লোভ - পর্ব ২
ট্রেন থেকে নেমে আমি একেবারে হাসপাতালে চলে গেলাম, গেটের কাছেই তাপস কে পেয়ে গেলাম। তাপসের মুখটা বেশ শুঁকনো, চোখ টা লাল, আমাকে দেখে বলল- রিপোর্ট পেতে পেতে সন্ধ্যে সাত টা বেজে যাবে , তারপর বডি ছাড়বে।
আমি বললাম – তা আমরা কি অপেক্ষা করব নাকি চলে যাবো?
তাপস আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল – শালা কাল পর্যন্ত নবার সাথে কথা বললাম, একবারেও মনে হয়নি মাল টা সুইসাইড করবে। আজ কাক ভোরে বউদির ফোন পেয়ে গিয়ে দেখি এই ঘটনা।
আমি একটু উস খুস করে বললাম- তুই যে বললি মার্ডার?
তাপস বলল- আমি না, পুলিশ বলছে ,ওদিকে আবার শুনলাম বউদি বলেছে ১০০% মার্ডার , আর সেটা কে করেছে তাও পুলিশকে বলে দিয়েছে। পুলিশ যদিও নাম টা আমাদের বলেনি।
আমি বেশ কৌতূহল হয়ে বললাম- তোর কি মনে হয়?
আমার তো ভাই সুইসাইড ই মনে হয়। ওকে মারবে কেন? কোন মটিভ তো দরকার?
আমি বেশ বোদ্ধার মত বললাম- আছে হয়তো, সেটা ওর বউ জানে , তুই নাও জানতে পারিস।
তাপস আনমনে বলল , হতে পারে।
আমি আগ বাড়িয়ে বললাম- তোদের অফিসে কোন ঝামেলা হয়নিতো?
না ভাই, এমন কোন ঝামেলা অন্ততঃ আমার মনে পড়ছে না যে তাতে নবারুন সুইসাইড করতে পারে বা মার্ডার হতে পারে।
এমন সময় তাপসের মবাইলে রিং হোল, তাপস কাউকে আসছি বলে ফোন কেটে আমায় বলল – এখানকার লোকাল থানা থেকে ফোন এসেছিলো, আমায় ডাকছে, তুই কি যাবি আমার সাথে?
আমি একটু মনে মনে ইতস্ততঃ করছিলাম, কিন্তু মুখে বললাম চ।
হাসপাতাল থেকে মিনিট চল্লিশের রাস্তা, একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম দুজনে।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে আমার একটু গোয়েন্দাগিরির শখ হোল, আমি তাপস কে জিজ্ঞেস করলাম- ওর বউটা কেমন? মানে ওদের মধ্যে কিরকম সম্পর্ক ছিল?
তাপস আমার দিকে না তাকিয়েই বলল – ভালো। সেরকম খারাপ কিছু তো কোনদিন আমার কানে আসেনি। ওরা রোজ উইকেন্ডে পার্টি করতো, বছরে দু-তিন বার ঘুরতে যেত, দেখেতো কোনদিন খারাপ মনে হয়নি।
আমার মুখ থেকে হটাত বেরিয়ে গেলো- তুই এত জানিস কি করে?
তাপস আমার দিকে তাকিয়ে বলল – নবারুন আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করতো।
আমি ফিরতি জিজ্ঞেস করলাম- নবারুন তো তোর বস ছিল? তাই না?
তাপস বলল- ওটা অফিসে, বাইরে আমরা বন্ধু, ওর বাড়ীতেও আমি যেতাম, ওর পরিবারের সাথে আমার বেশ একটা ভালো বন্ধুত্ত হয়ে গেছিল।
ট্যাক্সি এসে থানার সামনে দাড়াতে , আমরা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম।
পুলিস অফিসার মিঃ সান্যাল নবারুনের কেস টা দেখছেন, আমরা তার ঘরে গিয়ে বসলাম।
মিঃ সান্যাল আমাকে দেখে বললেন – ইনি কে?
তাপস বলল , এ আমার আর নবারুনের কলেজ বন্ধু, খবর পেয়ে এসেছে।
মিঃ সান্যাল আমার প্রতি খুব একটা উৎসাহ না দেখিয়ে তাপস কে বললেন- নবারুনের স্ত্রী তো খুনির নাম বলে দিয়েছেন, জানেন উনি কার নাম করেছেন?
তাপস আর আমি বেশ উত্তেজিতও হয়ে মিঃ সান্যালের মুখের দিকের চাইলাম কোন প্রশ্ন না করে।
তাপস বাবু , উনি কিন্তু আপনার নাম টাই বলেছেন , আপনি নাকি খাবারে বিষ মিশিয়ে নবারুণকে মেরে ফেলেছেন।
কথাটা শুনে আমার গলাটা শুকিয়ে এলো, তাপস সুধু মিঃ সান্যালের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- আমি...আমি খুন করেছি?
মিঃ সান্যাল আবার বলে উঠলেন – মিঃ নবারুনের স্ত্রী ওরফে লিপি ম্যডাম কিন্তু তাই বলেছেন এবং আর বলেছেন আপনি নাকি নবারুনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ধার করেছিলেন আর সেটা না দেবার জন্য এই খুনটি করেছেন।
আমি এবার বেশ হতবম্ব হয়ে গেলাম, তাপস টাকা ধার করেছে, তা করতে পারে, কিন্তু তা বলে শোধ না দিয়ে খুন করবে? আমি তাপসের দিকে তাকালাম, বেচারার চোখ মুখ পুরো শুকিয়ে কাঠ।
মিঃ সান্যাল আবার বলে উঠলেন – কাল রাতে তো আপনি নবারুন বাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন তাই তো?
তাপস বলল- হ্যাঁ স্যর, কিন্তু সেত ঘণ্টা খানেকের জন্য, তাও রাত নটার আগে চলে আসি আর আমাকে লিপি ফোন করে তখন ভোর তিনটে। বিশ্বাস করুন আমি সত্যিই জানিনা, আমি খুন করিনি স্যর...তাপসের গলাটা এবার ভয় মিশ্রিত কান্নায় জরিয়ে এলো।
আমি মনে মনে ভাবলাম, তাপস যে কাল রাতে নবারুনের বাড়ি গেছিলো... তা তো আমায় জানায় নি।
এবার সত্যি তাপস কে আমারই সন্দেহ হোল।
মিঃ সান্যাল এবার বললেন – দেখুন তাপস বাবু, খুন আপনি করুন বা না করুন , কিন্তু আপাতত আপনি এতে বেশ ভালোরকম জরিয়ে গেছেন, পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি রোজ থানাতে রিপোর্ট করবেন না হলে কিন্তু আপনাকে আমরা এরেস্ট করবো।
কাল রাতে আপনার নবারুন বাবুর বাড়ি যাওয়া আর আসা পর্যন্ত , পুরো ব্যপার টা খুলে বলুন।
তাপস কে দেখে মনে হোল – কথা বলতে ও ভুলে গেছে, আমি এবার ওর মনে একটু সাহস জোগানোর জন্য বললাম- তাপস সব খুলে বল, না বললে তোর বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
তাপস সামনে রাখা গেলাস থেকে তিন ঠোক জল খেয়ে বলা শুরু করল।
চলবে...।
আমি বললাম – তা আমরা কি অপেক্ষা করব নাকি চলে যাবো?
তাপস আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল – শালা কাল পর্যন্ত নবার সাথে কথা বললাম, একবারেও মনে হয়নি মাল টা সুইসাইড করবে। আজ কাক ভোরে বউদির ফোন পেয়ে গিয়ে দেখি এই ঘটনা।
আমি একটু উস খুস করে বললাম- তুই যে বললি মার্ডার?
তাপস বলল- আমি না, পুলিশ বলছে ,ওদিকে আবার শুনলাম বউদি বলেছে ১০০% মার্ডার , আর সেটা কে করেছে তাও পুলিশকে বলে দিয়েছে। পুলিশ যদিও নাম টা আমাদের বলেনি।
আমি বেশ কৌতূহল হয়ে বললাম- তোর কি মনে হয়?
আমার তো ভাই সুইসাইড ই মনে হয়। ওকে মারবে কেন? কোন মটিভ তো দরকার?
আমি বেশ বোদ্ধার মত বললাম- আছে হয়তো, সেটা ওর বউ জানে , তুই নাও জানতে পারিস।
তাপস আনমনে বলল , হতে পারে।
আমি আগ বাড়িয়ে বললাম- তোদের অফিসে কোন ঝামেলা হয়নিতো?
না ভাই, এমন কোন ঝামেলা অন্ততঃ আমার মনে পড়ছে না যে তাতে নবারুন সুইসাইড করতে পারে বা মার্ডার হতে পারে।
এমন সময় তাপসের মবাইলে রিং হোল, তাপস কাউকে আসছি বলে ফোন কেটে আমায় বলল – এখানকার লোকাল থানা থেকে ফোন এসেছিলো, আমায় ডাকছে, তুই কি যাবি আমার সাথে?
আমি একটু মনে মনে ইতস্ততঃ করছিলাম, কিন্তু মুখে বললাম চ।
হাসপাতাল থেকে মিনিট চল্লিশের রাস্তা, একটা ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম দুজনে।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে আমার একটু গোয়েন্দাগিরির শখ হোল, আমি তাপস কে জিজ্ঞেস করলাম- ওর বউটা কেমন? মানে ওদের মধ্যে কিরকম সম্পর্ক ছিল?
তাপস আমার দিকে না তাকিয়েই বলল – ভালো। সেরকম খারাপ কিছু তো কোনদিন আমার কানে আসেনি। ওরা রোজ উইকেন্ডে পার্টি করতো, বছরে দু-তিন বার ঘুরতে যেত, দেখেতো কোনদিন খারাপ মনে হয়নি।
আমার মুখ থেকে হটাত বেরিয়ে গেলো- তুই এত জানিস কি করে?
তাপস আমার দিকে তাকিয়ে বলল – নবারুন আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করতো।
আমি ফিরতি জিজ্ঞেস করলাম- নবারুন তো তোর বস ছিল? তাই না?
তাপস বলল- ওটা অফিসে, বাইরে আমরা বন্ধু, ওর বাড়ীতেও আমি যেতাম, ওর পরিবারের সাথে আমার বেশ একটা ভালো বন্ধুত্ত হয়ে গেছিল।
ট্যাক্সি এসে থানার সামনে দাড়াতে , আমরা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম।
পুলিস অফিসার মিঃ সান্যাল নবারুনের কেস টা দেখছেন, আমরা তার ঘরে গিয়ে বসলাম।
মিঃ সান্যাল আমাকে দেখে বললেন – ইনি কে?
তাপস বলল , এ আমার আর নবারুনের কলেজ বন্ধু, খবর পেয়ে এসেছে।
মিঃ সান্যাল আমার প্রতি খুব একটা উৎসাহ না দেখিয়ে তাপস কে বললেন- নবারুনের স্ত্রী তো খুনির নাম বলে দিয়েছেন, জানেন উনি কার নাম করেছেন?
তাপস আর আমি বেশ উত্তেজিতও হয়ে মিঃ সান্যালের মুখের দিকের চাইলাম কোন প্রশ্ন না করে।
তাপস বাবু , উনি কিন্তু আপনার নাম টাই বলেছেন , আপনি নাকি খাবারে বিষ মিশিয়ে নবারুণকে মেরে ফেলেছেন।
কথাটা শুনে আমার গলাটা শুকিয়ে এলো, তাপস সুধু মিঃ সান্যালের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- আমি...আমি খুন করেছি?
মিঃ সান্যাল আবার বলে উঠলেন – মিঃ নবারুনের স্ত্রী ওরফে লিপি ম্যডাম কিন্তু তাই বলেছেন এবং আর বলেছেন আপনি নাকি নবারুনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ধার করেছিলেন আর সেটা না দেবার জন্য এই খুনটি করেছেন।
আমি এবার বেশ হতবম্ব হয়ে গেলাম, তাপস টাকা ধার করেছে, তা করতে পারে, কিন্তু তা বলে শোধ না দিয়ে খুন করবে? আমি তাপসের দিকে তাকালাম, বেচারার চোখ মুখ পুরো শুকিয়ে কাঠ।
মিঃ সান্যাল আবার বলে উঠলেন – কাল রাতে তো আপনি নবারুন বাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন তাই তো?
তাপস বলল- হ্যাঁ স্যর, কিন্তু সেত ঘণ্টা খানেকের জন্য, তাও রাত নটার আগে চলে আসি আর আমাকে লিপি ফোন করে তখন ভোর তিনটে। বিশ্বাস করুন আমি সত্যিই জানিনা, আমি খুন করিনি স্যর...তাপসের গলাটা এবার ভয় মিশ্রিত কান্নায় জরিয়ে এলো।
আমি মনে মনে ভাবলাম, তাপস যে কাল রাতে নবারুনের বাড়ি গেছিলো... তা তো আমায় জানায় নি।
এবার সত্যি তাপস কে আমারই সন্দেহ হোল।
মিঃ সান্যাল এবার বললেন – দেখুন তাপস বাবু, খুন আপনি করুন বা না করুন , কিন্তু আপাতত আপনি এতে বেশ ভালোরকম জরিয়ে গেছেন, পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি রোজ থানাতে রিপোর্ট করবেন না হলে কিন্তু আপনাকে আমরা এরেস্ট করবো।
কাল রাতে আপনার নবারুন বাবুর বাড়ি যাওয়া আর আসা পর্যন্ত , পুরো ব্যপার টা খুলে বলুন।
তাপস কে দেখে মনে হোল – কথা বলতে ও ভুলে গেছে, আমি এবার ওর মনে একটু সাহস জোগানোর জন্য বললাম- তাপস সব খুলে বল, না বললে তোর বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
তাপস সামনে রাখা গেলাস থেকে তিন ঠোক জল খেয়ে বলা শুরু করল।
চলবে...।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ২৮/০৯/২০১৬খুব সুন্দর গল্পের বিষয়বস্তু, অনেক ভাল লেগেছে কবি পরের পাঠের অপেক্ষায় থাকলাম কবি।