তার কাছে এগিয়ে এসে বলল – খুব মজা করলে না?
দিপক কোন কথা না বলে পাশ ফিরে শুল। শিলা এবার তার গায়ের উপর প্রায় শুয়ে বলল – কি হোল , কথা বলছ না যে।
দিপক ওভাবেই শুয়ে বলল – শিলা তুমি আমাকে ভালোবাসো?
শিলা এবার জোর করে দিপক কে কাত করে ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল – জানিনা।
দিপক আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না , সে শিলা কে জাপটে ধরে ভালবাসার দুনিয়ায় হারিয়ে গেল। বিছানার ভালবাসা শেষ হবার পর তার নেশা টা একটু কমে গেল, এমন সময় তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসার আওয়াজ হোল, মোবাইল টা নিয়ে সে দেখল – রুমা করেছে – আশা করি সাবধানে বাড়ি পৌঁছে গেছ , যদি চাও কাল আমরা দেখা করতে পারি সকাল এগারোটায়।
দিপক রিপ্লাই করলো – ঠিক আছে।
পাশ থেকে শিলা বলল – কার মেসেজ
দিপক বলল – বসের।
দিপকের সে রাতে ঘুম এলনা, তার একপাশে মেয়ে শুয়ে আছে আর এক পাশে শিলা, ঘরের নাইট ল্যম্পে শিলার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবল – এই মেয়ে স্বামী ছাড়া বাইরে আর কোনো জগত থাকতে পারে তা বোধ হয় বিশ্বাসই করে না আর রুমা, সে বিবাহিত জেনেও তাকে এক অজানা সম্পর্কের আহ্বানে ডেকে যাচ্ছে।
দিপকের কাছে সেই মুহূর্তে রুমাকে একটু হলেও বিরক্ত লাগলো, সে শিলাকে বুকের কাছে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
সকালে ঘুম ভাঙল শিলার ডাকে- শিলা চা নিয়ে অপেক্ষা করছে পাশের ঘরে, আজ রবিবার , দিপক উঠে পড়লো , সে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরনোর মুখে মোবাইল টা বেজে উঠল, দিপক দ্রুত গিয়ে দেখল রুমার ফোন। ফোন টা নিয়ে সে ব্যাল্কনির দিকে চলে গেল।
রুমার কথা ভেসে এল – সরি , রবিবারে তোমাকে ফোন করে অসুবিধে করলাম নাতো?
দিপক বলল - না।
রুমা জিজ্ঞেস করল- তা আজ দেখা হচ্ছে তো?
দিপক একটু চুপ করে গেল। দিপক কে চুপ করে থাকতে দেখে রুমা ও প্রান্তে বলল- অসুবিধে থাকলে থাক , অন্য দিন দেখা করা যাবে।
দিপকের কি মনে হোল সে বলে বসলো – না আজই করবো, কিন্তু দশটায় নয়, বিকেল তিনটের সময় রাজারহাটের ইকো পার্কে। দিপক মনে মনে চাইল , আজ দেখা করে সম্পর্ক টাকে ইতি করে দিয়ে আসবে।
রুমা ঠিক আছে বলে ফোন টা কেটে দিল।
কিন্তু রুমার ফোন টা পাওয়ার পর তার মনে আবার একটা নিষিদ্ধ আকর্ষণ কাজ করতে শুরু করল রুমার প্রতি, এক মাস হয়ে গেল তাদের সাথে কথাবার্তা চলছে না এবার দেখা করতেই হবে। কিন্তু দেখা করে কি করবে , কি বলবে ভাবতে ভাবতে শিলার ডাক শোনা গেল – কি গো চা যে ঠাণ্ডা হয়ে গেল , এসো।
দিপক শিলা কে বলল আজ তার বসের বাড়িতে একটা টি পার্টি আছে, সে দুপুর দুটোয় বেরিয়ে যাবে আসতে আসতে রাত হতে পারে, তবে রাতের ডিনারটা সে এসে একসাথেই করবে।
শিলা একটু অভিমান করে বলল – একটা ছুটির দিন তাও বাড়ি থাকতে পারো না।
দিপক হাসতে হাসতে বলল – কি করবো বোল , বসের হুকুম।
হালকা একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী আর জিন্স পড়ে দিপক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল, তার বাড়ি থেকে ইকো পার্ক ঘণ্টা খানেকের রাস্তা, রওনা হবার আগে সে রুমাকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে পার্কে ঢোকার মুখে সে দাঁড়িয়ে থাকবে , রুমা যেন ওখানেই চলে আসে।
দিপক গাড়ি পার্ক করে গেটের সামনে একটা দোকান ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল, তখন ঠিক বেলা তিনটে পাঁচ, লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে, দিপকের মনে একটা ভয় হোল যদি কোন চেনা লোক দেখে ফেলে তাকে, সত্যিইতো সে বিবাহিত , তার একটা মেয়েও আছে , এসব পরকীয়া তার কি শোভা পায়। ভাবতে ভাবতে রুমার ফোনটা এল – কোথায় তুমি? আমি এসে গেছি
দিপক সামনে তাকাল , না সেরকম কোন মেয়েকে দেখতে পেল না, ফোনে বলল – আমি আগেই চলে এসেছি, বাঁদিকের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, তুমি কোথায়?
রুমা বলল তুমি কি পড়ে আছো?
দিপক উত্তর দিল – নীল রঙের পাঞ্জাবী।
সঙ্গে সঙ্গে রুমা বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মনে হচ্ছে দেখতে পেয়েছি। দিপক সামনে সেরকম কোন মেয়েকে দেখতে পেলনা, তার মনে একটু হলেও একটা আশঙ্কা হোল – ফোনে তো বেশ গলাটা সুন্দর , বাস্তবে কি হবে কে জানে, না আগে থেকে একটা ছবি চেয়ে পাঠালে ভালো হতো, ইন্টারনেট যুগে ফেক হবার চান্সই বেশী।
ঠিক সে সময় তার কানের সামনে একটা মেয়েলী কণ্ঠ বলল – হায়!
পর্ব - ২
দিপক বাঁদিক ঘুরে দেখল তারদিকে চেয়ে একটি মেয়ে হাসছে, দিপক একটু থতমত খেয়ে বলল – হায় আমি দিপক আর তুমি নিচ্ছয়ই রুমা।
রুমা সেই বিখ্যাত হাসি হেঁসে বলল – একদম ঠিক, তা কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে?
দিপক বলল এই মিনিট পনেরো।
রুমা বলল চলো ভিতরে যাওয়া যাক।
দিপক মিনিট খানেক কিছু না বলে রুমাকে দেখতে লাগলো, মেয়টি হয়তো সুন্দরী নয় কিন্তু তার শরীরে এক দুর্নিবার আকর্ষণ আছে যা যে কোন পুরুষ মানুষ কে অতি সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে,দিপকের হটাত মনে হোল সেত রুমার শরীর নিয়ে এর আগে কোনদিন ভাবেনি, সে তার কথাবার্তায় অনেক টা মোহিত হয়েছিল কিন্তু আজ তাকে দেখে তার প্রতি সে একটু শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করলো, তার মানে কি পরকীয়া প্রেমে মনের ভালবাসা নয় শরীরীই কথা বলে।
রুমা আবার খিক খিক করে হেঁসে বলল , কি মশাই অত কি দেখছেন, দেখার দিন অনেক পড়ে আছে, ভিতরে চলো।
দিপক যেন এবার সত্যিই রুমার প্রতি আরও যেন মোহিত হয়ে পরল, তার মনে হোল রুমাকে নিয়ে সে একাকি অনেক দূর চলে যায়, সে হটাত অফার করে বসল – পার্কে না ঢুকে চলো আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরি।
রুমা একটু মিচকি হেঁসে বলল – বেশ তাহলে তাই চলো।
রুমা দিপকের পাশে বসে, দিপক গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে, সে এর আগেও শিলাকে নিয়ে লং ড্রাইভে গেছিল, কিন্তু কেন জানে না আজ তার মধ্যে একটা অদ্ভুদ অনুভূতি হচ্ছে, চালাতে চালাতে সে মাঝে মাঝে রুমার দিকে তাকাচ্ছিল, রুমা তার লাস্যময়ী মুখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে, এভাবে মিনিট পনেরো চলার পর রুমা মুখ খুলল – মশাই সামনের দিকে তাকাও, এক্সিডেন্ট করবে যে।
দিপক একটু লজ্জা পেয়ে গেল, হেঁসে বলল – না না, এসব রাস্তা আমার চেনা।
রুমা বলল – আগে কাকে নিয়ে এসেছিলে? বউকে?
দিপক্ক বলল – তা এসছিলাম।
রুমা বলল – বউ জানে যে আজ আমার সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছ?
দিপক বলল – না, বলেছি বসের বাড়ি যাচ্ছি, অফিসের কাজ আছে।
রুমা আবার সেই সেই খিল খিল করে হেঁসে বলল – তা বউ বিশ্বাস করেছে?
দিপক বলল – আমার বউ একটু সাদাসিধে, আমাকে অবিশ্বাস করে না।
রুমা এবার একটু গম্ভীর মুখে বলল – সাদাসিধে বলে ঠকাচ্ছ?
দিপক বলল – ঠকানোর কি আছে, বিয়ের পর কি মেয়ে বন্ধু কি থাকতে পারে না।
রুমা এবার বলে উঠলো- তা পারে , তবে ছুটির দিনে বউকে মিথ্যে বলে সেই বান্ধবীকে নিয়ে গাড়িতে পাশে বসিয়ে কি কেউ লং ড্রাইভে যায়?
দিপক এবার জিনিস টাকে হালকা করার জন্য বলল – হ্যাঁ যায়, সে বান্ধবী যদি তোমার মত সুন্দরী হয়।
রুমা এবার একটু ন্যকা গলায় বলল – মশাই আমি কিন্তু সুন্দরী নই, ও তোমার চোখের ভুল, চোখের ডাক্তার দেখাও।
দিপক বলল – চোখ আমার একদম ঠিক, তোমারই চোখ খারাপ ওই জন্য আয়নাতে তুমি তোমার মুখ ভালো করে দেখতে পাওনা।
এরকম আরও গল্প , কথা এগিয়ে চলল, এমন সময় একটা ছোট্ট অথচ দিপকের মন কাড়ানো একটা ঘটনা ঘটলো-
দিপক গাড়ির গিয়ার চেঞ্জ করার জন্য গিয়ারে হাত দিয়ে বুঝল সে হাত টা রেখেছে রুমার ডান হাতের ওপরে, মুহূর্তের জন্য তাদের কথা থেমে গেল, কেউই হাত সরানোর চেষ্টা করলো না।
এভাবে মিনিট পাচেক চলার পর – দিপক বলল – তোমার মতন মেয়েকে তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কেন ছেড়ে চলে গেল বুঝতে পারছিনা।
রুমা এবার হাত টা সরিয়ে নিয়ে একটু উদাস গলায় বলল – আমার কপাল, ভগবান এই জিনিস টা আমায় একদমই ভালো দেয় নি। বাদ দাও তার কথা।
দিপক এবার জিজ্ঞেস করলো – তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
রুমা এবার একটু যেন থমকে গেল , একটু ভেবে বলল – দাদা, বৌদি, মা আর বাবা।
দিপক বলল – তোমার দাদা তো শুনেছি খুব কড়া, তা কি বলে আজ বেরোলে?
রুমা বলল – বন্ধুর বাড়ি অনুষ্ঠান আছে বলে বেরিয়ে এসেছি, আমাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
দিপক এতক্ষণে খেয়াল করল যে তারা কথা বলতে বলতে অনেক দূর চলে এসেছে, বেলা গরিয়ে সন্ধ্যে হবার মুখে, এধারের রাস্তা গুলো বেশ ফাঁকা, পাশে গাছপালা ভর্তি, সে বুঝল সে কোলকাতা ছাড়িয়ে মফঃস্বলের দিকে ঢুকে পড়েছে।
দিপক গাড়ি ঘুরিয়ে দিল, রুমাকে জিজ্ঞেস করলো – তোমায় কি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব?
রুমা বলল না না অত দূর যেতে হবে না, আমাকে এয়ারপোর্টের সামনে নামিয়ে দিলেই হবে।
এবার ফেরার পালা, আবার টুকিটাকি গল্প করতে করতে রুমা হটাতই বলল – কাল রাতে কি বলেছিলে তোমার খেয়াল আছে?
দিপকের শুধু মনে আছে সে কাল রাতে পার্টি করে ফিরছিল, নেশা করেছিল আর রুমা তাকে ফোন করেছিল, কিন্তু কি কথা সে বলেছিল সেটা তার একদমিই মনে নেই। সে একটু বোকার মতন বলল – কি বলেছি বলোতো?
রুমা আবার সেই খিল খিল করে হেঁসে বলল – মনে করার চেষ্টা করো ।
দিপক অনেক বার ভাবলো, কিন্তু তার কিছুতেই মনে পড়লো না। আবার সে রুমাকে বলল – তুমিই বলো।
রুমা এবার একটু গম্ভীর মুখে বলল – মনে না পরা মানে , তুমি যা বলেছিলে সেটা মন থেকে বলোনি। আর যা মন থেকে বলোনি, তা ভুলে গেলে মনে করানো উচিৎ নয়।
দিপক ভেবে পেলনা সে কি এমন কথা বলেছে যা রুমার মনে গেঁথে আছে। দিপক এবার রুমার একটা হাত চেপে বলল – দেখো নেশার ঘোরে যদি কোন বাজে কথা বলে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত।
রুমা এবার একটু হেঁসে বলল – বাজে কথা নয় মশাই, তুমি একটি খুব সুন্দর কথা বলেছিলে।
দিপক এবার গাড়িটাকে একটু সাইড করে দাড় করাল, জায়গাটা একটু বেশীই নির্জন, কিন্তু তাকে জানতেই হবে সে কাল রাতে কি এমন কথা বলেছিল।
গাড়ি দাড় করাতে দেখে রুমা জিজ্ঞেস করল- কি হোল? গাড়ি দাড় করালে কেন?
দিপক একটু হেঁসে বলল – কাল রাতে আমি কি বলেছিলাম না বললে আমি আর গাড়ি চালাব না।
রুমা বলল – কি মুশকিল, বললাম তো আমি বলতে পারবো না, তুমি আজ ভাব, কাল ভাব, পরশু ভাব তারপর মনে না পরলে আমায় জিজ্ঞেস করো।
দিপক রুমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল, হটাত তার চোখ দুটো নিবিদ্ধ হোল রুমার ঠোঁটের উপর, এরকম পাতলা লাল ঠোঁট আর তার মধ্যে একটা যৌনতার আবেদন সে অনেকদিন যেন দেখেনি, দিপক আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না, সে ঝাপিয়ে পড়ে রুমার ঠোঁটের মধ্যে নিজের ঠোঁট দুটি দুবিয়ে দিল।
রুমা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও কোন বাঁধা দিলনা, এবং দিপকের সাথে সে পুরো সহযোগিতা করলো। এভাবে মিনিট পাঁচেক কাটলো, রুমা আস্তে করে বলল – ছাড়ো এবার।
দিপক ছেড়ে দিল, রুমা মুখটা মুছে বাঁদিকে তাকিয়ে রইল, দিপকের মনে হোল রুমা বোধহয় রাগ করেছে , সে শুধু একবার সরি বলে গাড়ি স্টার্ট করে দিল।
আসার পথে রুমা গাড়িতে আর কোন কথা বলল না, দিপক ও একটু ঘাবড়ে গেল, তার মনে হোল সে এটা ঠিক করে নি।
এয়ারপোর্টের সামনে রুমা গাড়ি থেকে নামার সময় দিপক আবার বলল রুমা আমি সত্যিই সরি।
রুমা এবার একটা মায়াবী হাসি হেঁসে বলল- আমি কিন্তু সরি নই।
রুমা নেমে চলে গেল , দিপক চেয়ে দেখল রুমা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
দিপকের মধ্যে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো, মনের মধ্যে একটা নিষিদ্ধ কাজ করার এক অজানা আনন্দ ঘুরে বেড়াতে লাগলো, মনে হোল সেকি আবার প্রেমে পড়েছে নাকি এটা নিছকই এক শরীরী আকর্ষণ। মোবাইলে মেসেজের আওয়াজ এলো- রুমার মেসেজ ,সেটা পড়ে দিপক চমকে উঠলো
- কাল রাতে তুমি আমায় বলেছিলে , আই লাভ ইউ। মনে পড়েছে মশাই।
দিপকের কিন্তু তাও মনে পরলনা যে সে এটা বলেছিল কিনা, আবার একটা মেসেজ এলো, আবার রুমা ,
- আই লাভ ইউ দিপক।
দিপক কিন্তু মেসেজটা টা পেয়ে এক অজানা ভয়ে সেটা ডিলিট করে দিল, হটাত তার শিলার কথা মনে পড়ল, ঘরিতে দেখল রাত আটটা বেজে গেছে, দিপক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল।
ক্রমশ...
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আজিজ আহমেদ ২৯/১০/২০১৬বেশ ভাল
-
শাহ আজিজ ১৯/১০/২০১৬গল্পটা খুব টেনেছে কারন এককালে আমিও বিখ্যাত চ্যাটার ছিলাম । কত দেশ প্রান্তর ঘুরে বেড়াতাম । ভাল লাগলো আপনার প্রেজেন্টেশন , একটুও এদিক সেদিক যেতে দেননি মেইন টপিক আর চরিত্রকে , এটাই লেখককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। গল্পে গুরুত্তপূর্ণ মেসেজ দিয়ে দিলেন।
-
দীপঙ্কর বেরা ১৭/১০/২০১৬দারুণ
-
মনিরুজ্জামান শুভ্র ১৬/১০/২০১৬বেশ লাগলো। চালিয়ে যান পাশে আছি...
-
মোনালিসা ১৬/১০/২০১৬চালিয়ে যান.........