www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মিশরের গ্রেট পিরামিড

অতীতের স্মৃতি হিসাবে মাথা উঁচু করে থাকা পিরামিডগুলো এমনিতেই একেকটি বিষ্ময়কর স্তম্ভ। তার মধ্যে মিসরের "গ্রেট পিরামিড" আরও বেশি অবাক করার মতো এক স্থাপত্যশৈলী। মিসরের কায়রো নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা গিজায় পাশাপাশি অবস্থিত তিন পিরামিডের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এই পিরামিড "ফারাও খুফু-র পিরামিড" কিংবা "শিওপসের পিরামিড" নামেও পরিচিত।


মিশরের গ্রেট পিরামিড


আনুমানিক ২৫৬০ খৃস্টপূর্বে মিসরের চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় ফারাও খুফুর সমাধি হিসাবে ব্যবহারের জন্য এই পিরামিডটি তৈরী করা হয়। এটি তৈরিতে ১ লাখ শ্রমিকের ১৪ থেকে ২০ বছরের মতো লেগেছিলো বলে ধারণা করা হয় (উইকিপিডিয়া)। তবে পিরামিড তৈরির সব থিওরীই এখন পর্যন্ত অনুমান ও যুক্তি নির্ভর। ঠিক কোন পদ্ধতিতে কিভাবে আসলেই এগুলো তৈরী করা হয়েছিলো তা নিশ্চিতভাবে কেউই এখন পর্যন্ত প্রমান করতে পারেনি। কারও ধারণা অনেক দূর থেকে মাটির ঢাল তৈরী করে সেই ঢালের উপর দিয়ে টেনে টেনে পাথরগুলো উপরে তোলা হয়েছে। কেউ বা বলছে কপিকলের সাহায্যে পাথরগুলো তোলা হয়েছিলো। তবে এখন পর্যন্ত যতগুলো থিওরী দাঁড় করানো হয়েছে, তার মধ্যে সাম্প্রতিক কম্পিউটারের 3D মডেলিংয়ের মাধ্যমে দেখানো ফরাসী স্থপতি “জিন পিয়েরে হডিন”-এর (Jean-Pierre Houdin) থিওরীটাই বেশি বাস্তবভিত্তিক বলে মনে হয় আমার কাছে। এখানে দেখানো হয়েছে যে পিরামিডের ভিতর দিয়েই ঢালু সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছিলো যার ভিতর দিয়ে টেনে টেনে পাথরগুলো উপরে নেয়া হয়েছে। ঢালু এই সুরঙ্গ পিরামিডের ভিতর দিয়েই বাঁক নিয়ে নিয়ে উপরের দিকে উঠে গেছিলো। পিরামিড তৈরী শেষে সম্ভবতঃ পাথর দিয়ে এই সুরঙ্গ ভরাট করে ফেলা হয়।



জিন পিয়েরে হডিনের পিরামিড থিওরী


এই থিওরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কগুলো ক্লিক করে দেখতে পারেনঃ

http://www.youtube.com/watch?v=h4R1s3D2x1E
http://www.usatoday.com/tech/science/2007-05-16-pyramid-theory_N.htm


তৈরির পর থেকে নিয়ে প্রায় চার হাজার বছর পর্যন্ত এটিই ছিলো মানুষের তৈরী সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্যকীর্তি। জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে আরোহনের পর গত কয়েক শতাব্দীতে মানুষ পিরামিডের উচ্চতার এই রেকর্ডকে ভাঙ্গতে সক্ষম হয়। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না যে বর্তমান প্রযুক্তিতে তৈরী বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর কোনটি এই পিরামিডের স্থায়িত্বের রেকর্ডকেও ভেঙ্গে চার হাজার বছরের উপর টিকে থাকতে পারবে কিনা।

পিরামিডটির অবস্থান ৩১.১৩১০১৩ দ্রাঘিমাংশ এবং ২৯.৯৭৬৯৭৭ অক্ষাংশে। গুগল ম্যাপে (maps.google.com) “29.976977,31.131013” লিখে সার্চ দিলেই একে আপনারা যে কেউ দেখতে পাবেন।


গুগল ম্যাপে গ্রেট পিরামিড


গ্রেট পিরামিডের কিছু পরিমাপ নিচে উল্লেখ করলামঃ
  • ১৩ একর জমির উপর এটি অবস্থিত।
  • পুরো পিরামিড চুনাপাথরে তৈরি হলেও এর ভিতরে রাজার কক্ষ এবং তার উপরের অংশটি গ্রানাইট পাথর দিয়ে তৈরি।
  • এটি তৈরীতে আনুমানিক ২৩ লক্ষ পাথরের খন্ড ব্যবহৃত হয়েছে।
  • প্রতিটি পাথরের গড় ওজন ২.৫ টন এবং কোন পাথরের ওজনই ২ টনের কম না। রাজার কক্ষের ওপর ছাঁদ হিসাবে সর্বোচ্চ ৯ টন ওজনের গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।
  • পুরো পিরামডটির মোট ওজন ৬৫ লক্ষ টন।
  • পিরামডটির ভিত্তির ক্ষেত্রফল ৫৬৮,৫০০ বর্গফুট।
  • ভিত্তির বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি বাহু গড়ে ৭৫৪ ফুট দীর্ঘ, যদিও বর্তমানে তা ৭৪৫ ফুট পর্যন্ত টিকে আছে।
  • ভূমি থেকে এর কেন্দ্রের উচ্চতা ছিলো ৪৮১ ফুট, যা বর্তমানে ৪৪৯ ফুটে নেমে এসেছে।
  • ভূমির সাথে পিরামিডের উপরিতলের ঢাল হচ্ছে ৫১°৫০'৪০" (৫১ ডিগ্রী ৫০ মিনিট ৪০ সেকেন্ড)।



গ্রেট পিরামিডের আভ্যন্তরীণ নকশা


প্রাচীন মিশরীয়রা অবশ্য ফুটের মাপে পরিমাপ করতো না। তাদের পরিমাপের একক বর্তমানে “রয়াল কিউবিট” নামে পরিচিত। ১ রয়াল কিউবিট ২০.৬ থেকে ২০.৬৪ ইঞ্চির সমান। পিরামিডের কিছু পরিমাপ তাই নিচের টেবিলে বিভিন্ন এককে দেখানো হলোঃ

ফুটমিটাররয়াল কিউবিট
ভিত্তির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য৭৫৪২৩০.৩৫৪৪০
কেন্দ্র হতে উচ্চতা৪৮১১৪৬.৭১২৮০
ঢালের দৈর্ঘ্য৬১২১৮৬.৫২৩৫৬
কৌনিক দূরত্ব৭১৯২১৯.২১৪১৮


রয়াল কিউবিটে পিরামিডের পরিমাপ



সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থানে পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্ব হচ্ছে ১৪৭x১০৬ কিলোমিটার, যা রয়াল কিউবিটের পরিমাপে ২৮০x১০৯ রয়াল কিউবিট। পিরামিডটির উচ্চতাও প্রায় ১৪৭ মিটার, বা ২৮০ রয়াল কিউবিট। আবার পিরামিডের ভিত্তির দৈর্ঘ্যকে যদি পৃথিবীর ব্যাসের সমান ধরা হয়, তাহলে এর উচ্চতা হচ্ছে পৃথিবী এবং চাঁদের ব্যাসার্ধের যোগফলের সমান। নিচের ছবিটিতে এব্যপারে আনুপাতিক এক ধারণা দেয়া হয়েছেঃ


গ্রেট পিরামিডের জ্যামিতি


বর্তমান সভ্যতার জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎস ইউরোপে পর্যন্ত কয়েক শ’ বছর আগেও মানুষের ধারণা ছিলো পৃথিবী সমতল। পৃথিবীকে গোল বলা হলে বক্তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হতো। সেখানে সাড়ে চার হাজার বছর আগের কোন সভ্যতা জ্যোতির্বিদ্যায় এতোটা উন্নত ছিলো ভবতেই অবিশ্বাস্য মনে হয়!

যারা বিজ্ঞানের কোন এক ক্ষেত্রে এতোটা দক্ষ ছিলো, তারা কি সত্যিই কোন ভিত্তি ছাড়াই এটা বিশ্বাস করতো যে মৃত্যুর পর কাউকে এই দুনিয়াতেই আবার পুনর্জীবিত করা সম্ভব? নাকি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তারা মৃতদেহকে জীবিত করার অকল্পনীয় দক্ষতা অর্জন করেছিলো? এবং সেজন্যই কি এতো পরিশ্রম করে শুধুমাত্র কিছু মৃতদেহকে অক্ষত রাখার জন্য তারা এসব পিরামিড তৈরি করেছিলো? এধরণের কিছু ভাবা সম্ভবতঃ অতিকল্পনারই নামান্তর।

তবে এটা আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে তখন বিজ্ঞানে তারা যতো উন্নতই হয়ে থাকুক না কেন, সেই জ্ঞান আমাদের এই যুগের মতো সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার নাগালে ছিলো না। তা ছিলো কেবল মাত্র ক্ষমতাধর ফারাও, এবং তার জাদুকর বা পুরোহিত নামে পরিচিত অল্প কিছু লোকের কুক্ষিগত। এই বিদ্যা ব্যবহার করা হতো প্রজাদের উপর ফারাওয়ের প্রভুত্ব বজায় রাখার জন্য। আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞ জনগনও জুজুর ভয়ে তাদের দন্ডমুন্ডের কর্তাকে ইশ্বর হিসাবে পূজা করতো।


রেফারেন্সঃ

http://en.wikipedia.org/wiki/Great_Pyramid_of_Giza
http://www.world-mysteries.com/mpl_2.htm
বিষয়শ্রেণী: তথ্যপ্রযুক্তি
ব্লগটি ১৫৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০৮/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast