ভালবাসা নিয়ে কিছু কথা
ফেব্রুয়ারী মাস। ভাষার মাস। ভালবাসার মাস। একজনের জীবনে তার মাতৃভাষার গুরুত্ব যেমন, ভালবাসার গুরুত্বও কম নয়। ভালবাসাহীন জীবন শুষ্ক মরুভূমি থেকেও শুষ্ক, বন্ধ্যা। অনেকেই বলতে পারেন যে একটি নির্দিষ্ট দিবসেই কেন ভালবাসা নিয়ে এতো মাতামাতি করতে হবে। ভাষা বা অন্য কিছু নিয়েও কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে মাতামাতি করার বিপক্ষে সেই একই যুক্তি খাটে। একটি দিবসের উৎস কি, কোথা থেকে এলো, সেটা গ্রহণ করলে জাত-কুল যাবে কিনা এসব নিয়ে ভাবার আগে বরং দেখা উচিত যে বিষয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে, জীবনের জন্য এর তাৎপর্য কতুটুকু। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক "মা"। দুনিয়ায় মায়ের উপর কেউ নেই, কিছু নেই। এই মা-কে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা সম্মান বা শ্রদ্ধা দেখালেও তার পুরো প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হবে না। সেই তুলনায় বছরে শুধু একটি দিন "মা দিবসে" মা নিয়ে মাতামাতি করাটা কারও কারও কাছে ফাজলামো মনে হতেই পারে। কিন্তু অপরদিকেও যুক্তি আছে। সবসময় মা-কে তার উপযুক্ত সম্মান দেখাই না বলে কি নির্দিষ্ট একটি দিনেও তা দেখাতে পারবো না?
আসলে দিন যাই হোক না কেন, বিশেষ কাউকে সে দিনে সম্মান দেখানোতে কোন সমস্যা থাকার কথা না। ভালবাসার ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই। যাকে ভালবাসি, তাকে সারা বছরই ভালবাসা উচিত। তবে তাই বলে নির্দিষ্ট একদিন যদি কেউ আলাদাভাবে ভালবাসার কথাটা বলেই থাকে, তাতেও সমস্যা থাকা উচিত না। যাক, কথা হলো আমি নিজেই ব্যক্তি হিসাবে অনেক কাঠখোট্টা টাইপের। ভালবাসার বিষয়টা অনেকের মতোই হয়তো তাই আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপনে অনীহা আছে। আমি আদৌ ভালবাসতে পারি কিনা, সেব্যপারেও অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ভালবাসাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না। এ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু নিজস্ব ধারণা আছে। ভালবাসা কি? ভালবাসা হলো অপর কারও প্রতি এমন এক অনুভূতি, যা নিজে কষ্ট করে হলেও সেই ব্যক্তিটিকে আনন্দিত করতে পারায় আনন্দ দেয়। ভালবাসা মানে হচ্ছে ভালবাসার ব্যক্তিটিকে কাছে পেতে চাওয়া। সুখী করতে চাওয়া। ভালবাসা মানে ভালবাসার মানুষটিকে সবার চেয়ে সুন্দর মনে হওয়া। ভালবাসা মানে পাওয়ার হিসাব না করে দিতে চাওয়া। এ বিষয়গুলোতে হয়তো প্রায় সবাই আমার সাথে একমত হবেন। কিন্তু কে কিভাবে কাউকে পাশে চায়, তাকে সুখী করতে চায়, এ নিয়ে ব্যক্তিবিশেষে দ্বিমত থাকতেই পারে। সবার ভালবাসাও একরকম হবে না। কিন্তু আমার চেয়ে অন্যের ভালবাসার প্রকাশ ভিন্ন হওয়া মানেই আমি তার ভালবাসাকে অস্বীকার করতে পারি না। ভালবাসার জন্য সবার আগে যা দরকার, তা হলো বিশ্বাস করতে পারা। সারা দুনিয়ার মানুষও যদি নানারকম প্রমান নিয়ে ভালবাসার মানুষটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়, তাও আমি সবার আগে সরাসরি তার কাছ থেকেই উত্তরটা শুনতে চাইবো। সে যা বলে তার উপর বিশ্বাস রাখবো। মানুষে মানুষে বিশ্বাস আজকাল এমনিতেই খুব কম। সেখানে ভালবাসার মানুষটি, সবচেয়ে কাছের মানুষটিই যদি আমার মুখের কথায় বিশ্বাস না রাখতে পারে, প্রতি পদক্ষেপে আলাদাভাবে প্রমান এনে প্রমান করতে হয় আমি যা বলছি তা সত্যি কিনা, তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য মনে হয় আর কিছুতেই হতে পারে না।
সত্যিকারের ভালবাসা, আর ভালবাসি ভালবাসি ভাব নিয়ে চলা এক জিনিস না। সত্যিকারের ভালবাসা ভালবাসার জন্য হাসিমুখে কষ্ট করতে শেখায়। কষ্ট হলেও ভালবাসার মানুষটিকে আকঁড়ে ধরে রাখতে শেখায়। আর ভাবের উপরের ভালবাসা কষ্ট দেখলে দৌড়ে পালায়। ভালবাসার সাথে সাথে ভালবাসার মানুষটিও পালানোর পথ খুঁজে বেড়ায়। যাই যাচ্ছি বলে নিয়মিত ভালবাসার মানুষটিকে হুমকি-ধামকিও দিতে থাকে অনেকেই। বাংলা ভাষায় "সুখের পায়রা" নামে একটি কথা আছে। আমাদের সমাজে ভালবাসার সুখের পায়রার অভাব নেই। প্রেমিক বা প্রেমিকা থাকা বর্তমান সমাজের এক ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন থাকা মানে, "দেখো, আমারও দাম আছে, আমার জন্যেও কেউ পাগল"। এতে করে বন্ধুমহলে হয়তো তার দাম বাড়তেও পারে। তবে ভালবাসার দাম কতটুকু বাড়ে তা নিশ্চিত নই। এধরণের প্রেমিক প্রেমিকারা যতো সহজে জুটি বাঁধে, তার চেয়েও দ্রুত জুটি ভেঙ্গেও ফেলতে পারে। দু'দিন পর আবার অন্য কারও সাথেও সহজেই জুড়ে যেতে পারে প্রেমে গদগদ হয়ে।
আমার আপনার মধ্যেও অনেকেই হয়তো কাউকে না কাউকে ভালবাসি। কেউ হয়তো সত্যিই ভালবাসি। আর কেউ হয়তো বা সুখের পায়রার মতো। যতোক্ষণ সুখ পাই ততোক্ষণ ভালবাসা, সুখ দিতে গিয়ে কষ্ট করতে চাই না। তাই মাঝে মধ্যে নিজেকে যাঁচাই করে দেখা ভাল যে আমার নিজের ভালবাসার প্রকৃতিটাই আসলে কেমন। নিজেকেই এ নিয়ে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করা উচিত। তেমন কিছু প্রশ্ন নিচে দিলাম। আপনি নিজেও নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করে দেখুন। উত্তর যা হয়, তা ভালবাসা সম্পর্কে আপনার নিজের হিসাবের সাথেই মিলিয়ে দেখুন আপনি আসলে ঠিক কিরকম ভালবাসেন।
১) আপনি কি আপনার ভালবাসার মানুষটিকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন? নাকি তাকে নিয়ে নিত্য সন্দেহ খেলা করে মনে? কথায় কথায় অবিশ্বাস করেন?
২) মানুষটিকে কি সবসময় আপনার পাশে চান? আপনার মতো করেই চান কেবল? নাকি সে তার মতো করে থাকলেও তা আপনার ভাল লাগে?
৩) সবসময় চান সে আপনাকে সুখী করুক? নাকি সে কি করলে সুখী হবে এ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা করেন?
৪) ভালবাসার মানুষটিকে খুশি করার জন্য কষ্ট করতে রাজি আছেন কি? কষ্ট করে কিছু করার পর যখন তাকে সত্যিই খুশি হতে দেখেন, তখনও কি কষ্টটাকে কষ্ট বলেই মনে হয়? নাকি মনে হয় যে পাওয়ার তুলনায় কষ্টটা কিছুই না?
৫) ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে নিজেকে কতটুকু পূর্ণ ভাবেন আপনি? ভালবাসা পেতে গিয়ে হারানো জীবনের না পাওয়াগুলোকে ভালবাসার বিপরীতে কতটুকু বড় বলে মনে হয়?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেই দিয়ে দেখুন। কি মনে হয়? ঠিকমতো ভালবাসেন তো আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে?
(লেখাটি ফেব্রুয়ারী মাসে বকলমে প্রকাশ করেছিলাম)
আসলে দিন যাই হোক না কেন, বিশেষ কাউকে সে দিনে সম্মান দেখানোতে কোন সমস্যা থাকার কথা না। ভালবাসার ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই। যাকে ভালবাসি, তাকে সারা বছরই ভালবাসা উচিত। তবে তাই বলে নির্দিষ্ট একদিন যদি কেউ আলাদাভাবে ভালবাসার কথাটা বলেই থাকে, তাতেও সমস্যা থাকা উচিত না। যাক, কথা হলো আমি নিজেই ব্যক্তি হিসাবে অনেক কাঠখোট্টা টাইপের। ভালবাসার বিষয়টা অনেকের মতোই হয়তো তাই আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপনে অনীহা আছে। আমি আদৌ ভালবাসতে পারি কিনা, সেব্যপারেও অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ভালবাসাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না। এ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু নিজস্ব ধারণা আছে। ভালবাসা কি? ভালবাসা হলো অপর কারও প্রতি এমন এক অনুভূতি, যা নিজে কষ্ট করে হলেও সেই ব্যক্তিটিকে আনন্দিত করতে পারায় আনন্দ দেয়। ভালবাসা মানে হচ্ছে ভালবাসার ব্যক্তিটিকে কাছে পেতে চাওয়া। সুখী করতে চাওয়া। ভালবাসা মানে ভালবাসার মানুষটিকে সবার চেয়ে সুন্দর মনে হওয়া। ভালবাসা মানে পাওয়ার হিসাব না করে দিতে চাওয়া। এ বিষয়গুলোতে হয়তো প্রায় সবাই আমার সাথে একমত হবেন। কিন্তু কে কিভাবে কাউকে পাশে চায়, তাকে সুখী করতে চায়, এ নিয়ে ব্যক্তিবিশেষে দ্বিমত থাকতেই পারে। সবার ভালবাসাও একরকম হবে না। কিন্তু আমার চেয়ে অন্যের ভালবাসার প্রকাশ ভিন্ন হওয়া মানেই আমি তার ভালবাসাকে অস্বীকার করতে পারি না। ভালবাসার জন্য সবার আগে যা দরকার, তা হলো বিশ্বাস করতে পারা। সারা দুনিয়ার মানুষও যদি নানারকম প্রমান নিয়ে ভালবাসার মানুষটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়, তাও আমি সবার আগে সরাসরি তার কাছ থেকেই উত্তরটা শুনতে চাইবো। সে যা বলে তার উপর বিশ্বাস রাখবো। মানুষে মানুষে বিশ্বাস আজকাল এমনিতেই খুব কম। সেখানে ভালবাসার মানুষটি, সবচেয়ে কাছের মানুষটিই যদি আমার মুখের কথায় বিশ্বাস না রাখতে পারে, প্রতি পদক্ষেপে আলাদাভাবে প্রমান এনে প্রমান করতে হয় আমি যা বলছি তা সত্যি কিনা, তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য মনে হয় আর কিছুতেই হতে পারে না।
সত্যিকারের ভালবাসা, আর ভালবাসি ভালবাসি ভাব নিয়ে চলা এক জিনিস না। সত্যিকারের ভালবাসা ভালবাসার জন্য হাসিমুখে কষ্ট করতে শেখায়। কষ্ট হলেও ভালবাসার মানুষটিকে আকঁড়ে ধরে রাখতে শেখায়। আর ভাবের উপরের ভালবাসা কষ্ট দেখলে দৌড়ে পালায়। ভালবাসার সাথে সাথে ভালবাসার মানুষটিও পালানোর পথ খুঁজে বেড়ায়। যাই যাচ্ছি বলে নিয়মিত ভালবাসার মানুষটিকে হুমকি-ধামকিও দিতে থাকে অনেকেই। বাংলা ভাষায় "সুখের পায়রা" নামে একটি কথা আছে। আমাদের সমাজে ভালবাসার সুখের পায়রার অভাব নেই। প্রেমিক বা প্রেমিকা থাকা বর্তমান সমাজের এক ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন থাকা মানে, "দেখো, আমারও দাম আছে, আমার জন্যেও কেউ পাগল"। এতে করে বন্ধুমহলে হয়তো তার দাম বাড়তেও পারে। তবে ভালবাসার দাম কতটুকু বাড়ে তা নিশ্চিত নই। এধরণের প্রেমিক প্রেমিকারা যতো সহজে জুটি বাঁধে, তার চেয়েও দ্রুত জুটি ভেঙ্গেও ফেলতে পারে। দু'দিন পর আবার অন্য কারও সাথেও সহজেই জুড়ে যেতে পারে প্রেমে গদগদ হয়ে।
আমার আপনার মধ্যেও অনেকেই হয়তো কাউকে না কাউকে ভালবাসি। কেউ হয়তো সত্যিই ভালবাসি। আর কেউ হয়তো বা সুখের পায়রার মতো। যতোক্ষণ সুখ পাই ততোক্ষণ ভালবাসা, সুখ দিতে গিয়ে কষ্ট করতে চাই না। তাই মাঝে মধ্যে নিজেকে যাঁচাই করে দেখা ভাল যে আমার নিজের ভালবাসার প্রকৃতিটাই আসলে কেমন। নিজেকেই এ নিয়ে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন করা উচিত। তেমন কিছু প্রশ্ন নিচে দিলাম। আপনি নিজেও নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করে দেখুন। উত্তর যা হয়, তা ভালবাসা সম্পর্কে আপনার নিজের হিসাবের সাথেই মিলিয়ে দেখুন আপনি আসলে ঠিক কিরকম ভালবাসেন।
১) আপনি কি আপনার ভালবাসার মানুষটিকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন? নাকি তাকে নিয়ে নিত্য সন্দেহ খেলা করে মনে? কথায় কথায় অবিশ্বাস করেন?
২) মানুষটিকে কি সবসময় আপনার পাশে চান? আপনার মতো করেই চান কেবল? নাকি সে তার মতো করে থাকলেও তা আপনার ভাল লাগে?
৩) সবসময় চান সে আপনাকে সুখী করুক? নাকি সে কি করলে সুখী হবে এ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা করেন?
৪) ভালবাসার মানুষটিকে খুশি করার জন্য কষ্ট করতে রাজি আছেন কি? কষ্ট করে কিছু করার পর যখন তাকে সত্যিই খুশি হতে দেখেন, তখনও কি কষ্টটাকে কষ্ট বলেই মনে হয়? নাকি মনে হয় যে পাওয়ার তুলনায় কষ্টটা কিছুই না?
৫) ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে নিজেকে কতটুকু পূর্ণ ভাবেন আপনি? ভালবাসা পেতে গিয়ে হারানো জীবনের না পাওয়াগুলোকে ভালবাসার বিপরীতে কতটুকু বড় বলে মনে হয়?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেই দিয়ে দেখুন। কি মনে হয়? ঠিকমতো ভালবাসেন তো আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে?
(লেখাটি ফেব্রুয়ারী মাসে বকলমে প্রকাশ করেছিলাম)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এস,বি, (পিটুল) ১৪/০৯/২০১৩পেন্সিল পদ্য...পড়লাম সদ্য
-
পল্লব ১৩/০৯/২০১৩আমিও প্রিয়তে রাখলাম।
-
সালমান মাহফুজ ১৩/০৯/২০১৩গভীর প্রেম-দর্শন । আমাকে মুগ্ধ করলে ! লেখাটা প্রিয়তে নিলাম ।