www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বনির্ভরতা ও পরনির্ভরতা

স্বনির্ভরতা মানে কারও নিজস্ব প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজে নিজে করতে পারার সামর্থ্য। অর্থাৎ একজন মানুষ তার খাওয়া, গোসল, রান্না, ঘর গুছানো থেকে নিয়ে প্রাত্যহিক সব কাজ নিজেরটা নিজেই করতে পারবে।

কিন্তু আমরা সামাজিক প্রাণী। একসাথে বসবাসের জন্য আমরা স্বভাবতঃই বিভিন্ন কাজে একে অপরের উপর নির্ভর করে থাকি। তবে একে অপরকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা মানেই এই না যা সেটা পরনির্ভরশীলতা হয়ে গেলো। পরনির্ভরশীলতা হচ্ছে এমন অবস্থা, যেখানে অন্য কেউ সাহায্য না করলে একজন আর কোনমতেই তার নিজস্ব কাজগুলো নিজে নিজে করতে পারে না। অর্থাৎ অন্যের উপর এমনভাবেই নির্ভশীল যে অন্যের সাহায্য ছাড়া সে পুরোই অচল। এরা হচ্ছে শ্রমবিমুখ আয়েশী টাইপের মানুষ। এবং দিন দিন এদের সংখ্যাই আমাদের সমাজে বেড়ে চলছে।

একটা উদাহরণ দেই। সমাজের ক্ষুদ্রতম অংশ হচ্ছে পরিবার বা সংসার। একটা সংসার সাধারণতঃ শুরু হয় একজন পুরুষ ও একজন নারী, অর্থাৎ দুজন মিলে। তবে এ যুগের সত্য হচ্ছে বেশিরভাগ সংসারেই একজন পুরুষের সাথে দু'জন নারী না হলে সংসার আর চলে না। একজন স্বামী, একজন স্ত্রী, এবং একজন কাজের বুয়া।ক্ষেত্র বিশেষে সাথে আরও কয়েকজন বুয়া ও দারোয়ানের প্রয়োজন হয়ে পরে।সংসার থেকে এদের বাদ দিয়ে দিন। দেখুন শুধু স্বামী আর স্ত্রী মিলে তারপর সংসার চালিয়ে নিতে পারে কিনা।

তো এসব পরিবার, এবং এসব মানুষ নিয়েই আমাদের সমাজ। এক দল পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এবং আরেক দল, যাদের নিজেদের পরিশ্রম করার মতো মুরোদ বা মানসিকতা কোনটাই নেই, তারা অন্য দলটির পরিশ্রমের উপর ভর করে নিজেদের চালিয়ে নিচ্ছে। অথচ এই অকর্মার ঢেকিদেরই আবার সমাজে দাপট ও সম্মান বেশি। তাদের দাপট নিয়েও আসলে আমার তেমন কোন আপত্তি নেই। আপত্তিটা হয় যখন দেখি তারাই আবার ঐসব কাজের লোকগুলোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বকাঝকা করছে, এবং নানা ভাবে তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তারা সমাজে কতো অপাংক্তেয়।

"এই! কি ঝাড়ু দিলে? ওই কোনায় তো এখনও কিছু ময়লা রয়ে গেছে দেখছি! ঠিক মতো কাজে মনযোগ দিতে পারো না?"

"এটা কোন ঘর মুছা হলো?"

"তোমাকে কতোবার বলতে হবে সকাল ৮ টার মধ্যে নাস্তা রেডি চাই?"

"৯ টা বাজতে না বাজতেই ঘুমাতে যেতে চাও? তোমার মতো এমন ফাঁকিবাজ আর অলস বুয়া আর দেখিনি!"

ম্যাডাম! নিজে প্রতিদিন উবু হয়ে ঘর ঝাড়ু দিয়ে আর মুছে দেখেন কেমন লাগে, আর কতটুকু পরিস্কার হয় প্রতিদিন। কাজের বুয়া সকালে টাইম মতো নাস্তা রান্না করে রাখবে, আপনি সকালে উঠেন কয়টায়? ঘুমাতে যান রাত বারোটার পরে? প্রতিদিন উদায়স্ত কাজের বুয়ার মতো কায়িক শ্রম দিয়ে দেখেন কয়টার মধ্যে ঘুম চলে আসে।

আমার হিসাব মতে পরনির্ভশীল মানুষগুলোই অন্য মানুষদের আর ঠিকমতো মানুষ বলে মনে করে না। তাদের ধারণা তাদের জন্মই হয়েছে অন্যের সার্ভিস পাওয়ার জন্য।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৪১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast